প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ৩, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: ফেব্রুয়ারি ৩, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
কবিতার পথ পরিবর্তন হচ্ছে, বাঁক বদল করছে আধুনিক কবিতা- এ মন্তব্য সত্য হলেও একটি প্রশ্ন থেকেই যায় আর তা হচ্ছে কোনদিকে যাচ্ছে বাংলা কবিতা, বাংলাদেশের কবিতা? এ প্রশ্নের উত্তর কী হতে পারে? সহজ কথায় বলতে গেলে বাংলাদেশের কবিতার বাঁক বদলে যাচ্ছে নিখাদ উত্তরণের দিকে, অনন্ত ভবিষ্যতের দিকে। এই উত্তরণের পথে যাঁদের কবিতা অগ্রগামী তাঁদের একজন আদ্যনাথ ঘোষ। তাঁর কবিতায় নগর এবং পল্লীজীবনের অন্তর্গত যোগসূত্র ও আবহ প্রাণবন্ত রূপ নেয়। শব্দবিন্যাস, চিত্রকল্প, উপমা-উৎপ্রেক্ষা প্রয়োগের স্বাভাবিক উৎকর্ষতায় তিনি সিদ্ধহস্ত। কবিতার ভেতরে তিনি আপ্লুত জীবন আর নিজস্ব-বোধ যাপনের রোজনামচা লিপিবদ্ধের পাশাপাশি জীবনের নানামুখী উপাচার ব্যাখ্যা করেছেন স্বতন্ত্র ভঙ্গিমায়। অনেক ক্ষেত্রেই গতানুগতিকতার বাইরের মানচিত্র কিংবা তার চেয়ে মুখ্য হয়ে ওঠে জীবনের একচ্ছত্র কথোপকথন, এক্কেবারেই নিজের মতো করে
** ছায়ামুখ
আর এভাবেই সারারাত খেলা করে পুণ্যবতী নোনাজল
দিগন্তজুড়ে আগুনের খেলায় ভাঙে পাড়।
তাই দেখে ঢেউখেলা নদীতে ছড়ায় গাঢ় নিঃশ্বাস
আগুনের কণাগুলো ভিজে যায় দেহের ভাঁজে, নৈঃশব্দে
আর আঁধারের বুকজুড়ে ভেসে ওঠে কোজাগরি পূর্ণিমা চাঁদ।
যে মৃত্তিকার শরীর উড়িয়েছে যত কুসুমের উৎসব
সে এখন পাপড়ি ছড়িয়ে সবুজের গায়ে সুগন্ধ ওড়ায়;
এঁকে যায় হেমন্তের হাওয়ায় বসন্তজুড়ে জীবনের ভ্রæণ।
ওই ভোর, সবুজ বাতাস, পাতার গুঞ্জন- সবকিছু ছুঁয়ে,
তোমার শরীরে ভেসে ওঠে বিকেলের পোড়া রোদে ভোরের স্বপন।
আমিও ঠিক মিশে যেতে চাই তোমার পালক ছড়ানো স্বপন নেশায়।
** আগুন
বিস্তৃত দৃশ্যের সাথে- প্রজাপতি, শঙ্খচূড়, শিমুলের ফুল,
নীলের বাহার আর জোছনার আতর মেখে আমাকে কাছে ডেকেছিল।
বলেছিল- তুমিও কি আমাকেই সবুজ আঁধার ভেবে
অন্তঃপুরে ফেলে রাখ অনিবার্য ভাবে-
আমিও যে তোমাকে ফাগুন ভেবে দু’চোখে আগুন জে¦লে পোড়াতেই চাই।
শরীর শরীর করে সঞ্চিত সুগন্ধিরা পাবে কি আলোর পিদিম!
তবে কি পুষ্পিত ছায়াগুলো ছায়া ফেলে গেছে নীরবে একাকী
বহুদূর, কলরবহীন। বাতাসের ঘ্রাণ নিভে গেলে বিনাশের
রাত্রিরা জেগে ওঠে মহুয়াতলায়। যেখানে তোমার বন্দনা
লেখা হয় আঁধারে, কঙ্কালের নিয়তিরেখায়। হাড়ের কলমে
ভেসে ওঠে সূর্যাস্তের সংগীত। মৃত পাখিদের ঝরা ডানাগুলো
হেঁটে যায় ভোরের মন্দিরের প্রার্থনা সংগীতে। উন্মত্ত রাত্রিরা
মহালয়ার আগমন দেখে চলে যাবে কোনো এক নিভে যাওয়া
প্রদীপের অন্তরে। অথচ শিউলির হৃদয় হতে আনন্দের উৎসব
ঢলে পড়ে ভোরের মন্দিরের ষষ্ঠীতলায়। ফিরি ফিরি করেও
শরতের কাশবন আর ফিরে গেল না অন্য কোনোখানে।
তাই হৃদয়ের ফুলগুলো করজোড়ে ঢলে পড়ে মায়ের মন্দিরে।
** আমার মা
আমার মা প্রতিদিন সকাল-সন্ধ্যায় দুঃখের দেয়ালে বার্নিশ লাগায়।
তাই দুঃখগুলো সরে গিয়ে মায়ের চারপাশে উৎসব করে।
মা তখন দুঃখগুলো মুরগির ছানা ভেবে চালের খুঁদ খাওয়ায়।
অতঃপর দুঃখগুলো সারাদিন ডিম পাড়ে।
সেই ডিমে বাচ্চা ফোটে। ঝাঁকে ঝাঁকে চলে।
তখন দুঃখগুলো মায়ের চারপাশে মিছিল করে, সেøাগান তোলে।
কখনো পোস্টারে পোস্টারে ছেয়ে ফেলে মায়ের শরীর।
আমার মা সেই পোস্টারগুলো আগুনে জ¦ালায়।
দুঃখগুলো জলেতে পোড়ায়।
আমরা সেগুলো তিনবেলা ভাত ভেবে গোগ্রাসে খেয়ে যাই।
আজ আমার মা, ওয়েব পোর্টালের খবরের দুঃখ-
বিরামচিহ্ন তাকে ছুঁতে পারে না।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।