মো. দেলোয়ার হোসেন দিনাজপুর থেকে : দেশে খাদ্যের চাহিদা মেটানোর পর এবার ফসলের মাঠ থেকে সরাসরি দেশের সীমানা পেরিয়ে এখন বিদেশে রপ্তানি হচ্ছে দিনাজপুর জেলার আলু। আর এতে ব্যস্ততা বেড়েছে কৃষক, শ্রমিক ও ব্যবসায়ীদের। চলতি মৌসুমে মাঝখানে আলুর দাম কিছুটা কম থাকলেও এখন দাম বাড়ায় লাভবানও হয়েছেন কৃষকরা।
দিনাজপুর কৃষি অধিদপ্তরে উপপরিচালক মো. নুরুজ্জামান মিয়া সম্প্রতি এ তথ্য নিশ্চিত করেন। চলতি রবি মৌসুমে দিনাজপুর জেলার ১৩টি উপজেলায় সার ও কীটনাশকের পর্যাপ্ত সরবরাহ এবং আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবার আলুর বাম্পার ফলন হয়েছে। বর্তমানে দেশে ও দেশের বাইরে আলুর চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় এবং ভালো মূল্যে আলু বিক্রি করতে পারায় কৃষকের মুখে হাসি ফুটছে।
কৃষি বিভাগ সূত্র জানায়, এবারে জেলায় ৪২ হাজার ২০০ হেক্টর জমিতে আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও অতিরিক্ত আরো ৫ হাজার ১০০ হেক্টর জমিতে আলু চাষ হয়েছে। অর্থাৎ জেলায় মোট ৪৭ হাজার ৩০০ হেক্টর জমিতে আলুর চাষ হয়েছে।
পাইলট প্রজেক্ট হিসেবে জেলার খানসামা উপজেলায় চলতি বছর ২ হাজার ২৬০ হেক্টর জমিতে আলুর চাষ হয়। এ উপজেলায় ৫০ হাজার টনের বেশি আলু উৎপাদন হয়েছে। যার মধ্যে প্রায় ১০ হাজার টন আলু বিদেশে রপ্তানি হওয়ার লক্ষ্য নিয়ে দ্বিতীয় বছরের মত কাজ করছে কৃষি বিভাগ। ইতোমধ্যে ১০০ টন আলু মালয়েশিয়ায় রপ্তানি করা হয়েছে। এ উপজেলার সাগিতা, গ্রানুলা, সানসাইন, কুমরিকা, সেভেন জাতের আলু মালয়েশিয়াসহ বিভিন্ন দেশে রপ্তানির কার্যক্রম ইতোমধ্যেই শুরু হয়েছে।
খানসামা উপজেলার হোসেনপুর গ্রামের কৃষক আব্দুল আলীমসহ প্রায় শতাধিক কৃষক কৃষি বিভাগের সহযোগিতায় রপ্তানিকারকদের মাধ্যমে বিদেশে আলু রপ্তানি করছেন। ভোরের কাগজকে তারা বলেন, জমি থেকে প্রতি কেজি আলু ১৪-১৫ টাকা দরে বিদেশে রপ্তানি করছেন চাষিরা। এতে কৃষকরাও বেশ খুশি।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে খানসামা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা বাসুদেব রায় ভোরের কাগজকে বলেন, এ উপজেলার মাটি আলু চাষের জন্য উপযোগী হওয়ায় ভালো ফলন হয়েছে। গত বছরগুলোর তুলনায় এবার বিদেশে আলুর চাহিদা বেড়েছে। আলু রপ্তানিতে কৃষি বিভাগ রপ্তানিকারকদের সঙ্গে কৃষকদের যোগসূত্র স্থাপনে কাজ করছে।
তিনি আরো বলেন- কন্দাল ফসল উন্নয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে আধুনিক কলাকৌশল বিষয়ে কৃষকদের প্রশিক্ষণ ও পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। এই প্রকল্পের আওতায় রপ্তানিযোগ্য জাতের আলুর চাষাবাদ স¤প্রসারণ করা হচ্ছে। যাতে করে কৃষকরা আলু বিদেশে রপ্তানি করে আর্থিকভাবে লাভবান হতে পারেন।
কৃষি বিভাগ সুত্র জানায়, এবারে দিনাজপুর জেলায় ৪৭ হাজার ৩০০ হেক্টর জমিতে প্রায় সাড়ে ৭ লাখ টন আলুর ফলন পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ইতোমধ্যে জমি থেকে ৭০ ভাগ আলু উত্তোলন করা হয়েছে। এখন ৩০ ভাগ আলু ক্ষেতে রয়েছে। এই আলু উত্তোলন হলে উত্তোলন হলে ফলনের প্রকৃত তথ্য জানা যাবে। চলতি বছর জেলা শুধু খানসামা উপজেলা থেকে ১০০ টন আলু মালয়েশিয়ায় রপ্তানি করা হয়েছে।