যৌতুকের জন্য স্ত্রী হত্যার মামলায় স্বামীর মৃত্যুদণ্ড

আগের সংবাদ

বিদেশিদের নজর ঢাকার দিকে : ব্যস্ত সময় পার করলেন ভারত, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও কোরিয়ার শীর্ষ কূটনীতিকরা

পরের সংবাদ

ন্যাশনাল ট্রেড সেন্টার : জনগণের বৃহত্তর কল্যাণের রূপরেখা

প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ১৫, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: ফেব্রুয়ারি ১৫, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

বর্তমান পৃথিবীর একজন সফলতম রাষ্ট্রনায়ক হচ্ছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে অভাবনীয় সব সফলতার পরও মাঝে মাঝে তার সরকারকে বিব্রতকর পরিস্থিতির মধ্যে পড়তে হয় নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের কৃতিম সংকট ও মূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ে। এটা শুধু শেখ হাসিনার সরকারের বেলায় নয় বরং আমাদের দেশের সব সরকার-ই এ বিষয়টা নিয়ে মাঝে মাঝেই সারাদেশের সব শ্রেণির মানুষের মাঝে দারুণ বিব্রতকর পরিস্থিতির মুখোমুখি হন। এই নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য এবং এরই সঙ্গে সংযুক্ত রয়েছে কৃষকের ন্যায্যমূল্য। কৃষককে লাভবান করতে গেলে বা ন্যায্যমূল্য দিতে গেলে ভোক্তাদের কাছে পণ্যের মূল্য হয়ে যায় অনেক; আবার ভোক্তাদের সন্তুষ্ট করতে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ করলে কৃষক বাঁচে না- এ এক উভয় সংকট! এই দুই সংকট মিলে আরো বড় সংকট তৈরি হয় ভোটের রাজনীতিতে। কেননা কৃষক ও ভোক্তাসাধারণ দুই শ্রেণির ব্যাপক সংখ্যক মানুষই থাকেন মনকষ্টে, মাঝে লাভবান হয় মাত্র গুটি কয়েকজন মধ্যস্থ ব্যবসায়ী; যারা উৎপাদনে কোনো অবদানই রাখেন না, উৎপাদন (আমদানি) আর ভোক্তার মাঝের এই শ্রেণিটা আর্থিকভাবে যেমন লাভবান হন তেমনিভাবে কখনো কখনো সরকারকে বেকায়দায় ফেলে মাথা ব্যথার কারণ হয়ে যান।
তারা আবার, মাথা ব্যথার যত বড় কারণই হোক না কেন, আমাদের বহুকাল ধরে প্রচলিত যে বিপণন ব্যবস্থা এবং সেখানে তাদের যে শক্ত অবস্থান; হঠাৎ করে তাদের উঠিয়ে দেয়াও সম্ভব নয়। তাই যদি কোনো কৌশল ও ব্যবস্থা প্রয়োগের মধ্য দিয়ে সরকার যদি পুরো বিপণন ব্যবস্থার ওপর একটি নিয়ন্ত্রণ আনতে পারে তাহলে কৃষক, মধ্যস্থ ব্যবসায়ী ও ভোক্তাসাধারণ সব শ্রেণিকেই পুরোপুরি সন্তুষ্টির মধ্যে আনতে না পারলেও খুব ভালো রকম একটি সন্তুষ্টির পর্যায়ে আনা যাবে। এতে করে সরকার অনেক সময় অনেক বিব্রতকর পরিস্থিতি থেকে (চিনি, পেঁয়াজ, তেল, লবণের দাম নিয়ে বারবার যে রকম হয়েছে; এখনো হচ্ছে) মুক্তি পেতে পারেন। সেই চিন্তা থেকেই আমার অত্যন্ত ক্ষুদ্র পরিসর থেকে সরকারের নিয়ন্ত্রণাধীনে- ন্যাশনাল ট্রেড সেন্টার (এনটিসি) গঠন প্রস্তাবনা করছি।
(ঘঞঈ) (এনটিসি)-এর কাজ :
এনটিসির কাজ হচ্ছে উৎপাদনকারী ও আমদানিকারকদের কাজ থেকে ভোক্তাদের কাছে পণ্য ও সেবা পৌঁছে দিতে যে বহুসংখ্যক মধ্যস্থ ব্যবসায়ী রয়েছে এদের নিয়ন্ত্রণে এনে বিপণন ব্যবস্থাকে সহজ, স্বচ্ছ ও ব্যয় সংকুলান করে দেয়া। অর্থাৎ এনটিসি মূলত নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যগুলোর (চাল, ডাল, আটা, ময়দা, তেল, চিনি, পেঁয়াজ, রসুন, জিরা, হলুদ, লবণ, শাক-সবজি, মাছ-গোশত অর্থাৎ প্রতি দিনের খাদ্য সংশ্লিষ্ট প্রভৃতি পণ্য) বিপণনের কাজ করবে। তবে বিদ্যমান মধ্যস্থ ব্যবসায়ীদের সঙ্গে নিয়ে। বিপণন কাজের সঙ্গে সঙ্গে কৃষি গবেষণা এবং কৃষকদের জীবনমান ও নিরাপত্তা নিয়েও কাজ করবে।
এনটিসি গঠন বা মূলধন :
পিপিপির (চচচ) আওতায় বা প্রাথমিকভাবে সরকার কিছু টাকা দিয়ে শুরু করে তারপর এনটিসির শেয়ার বা ইউনিট প্রত্যেক ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হবে; তবে যারা মধ্যস্থ ব্যবসা করে চলছেন তাদের অগ্রাধিকার। যখন যতগুলো শেয়ার বা ইউনিট ছাড়া হবে প্রথমে যারা মধ্যস্থ ব্যবসায়ের সঙ্গে জড়িত ছিলেন বা আছেন তাদের মাঝে বণ্টনের পর শেয়ার থাকা সাপেক্ষে অন্যদের দেয়া হবে।
ধরা যাক, প্রথমে ঘোড়াশাল নরসিংদী থেকে কারওয়ান বাজারে মৌসুমি সবজি দিয়ে এনটিসি পরীক্ষামূলকভাবে কার্যক্রম শুরু করল। এখানে ঘোড়াশাল-নরসিংদী ফড়িয়া রয়েছেন ২০০ জন, যাদের গড় মূলধন ১ লাখ টাকা করে মোট ২ কোটি; পাইকারি রয়েছেন ৫০ জন যাদের গড় মূলধন ১০ লাখ করে মোট ৫ কোটি টাকা, কারওয়ান বাজারে এদের জন্য পাইকারি রয়েছেন ৫ জন যাদের গড়ে ১ কোটি করে ৫ কোটি টাকা। তাহলে এই কয়জনের মোট টাকা হচ্ছে ২+৫+৫=১২ কোটি। এখানে সবাই বা সব টাকা দিয়ে ঘঞঈ-এর শেয়ার কিনবে না, ধরা যাক ১২ কোটি থেকে ৮ কোটি টাকার এনটিসি শেয়ার কিনবে।
তাহলে সরকার যদি প্রাথমিকভাবে ৫ কোটি টাকা দিয়ে এখানে শুরু করে তাহলে ৫+৮=১৩ কোটি টাকা বা ২০/২৫ কোটি টাকা দিয়ে এটা সুন্দরভাবে চলতে পারবে (পরীক্ষমূক)। এটা সফল হলে সারাদেশে করা যাবে।
এনটিসির মূল ব্যবস্থাপনা গঠন করা যেতে পারে কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট, কৃষি মন্ত্রণালয়, বাজার নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর, ভোক্তা অধিকার ও প্রশাসনের লোকদের সমন্বয়ে। কার্যক্রম পরিচালনার জন্য যে লোকবল প্রয়োজন হবে- সরকার নিয়ন্ত্রিত মূল ব্যবস্থাপনার অধীনে ফড়িয়া ও পাইকাররা এনটিসির শেয়ার ক্রয়ের সঙ্গে সঙ্গে তাদের দক্ষতা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে এনটিসিতে চাকরিও করতে পারবেন। চাকরিটা বেতন ভিত্তিতেও হতে পারে আবার প্রতি কেজি পণ্যে ১/২-৫/৭ টাকা কমিশন ভিত্তিতেও হতে পারে; কেননা, যারা ব্যবসা বা স্বাধীন পেশায় থাকেন তারা চাকরি বিষয়টা মানসিকভাবে সহজে মানতে পারেন না। তাদের এই চাকরির বেতন বা বিক্রয় কমিশন ছাড়াও এনটিসির শেয়ার বা ইউনিট বাবদ মুনাফা তো থাকছেই।
এনটিসির শুরুতে মূল ব্যবস্থাপনার দায়িত্বটা ‘বাংলাদেশ সেনাবাহিনী’-কে যুক্ত করা যেতে পারে।
এনটিসি মূলধন গঠন :
পুঁজিবাজারের মাধ্যমে এনটিসি গঠন করা সবচেয়ে সহজ ও কার্যকরী। কেননা পুঁজিবাজারের মাধ্যমেই সবচেয়ে সহজে মালিকানা/শেয়ার/ইউনিট ক্রয়-বিক্রয় করা যায় এবং মুনাফা বণ্টন সবচেয়ে স্বচ্ছ ও সহজ হয়। এই স্বচ্ছতা ও সহজীকরণের জন্য যে কেউই এখানে বিনিয়োগ করে মুনাফা নিতে আগ্রহী হবেন।
এনটিসি শেয়ার/ইউনিটের কোন গতানুগতিক ট্রেড (এবহবৎধষ ঞৎধফরহম) হবে না। এটি কেবল এর (ঋধপব ঠধষঁব) ফেইজ ভ্যালুতে-ই (১০ টাকা সব সময়ই ১০ টাকা) ক্রয়-বিক্রয় হবে এবং প্রতি মাসে বা প্রতি ৩ মাসে হিসাব করে এর মুনাফা ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে বণ্টন করে দেয়া হবে। সুতরাং এখানে বাজারের বিনিয়োগকারীদের ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার কোনো আশঙ্কা না থাকায় এবং মুনাফা পাওয়ার জন্য অনেকেই বিনিয়োগ করবেন।
ইতোমধ্যে অর্জিত অপ্রদর্শিত অর্থ/কালো টাকা/বিদেশে পাচার হওয়া টাকা এনটিসিতে বিনিয়োগের শর্তহীন সুযোগ দেয়া যেতে পারে। এটাকে অনৈতিক মনে হলেও সময়ের প্রয়োজনে বৃহৎ স্বার্থে তা করা হলে অর্থনীতির জন্য সুফলই হবে। কেননা জাতীয় আয়ের বিরাট একটি অংশ সেটি অর্থনীতির মূল স্রোতে এসে যদি বেশি সংখ্যক নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে সহযোগিতা করে সরকারকে একটা স্বস্তি এনে দেয় তাহলে অন্যদিকে বেশি নজর দিতে পারবে যা দেশ ও জাতির জন্য আরো ভালো সুফল বয়ে আনতে পারে।
যেসব ফড়িয়া, পাইকারি, মধ্যস্থ ও অন্যান্য ব্যবসায়ীর স্থাবর-অস্থাবর (ব্যবসা পরিচালনার জন্য) সম্পত্তি, (চাতাল, গুদাম ঘর, গাড়ি প্রভৃতি রয়েছে)। এনটিসিরও তো সেগুলো প্রয়োজন হবে তাই ওই সব সম্পত্তি তারা এনটিসিকে ভাড়া দিতে পারবেন বা মূল্য নির্ধারণ করে এনটিসি থেকে সমমূল্যের শেয়ার পাবেন।
এনটিসি গঠনে নানাবিধ সুফল :
# সার, বীজ, কীটনাশক নিয়ে আমাদের কৃষকদের অনেক অভিযোগ রয়েছে। তাই কৃষকদের নিয়ে একটি সমিতি বা সংঘের মতো করে এনটিসিই তাদের বীজ, সার ও কীটনাশক সরবরাহ করবে এবং তাদের উৎপাদিত পণ্য এনটিসির কাছে বিক্রি করবে। এতে করে কৃষকরা একদিকে যেমন বীজ, সার ও কীটনাশক ভালো মানের পাবেন তেমনি এনটিসিও পাবে গুণগতমানের পণ্য। এটি এনটিসির একটি সহযোগী ব্যবসা হবে।
# এনটিসি বিশেষজ্ঞ দ্বারা তার সংঘ বা সমিতির কৃষকদের প্রয়োজনীয় বিভিন্ন পরামর্শ দিতে পারবে। প্রশিক্ষণও দিতে পারবে।
# এনটিসিতে প্রত্যেক কৃষকের নামে একটি আইডি থাকবে, যাতে কৃষকের জমির পরিমাণ, কোন পণ্য উৎপাদন করছে, তার কতটুকু বীজ, সার, কীটনাশক লাগবে তার সম্ভাব্য পরিমাণ, সম্ভাব্য দাম এবং উৎপাদন শেষে কখন কোন দামে কতটুকু পণ্য বিক্রি করলো সব হিসাবভুক্ত থাকবে। কৃষক যদি বড় ধরনের আর্থিক সংকটে থাকেন এবং বীজ, সার, কীটনাশক মূল্য পুরো পরিশোধ করতে না পারেন তাহলে এনটিসি আইডিতে তার বাকি থাকবে এবং তিনি যখন তার পণ্য বিক্রি করবে তখন সেটি সমন্বয় করা হবে।
# সরকার কৃষকদের যেসব আর্থিক ভর্তুকি এখন ব্যাংকের মাধ্যমে দেন, সেটি এনটিসির আইডির মাধ্যমে আরো সহজ ও স্বচ্ছভাবে দেয়া যাবে এবং যেটি সরাসরি তার কৃষি উপকরণেই কেবল ব্যয় হবে। টাকা হাতে নিয়ে অন্য কোনো কাজে ব্যয়ের সুযোগ পাবে না।
# এনটিসির মাধ্যমে কৃষকদের আইডি করা গেলে আবাদি জমি, বীজ, সার, কীটনাশক উৎপাদনসহ সবকিছুর প্রকৃত তথ্য প্রতি মুহূর্ত আপডেট হতে থাকবে এবং তা যখন-তখন পাওয়া যাবে।
# এনটিসি গঠন করা গেলে কৃষি উৎপাদনে এক বিপ্লব ঘটে যেতে পারে। কেননা, এখন পর্যন্ত আমাদের দেশের কৃষকরা তারা স্থানীয়ভাবে ঠিক করেন কোন বার কতটুকু জমিতে কি কি ফসল চাষাবাদ করবেন। তারা মাটির গুণাগুণ, আবহাওয়া পরিবর্তন, চাহিদা-যোগানসহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ই বিবেচনায় রাখেন না। এর জন্য তাদের ব্যক্তি পর্যায়ে ও স্থানীয় পর্যায়ে পর্যাপ্ত শিক্ষা ও আর্থিক সামর্থ্য কোনটাই নেই। কিন্তু এনটিসি গঠন করা গেলে বিভিন্ন অঞ্চলে বিশেষজ্ঞ নিয়োগ করে কেন্দ্রীয়ভাবে সঠিক নিয়ন্ত্রণ করতে পারলে সত্যিই এক বিপ্লব ঘটে যেতে পারে। আমাদের কৃষি ব্যবস্থায় আরেকটি বড় সমস্যা হলো- যে বছর ধানের দাম বেশি, তার পরের বছর বেশির ভাগ কৃষক বেশি জমিতে ধান চাষ করেন, ফলে পরের বছর জোগান বেশি হয়ে ধানের দাম কম পাচ্ছেন। আবার পেঁয়াজের দাম কম হলে পরের বছর পেঁয়াজ আবাদ অনেক কমে যাচ্ছে; ফলে বড় ধরনের সংকট তৈরি হচ্ছে- এনটিসি গঠন করা গেলে পুরো চাষাবাদ ব্যবস্থার ওপর একটি দক্ষ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হয়ে এসব নানা সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে।
# এনটিসির মাধ্যমে সারাদেশে গড়ে উঠবে একদল প্রশিক্ষিত কৃষক ও কৃষি বিশেষজ্ঞ। যারা হবেন আমাদের জাতীয় সম্পদ। সেই সম্পদের অতিরিক্ত অংশ আমরা বিদেশে রপ্তানি করে প্রচুর পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করতে পারব।
# এনটিসির মাধ্যমে গড়ে ওঠা দক্ষ কৃষক ও কৃষি বিশেষজ্ঞ দল নিয়ে আমরা পৃথিবীর বড় বড় দেশ যাদের চাষাবাদ যোগ্য প্রচুর জমি অনাবাদি পড়ে আছে সেইসব জমি লিজ নিয়ে কিংবা তাদের সঙ্গে অংশীদারের ভিত্তিতে ব্যবসা করতে পারি।
# ব্যক্তি পর্যায়ে অনেকে বিভিন্ন দেশে সবজি রপ্তানি করে থাকেন। কিন্তু অনেক রকম সমস্যা যা ব্যক্তির পর্যায়ে মোকাবিলা করা কষ্টকর এনটিসি সহজেই পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে মাংস/মাছ/ সবজি রপ্তানির কাজটি করতে পারবে।
# এনটিসি গঠন হলে দেশে উৎপাদিত ও আমদানি করা প্রতিটি পণ্যদ্রব্যের সঠিক মজুত এবং চাহিদা ও জোগানের সবচেয়ে সম্ভাব্য পরিমাণের হিসাবটি সরকার সঠিকভাবে জানতে পারবে এবং সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে পারবে।
# এনটিসি গঠন করা গেলে সরকার ইচ্ছে করলে কোন বিশেষ মুহূর্তে কোনো দ্রব্যের মূল্য কমবেশি করতে পারবে। যেমন কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগ, রোজা, ঈদে সরকার চাল, তেল, চিনির দাম ১ টাকা/ ২ টাকা কমিয়ে দিল, পরে আবার ইচ্ছে করলে কোনভাবে পুষিয়ে নিতে পারবে। কিন্তু এখন ব্যবসায়ীদের হাতে-পায়ে ধরেও বিশেষ প্রয়োজনে ১টা কমানোও কত কষ্ট, কখনোবা সম্ভবই হয় না।
# এনটিসি গঠন করা গেলে সরকারের ওপর রাজনৈতিক প্রতিহিংসা পরায়ণ ও ভূইফোঁড় ব্যবসায়ীদের অযাচিত প্রভাব কমবে।
# এনটিসির স্থানীয় ক্রয় কেন্দ্র ও পাইকারি ও খুচরা বিক্রয় কেন্দ্রে উভয় জায়গাতেই ডিজিটাল বোর্ডে প্রতিটি পণ্যের ক্রয় ও বিক্রয় মূল্য প্রদর্শন করবে।
# এনটিসির মুনাফার একটি অংশ রিজার্ভ রেখে বয়ষ্ক, রোগাগ্রস্ত, দুর্ঘটনায় পতিত কৃষকদের অবসরকালীন ভাতা দেয়া যেতে পারে।
# এনটিসি গঠন করা গেলে কৃষি প্রধান দেশ হিসেবে শতকরা ৭০ শতাংশেরও বেশি কৃষিজীবীদের প্রশিক্ষণের সঙ্গে সঙ্গে এই ব্যাপক জনগোষ্ঠীর মাঝে জনসচেতনতা সৃষ্টি, স্বাস্থ্য সচেতনতা, শিক্ষাসহ সব ধরনের সচেতনতামূলক কাজকর্ম অনেক সহজ হয়ে যাবে।
# বিভিন্ন মৌসুমে যে সব পণ্য বেশি উৎপাদিত হয় সংরক্ষণের অভাবে তা বেশির ভাগ নষ্ট হয়। কৃষক মূল্য না পেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হন। এনটিসি গঠন করা গেলে সেটির সামর্থ্য বেশি থাকবে ফলে অতিরিক্ত পণ্য সংরক্ষণের ব্যবস্থা করতে পারবে; তার চেয়েও বড় বড় কথা এনটিসির বিশেষজ্ঞ দল অতিরিক্ত পণ্য দিয়ে বিকল্প কিছু একটা উৎপাদন করতে পারবেন। বর্তমান ব্যবস্থায় ব্যক্তি পর্যায়ে কৃষকরা জ্ঞানসহ নানাবিধ সীমাবদ্ধতার কারণে তা পারছেন না।
# এনটিসি প্রতিষ্ঠা করা গেলে ধীরে ধীরে কৃষি শ্রমকে পেশা ও চাকরির (বর্তমান যা দিন মজুর) অধীনে নিয়ে আসা যাবে। এতে একদিকে যেমন কৃষি শ্রমিকদের মাঝে পেশাদারিত্ব ও দক্ষতা বাড়বে অন্যদিকে গ্রামের মানুষের শহরমুখী প্রবণতা কমে শহরের রিকশা ও ফুটপাত দৌরাত্ম্য কমবে।
# এনটিসি গঠনের মাধ্যমে যদি কৃষিশ্রমকে চাকরির অধীনে নিয়ে আসা যায় তাহলে যখন যে অঞ্চলে কৃষি কাজ কম থাকবে সেই অঞ্চলের শ্রমিকদের অন্য অঞ্চলে নিয়ে যাবে আবার এনটিসির অন্য যেসব প্রকল্প থাকবে সেখানেও কাজে লাগাতে পারবে।
# এনটিসি গঠন করা হলে কৃষকদের আইডি নাম্বার করার সঙ্গে সঙ্গে ভোক্তাদেরও আইডি নাম্বার করা যাবে। এতে করে কোন পণ্যের চাহিদা কত তা সহজে বোঝা যাবে এবং আমাদের দেশের গ্রাম-শহর, শিক্ষিত-অশিক্ষিত কোন শ্রেণির ভোক্তারা কোন পণ্য কি পরিমাণ ভোগ করেন তার সবচেয়ে সঠিক জরিপটি সব সময় আপডেট অবস্থায় এনটিসিতে পাওয়া যাবে। এতে করে অনেক সময় আমাদের জাতীয় নীতি নির্ধারণ ও স্বাস্থ্য সচেতনামূলক কাজকর্মে অনেক ধরনের সহযোগিতা পাওয়া যাবে।
# এনটিসি গঠন করা হলে মনোপলি ও সিন্ডিকেট এর অনৈতিক দৌরাত্ম্য দূর হয়ে ব্যবসায়ের মধ্যে নৈতিক ও মানবিক মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠিত হয়ে মুনাফা অর্জনে ভারসাম্য আসবে এবং ব্যবসা কেবল মুনাফার হাতিয়ার না হয়ে সেবা হিসেবে বিকশিত হবে।

* পুঁজিবাজারের মাধ্যমে এনটিসি গঠন করা হলে সারাদেশের সব শ্রেণির মানুষের অংশগ্রহণের সুযোগ থাকবে এবং এইভাবে আরো বড় কোনো কাজ করা যায় কিনা তার একটি পরীক্ষামূলক প্রকল্পও হবে।
* প্রতি মাসে মাসে অত্যন্ত স্বচ্ছতার সঙ্গে সহজেই এনটিসির শেয়ার হোল্ডারদের মুনাফাবণ্টন করে দেয়া যাবে। ফলে সবার আগ্রহ থাকবে।
* এনটিসির কাছে উৎপাদন খরচের সমস্ত হিসেব থাকার কারণে পণ্যদ্রব্যের ন্যায্যমূল্য নির্ধারণ করা সহজ হবে।
* কৃষি উৎপাদনে এক বিপ্লব সৃষ্টি হবে।
* প্রচুর পরিমাণে কৃষি পণ্য রপ্তানির দক্ষতা ও সামর্থ্য তৈরি হবে।
* প্রচলিত ব্যবস্থায় ব্যবসায়ীরা কৃষকদের ঠকিয়ে লাভবান হতে চেষ্টা করেন, কিন্তু এনটিসি গঠন হলে কৃষক ও ব্যবসায় একে অপরের স্বার্থ ঘনিষ্ঠভাবে জড়িয়ে যাবে বলে প্রত্যেকেই সহযোগী ও বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ করবে।
পরিশেষে বলতে হয় নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের বিষয়টি খুবই স্পর্শকাতর- কেননা, অনেক সময় অনিচ্ছাকৃত বা সরকারের নিয়ন্ত্রণের আড়ালে বা ফাঁকফোকরে অনেক অনিয়ম হয়ে থাকে সেগুলো মানুষ অনেকটা জানে না বা বুঝতে পারে না; আর জানলেও সে বিষয়গুলোর প্রভাব সরাসরি পড়ে না, তাই সে বিষয়গুলা নিয়ে মানুষের যত না মাথাব্যথা তার চেয়ে হাজার হজার গুণ বেশি মাথাব্যথা নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যেও ঊর্ধ্বগতি; কেননা প্রতিদিন তার পকেট থেতে বাড়তি টাকা খরচ করতে হয়। আর সেই আক্রোশের কারণে মানুষ যত রকম সুবিধা পেয়ে থাকে; বিশেষ করে জননেত্রী শেখ হাসিনার আগের ৫ বছর ও বর্তমানে একটানা ১৪ বছরে যত রকম যত সুযোগ-সুবিধা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ভোগ করছে তা কেবল এক নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের কাছেই মøান হয়ে পড়ছে অনেক সময়। এতো অর্জন কেবল দ্রব্যমূল্যের কছে ¤øান হতে পারে না। যদিও বিগত এক বছর যাবৎ রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধ এবং রাশিয়ার ওপর আমেরিকা ও পঞ্চিমা নিষেধাজ্ঞার কারণে শুধু আমাদের দেশে নয়, পৃথিবীজুড়ে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের সব নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে গেছে তারপরও, এটা আমাদের কেবল এক বছরের সমস্যা নয় বরং দীর্ঘকালের সমস্যা। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের ওপর সরকারি নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার জন্য আমার ন্যাশনাল ট্রেড সেন্টার (এনটিসি) বা জাতীয় ক্রয়-বিক্রয় কেন্দ্র সংক্রান্ত সংক্ষিপ্ত ও খসড়া ভাবনাটি কৃষি প্রধান বাংলাদেশের কৃষক রতœ প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা বরাবর বিনীত উপস্থাপন করছি।
আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, আমার প্রস্তাবিত ন্যাশনাল ট্রেড সেন্টার পদ্ধতি বা অন্য যে কোনো পদ্ধতিতে হোক জনগণের বৃহত্তর কল্যাণে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতেই হবে- একজন শেখ হাসিনার স্বপ্ন ও নিরলস পরিশ্রমে এত বছরের এত অর্জন কেবল দ্রব্যমূল্যের কাছে ¤øান হতে পারে না।

এম এম জিহাদ ওয়ায়েজ পরাগ
কলাম লেখক

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়