মহাখালীতে অভিযান : তিন রেস্টুরেন্টকে তিন লাখ টাকা জরিমানা

আগের সংবাদ

শ্রমবাজারে সম্ভাবনার হাতছানি : সৌদি আরব ও মালয়েশিয়ায় সংকট দেখা দিলেও ইউরোপে সম্ভাবনার হাতছানি

পরের সংবাদ

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় : ছাত্রী নির্যাতনের সত্যতা মিলেছে

প্রকাশিত: মার্চ ১, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: মার্চ ১, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে দেশরতœ শেখ হাসিনা হলে ছাত্রী নির্যাতনের ঘটনায় ছাত্রলীগের সহসভাপতি সানজিদা চৌধুরী অন্তরাসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা পেয়েছে পৃথক দুই তদন্ত কমিটি। অন্যদিকে আদালতের নির্দেশে গঠিত বিভারবিভাগীয় তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে বলা হয়, ইবির ছাত্রী হলে শিক্ষার্থী নির্যাতনের ঘটনাকে কেন্দ্র করে হলের প্রভোস্ট শামসুল আলম, হাউজ টিউটর মৌমিতা আক্তার ও ইশরাত জাহানসহ কয়েকজনের দায়িত্বে চরম অবহেলার সত্যতা পাওয়া যায়। প্রক্টর শাহাদাত হোসেনের কর্মকাণ্ড ছিল উদাসীন ও দায়সারা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ফিন্যান্স বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্রী ফুলপরী খাতুনকে র‌্যাগিং, শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন এবং ওই পাশবিক, অমানবিক ও ন্যক্কারজনক ঘটনাটি ছিল পূর্বপরিকল্পিত। পরিসংখ্যান বিভাগের ২০১৭-১৮ সেশনের শিক্ষার্থী সানজিদা চৌধুরী এই ন্যক্কারজনক ঘটনার হুকুমদাতা। ওই জঘন্য ঘটনার সঙ্গে হালিমা আক্তার মুন্নী, ইশরাত জাহান মীম, তাবাসসুম ইসলাম, ময়াবিয়া জাহান জড়িত এবং তাদের দ্বারা ঘটনাটি ঘটে। তারা ঘটনাস্থলে উপস্থিত থেকে ফুলপরীকে পাশবিক কায়দায় অমানবিক নির্যাতন করে।
সরাসরি নির্যাতন করে হালিমা আক্তার মুন্নী, ইশরাত জাহান মীম, তাবাসসুম ইসলাম ও ময়াবিয়া। তাবাসুমের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে প্রতীয়মান হয় যে, ১২ ফেব্রুয়ারি রাতে দেশরতœ শেখ হাসিনা হলের ডাইনিংয়ে ফুলপরীর উপর পাশবিক নির্যাতনের সময় উর্মি ও মীম ভিডিও ধারণ করে। তবে কোনো ভিডিও রেকর্ড পাওয়া যায়নি।
আদালতেদর নির্দেশে গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে বলা হয়, তাবাসসুমের নেতৃত্বে ১০৫ নম্বর রুমে পিংকীর উপস্থিতিতে ফুলপরীকে ১১ ফেব্রুয়ারি রাত আটটায় হেনস্তা করে। এরপর রাত ৯টার দিকে অন্তরার উপস্থিতিতে ৩০৬ রুমে (ফুলপরীর বক্তব্যে গণরুম) নিয়ে ফুলপরীকে মেয়েদের সামনে মানসিক নির্যাতন করা হয়। এমনকি সেই রাতে ৩০৬ নম্বর রুমে থাকা মেয়েদের অন্তরা নির্দেশ দেয় ফুলপরীকে প্রত্যকে একটা একটা চড় মারতে। লিমা ও তাবাসসুম ফুলপরীর মোবাইল কেড়ে নয়। নির্যাতনের এক পর্যায়ে ফুলপরী অন্তরার পায়ে ধরতে বাধ্য হয়। এসময় ফুলপরী মানসিকভাবে ভেঙে পরে।
এই ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ে হলের দায়িত্বশীলদের অবহেলা ও উদাসীনতা ছিল বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। এতে বলা হয়, হলের প্রভোস্ট শামসুল আলম, সহকারী রেজিস্টার আব্দুর রাজ্জাক, শাখার কর্মকর্তা হামিদা খাতুন, আয়া, ডাইনিং ম্যানেজার সোহেল রানা, হাউজ টিউটর মৌমিতা আক্তার ও সহকারী অধ্যাপক ইশরাত জাহানের দায়িত্বে চরম অবহেলা ও ফুলপরী ইস্যুতে গাফিলতি ছিল। প্রক্টর শাহাদাত হোসেন ছিল উদাসীন ও দায়সারা।
গতকাল মঙ্গলবার পৃথক প্রতিবেদন দুইটি বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি রাজিক-আল-জলিলের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চে তুলে ধরেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তুষার কান্তি রায়। পরে আদালতে প্রতিবেদন দুটির অংশবিশেষে পড়ে শোনান তিনি। এ সময় রিটের পক্ষে গাজী মো. মহসীন শুনানিতে ছিলেন। পরে হাইকোর্ট আজ বুধবার আদেশের জন্য দিন ধার্য করেন। পাশাপাশি ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় আইন ও আইনের অধীনে প্রনীত বিধি-প্রবিধানমালা সংগ্রহ করে তা দেখাতে এবং ইবির কোনো আইনজীবী থাকলে তাকে জানাতেও বলেছেন আদালত।
গত ১২ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের দেশরতœ শেখ হাসিনা হলের গণরুমে সাড়ে চার ঘণ্টা আটকে রেখে নির্যাতন করার অভিযোগ করেন ফুলপরী। এ ঘটনা নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে আসা প্রতিবেদন যুক্ত করে এবং জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইন অনুসারে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশনা চেয়ে ১৫ ফেব্রুয়ারি রিট করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ও ইবির সাবেক শিক্ষার্থী গাজী মো. মহসীন। রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে গত ১৬ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্ট রুল দিয়ে শিক্ষার্থী নির্যাতনের ঘটনা তদন্তে তিন সদস্যের কমিটি গঠন, নির্যাতনের শিকার শিক্ষার্থীর নিরাপত্তা নিশ্চিত এবং ওই নির্যাতনে জড়িত থাকার অভিযোগে ছাত্রলীগের সহসভাপতি সানজিদা চৌধুরী ও তাবাসসুম নামের দুই শিক্ষার্থীকে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের বাইরে রাখাসহ কয়েক দফা নির্দেশ দেন। কমিটির প্রতিবেদন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেলের মাধ্যমে আদালতে জমা দিতে বলা হয়। এ ছাড়া ওই ঘটনা নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের গঠিত কমিটির প্রতিবেদনও ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেলের মাধ্যমে আদালতে দাখিল করতে বলা হয়। সেই নির্দেশনা মতে গতকাল পৃথক প্রতিবেদন সীলগালা করে আদালতে দাখিল করা হয়।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়