ডিএসসিসি মেয়র : হানিফ ফ্লাইওভারের নিচে সৌন্দর্যবর্ধন করা হবে

আগের সংবাদ

নির্বাচনী বছরে কর্মসংস্থানে জোর : বেকার ৩ কোটি ৩৯ লাখ ৮৭ হাজার, সরকারি পদ খালি সাড়ে ৩ লাখের বেশি

পরের সংবাদ

পাতালরেল যুগে বাংলাদেশ : ১০০ সেকেন্ড পর পর ট্রেন, ভূগর্ভে হবে ১২টি তিনতলা স্টেশন

প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ৩, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: ফেব্রুয়ারি ৩, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : মাটির উপর দিয়ে চলা মেট্রোরেলের পর এবার পাতাল মেট্রোরেলের যুগে প্রবেশ করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। নতুন এই রুটের দৈর্ঘ্য হবে ৩১ দশমিক ২৪ কিলোমিটার। পাতাল ও উড়াল দুই অংশ নিয়েই পাতালরেলের লাইন নির্মিত হবে। রেল চলাচল শুরু হলে বিমানবন্দর থেকে কমলাপুর যেতে সময় লাগবে ২৪ মিনিট ৩০ সেকেন্ড। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল বৃহস্পতিবার নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে পূর্বাচল ৪ নম্বর সেক্টরে আনুষ্ঠানিকভাবে দেশের প্রথম পাতালরেলের নির্মাণকাজের উদ্বোধন করেন। ‘ম্যাস র‌্যাপিড ট্রানজিট (এমআরটি) লাইন-১’ অফিসিয়াল নামের এই প্রকল্পের নির্মাণকাজের ফলকও উন্মোচন করেন তিনি। এর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় এবং যোগাযোগ ব্যবস্থায় আরো একটি মাইলফলক স্থাপিত হলো।
প্রথম পাতাল মেট্রোরেলের নির্মাণকাজের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম, বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী, নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী, বাংলাদেশে জাপানের রাষ্ট্রদূত ইওয়ামা কিমিনোরি, সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এ বি এম আমিন উল্লাহ নূরী এবং ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (ডিএমটিসিএল) এম এ এন সিদ্দিক উপস্থিত ছিলেন।
প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, ২০১৯ সালে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) ৫২ হাজার ৫৬১ কোটি ৪৩ লাখ টাকায় পাতালরেল বা এমআরটি লাইন-১ প্রকল্প অনুমোদন দেয়। ১২টি ভূগর্ভস্থ স্টেশনে বিরতিসহ বিমানবন্দর থেকে কমলাপুর যেতে সময় লাগবে ২৪ মিনিট ৩০ সেকেন্ড। নতুনবাজার ইন্টারচেঞ্জের মাধ্যমে ১৬টি স্টেশনে বিরতিসহ মাত্র ৪০ মিনিটে কমলাপুর থেকে পূর্বাচল পর্যন্ত যাত্রীরা যেতে পারবে। ৭টি বিরতিসহ নতুনবাজার থেকে পূর্বাচল যেতে সময় লাগবে মাত্র ২০ মিনিট ৩৫ সেকেন্ড। এমআরটি লাইন-১ চালু হলে এ রুটে প্রতিদিন ৮ লাখ যাত্রী যাতায়াত করবে। সেক্ষেত্রে রাজধানীবাসী দ্রুততম সময়ের মধ্যেই দীর্ঘ পথ অতিক্রম করতে পারবেন। অন্যদিকে নতুনবাজার স্টেশনে ‘এমআরটি লাইন-৫ (উত্তর রুট)’ দিয়ে একটি ইন্টারচেঞ্জ সুবিধা থাকবে- যেখান থেকে যাত্রীদের জন্য পূর্বাচল থেকে বিমানবন্দর রুটে অথবা পূর্বাচল রুট থেকে বিমানবন্দরে যাতায়াতের সুবিধা থাকবে।
প্রকল্প সূত্র জানায়, পাতাল মেট্রোরেল বলা হলেও এমআরটি-১ পাতাল ও উড়াল দুই অংশ নিয়েই নির্মিত হবে। বিমানবন্দর থেকে কমলাপুর পর্যন্ত ১৯ দশমিক ৮৭২ কিলোমিটার অংশ মাটির নিচ দিয়ে নির্মিত হবে। এই অংশের ভূগর্ভে ১২টি স্টেশন নির্মিত হবে। স্টেশনগুলো হলো- বিমানবন্দর, বিমানবন্দর টার্মিনাল-৩, খিলক্ষেত, যমুনা ফিউচার পার্ক, নতুনবাজার, উত্তর বাড্ডা, বাড্ডা, হাতিরঝিল, রামপুরা, মালিবাগ, রাজারবাগ ও কমলাপুর। উড়াল পথের অপর অংশটি নতুন বাজার থেকে পিতলগঞ্জ পর্যন্ত প্রায় ১১ দশমিক ৩৭ কিলোমিটার এলিভেটেড লাইন হবে। এই অংশে ৯টি স্টেশন নির্মাণ করা হবে। স্টেশনগুলো হলো- নতুন বাজার, যমুনা ফিউচার পার্ক, বসুন্ধরা, পুলিশ অফিসার্স হাউজিং সোসাইটি, মাস্তুল, পূর্বাচল পশ্চিম, পূর্বাচল সেন্টার, পূর্বাচল পূর্ব, পূর্বাচল টার্মিনাল। পাতালরেলের ডিপো হবে রূপগঞ্জের পিতলগঞ্জে। এছাড়া বিমানবন্দর রুটের অংশ হিসেবে নতুনবাজার এবং নর্দা স্টেশন মাটির নিচেই হবে। দুটি রুটে ৩১ দশমিক ২৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এমআরটি লাইন-১ নির্মাণ করা হবে। এর মধ্যে

বিমানবন্দর থেকে কমলাপুর পর্যন্ত ১৯ দশমিক ৮৭ কিলোমিটার দীর্ঘ রুটে মাটির নিচ দিয়ে পাতাল মেট্রোরেল চলবে।
ডিএমটিসিএল সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ২৮ ডিসেম্বর দিয়াবাড়িতে ফলক উন্মোচনের মাধ্যমে উত্তরার দিয়াবাড়ি থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত ১১ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার এমআরটি লাইন-৬ এর উদ্বোধন করেন। ২ ফেব্রুয়ারি এমআরটি লাইন-১ এর নির্মাণকাজের উদ্বোধন করেন। যোগাযোগ ব্যবস্থা আরো সহজ ও গতিশীল করতে সরকার ২০৩০ সালের মধ্যে ৬টি মেট্রোরেলের লাইন (এমআরটি লাইন ১, ২, ৩, ৪, ৫, ৬) নির্মাণের পরিকল্পনা নিয়েছে। পর্যায়ক্রমে তিন ধাপে এগুলোর কাজ শেষ হবে। দ্বিতীয় পর্যায়ে ২০২৮ সালের মধ্যে এমআরটি লাইন-৫ নর্দার্ন রুটের নির্মাণকাজ শেষ হবে। তৃতীয় পর্যায়ে ২০৩০ সালের মধ্যে এমআরটি লাইন-৫ এর সাউদার্ন রুট, এমআরটি লাইন-২ এবং এমআরটি লাইন-৪ নির্মাণ করা হবে।
ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ এন সিদ্দিক জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশের প্রথম পাতাল মেট্রোরেলের নির্মাণকাজের উদ্বোধন করেছেন। পাতালরেলের নির্মাণকাজের জন্য এরই মধ্যে ৯২ দশমিক ৯৭২৫ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। রূপগঞ্জের পিতলগঞ্জ এলাকায় ৮৮ দশমিক ৭১ একর জমিতে ডিপো নির্মাণের মধ্য দিয়ে এমআরটি লাইন-১ এর নির্মাণকাজ শুরু হবে। মূল ডিপো নির্মাণের কাজের ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ইতোমধ্যেই চুক্তি হয়েছে। এজন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ৬০৭ কোটি ৬৫ লাখ টাকা। বিমানবন্দর রুট ও পূর্বাচল রুটে চলাচলকারী সব মেট্রোরেল এই ডিপো ব্যবহার করতে পারবে। এখন সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে এই মেগা প্রকল্পের কাজ চলবে। ২০২৬ সালে এ প্রকল্পের কাজ শেষ হবে বলে আশা করছি। প্রকল্পের প্রাথমিক ব্যয় ধরা হয়েছে ৫২ হাজার ৫৬১ দশমিক ৪৩ কোটি টাকা। এর মধ্যে জাপানি বৃহত্তর দাতা সংস্থা জাইকা ৩৯ হাজার ৪৫০ কোটি টাকা ঋণ দেবে। বাকি অর্থ বাংলাদেশ সরকার জোগান দেবে।
নির্মাণকাজ কীভাবে চলবে ও জনগণের ভোগান্তি প্রসঙ্গে এম এ এন সিদ্দিক বলেন, পাতালরেলের স্টেশনগুলো ‘ওপেন কাট’ পদ্ধতিতে নির্মাণ করা হবে। জনসাধারণের যেন ভোগান্তি না হয় সেদিকে লক্ষ্য রেখে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করা হবে। প্রথমে রাস্তার অর্ধেক অংশ খনন করে সব যন্ত্রপাতি নিচে নামানো হবে এবং যানবাহন চলাচলের জন্য খনন করা স্থানে স্টিলের পাত দিয়ে ঢেকে দেয়া হবে। ওই স্টিলের পাতের উপর দিয়ে ৪০ মেট্রিক টন ক্ষমতাসম্পন্ন গাড়ি চলাচল করতে পারবে। প্রথম অংশ খুলে দেয়ার পর রাস্তার অপর অংশ খনন করে একইভাবে যন্ত্রপাতি নামিয়ে কাজ চলবে। এই কাজের জন্য সর্বোচ্চ ৬ মাস সময় লাগবে। এই পদ্ধতিতে কাজ করলে মাটির নিচে যে কাজ চলতে থাকবে তা আর উপর থেকে অনুমান করা যাবে না। এমনকি, টিভিএম মেশিন দিয়ে টানেল কাটার সময়েও উপর থেকে বোঝা যাবে না এবং কোনো প্রভাবও পড়বে না।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়