মহাখালীতে অভিযান : তিন রেস্টুরেন্টকে তিন লাখ টাকা জরিমানা

আগের সংবাদ

শ্রমবাজারে সম্ভাবনার হাতছানি : সৌদি আরব ও মালয়েশিয়ায় সংকট দেখা দিলেও ইউরোপে সম্ভাবনার হাতছানি

পরের সংবাদ

১০ বছরের নাদিয়ার শরীরে ২৩টি আঘাতের চিহ্ন! হত্যাকারী গৃহকর্ত্রী মৌ একদিনের রিমান্ডে

প্রকাশিত: মার্চ ১, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: মার্চ ১, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : মাত্র ১০ বছর বয়সি শিশু নাদিয়া। ছোট্ট একটি শরীর। এই ছোট শরীরের এমন কোনো স্থান বাদ নেই, যেখানে আঘাতের চিহ্ন নেই। অনেক স্থানেই খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে জখম করা হয়েছে। তার শরীরজুড়ে মোট ২৩টি আঘাতের চিহ্ন। নির্মমভাবে শিশুটিকে হত্যা করেন গৃহকর্ত্রী ফরহাদ বাঁধন মৌ। শরীরে দগদগে ক্ষত আর অত্যাচারের নানা চিহ্ন থাকা সত্ত্বেও শিশুটি অসুস্থ হয়ে মারা যাওয়ার নাটক সাজান তিনি। তবে শেষ রক্ষা হয়নি। পুলিশ এই নির্দয় গৃহকর্ত্রীকে গ্রেপ্তার করে একদিনের রিমান্ডে নিয়েছে। পাষণ্ড মৌ নিজেকে ‘অপরাধ অনুসন্ধান’ নামে একটি সাপ্তাহিক পত্রিকার যুগ্ম সম্পাদক হিসেবে পরিচয় দিয়েছেন বলে জানিয়েছে পুলিশ।
গত রবিবার সকালে রাজধানীর শাহজাহানপুর থানার শান্তিবাগের ৮৭/১ নম্বর বাড়ির ২/সি নম্বর ফ্লাটে গৃহকর্ত্রী মৌর হাতে খুন হয় নাদিয়া। হত্যার পর তার লাশ একটি লাশবাহি ফ্রিজিং গাড়ি ভাড়া করে রাখা হয় মগবাজার হলি ফ্যামিলি হাসপাতালের সামনে। এরই মধ্যে নাদিয়ার বাবার মোবাইল ফোনে কল করে ঢাকায় আসতে বলেন মৌ। কিন্তু শান্তিবাগের বাসায় গিয়ে মেয়েকে খুঁজে পাচ্ছিলেন না বাবা নাজিম উদ্দিন। পরবর্তীতে পুলিশের সহায়তায় সোমবার রাত ১০টার দিকে হলি ফ্যামিলি হাসপাতালের সামনে থাকা লাশবাহি ফ্রিজিং গাড়িতে নাদিয়ার লাশ খুঁজে পান। রাতেই সুরতহাল প্রতিবেদন শেষে ময়নাতদন্তের জন্য নাদিয়ার মরদেহ ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল মর্গে পাঠায় পুলিশ।
সুরতহাল প্রতিবেদনে শাহজাহানপুর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মোছা. সোহেলী আক্তার উল্লেখ করেন, নাদিয়ার মাথায় ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ক্ষত চিহ্ন রয়েছে। এছাড়া কপালের ডান পাশে, বাম কানের পিছনে আঁচড়ের চিহ্ন রয়েছে। ডান গালে থেঁতলানো ফোলা জখম। নাক এবং মুখে রক্ত মাখা। গলায় লালচে দাগ। বুক-পেটের বিভিন্ন অংশে লালচে-কালো দাগ এবং সমস্ত শরীরের চামড়া উঠানোসহ আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।
শিশুটির গ্রামের বাড়ি পঞ্চগড় জেলার আটোয়ারী উপজেলার উলুয়ার চাপ গ্রামে। দেড় বছর ধরে মৌর বাসায় গৃহকর্মীর কাজ করছিল সে। তার বড় বোন নাজমাও (১৪) সাত বছর ধরে একই বাসায় কাজ করছে।
শিশুটির বাবা নাজিম উদ্দিন জানান, রবিবার সকাল ৭টার দিকে গৃহকর্ত্রী তাকে ফোনে জানান, তার মেয়ে অসুস্থ। এমন খবরে রবিবার রাতেই তিনি ট্রেনে করে ঢাকায় আসেন। এরপর ওই বাসায় গিয়ে নাদিয়ার সন্ধান করেন। তখন মৌ জানান, নাদিয়া অসুস্থতার কারণে মারা গেছে। বিষয়টি কাউকে জানাতে নিষেধ করে ৭০ হাজার টাকা দিয়ে সাভারে একটি বাড়ি করে দেয়ার প্রস্তাব দেন তিনি। তবে সবকিছুর আগে মেয়েকে দেখতে চান নাজিম উদ্দিন। কিন্তু কোনোমতেই নাদিয়ার সন্ধান দিচ্ছিলেন না মৌ। এরপর মেয়েকে নানা জায়গায় খুঁজতে থাকেন নাজিম। কিন্তু কোথাও পাচ্ছিলেন না। পরদিন সোমবার সারাদিন কেটে যায় এভাবে। পরে রাতে ৯৯৯-এ কল করেন নাজিম উদ্দিন। এরপরই শাহজাহানপুর থানা পুলিশ নাজিম উদ্দিনের সঙ্গে যোগাযোগ করে। একপর্যায়ে সোমবার রাত ১০টার দিকে হলি ফ্যামিলি হাসপাতালের সামনে দাঁড় করিয়ে রাখা একটি লাশবাহী ফ্রিজিং গাড়ি থেকে কাফনের কাপড় মোড়ানো অবস্থায় শিশু নাদিয়ার লাশ উদ্ধার করা হয়।
নাজিম উদ্দিন আরো জানান, তিন মাস আগে মেয়ে নাদিয়া ও নাজমার সঙ্গে দেখা করতে ঢাকায় এসেছিলেন। তখন নাদিয়া বলেছিল, বিভিন্ন কারণে গৃহকর্ত্রী তাকে মারধর করে। সে বাড়িতে চলে যাবে। এরপর নাদিয়াকে বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার কথা বললে গৃহকর্ত্রী জানায়, নাদিয়া তার বাসার পোষা পাখি মেরে ফেলেছে এবং কিছু জিনিসপত্র ভেঙে ফেলেছে। সেসবের জরিমানা দিয়ে তারপর তাকে নিতে হবে। নিরুপায় হয়ে মেয়েকে রেখেই বাড়ি চলে যান তিনি।
শাহজাহানপুর থানা পুলিশ জানায়, রবিবার সকালে শিশুটিকে হত্যা করা হয়। হত্যার পর তার মরদেহ নেয়া হয় কাকরাইল ইসলামী ব্যাংক হাসপাতালে। সেখানকার চিকিৎসকরা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে নাদিয়াকে মৃত ঘোষণা করেন। সেদিন সন্ধ্যায় গৃহকর্ত্রী মৌ একটি লাশবাহী ফ্রিজিং গাড়ি ভাড়া করেন। গাড়ির চালককে বলা হয়, শিশুটির লাশ আপাতত গাড়িতে ফ্রিজিং করে রাখতে হবে। গ্রাম থেকে তার পরিবার এসে নিয়ে যাবে। রবিবার সন্ধ্যা থেকে সোমবার রাতে উদ্ধারের আগ পর্যন্ত ওই ফ্রিজিং গাড়িতেই ছিল নাদিয়ার লাশ। পরে গৃহকর্ত্রীসহ গাড়িটির চালককেও থানায় নেয় পুলিশ।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, অনেক আগেই স্বামীর সঙ্গে বিচ্ছেদ হয়ে যায় মৌ’র। এরপর থেকে বড় বোনকে নিয়ে ওই বাসায় বসবাস করে আসছিলেন তিনি। মৌ অপরাধ অনুসন্ধান নামের একটি সাপ্তাহিক পত্রিকায় চাকরি করতেন বলে শিশু নাদিয়ার পরিবারও জানিয়েছে।
পুলিশের মতিঝিল বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) হায়াতুল ইসলাম খান জানান, নাদিয়ার বাবা বাদী হয়ে গৃহকর্ত্রী ফরহাদ বাঁধন মৌর নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাত আরো কয়েকজনকে আসামি করে হত্যা মামলা করেছেন। মামলায় মৌকে গ্রেপ্তার করে গতকাল আদালতে হাজির করা হয়েছে। আদালত তার একদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন। ডিসি আরো বলেন, নিহত শিশুর বড় বোন নাজমাকে এবং লাশবাহী গাড়ি চালককে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নেয়া হয়েছিল। তাদের সবার বক্তব্য আমরা নিয়েছি। আর শিশুটির লাশ গোপন করতে মৌকে যারা সহাযোগিতা করেছে, তাদেরও গ্রেপ্তার করা হবে।
এদিকে গতকাল দুপুরে ঢামেক হাসপাতাল মর্গে নাদিয়ার মরদেহের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়েছে। এরপর মরদেহ পরিবারকে বুঝিয়ে দেয় পুলিশ। বিকাল ৪টার দিকে মরদেহ নিয়ে গ্রামের বাড়ির উদ্দেশে রওনা দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন হতভাগ্য শিশুটির মামা একরামুল।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়