ডিএসসিসি মেয়র : হানিফ ফ্লাইওভারের নিচে সৌন্দর্যবর্ধন করা হবে

আগের সংবাদ

নির্বাচনী বছরে কর্মসংস্থানে জোর : বেকার ৩ কোটি ৩৯ লাখ ৮৭ হাজার, সরকারি পদ খালি সাড়ে ৩ লাখের বেশি

পরের সংবাদ

চাহিদা মেটাতে গুরুত্ব নেই দেশীয় কয়লা উত্তোলনে : দেশীয় কয়লায় ১০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব

প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ৩, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: ফেব্রুয়ারি ৩, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

দেব দুলাল মিত্র : ভবিষ্যৎ জ¦ালানি সংকট মোকাবিলায় দেশীয় কয়লা উত্তোলনে সরকার এখন গুরুত্ব দিলেও বাস্তবে এর প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে না। কোন পদ্ধতিতে কয়লা উত্তোলন করা হবে সেই প্রক্রিয়া নিয়েও বিরোধ রয়েছে। দেশে বিপুল পরিমাণ কয়লার মজুত থাকার পরেও সরকার বাস্তবভিত্তিক সিদ্ধান্ত নিতে না পারায় মাটির নিচের কয়লা উত্তোলন করা হচ্ছে না। ফলে জ¦ালানি খাতে কয়লার ব্যবহার মেটাতে চড়া দামে বিদেশ থেকে আমদানি করতে হচ্ছে। বর্তমানে ৭ হাজার মেগাওয়াট সক্ষমতার কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প নির্মাণাধীন রয়েছে। কিন্তু এতে দেশীয় কয়লা ব্যবহার না হওয়ায় উৎপাদন খরচ বেশি লাগছে।
জ¦ালানি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বর্তমান যুগে কয়লার মতো গুরুত্বপূর্ণ জ¦ালানি মাটির নিচে রেখে কোনো লাভ নেই। এখনই উত্তোলনের ব্যবস্থা না নিলে ভবিষ্যতে দেশীয় জ¦ালানি নিরাপত্তায় সুফল মিলবে না। পরিবেশ ও মানুষের ক্ষয়ক্ষতি কমাতে বড়পুকুরিয়া কয়লা খনির মতো ভূগর্ভস্থ খনন পদ্ধতিতে কয়লা উত্তোলনের ব্যবস্থা নিতে হবে। বাংলাদেশ তেল, গ্যাস ও খনিজ করপোরেশনের (পেট্রোবাংলা) গবেষণায় নিশ্চিত হওয়া গেছে যে, দিনাজপুরের বড়পুকুরিয়া, দীঘিপাড়া ও ফুলবাড়ী, জয়পুরহাটের জামালগঞ্জ ও রংপুরের খালাশপীরসহ ৫টি খনিতে মোট ৭ হাজার ৮০০ মিলিয়ন টন কয়লার মজুত রয়েছে। দিনাজপুরের দীঘিপাড়া খনি থেকে কয়লা উত্তোলনের সবচেয়ে বেশি সম্ভাবনা রয়েছে। ইতোমধ্যেই এই খনির সম্ভাব্যতা যাচাই করা হয়েছে। ২০১৭ সালে জার্মানভিত্তিক মিবরাগ কনসাল্টিং ইন্টারন্যাশনাল, নেদারল্যান্ডস ভিত্তিক ফুগরো এবং অস্ট্রেলিয়ার রাঞ্জ পিনকক মিনারকোর যৌথ কনসোর্টিয়াম গঠনের পর বড়পুকুরিয়া কোল মাইনিং কোম্পানি লিমিটেড (বিসিএমসিএল) চুক্তি করে। এই কনসোর্টিয়াম ২০২০ সালের শুরুতে পেট্রোবাংলার কাছে তাদের প্রতিবেদন দাখিল করে।
প্রতিবেদনে কনসোর্টিয়াম ভূগর্ভস্থ পদ্ধতিতে কয়লা উত্তোলনের পক্ষে মতামত জানায়। কিন্তু এই পদ্ধতিতে কয়লা উত্তোলন করা কঠিন ও ব্যয়বহুল। এই পদ্ধতিতে

কয়লা উত্তোলন করতে প্রতি টনে ১৬০ ডলার খরচ হবে। এ কারণে কনসোর্টিয়ামের প্রতিবেদনটি পর্যালোচনার জন্য ব্রিটিশ কোম্পানি ডিএমটিকে দেয়া হয়েছে।
বিসিএমসিএল সূত্র জানায়, জয়পুরহাটের জামালগঞ্জের খনিতে সবচেয়ে বেশি ৫৪৫ কোটি টন কয়লা মজুত আছে। এছাড়া দীঘিপাড়ায় সাড়ে ৮৬ কোটি, বড়পুকুরিয়ায় ৩৯ কোটি, ফুলবাড়ীতে ৫৭ কোটি ২০ লাখ এবং খালাশপীরে সাড়ে ৬৮ কোটি টন কয়লা মজুত রয়েছে।
বিদ্যুৎ বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, দেশে বর্তমানে ৭ হাজার মেগাওয়াট সক্ষমতার কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প নির্মাণাধীন রয়েছে। এতে বিপুল পরিমাণ কয়লার প্রয়োজন হবে। ইন্দোনেশিয়া থেকে আমদানিকৃত কয়লায় রামপাল তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র উৎপাদনে এসেছে। তাই ভবিষ্যৎ জ¦ালানি সংকট মোকাবিলায় দেশীয় কয়লা উত্তোলনে গুরুত্ব দিচ্ছে সরকার।
জানা গেছে, বাস্তবে বড়পুকুরিয়া ছাড়া আর কোনো খনি থেকেই কয়লা উত্তোলনে সরকারের জোরালো পদক্ষেপ নেই। বড়পুকুরিয়া কয়লা খনি প্রকল্প থেকে উত্তোলিত কয়লা ব্যবহার করেই কয়লাভিত্তিক ৫০০ মেগাওয়াট ক্ষমতা সম্পন্ন বড়পুকুরিয়া তাপ বিদ্যুৎ প্রকল্পের বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়। তাই এই কয়লা খনিটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। খনির উৎপাদন বন্ধ থাকলে কয়লার অভাবে তাপ বিদ্যুৎ প্রকল্পের বিদ্যুৎ উৎপাদনও বন্ধ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। পর্যাপ্ত কয়লা না পেলে বিদ্যুৎ উৎপাদনও বন্ধ হয়ে যাবে। চীনা কোম্পানি এই খনি থেকে কয়লা উত্তোলন করছে। এভাবে অন্যসব খনি থেকে কয়লা উত্তোলন করে বিভিন্ন তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রে ব্যবহার করা সম্ভব হবে।
প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানিবিষয়ক উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী বলেন, উন্মুক্ত পদ্ধতিতে আমরা দেশের কয়লা উত্তোলনে যাব না। পরিবেশগত কারণেই এই পদ্ধতি আমাদের জন্য ভালো হবে না। এটা করা হলে অনেক মানুষ ক্ষতির সম্মুখীন হবে। বিকল্প উপায়ে কয়লা উত্তোলনের ব্যবস্থা নিয়ে চিন্তা-ভাবনা চলছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ও জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক বদরূল ইমাম বলেন, কয়লার অনুসন্ধান, ব্যবহার ও উত্তোলন নিয়ে অনেক বিরোধিতা আছে। তবে আমি বলব, কয়লা নিয়ে আরো আগে সরকারের গুরুত্বসহকারে ভেবে দেখা উচিত ছিল। ভবিষ্যতের জ¦ালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হলে অবশ্যই দেশীয় কয়লা উত্তোলন ও ব্যবহার করতে হবে। পরিবেশ ও মানুষের ক্ষয়ক্ষতি কমাতে বড়পুকুরিয়া কয়লার খনির মতো ভূগর্ভস্থ খনন পদ্ধতিতে কয়লা উত্তোলনের ব্যবস্থা নিতে হবে। নতুন সবগুলো খনি থেকে কয়লা উত্তোলন দ্বিগুণ করা গেলে আমদানি কমবে এবং বিদ্যুৎকেন্দ্র পর্যন্ত নিতে অনেক সাশ্রয় হবে। আমাদের ৫টি কয়লাভিত্তিক নতুন প্রকল্পে দেশীয় কয়লা ব্যবহার করা হলে প্রায় ১০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব। এখন জোরালো উদ্যোগ নেয়া হলে ৪/৫ বছরেই আমরা এই সুফল পাব। এতে আমাদের দীর্ঘমেয়াদি জ¦ালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে।
অধ্যাপক বদরুল ইমাম বলেন, মাটির নিচের কয়লা রেখে কোনো সুফল মিলবে না। গত কয়েক বছরে বিশ্বে কয়লার ব্যবহার ৫ শতাংশ বেড়েছে। জার্মানি, ভারত, চীনসহ অনেক দেশই কয়লা উত্তোলন অব্যাহত রেখেছে। আমরা দীর্ঘমেয়াদি জ¦ালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারিনি বলেই আমাদের সংকটে পড়তে হয়েছে। আগামীতে কয়লাভিত্তিক যেসব বিদ্যুৎ প্রকল্পগুলো উৎপাদনে আসছে তার জন্যও বিদেশ থেকে কয়লা আমদানি করতে হচ্ছে। সরকার দেশের কয়লার ব্যবহার করতে পারলে বিদ্যুতের উৎপাদন খরচ কমবে। বিদ্যুৎ ও জ¦ালানি আমদানিনির্ভর না হয়ে স্থানীয় উৎসগুলোর ওপর নির্ভরতা বাড়তে হবে। (শেষ পর্ব)

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়