ডিএসসিসি মেয়র : হানিফ ফ্লাইওভারের নিচে সৌন্দর্যবর্ধন করা হবে

আগের সংবাদ

নির্বাচনী বছরে কর্মসংস্থানে জোর : বেকার ৩ কোটি ৩৯ লাখ ৮৭ হাজার, সরকারি পদ খালি সাড়ে ৩ লাখের বেশি

পরের সংবাদ

শিশুদের পিঠে বইয়ের বোঝা আর কত!

প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ৩, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: ফেব্রুয়ারি ৩, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

নতুন বছরের শুরুতে নতুন শ্রেণিতে নতুন বই পেতে প্রত্যেক শিক্ষার্থীর চোখে-মুখে থাকে আনন্দের ঝিলিক। নতুন বইয়ের পাতার গন্ধটা তার অনুপ্রেরণা ও আস্থার প্রতীক। এক্ষেত্রে ছোট বাচ্চা বা প্রাথমিক বিদ্যালয়পড়ুয়া কোমলমতি শিক্ষার্থীদের আনন্দ, উৎসাহ-উদ্দীপনা থাকে চোখে পড়ার মতো। বছরের প্রথম দিন বেশ ঘটা করে বই উৎসব পালনের মাধ্যমে সরকার কর্তৃক বিনামূল্যের পাঠ্যবই সারাদেশের শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দেয়া হয়। কিন্তু অবাক করার বিষয় হচ্ছে শিশুর নিজের চেয়ে স্কুলের বইয়ের ব্যাগের ওজন বেশি। এ ব্যাপারে উচ্চ আদালতের সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা থাকলেও তা অমান্য করে শিশুদের কাঁধে চাপিয়ে দেয়া হচ্ছে অতিরিক্ত বইয়ের বোঝা। যেন এক একটি ইটসম মানসিক চাপ। এতে করে মানসিকভাবে ব্যাপক চাপ এবং শারীরিকভাবেও ছোট ছোট বাচ্চারা বেশ দুর্বল হয়ে পড়ছে।
চিকিৎসকদের মতে, ১৮ বছর পর্যন্ত শিশুর শারীরিক ও মানসিক বিকাশের উৎকৃষ্ট সময়। এ সময় শিশুর হাড় ও মাংসপেশি যথেষ্ট নরম থাকে। এ বয়সেই সামান্য আঘাতে অথবা চাপে মেরুদণ্ড বেঁকে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। অথচ এই বয়সেই প্রতি নিয়ত একটি শিশুকে ব্যাগের বোঝা বহন করতে হচ্ছে; যে বোঝাটি পিঠে নিয়ে সিঁড়ি বেয়ে ওপরে উঠতে হচ্ছে কোনো কোনো প্রতিষ্ঠানের শিশু শিক্ষার্থীদের। এটা ওদের জন্য বিরাট পীড়াদায়ক ঘটনাও বটে। প্রতিনিয়ত ভারি বইয়ের বোঝা কাঁধে বহন করায় শিশুরা আর্থ্রাইটিস ও অস্টিওপোরোসিসের মতো দীর্ঘমেয়াদি জটিল রোগে আক্রান্ত হওয়ার শঙ্কায় থাকে, যা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। সরকারের বিভিন্ন মহলের সুস্পষ্ট নির্দেশনা থাকলেও কোনোভাবেই যেন অতিরিক্ত বইয়ের বোঝা নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। এতে করে একদিকে যেমন শারীরিকভাবে সমস্যাগ্রস্ত হচ্ছে তেমনি মানসিকভাবেও চাপের মুখে পড়ছে। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের হাতে সরকার বিনামূল্যে নতুন বই তুলে দিলেও বাড়তি বই কিনতে বাধ্য হচ্ছে অভিভাবকরা। জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের নির্ধারিত বই ছাড়াও অভিভাবকদের হাতে বাড়তি বইয়ের তালিকা তুলে দিচ্ছে বেসরকারি স্কুলগুলো। যার কারণে এক প্রকার বাধ্য হয়েই বইয়ের দোকানগুলোতে ভিড় করছে অভিভাবকরা। এতে স্বল্প আয়ের অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের অতিরিক্ত বই কিনতে হিমশিম খাচ্ছে। বলা হয় আজকের শিশুরা জাতির ভবিষ্যৎ কর্ণধার ও জাতি গঠনের কারিগর। অথচ এই শিশুদের পিঠে বইখাতার বিশাল বোঝার চাপ পড়ায় তাদের মানসিক ও শারীরিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা শিশুদের ওপর থেকে বইয়ের বোঝা কমানোর তাগিদ দিয়ে বলছেন, ‘উন্নত দেশের মতো শ্রেণিকক্ষের শিক্ষা বইহীন করা না গেলেও যে কোনো উপায়ে বইয়ের সংখ্যা কমানো খুবই জরুরি। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অনুমোদনহীন বই চাপিয়ে দেয়ার বিরুদ্ধে নীতিমালা গ্রহণ করা অপরিহার্য।
২০১৬ সালের ৮ ডিসেম্বর হাইকোর্ট শিশুদের পিঠের বইয়ের অতিরিক্ত বোঝা কমাতে একটি নির্দেশনা দিয়েছিলেন। তাতে বলা হয়েছিল- শিশুদের পিঠে শরীরের ওজনের ১০ শতাংশ ওজনের বেশি ব্যাগ বহন করা যাবে না। শিশুর শারীরিক ও মানসিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত যেন না হয়, সেজন্য সরকারকে এ বিষয়ে আইন প্রণয়নের নির্দেশনা দেন হাইকোর্ট। নির্দেশনা দেয়া রায়ের কপি পাওয়ার ছয় মাসের মধ্যেই এটি কার্যকর করতে, যা ছিল হাইকোর্টের একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয়, সেই রায় আজ অবধি বাস্তবায়ন হয়নি। আদৌ সেটি বাস্তবায়ন হবে কিনা, তা নিয়েও সন্দিহান সংশ্লিষ্টরা। শিশুদের বাঁচাতে হলে পাসের হার নয়, শিক্ষার গুণগত মান বাড়াতে হবে, বইয়ের বোঝা কমাতে হবে। সেটা কীভাবে হবে তা খুঁজে বের করতে হবে সংশ্লিষ্টদেরই। স্কুল কর্তৃপক্ষকে তা বোঝাতে হবে। অভিভাবকদেরও সচেতন হওয়া দরকার।

মো. জিল্লুর রহমান : ব্যাংকার ও লেখক, সতিশ সরকার রোড, গেণ্ডারিয়া, ঢাকা।
[email protected]

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়