মিয়ানমারের ৩৭ শহরে মার্শাল ল’

আগের সংবাদ

পাঁচ ভোগ্যপণ্যে রোজার আঁচ : রমজান সামনে রেখে চিনি, ছোলা, খেজুর, ভোজ্যতেল ও মসলার দাম দফায় দফায় বাড়ছে

পরের সংবাদ

আদানির বিদ্যুৎ বাংলাদেশে আসা নিয়ে কোনো শঙ্কা নেই

প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ৬, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: ফেব্রুয়ারি ৬, ২০২৩ , ১:২০ পূর্বাহ্ণ

দেব দুলাল মিত্র : ভারত থেকে আদানি গ্রুপের বিদ্যুৎ দেশে আসা নিয়ে কোনো সংশয় বা শঙ্কা নেই। মার্চ মাসের প্রথম সপ্তাহে আদানির বিদ্যুৎ বাংলাদেশে এসে জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হবে। আদানির বিদ্যুতের দাম নিয়েও কোনো সমস্যা হবে না। পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিদ্যুতের দামের চেয়ে বেশি হবে না। এছাড়া আগামী এপ্রিল মাসে আদানির দ্বিতীয় ইউনিট থেকেও উৎপাদিত বিদ্যুৎ বাংলাদেশ পাবে। বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
জানা গেছে, গত ২৪ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের হিনডেনবার্গ রিসার্চের গবেষণায় গুজরাটের বৃহত্তর শিল্পগোষ্ঠী আদানি গ্রুপের উত্থানের পেছনে জালিয়াতি ও শেয়ারবাজারে কারচুপির চিত্র উঠে আসে। এরপরই আদানির প্রায় সব কোম্পানির শেয়ারবাজারে ধস নামে। আলোচনা-সমালোচনার ঝড় ওঠে। এর ফলে আশঙ্কা করা হয়েছিল, আদানির বিদ্যুৎ সহজেই বাংলাদেশ পাচ্ছে না। এছাড়া ঝাড়খন্ডের গোড্ডা থেকে বিদ্যুৎ আনতে কৃষকের ক্ষতির অভিযোগে আদানির বিদ্যুৎ প্রকল্প বন্ধ চেয়ে কলকাতা হাইকোর্টে মামলা হয়েছে। আগামী ৭ ফেব্রুয়ারি এই মামলার শুনানি। এই মামলার কারণে ঝাড়খন্ডের এই প্রকল্প থেকে যথাসময়ে বাংলাদেশের ৮০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পাওয়া নিয়েও শঙ্কা তৈরি হয়। কিন্তু বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ ও বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তারা সব শঙ্কা উড়িয়ে দিয়ে মার্চের প্রথম সপ্তাহে আদানির বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হবে বলে নিশ্চিত করেছেন। তবে ৮০০ মেগাওয়াটের পরিবর্তে ৭৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আসবে। আদানি গ্রুপ ঝাড়খন্ড থেকে মালদা ও মুর্শিদাবাদ জেলার ওপর দিয়ে বাংলাদেশের সীমান্ত পর্যন্ত প্রায় ৯৫ কিলোমিটার হাইটেনশন লাইন স্থাপনের কাজ জোরেশোরেই এগিয়ে নিচ্ছে। তবে স¤প্রতি মুর্শিদাবাদের ফারাক্কা এলাকার বেশ কয়েকজন কৃষক অভিযোগ করেন, ওই এলাকার ওপর দিয়ে বিদ্যুতের লাইন নেয়ায় তাদের লিচু ও আম বাগানের ফলন নষ্ট হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে তারা স্থানীয় প্রশাসনের কাছে গেলে পর পর তিন দফায় সমঝোতা বৈঠক হয়। কিন্তু সমঝোতা বৈঠক সফল হয়নি। গত ৩১ জানুয়ারি কৃষকদের পক্ষে মানবাধিকার সংগঠন এপিডি জনস্বার্থে কলকাতা হাইকোর্টে মামলা করে। আদালত মামলা

আমলে নিয়ে আগামী ৭ ফেব্রুয়ারি সব পক্ষকে ডেকে পাঠিয়েছেন। ওইদিন শুনানি হবে।
তবে বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ রবিবার সব শঙ্কা উড়িয়ে দিয়ে নিশ্চিত করেছেন, মার্চের প্রথম সপ্তাহে আদানির বিদ্যুৎ পাবে বাংলাদেশ। প্রথম দফায় ৭৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হবে। এই বিদ্যুতের দাম নিয়ে কোনো সমস্যা হবে না।
জানা গেছে, ২০১৫ সালের ১১ আগস্ট বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) সঙ্গে আদানি গ্রুপের বিদ্যুৎ সরবরাহ সংক্রান্ত সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়। এরপর ২০১৭ সালের ৫ আক্টোবর বিদ্যুৎ ক্রয়সংক্রান্ত চুক্তি হয়। দুই দেশের চুক্তি অনুযায়ী আগামী ২৫ বছর বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) আদানি গ্রুপের কাছ থেকে বিদ্যুৎ কিনবে। চুক্তি অনুযায়ী ৮০০ মেগাওয়াট করে মোট ১ হাজার ৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পাওয়ার কথা কিন্তু প্রথম দফায় আদানি গ্রুপ ৭৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ দেবে। কয়েক মাস পর আরো ৭৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ করবে। তবে আদানির বিদ্যুতের দাম এখনো নির্ধারণ হয়নি। আদানির বিদ্যুতের দাম তুলনামূলকভাবে বেশি হবে বলে আলোচনা রয়েছে। প্রতি ইউনিটের দাম প্রায় ৮ টাকা ৭১ পয়সা পড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ জানিয়েছেন, পায়রা বিদ্যুতের চেয়ে আদানির বিদ্যুতের দাম বেশি হবে না।
বিদ্যুৎ বিভাগের নীতি ও গবেষণা শাখা পাওয়ার সেলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ হোসেন জানিয়েছেন, আদানি গ্রুপের বিদ্যুৎ গত বছরের সেপ্টেম্বরের মধ্যে পাওয়ার কথা ছিল। পরবর্তীতে গত ডিসেম্বরে একটা টার্গেট নির্ধারণ করা হয় কিন্তু কিছু কাজ বাকি থাকায় দেরি হয়েছে। তবে এই প্রকল্পের সব কাজ একেবারেই শেষ। আগামী মার্চ মাসে আদানির বিদ্যুৎ পাওয়া যাবে এবং জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হবে। চলতি মাসের মধ্যেই সঞ্চালন লাইন, উপকেন্দ্র নির্মাণের সব কাজ শেষ হবে। এখন আর বিদ্যুৎ পাওয়ার ক্ষেত্রে কোনো আশঙ্কা নেই। আদানির বিরুদ্ধে যেসব আলোচনা হচ্ছে তার সঙ্গে আমাদের প্রকল্পের কোনো সম্পর্ক নেই। গত মাসে বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নিজেও ঝাড়খন্ডে গিয়ে বিদ্যুৎকেন্দ্র পরিদর্শন করেছেন। সার্বিক বিষয় নিয়ে তিনি আদানির কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেই বিদ্যুৎ পাওয়ার বিষয়ে নিশ্চিত হয়েছেন।
পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ (পিজিসিবি) সূত্রে জানা গেছে, আদানির বিদ্যুৎ ভারত থেকে আনতে আর সময় লাগবে না। দুই ধাপে সঞ্চালন লাইন নির্মিত হয়েছে। ২২৬ কোটি টাকা ব্যয়ে মালদা সীমান্ত থেকে চাঁপাইনবাবগঞ্জের রহনপুর পর্যন্ত ২৮ কিলোমিটার দীর্ঘ ৪০০ কিলোভোল্টের সঞ্চালন লাইন নির্মাণকাজ একেবারেই শেষ পর্যায়ে রয়েছে। বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডের সঞ্চালন লাইন নির্মাণের কাজও শেষ হয়েছে। বড়পুকুরিয়া থেকে বগুড়া হয়ে গাজীপুরের কালিয়াকৈর পর্যন্ত ২৬০ কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন নির্মাণে ৩ হাজার ৩২২ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে। এখানের বিদ্যুৎ উপকেন্দ্র নির্মাণকাজ শেষ। চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সাংহাই ইলেকট্রিক কোম্পানি এই উপকেন্দ্র নির্মাণের দায়িত্বে রয়েছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়