মহাখালীতে অভিযান : তিন রেস্টুরেন্টকে তিন লাখ টাকা জরিমানা

আগের সংবাদ

শ্রমবাজারে সম্ভাবনার হাতছানি : সৌদি আরব ও মালয়েশিয়ায় সংকট দেখা দিলেও ইউরোপে সম্ভাবনার হাতছানি

পরের সংবাদ

ফুরাল প্রাণের মেলা

প্রকাশিত: মার্চ ১, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: মার্চ ১, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

শরীফা বুলবুল : হৃদয়ছোঁয়া এক উৎসবমুখরতা। এ মেলা মনের, মননের। এ মেলা মানবতা ছড়ায়, মানবতার গান গায়। তাই এখানে জঙ্গিদের উড়ো চিঠি এলেও কেউ ভয় পায় না। কারণ বইমেলায় কাগজের পাতায় পাতায় ছড়িয়ে দেয়া হয় সত্য আর সৌন্দর্য। গেল ২৮ দিন এক অন্যরকম মুগ্ধতায় কেটে গেছে লেখক, কবি, সাহিত্যিক আর বইপ্রেমীদের। অনেকটা গাছের ছায়া থেকে ধীরে ধীরে রোদ সরে যাওয়ার মতোই ফুরিয়ে গেল মেলার দিনগুলো। নির্মল আনন্দের এ উৎসবের পর্দা নামল অবশেষে বেদনা জাগিয়ে। ‘পড় বই গড় দেশ, বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ’ প্রতিপাদ্যে আয়োজিত অমর একুশে বইমেলার শেষ দিনটি ছিল অনেকটা বিষণ্নতা ছড়ানো। প্রাণচাঞ্চল্যের মধ্যে যেন বিদায়ের করুণ সুর।
গতকাল মঙ্গলবার মেলার শেষ দিনে দেখা গেছে টিএসসি থেকে লাইন ধরে বইপ্রেমীরা মেলায় ঢুকেছেন। ছিল তুমুল বিক্রিও। দম ফেলার সময় পাননি স্টলের বিক্রেতারা। কোনো কোনো স্টলে আবার উপচে পড়া ভিড় ছিল বইপ্রেমীর পাশাপাশি কবি ও লেখকদের। শেষবারের মতো সান্নিধ্য পাওয়ার আশায় প্রিয় লেখকদের ঘিরে ধরেছিল ভক্তপাঠককূলও। তবে শেষ দিনে পছন্দের বই কেনার অবসান ঘটিয়েছেন পাঠকরা। কেউ কেউ তালিকার কিছু বই রেখে দিয়েছেন আগামী বছরের বইমেলার জন্য। শেষ দিনেও মেলায় এসেছে অনেক বই। অন্তত সন্তানতুল্য বইগুলো যেন মেলার মুখটা দেখতে পায়- এজন্য কি যে প্রাণপণ চেষ্টা ছিল লেখক-প্রকাশকদের। তাই তো শেষ বেলাতে এসে স্টলের শ্রীবৃদ্ধি ঘটিয়েছে সেসব বই।
বিদায়ের সুরের মধ্যে শেষ দিনেও মেলায় ঢল নামতে দেখা গেছে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের। তাদের হাতেও শোভা পেয়েছে বই। কেউ কেউ বলছিলেন যদি, বাণিজ্যমেলার সময় বাড়ানো হয়, তাহলে বই মেলার কেন সময় বাড়ে না।
কবি, শিক্ষক ও গবেষক সৈয়দা বদরুননেসা বলেন, খুব দ্রুতই যেন শেষ হয়ে গেল মেলা। যেন এক ছোট গল্প। শেষ হয়েও হলো না শেষ। আরো যদি বাড়ানো যেত। একই প্রতিক্রিয়া জানিয়ে লেখক কবি ও শিশু সাহিত্যিক মুস্তাফা মহিউদ্দীনও বললেন, যতদিন মেলা থাকে মনে হয় শত ব্যস্ততায় ডুবে থাকি এক অন্যরকম ভালোলাগার মধ্যে। আরো যদি বাড়ানো যেত। শেষ

দিনে বারিধারা থেকে মেলায় বই কিনতে আসা আদমজী ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুলের শিক্ষার্থী মুগ্ধ জানালেন, বইমেলা অন্য মেলার মতো নয়। এ মেলায় এলে শান্তি লাগে। মনটা বড় হয়ে যায়। তাই এমন মেলা যত দীর্ঘ হয় ততোই ভালো। মিস করব বইমেলার লেকটাকেও। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সংবাদকর্মী জানালেন, মেলার অ্যাসাইনমেন্ট মানেই অন্যরকম কিছু। পাঠক আর লেখকদের সান্নিধ্যে সময় বেশ কেটে যায়। কাজটাকে বেশ উপভোগ করি। চাপ মনে হয় না।
লেখক, পাঠক, দর্শনার্থী, বিক্রেতা, প্রকাশকের যেন মনের কথা প্রাণের এ মেলা যদি আরো কটা দিন থাকত। তবে মেলার সময় বাড়ানোর বিষয়টি একান্তই আয়োজকদের। তারপরও মনের মধ্যে প্রশ্ন রেখেই পাঠক ও দর্শনার্থীরা মেলা চত্বর থেকে বিদায় নিয়েছেন। আগামী বছরের মেলায় আসার প্রত্যাশা নিয়ে।
মেলায় স্থাপনকৃত আর্চয়ের পরিসংখ্যান থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী ২৭ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দর্শনার্থীর সংখ্যা ছিল ৬৩ লাখ ৫৩ হাজার ৪৬৩ জন।
সমাপনী আয়োজন : বিকাল ৫টায় সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ। বাংলা একাডেমির সভাপতি কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেনের সভাপতিত্বে সমাপনী অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা। প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন ‘অমর একুশে বইমেলা ২০২৩’-এর সদস্য সচিব ডা. কে এম মুজাহিদুল ইসলাম। ধন্যবাদ জানান বাংলা একাডেমির সচিব এ এইচ এম. লোকমান।
কে এম খালিদ বলেন, আনন্দ-উদ্দীপনার মধ্যদিয়ে উদ্যাপিত এবারের বইমেলা সমাপ্তির দ্বারপ্রান্তে। বইমেলা কেবল বই বিক্রির জায়গা নয়। দলমত, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সবার প্রাণের মেলা অমর একুশে বইমেলা ২০২৩ সবার সক্রিয় অংশগ্রহণ ও সহযোগিতায় সাফল্যমণ্ডিত হয়েছে।
কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন বলেন, বাংলা একাডেমি আয়োজিত অমর একুশে বইমেলা আমাদের জাতীয় জীবনে বড়ো একটি দিগন্ত। বই পাঠের মাধ্যমে নতুন প্রজন্মের তরুণদের মধ্যে মানবিক দর্শন জাগ্রত হবে এবং বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হবে।
কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা বলেন, কোভিড মহামারি পরবর্তীকালে একমাসব্যাপী অমর একুশে বইমেলা ২০২৩ আয়োজন সত্যিই আমাদের জন্য বড়ো একটি সফলতা। বিন্যাস ও আঙ্গিকগত দিক দিয়ে এবারের বইমেলা সবার কাছে প্রশংসিত হয়েছে।
ডা. কে এম মুজাহিদুল ইসলাম বলেন, অমর একুশে বইমেলা ২০২৩-এ বাংলা একাডেমিসহ সব প্রতিষ্ঠানের বই ২৫ শতাংশ কমিশনে বিক্রি হয়েছে। ২৭ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বাংলা একাডেমির ১ কোটি ২৪ লাখ টাকার বই বিক্রি করেছে। ২৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত স্টল মালিকদের কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্য এবং আজকের সম্ভাব্য বিক্রি যুক্ত করলে বলা যায় যে প্রায় ৪৭ কোটি টাকার বই বিক্রি হয়েছে।
সমাপনী অনুষ্ঠানে সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ্ সাহিত্য পুরস্কার ২০২২, কবি জসীমউদ্দীন সাহিত্য পুরস্কার ২০২৩ এবং অমর একুশে বইমেলা ২০২৩ উপলক্ষে বিভিন্ন গুণীজন স্মৃতি পুরস্কার দেয়া হয়। অনুষ্ঠানে ক্যারোলিন রাইট এবং জসিম মল্লিককে সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ্ সাহিত্য পুরস্কার ২০২২ এবং কবি মোহাম্মদ রফিককে কবি জসীমউদ্দীন সাহিত্য পুরস্কার ২০২৩ দেয়া হয়।
গুণীজন স্মৃতি পুরস্কার ২০২৩ : অমর একুশে বইমেলা ২০২৩-এর সমাপনী অনুষ্ঠানে ২০২২ সালে প্রকাশিত বিষয় ও গুণমানসম্মত সর্বাধিক সংখ্যক বই প্রকাশের জন্য আগামী প্রকাশনীকে চিত্তরঞ্জন সাহা স্মৃতি পুরস্কার-২০২৩ দেয়া হয়। ২০২২ সালে প্রকাশিত গ্রন্থের মধ্যে শৈল্পিক ও গুণমান বিচারে সেরা বই বিভাগে আহমদ রফিক রচিত ‘বিচ্ছিন্ন ভাবনা’ প্রকাশের জন্য জার্নিম্যান বুক্স, মোহাম্মদ হারুন-উর-রশিদ রচিত ‘বাংলা একাডেমি আমার বাংলা একাডেমি’ বইয়ের জন্য ঐতিহ্য এবং হাবিবুর রহমান রচিত ‘ঠার : বেদে জনগোষ্ঠীর ভাষা’ প্রকাশের জন্য পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লিকে মুনীর চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার ২০২৩ দেয়া হয়। ২০২২ সালে প্রকাশিত শিশুতোষ বইয়ের মধ্য থেকে গুণমান বিচারে সর্বাধিক গ্রন্থ প্রকাশের জন্য ময়ূরপঙ্খিকে রোকনুুজ্জামান খান দাদাভাই স্মৃতি পুরস্কার-২০২৩ দেয়া হয়।
২০২৩ সালের অমর একুশে বইমেলায় অংশগ্রহণকারী প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানসমূহের মধ্য থেকে নান্দনিক অঙ্গসজ্জায় সেরা প্রতিষ্ঠান হিসেবে পুথিনিলয় (প্যাভিলিয়ন), নবান্ন প্রকাশনী (২-৪ ইউনিট), উড়কি (১ ইউনিট) -কে শিল্পী কাইয়ুম চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার ২০২৩ দেয়া হয়।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়