ডিএসসিসি মেয়র : হানিফ ফ্লাইওভারের নিচে সৌন্দর্যবর্ধন করা হবে

আগের সংবাদ

নির্বাচনী বছরে কর্মসংস্থানে জোর : বেকার ৩ কোটি ৩৯ লাখ ৮৭ হাজার, সরকারি পদ খালি সাড়ে ৩ লাখের বেশি

পরের সংবাদ

৬টি আসনের উপনির্বাচন : অনীহার ভোটে নানা অভিযোগ

প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ৩, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: ফেব্রুয়ারি ৩, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

এন রায় রাজা : জাতীয় সংসদের ৬টি আসনের উপনির্বাচনে ভোটারদের আগ্রহ ছিল না। ভোট নিয়ে অনীহা ছিল সাধারণ নাগরিকদেরও। কয়েকমাস পরই জাতীয় নির্বাচন, ক্ষমতাসীনদের মনোনীত অধিকাংশ প্রার্থীর বিজয় সম্পর্কে পূর্ব ধারণার জন্য ভোটারদের তেমন আগ্রহ ছিল না। তবে এর মধ্যেও ভোটে সংঘর্ষ, ফলাফল কারচুপির অভিযোগ উঠেছে। একজন স্বতন্ত্র্যপ্রার্থী নিখোঁজ হওয়ার বিষয়টিও ছিল আলোচনায়। বিশ্লেষকদের অনেকেই অনীহার এই ভোটকে ‘উকিল’ মডেল বলেছেন।
বিএনপির ছেড়ে দেয়া জাতীয় সংসদের ৬টি আসনে গত বুধবার (ঠাকুরগাঁও-৩, বগুড়া-৪ বগুড়া-৬, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২) উপনির্বাচনের ভোট হয়। ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) সকাল সাড়ে ৮টা থেকে শুরু হওয়া ভোট চলে বিকাল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত। নির্বাচন কমিশনের দাবি শান্তিপূর্ণ সুষ্ঠু ভোট হয়েছে। উপনির্বাচনে ভোট পড়েছে ২৮ দশমিক ৪৬ শতাংশ। এ আসনগুলোর মধ্যে ৩টিতে সরাসরি আওয়ামী লীগের নৌকা, ১টিতে সরকার সমর্থিত স্বতন্ত্রপ্রার্থী, একটিতে ১৪ দলীয় জোটের শরিক জাসদের মশাল এবং অন্যটিতে সরকারের মিত্র দল জাতীয় পার্টির লাঙল মার্কার প্রার্থী বিজয়ী হয়েছেন। আর এ ৬টি উপনির্বাচনে ৪০ জন প্রার্থীর মধ্যে হিরো আলমসহ ২৬ জন প্রার্থীর জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে।
এদিকে ৬টি আসনের উপনির্বাচনে ভোটারদের তেমন কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনের উপনির্বাচনে সবচেয়ে কম মাত্র ১৬.১০ শতাংশ ভোট পড়েছে। বগুড়া-৬ আসনে ভোট পড়েছে ২২.৩৪ শতাংশ, বগুড়া-৪ আসনে ভোট পড়েছে ২৩.৯২ শতাংশ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ আসনে ভোট পড়েছে ২৯.০৮ শতাংশ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ আসনে ভোট পড়েছে ৩৪.৭৯ শতাংশ এবং ঠাকুরগাঁও-৩ আসনে ভোট পড়েছে সর্বোচ্চ ৪৬ দশমিক ২৯ শতাংশ।
এদিকে বিএনপির ছেড়ে দেয়া ৬টি আসনের উপ-নির্বাচনে কম ভোট পড়ার তিন কারণ জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। গতকাল বৃহস্পতিবার নির্বাচন ভবনে নিজ দপ্তরে নির্বাচন কমিশনার রাশেদা সুলতানা বলেছেন, মূলত বগুড়া ও চাঁপাইনবাবগঞ্জে বিএনপির ঘাঁটি, সেখানে বিএনপির এমপিরা পদত্যাগ করায় ভোটাররা ভোট দিতে যাননি। আবার এই ভোটে সংসদ সদস্যদের মেয়াদকাল কম হওয়ায় ভোটার আগ্রহ পায় নেই, আর কোনো কোনো এলাকায় পছন্দের প্রার্থী ও শীত থাকায় ভোট না দেয়ারও প্রবণতা ছিল।
উপনির্বাচনে বড় ধরনের কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। চাঁপাইনবাবগঞ্জে ভোটকেন্দ্রের বাইরে বোমাবাজি ছাড়া সারাদিন আলোচনার মূল বিষয় ছিল ভোটার স্বল্পতা। এ ছাড়া কোথাও কোথাও ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। ছিল কেন্দ্র থেকে প্রতিদ্ব›দ্বী প্রার্থীর এজেন্ট বের করে দেয়ার অভিযোগ।
এদিকে ভোট ছাড়িয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনের স্বতন্ত্রপ্রার্থী ও সাবেক বিএনপি নেতা আবু আসিফ

আহমেদের ‘নিখোঁজ’ থাকার খবরটি ছিল আলোচনায়। যদিও ইসি বলেছিল তিনি আত্মগোপনে গেছেন মনে হয়। তবে হঠাৎ ভোটের পরদিন গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাকায় তার বসুন্ধরার বাসায় পাওয়া গেছে বলে খবর দিয়েছে পুলিশ। গতকাল ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পুলিশ সুপার শাখাওয়াত হোসেন বলেন, আসিফের নিখোঁজের বিষয়ে আশুগঞ্জ থানায় করা জিডির তদন্ত চলছিল। তদন্তের ফাঁকে আজ দুপুর ১২টার দিকে তার স্ত্রী মেহেরুন নিছার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি আশুগঞ্জ থানার ওসিকে জানান, তিনি স্বামীর খোঁজ পেয়েছেন। তিনিও ঢাকায় আছেন। তারা ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ফিরছেন।
ভোটে নয়, গণনায় কারচুপি করে হারানোর অভিযোগ করেছেন বগুড়া-৪ আসনের আলোচিত প্রার্থী হিরো আলম। তার এ অভিযোগ সম্পর্কে ইসি রাশেদা সুলতানা বলেন, হেরে গিয়ে হিরো আলম অসন্তুষ্ট হয়েছেন। তবে উনার অভিযোগের কোনো ভিত্তি নেই।
এদিকে গত বুধবারের উপনির্বাচেন জামানত হারিয়েছেন ২৬ প্রার্থী। এর মধ্যে বগুড়া-৬ আসনে সবচেয়ে বেশি ৯ জন এবং বগুড়া-৪ আসনে পাঁচজন রয়েছেন। ঠাকুরগাঁও-৩ ১৪ দলীয় জোটের শরিক ওয়ার্কার্স পার্টির ইয়াসিন আলী জামানত হারিয়েছেন। জামানত হারানো অন্য প্রার্থীরা হলেন- ন্যাশনাল পিপলস পার্টির শাফি আল আসাদ, বাংলাদেশ ন্যাশনাল পার্টির সিরাজুল ইসলাম এবং জাকের পার্টির এমদাদুল হক। চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ আসনে জামানত হারানো প্রার্থীরা হলেন- টেলিভিশন প্রতীকে বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট-বিএনএফর মো. নবীউল ইসলাম, স্বতন্ত্র্যপ্রার্থী মাথাল প্রতীকের খুরশিদ আলম বাচ্চু, জাতীয় পার্টির লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থী মোহাম্মদ আব্দুর রাজ্জাক এবং গোলাপ ফুল প্রতীকে জাকের পার্টি মনোনীত প্রার্থী মো. গোলাম মোস্তফা। চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ আসনে জামানত হারানো প্রার্থী হলেন- টেলিভিশন প্রতীকে বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট-বিএনএফের মো. কামরুজ্জামান খান। নির্বাচনী আইনে প্রদত্ত ভোটের আটভাগের একভাগ ভোট না পাওয়ায় তারা জামানত হারান।
আবার ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনের উপ-নির্বাচনে বিএনপি থেকে পদত্যাগ করা এমপি উকিল আবদুস সাত্তার ভূঁইয়া বেসরকারিভাবে জয়ী হয়েছেন। এমপি উকিল আবদুস সাত্তার ভূঁইয়াকে সমর্থন দিয়েছে আওয়ামী লীগ। তার প্রতিদ্ব›দ্বী অন্য তিন প্রার্থীর জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছে।
বিএনপির ৬ জন এমপি পদত্যাগ করায় পুনরায় ভোট করতে হয়েছে। কিন্তু প্রায় সব কটি আসনে বিক্ষুব্ধ, পদত্যাগী বা বহিস্তৃত বিএনপি নেতারা এ উপনির্বাচনে প্রতিদ্ব›িদ্বতা করছেন। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার উকিল আবদুস সাত্তার ছাড়াও নিখোঁজ হওয়া আবু আসিফ আহমেদ ও বিএনপির। বগুড়ার দুটি আসনের উপনির্বাচনে মনোনয়ন দাখিল করেন বিএনপির সাবেক দুই নেতা। বগুড়া-৪ (কাহালু-নন্দীগ্রাম) আসনে প্রার্থী হয়েছেন নন্দীগ্রাম পৌর বিএনপির সাবেক সহসভাপতি কামরুল হাসান সিদ্দিকী। বগুড়া-৬ (সদর) আসনে সদর উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি সরকার বাদল।
এদিকে জাতীয় নির্বাচনে সিসি ক্যামেরা ব্যবহার করার ঘোষণা দেয়া সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল হঠাৎ করে বুধবারের এ ৬ আসনে সিসি ক্যামেরা ব্যবহার থেকে বিরত ছিলেন। এটিও অনেকের মনে বিভিন্ন প্রশ্নের উদয় হচ্ছে। যদিও আর্থিক ও টেকনিক্যাল গ্রাউন্ড দেখান তিনি।
এদিকে ভোটে বেশ কয়েকটি বুথে বিভিন্ন দলের এজেন্টদের বের করে দেবার ঘটনা ঘটেছে। গোপন বুথে অনাকাক্সিক্ষত ব্যক্তিকে দেখা গেছে এবং একটি ভোট কেন্দ্রের ভেতরে বোমা পাওয়া, একটি স্থানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দিকে বোমা ছোড়ার মতো ঘটনা ঘটেছে। এছাড়া প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে মারামারি, ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া, ইট ছোড়াছুড়ি এসব ঘটনা ঘটেছে বহু কেন্দ্রের বাইরে। এসব বিষয়ে সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছেন, কয়েকটি স্থানে অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা ঘটেছে। তবে ভোটে কোনো প্রভাব পড়েনি। একটি কেন্দ্রে মায়ের সঙ্গে বাচ্চাদের দেখা গেছে, একজন নারী তার মাকে ইভিএমে ভোটদিতে গোপন কক্ষে যান, তাছাড়া বোম পাওয়া ও বোম মারার ঘটনাকে তিনি তদন্ত করে দেখার নির্দেশ দিয়েছেন বলেও জানান।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়