যৌতুকের জন্য স্ত্রী হত্যার মামলায় স্বামীর মৃত্যুদণ্ড

আগের সংবাদ

বিদেশিদের নজর ঢাকার দিকে : ব্যস্ত সময় পার করলেন ভারত, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও কোরিয়ার শীর্ষ কূটনীতিকরা

পরের সংবাদ

সাহিত্য ও ভোরের কাগজ

প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ১৫, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: ফেব্রুয়ারি ১৫, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

যদি ভোরের সূর্যের সঙ্গে ভোরের কাগজকে তুলনা করা হয় তাতে অত্যুক্তি করা হবে না। কেননা সূর্য যেমন পৃথিবীকে আলোকিত করে, তেমনি ভোরের কাগজ মানুষের হৃদয়ের অন্ধকার দূর করে। সত্য এবং নির্ভুল সংবাদের পাশাপাশি মানুষের মননশীল কাজেও এ পত্রিকাটি নিরলসভাবে নিভৃতে কাজ করে চলেছে। যেমন সাহিত্যের কথাই ধরা যাক- ভোরের কাগজ প্রতি সপ্তাহে ঋদ্ধ আয়োজনে সাহিত্য পাতা করে থাকেন। মানসম্মত এ সাহিত্য পাতা, যারা সাহিত্য চর্চা করে থাকেন, তারা এবং পাঠক সমাজ উভয়েই উপকৃত হন। মানুষের আত্মা যেমন রয়েছে তেমনি একটি মনও রয়েছে। সেই মনের খোরাক সাহিত্য। সাহিত্য মনের কথা বলে, মানুষের কথা বলে, জীবন-দর্শনের কথা বলে। অন্যান্য পত্রিকার চেয়ে আলাদা মাত্রায় একটু আলাদা স্বাদে ভোরের কাগজ এই মন-মানুষ-জগৎ-জীবন-দর্শনের গুরুত্বের কথা বিবেচনায় রেখে নতুনভাবে নতুন আঙ্গিকে সাহিত্য সাময়িকী প্রকাশ করে থাকেন।
বর্তমানে সাহিত্যের যে অবস্থা, সেই নাজুক পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের পথে ভোরের কাগজ অনেক দূর এগিয়ে। সাহিত্যে লেখক সমাজ একটা লেখাতে যদি বেশি সময় ব্যয় করত তাহলে তার লেখার মান আরো বৃদ্ধি পেত। অনেক লেখক আছেন তারা তা না করে বেশি বেশি প্রচারের দিকে সময় ব্যয় করে থাকেন। এতে লেখার শিল্পগুণে কিছুটা ব্যাঘাত হয়। সমাজ পালটিয়েছে। পরিবর্তনের হাওয়া লেগেছে সর্বক্ষেত্রেই। এখন মানুষের চাহিদা আগের মতো নেই। যান্ত্রিক সময় ও প্রযুক্তি মানুষের মনোপেশিচ জায়গাগুলোকে ক্রমাগত নিঃশেষ করে ফেলছে। এসব ক্ষেত্রে দৈনিক পত্রিকাগুলো নিয়ত কাজ করে যাচ্ছেন। এগুলোর মধ্যে অন্যতম শক্ত অবস্থানে জায়গা করে নিয়েছে ভোরের কাগজ।
সপ্তাহের শুক্রবারে ভোরের কাগজের সাহিত্য সাময়িকী বের হয়। সুন্দর রঙিন প্রচ্ছদে আচ্ছাদিত। এ পাতায় কবিতা, গল্প, প্রবন্ধ, উপন্যাস ইত্যাদি সুন্দরভাবে সাজানো থাকে। যা পড়ে পাঠকদের মনোজাগতিক ধারণায় এক আলাদা অনুভূতি জন্মে। যা মানুষের বোধের জায়গায় রোমাঞ্চকর স্পর্শের সুর তোলে। পরিবর্তনের এক আলাদা জগতের ঢেউ খেলে যায় দোলায় দোলায়। প্রকৃত শিল্পগুণ সমৃদ্ধ সাহিত্যের শিল্পরস যাতে মানুষ উপভোগ করতে পারে বা ইন্দ্রিয় দ্বারা নতুন অনুভূতির জগতে পৌঁছাতে পারে তার জন্য নিয়ত ভোরের কাগজ নিভৃতে কাজ করে চলেছেন।
১৯৯২ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি দৈনিক ভোরের কাগজের প্রতিষ্ঠাকাল। ২০২৩ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি ৩১তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন করতে চলেছে এ পত্রিকাটি। পত্রিকাটির প্রতিষ্ঠার সঙ্গে সঙ্গেই চার পাতায় মোড়ানো রঙিন প্রচ্ছদে সাহিত্য পাতা বের করে যাচ্ছেন। যারা সাহিত্যচর্চা করে থাকেন তাদের ভালো মানের লেখা হলেই ভোরের কাগজ নান্দনিকভাবে প্রকাশ করে থাকে। এছাড়াও নবীন লেখকদের লেখাও প্রকাশ করে লেখকদের উৎসাহ দিয়ে থাকেন। শিল্পগুণ বিচারে লেখা প্রকাশিত হয়। সাহিত্য আসলে মায়াবী জগৎ। একটু আদর, একটু ভালোবাসা, একটু স্নেহ, একটু নিবেদন, একটুখানি চাওয়া এগুলোই তো আসলে সাহিত্যের অস্তিত্ব। মনের কষ্ট-যন্ত্রণা নিয়ে সান্ত¡না দেয়া, গল্প করা এগুলোই তো সাহিত্যের মূল বিষয়। মোটকথা মানুষের মনের যাবতীয় বিষয়াবলি হলো সাহিত্যের ভিতরকার রস। ভোরের কাগজ এগুলো বিচার বিবেচনায় এনে সাহিত্যের ক্ষেত্রে অনন্য অবদান রেখে পথ চলছেন।
মানুষ তো শুধুই রক্ত মাংস নিয়ে তৈরি একটি যন্ত্র নয়। মানুষের আছে ক্ষুধা ও তৃষ্ণার জগৎ, চাওয়া না পাওয়ার জগৎ, প্রেম-বিরহের জগৎ, ক্ষোভ ও হিংসার জগৎ। এসব বিষয় নিয়েই সাহিত্য রচিত হয়। আর কোনো লেখক যদি সাহিত্যে এসব বিষয় সূ²াতিসূ²ভাবে শৈল্পিক মানদণ্ডে ফুটিয়ে তুলতে অথবা তুলে ধরতে পারেন সেক্ষেত্রে ভালো মানের সাহিত্য রচিত হয়। এমন লেখকদেরই ভোরের কাগজ খুঁজে বের করে থাকেন। তাদের আর্থিকভাবেও সহযোগিতা করে থাকেন। ভোরের কাগজের সাহিত্য সাময়িকী দেখলেই চমক লেগে যায়। মনের মধ্যে আলাদা ঢেউ খেলে যায়। ভোরের কাগজের সাহিত্য সম্পাদক অত্যন্ত বিচক্ষণতার সঙ্গে সাহিত্য সাময়িকী বের করে থাকেন। তিনি একঝাঁক তরুণ অথচ প্রতিশ্রæতিশীল লেখক তৈরি করেছেন যারা নিয়মিত সাহিত্য চর্চা করে যাচ্ছেন। এক্ষেত্রে সাহিত্য সম্পাদক সালেক নাছির উদ্দিনের নাম না বললেই নয়।
সাহিত্যকে বলা হয় কালের প্রতিচ্ছবি। সময়ের উপস্থাপন করে কালে কালে সাহিত্য মানুষের হৃদয়ে পাকাপোক্ত জায়গা করে নিয়েছে। অগ্রজ লেখকদের শব্দচয়ন, উপমার ব্যবহার, উৎপ্রেক্ষার ব্যবহার সবকিছুই অনুজ লেখকদের অনুপ্রেরণা জোগায়। কিন্তু অনুজদের লেখাতে যেন সময়ের প্রতিচ্ছবি ফুটে ওঠে। এদিকে খেয়াল রাখতেই হবে। না হলে সে সাহিত্য অঙ্কুরেই নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে এ কথা বলাই যায়। বর্তমান উত্তরাধুনিক যুগে আমরা পা রেখেছি। এ যুগের মানুষের চাওয়া-পাওয়া, বিরহ-বেদনা, সুখ-দুঃখ, জৈবিক কামনা-বাসনা সবকিছুই যেন আল্ট্রা মর্ডানের। আর লেখকদের আরো গভীরভাবে মানুষের নার্ভ ধরতে হবে, বুঝতে হবে। না হলে লেখক আঁস্তাকুড়েই নিক্ষিপ্ত হবে। এসব দিক চিন্তা করেই ভোরের কাগজের সম্পাদকমণ্ডলী সাহিত্য সাময়িকী প্রকাশ করে থাকেন।
সাহিত্য শরীর বর্ধন করে না, মনের খোরাক জোগায়। হৃদয়ের অলিগলিগুলো যেন সাহিত্য দ্বারা সজ্জিত থাকে। বসন্ত ফাগুনের কৃষ্ণচূড়া-রাধারচূড়ার মতো। পুষ্পমঞ্জুরি দ্বারা থরে থরে সাজানো রাধার বৃন্দাবন ধাম। সেখানে সুখের ফোয়ারা ঝরে। বাতাস গন্ধে মাতে। যেখানে লেখক-মন সবসময় সৃষ্টিশীল, যেখানে ধ্যানের গৌরব ফুলে ফেঁপে ওঠে পাতা ফুল ফলে, যেখানে অষ্টপ্রহর আত্মায় বসন্ত ফোটে; সেখানে লেখকদের হৃদয় আবির রাঙায় রঙিন মধুর হয়ে নাচে শিল্পের প্রসব বেদনায়। সেসব দিক ঘেঁটে-ঘুঁটে সাহিত্য সম্পাদক সাময়িকী প্রকাশ করেন। মনের অবয়বে অসংখ্য শিল্প পাঠকদের সামনে তুলে ধরেন ভোরের কাগজ শিল্পের অনুরাগের ছোঁয়ায়।
প্রতি বুধবার ‘ইষ্টিকুটুম’ পাতা বের করেন এ পত্রিকাটি। শিল্পের ছোঁয়ায় সুন্দর প্রচ্ছদে প্রকাশিত হয় রঙিন কাগজে। এখানে শিশু শিল্পীরা লেখা দিয়ে থাকেন। মূলত এ পাতায় শিশুদের সাহিত্য প্রকাশিত হয়। যেমন শিশুতোষ গল্প, ছড়া, শিশুদের চিত্রাঙ্কন, শিশুদের জীবনী, শিশু কবিতা ইত্যাদি। সাহিত্যের প্রতিক্ষেত্রে ভোরের কাগজ নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন অবলীলায়।
ভোরের কাগজ একটি মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারণকারী ও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের জাতীয় দৈনিক পত্রিকা। প্রগতিশীল ধারাকে বেগবান করে শৈল্পিক তুলির আঁচড়ে রংতুলি মেখে সম্মুখপানে প্রত্যহ এগিয়ে চলছে বিজয়ের পতাকা হাতে। ভোর হতে না হতেই যেন দৈনিক ভোরের কাগজ পাঠকের হাতে প্রতিদিন পৌঁছায় এ আশাবাদ করতেই পারি। আমরা ভোরের কাগজের সঙ্গে সবসময় আছি এবং থাকব। ভোরের কাগজের সাহিত্য সাময়িকী আরো সুন্দর ও শৈল্পিক হোক অহর্নিশ এ প্রত্যাশা রাখি। আগামীর প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী যেন ভোরের কাগজের আরো সাফল্যে উদযাপিত হয় এ কামনা করি।

আদ্যনাথ ঘোষ
কবি ও শিক্ষক

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়