মহাখালীতে অভিযান : তিন রেস্টুরেন্টকে তিন লাখ টাকা জরিমানা

আগের সংবাদ

শ্রমবাজারে সম্ভাবনার হাতছানি : সৌদি আরব ও মালয়েশিয়ায় সংকট দেখা দিলেও ইউরোপে সম্ভাবনার হাতছানি

পরের সংবাদ

হৃদরোগ চিকিৎসায় অগ্রগতি প্রশংসার দাবিদার

প্রকাশিত: মার্চ ১, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: মার্চ ১, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন বাংলাদেশ এখন হৃদরোগের চিকিৎসায় প্রায় স্বনির্ভর। দেশেই হৃদরোগের ৯৫-৯৮ শতাংশ চিকিৎসার সক্ষমতা রয়েছে এবং এজন্য দক্ষ জনশক্তি, আধুনিক প্রযুক্তি এবং প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতিও রয়েছে। শুক্রবার প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে বাংলাদেশ কার্ডিওভাসকুলার রিসার্চ ফাউন্ডেশন আয়োজিত বৈজ্ঞানিক সম্মেলনে দেয়া ভিডিওবার্তায় প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিশ্বে প্রতি বছর হৃদরোগে ১৭.৯ মিলিয়ন মানুষ মৃত্যুবরণ করছে। বাংলাদেশে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর হার প্রায় ২৭ শতাংশ। প্রতি হাজারে ১০ জন শিশু হৃদরোগে আক্রান্ত হচ্ছে। প্রতি পাঁচ যুবকের মধ্যে একজন হৃদরোগের ঝুঁকিতে। খাদ্যাভ্যাস, শারীরিক ব্যায়ামের অভাব, ধূমপান ও ডায়াবেটিসের কারণে হৃদরোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে।
হৃদরোগীদের চিকিৎসা সুবিধা উন্নত করার পাশাপাশি প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থার ওপর নজর দিতে হবে। বিভিন্ন সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও গত ১৪ বছরে স্বাস্থ্য খাতে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে। এ পর্যন্ত ১১টি স্নাতকোত্তর ‘সুপার বিশেষায়িত হাসপাতাল’, কার্ডিওভাসকুলার হাসপাতাল, বক্ষব্যাধি হাসপাতাল, ক্যান্সার হাসপাতাল, নিউরোসায়েন্স হাসপাতাল এবং অন্যান্য হাসপাতাল স্থাপনের পাশাপাশি সারাদেশে ৬০০টির বেশি হাসপাতাল নির্মাণ করা হয়েছে। গ্রামের মানুষের প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে ১৮ হাজার ৫০০ কমিউনিটি ক্লিনিক ও ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। হাসপাতাল থেকে ৩০ প্রকার ওষুধ বিনামূল্যে বিতরণ করা হচ্ছে। সারাদেশে ৪৩টি হাসপাতালে টেলি-মেডিসিন সেবা চালু করা হয়েছে। যেখানে মা ও শিশুদের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে রয়েছে ৩০ হাজার স্যাটেলাইট ক্লিনিক। ৫ লাখ অটিস্টিক শিশুকে বিনামূল্যে চিকিৎসা দেয়ার জন্য ১০৩টি সেবাকেন্দ্র চালু রয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বাংলাদেশকে পোলিও ও ধনুষ্টংকারমুক্ত দেশ ঘোষণা করেছে। প্রতিটি জেলায় একটি করে মেডিকেল কলেজ নির্মাণের পরিকল্পনা নিয়েছে তার নেতৃত্বাধীন সরকার। দেশের স্বাস্থ্য খাতে গত ১৪ বছরের অগ্রগতি সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রীর দেয়া বক্তব্য নিঃসন্দেহে আশাজাগানিয়া। স্বাস্থ্যব্যবস্থার সঙ্গে জড়িতদের সদিচ্ছা নিশ্চিত করতে একই সঙ্গে সরকার সক্রিয় হবে- এমনটিও প্রত্যাশিত।
তবে এ কথা মানতে হবে যে, দেশের অনেক হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে নৈরাজ্য চলছে। একজন রোগী চিকিৎসকের দ্বারস্থ হন তার রোগযন্ত্রণা থেকে মুক্তির আশায়। কিন্তু চিকিৎসা নিতে গিয়ে যদি ভুল চিকিৎসার কারণে রোগীর জীবনাশঙ্কাই প্রকট হয়ে ওঠে কিংবা মৃত্যুরও কারণ হয়, তাহলে শুধু চিকিৎসকের দক্ষতা কিংবা অবহেলা নিয়েই প্রশ্ন ওঠে না; একই সঙ্গে এ প্রশ্নও দাঁড় করায়- শুধু ভুল নয় বরং এমনটি কি অবহেলাজনিত কারণেই সৃষ্ট নয়?
দেশের প্রায় সর্বত্র গজিয়ে উঠেছে প্রাইভেট ক্লিনিক কিংবা হাসপাতাল। অধিকাংশ ক্ষেত্রে এগুলোতে চিকিৎসার নামে চলছে অপচিকিৎসা ও রমরমা বাণিজ্য। বলার অপেক্ষা রাখে না, মানুষের মৌলিক অধিকারের অন্যতম চিকিৎসাসেবা প্রাপ্তির পথ দেশে যেমন অমসৃণ, তেমনি অনেক ক্ষেত্রে ঝুঁকিপূর্ণও। একই সঙ্গে ব্যয়বহুল। ভুল চিকিৎসার খরচ মেটাতে গিয়ে অনেকেই নিঃস্ব হয়ে গেছেন- এমন নজিরও আছে। অনেকেই হয়ে পড়ছেন পঙ্গু। চিকিৎসকের অবহেলাজনিত কারণে অপ্রীতিকর ঘটনাও এর মধ্যে কম ঘটেনি। চিকিৎসকের অবহেলা কিংবা ভুলের কারণে সৃষ্ট এসব ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠিত হয়। এর পুনরাবৃত্তি রোধে সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতনদের অঙ্গীকার-প্রতিশ্রæতিও শোনা যায়। কিন্তু যথাযথ প্রতিবিধানের দৃষ্টান্ত বিরলই বলা যায়। চিকিৎসা সেবাদান অত্যন্ত মানবিক পেশা। কিন্তু অবকাঠামোর অভাব, সংশ্লিষ্টদের অদক্ষতা, দায়িত্ববোধের ঘাটতির পাশাপাশি এমন অব্যবস্থার দায় সরকার এড়াতে পারে না। চিকিৎসা ব্যবস্থায় বিপর্যয় রোধে কঠোর ও কার্যকর ব্যবস্থা নেয়ার বিকল্প নেই। কী করে চিকিৎসাকেন্দ্রের নামে এত ‘বাণিজ্যকেন্দ্র’ গড়ে উঠছে, যা চরম জীবনঝুঁকির কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে- এ প্রশ্নের জবাব দেয়ার দায়ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগ এড়াতে পারে না। চিকিৎসাকেন্দ্রে অনুশাসন ও শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার পাশাপাশি চিকিৎসায় অবহেলাজনিত কারণে সৃষ্ট বিপর্যয়ের দৃষ্টান্তযোগ্য প্রতিকার নিশ্চিত করতেই হবে।

আর কে চৌধুরী : মুক্তিযোদ্ধা ও শিক্ষাবিদ।
[email protected]

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়