ডিএসসিসি মেয়র : হানিফ ফ্লাইওভারের নিচে সৌন্দর্যবর্ধন করা হবে

আগের সংবাদ

নির্বাচনী বছরে কর্মসংস্থানে জোর : বেকার ৩ কোটি ৩৯ লাখ ৮৭ হাজার, সরকারি পদ খালি সাড়ে ৩ লাখের বেশি

পরের সংবাদ

এবার ইউরোপ সেরা লিওনেল মেসি

প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ৩, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: ফেব্রুয়ারি ৩, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ ডেস্ক : বিশ্বতারকা লিওনেল মেসির হাত ধরে ঘুচেছে আর্জেন্টিনার দীর্ঘ ৩৬ বছরের আক্ষেপ। ২০২২ সালের কাতার বিশ্বকাপে তার জাদুতেই বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হয়েছে আর্জেন্টিনা। মেসির জীবনে সব অর্জন থাকলেও ছিল না বিশ্বকাপের ট্রফি। বিশ্বকাপের মতো বড় অর্জনের পর এবার তার অর্জনের পাল্লা আরো ভারি হলো। গতকাল মঁপেলিয়ের বিপক্ষে মেসির করা দ্বিতীয় গোলের কারণে আরেকটি রেকর্ডের দেখা পেয়েছেন তিনি। তার এ গোলের মাধ্যমে বর্তমান আল নাসর তারকা ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোকে পেছনে ফেলে ইউরোপের সর্বোচ্চ গোলের মালিক এখন এ বিশ্বকাপজয়ী মহাতারকা।
মঁপেলিয়ের বিপক্ষে মাঠে নেমে পিএসজির হয়ে দ্বিতীয় গোলটি আসে মেসির পা থেকে। ম্যাচের ৭২তম মিনিটে ফ্যাবিয়ান রুইজের সহায়তায় রেকর্ড গড়া গোলটি করেন তিনি। এ গোলটি ছিল তার ইউরোপীয় ক্লাব ক্যারিয়ারের ৬৯৭তম গোল। ইউরোপের শীর্ষ পাঁচ লিগের খেলোয়াড়দের মধ্যে সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে তিনি এখন সর্বোচ্চ গোলের মালিক। এর আগে এ রেকর্ড ছিল মেসির চিরপ্রতিদ্ব›দ্বী ৬৯৬ গোল করা পর্তুগিজ তারকা রোনালদোর। তার সঙ্গে মেসির প্রতিযোগিতা অবশ্য কাতার বিশ্বকাপ ফাইনালে জয়ের পরই শেষ। তারপরও মেসির এ রেকর্ড এক অনন্য অর্জন। চলতি মৌসুমে পিএসজির হয়ে মেসির গোলের সংখ্যা ১৩টি। ফরাসি লিগে তার গোল ৯টি এবং চ্যাম্পিয়ন্স লিগে ৪টি। দুর্দান্ত ফর্মে থাকা মেসির গোলের সংখ্যা মৌসুম শেষে আরো বাড়বে বলেই আশা করা যায়। তবে রোনালদোর পক্ষে আর মেসির রেকর্ড ছোঁয়ার কোনো সুযোগ নেই। কাতার বিশ্বকাপ চলাকালে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের সঙ্গে সম্পর্কচ্যুতি হওয়ার কারণে বিশ্বকাপ শেষ হওয়ার পরপরই তিনি যোগ দিয়েছেন সৌদি আরবের শীর্ষ ফুটবল ক্লাব আল নাসরে। এ ক্লাবে রেকর্ড পরিমাণ বেতনে যোগ দেয়ার কারণে তিনি দীর্ঘদিন আলোচনায় ছিলেন। ক্লাবটিতে যোগ দেয়ার সময় তিনি নিজেই বলেছেন তার ইউরোপে খেলার কাল শেষ হয়েছে। আল নাসরের সঙ্গে তার চুক্তির মেয়াদ ২০২৫ সাল পর্যন্ত। পর্তুগিজ এ তারকা তার ইউরোপীয় ক্লাব ক্যারিয়ারে সবচেয়ে বেশি গোল করেছেন রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে। রিয়ালের জার্সিতে তার গোলের সংখ্যা ৪৫০টি। তার সদ্য সাবেক ক্লাব ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের হয়ে তিনি করেছিলেন ১৪৫টি গোল। আর জুভেন্টাসের জার্সিতে করেছিলেন ১০১টি গোল। তবে আন্তর্জাতিক ফুটবলে দেশের হয়ে সর্বোচ্চ গোলের রেকর্ড এখনো তার দখলেই। পর্তুগালের হয়ে তিনি ১১৮টি গোল করেছেন।
বিশ্বকাপ জয়ের পর থেকেই মেসিকে নিয়ে বিশ্বজুড়ে যেসব কটুক্তি করা হত সবকিছুই বানের জলে ভেসেছে। তার বিরুদ্ধে সবার একটি বড় অভিযোগ ছিল ক্লাবের জার্সিতে মেসি ভালো খেললেও দেশের জার্সিতে খেলার সময় তিনি তার ক্ষিপ্রতা দেখাতে চান না। প্রথমে এ কথার জবাবে দেশের জার্সি গায়ে তিনি ২০২১ সালের কোপা আমেরিকা শিরোপা জিতেছেন। সবশেষে দেশের মাটিতে বিশ্বকাপ নিয়ে গিয়ে সমালোচকদের ভুল প্রমাণ করে দিয়েছেন তার খেলা শেষ বিশ্বকাপে। বার্সেলোনার হয়ে এ তারকা ফুটবলার চারটি চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ও ১০টি লা লিগা শিরোপা জয় করেছেন। পিএসজিতে যোগ দেয়ার পর ক্লাবটির জার্সি গায়ে তিনি লিগ ওয়ানের শিরোপাও জয় করেছেন। তাছাড়া সাতবার ব্যালন ডি’অর জয় করা তাকে সর্বকালের সেরা ফুটবলারের তকমা দিয়ে দিয়েছে। বিশ্বকাপ অর্জন করে মেসি প্রমাণ করেছেন সেরা হতে হলে সবদিক থেকেই সেরা হতে হয়।
বিশ্বকাপ জয় করতে মেসিদের অপেক্ষা করতে হয়েছেল অতিরিক্ত সময় পেরিয়ে টাইব্রেকার পর্যন্ত। শ্বাসরুদ্ধ টাইব্রেকারে ফ্রান্সকে হারানোর পরই মেসি অবসরের চিন্তা বাদ দিয়েছিলেন। ভক্তদের জানিয়েছিলেন বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হিসেবে দেশের জার্সিতে আরো কয়েকটা ম্যাচ খেলার ইচ্ছা আছে তার। বিশ্বকাপ শেষ হয়েছে প্রায় দেড় মাস আগে। এর মধ্যে দেশের জার্সিতে মাঠে নামেননি একবারও।
তবে এক পডকাস্ট সাক্ষাৎকারে তিনি ফের অবসরের ইঙ্গিত দিয়েছেন। সেই সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, ‘আমার ফুটবলজীবনের বৃত্ত সম্পূর্ণ হতে চলেছে। যা আমি স্বপ্নে দেখতাম, জাতীয় দলের হয়ে তার সবকিছু অর্জন করেছি।
অনবদ্যভাবে আমার ফুটবলজীবন শেষ হতে চলেছে।’ তিনি আরো বলেন, ‘যখন শুরু করেছিলাম, কখনো কল্পনাও করিনি আমার জীবনে এরকম কিছু ঘটতে চলেছে। আমার কোনো অভিযোগ নেই। এরচেয়ে বেশি কিছু আমি চাইতেও পারি না। ২০২১ সালে আমরা কোপা আমেরিকা জিতেছিলাম। তার পরে বিশ্বকাপ। আমার আর কিছু বাকি নেই পাওয়ার।’
কাতারে তার বিশ্বকাপ জয়ের যুদ্ধ শুরু হওয়ার অনেক আগেই মেসি ইঙ্গিত দিয়েছিলেন শেষবারের মতো বিশ্বকাপে খেলার। কিন্তু ৩৬ বছর পরে আর্জেন্টিনাকে বিশ্বসেরা করার পরে তার গলায় শোনা গিয়েছিল উল্টা সুর। তবে স্পষ্ট জানিয়েছিলেন, ২০২৬ সালের বিশ্বকাপে তার খেলার কোনো সম্ভাবনা নেই। ফাইনালের পরে আর্জেন্টিনার কোচ লিওনেল স্কালোনি অবশ্য বলেছিলেন, আর্জেন্টিনা জাতীয় দলের দরজা মেসির জন্য সব সময়ই খোলা থাকবে।
শুধু গোলের দিক দিয়েই নয় অ্যাসিস্টের দিক দিয়েও রোনালদোর চেয়ে বেশ এগিয়ে রয়েছেন মেসি। ইউরোপে আর্জেন্টাইন ফরোয়ার্ডের অ্যাসিস্ট সংখ্যা ২৯৭টি। বিপরীতে রোনালদো মেসির চেয়ে ১০০টি কম অ্যাসিস্ট নিয়ে করেছেন ১৯৭টি।
মেসির কথা অনুযায়ী তিনি তার জীবনে সবকিছু অর্জন করেছেন এবং এটি শেষের সময়। যদিও তার পক্ষ থেকে খোলাখুলি কিছু বলা হয়নি, তবে মনে হচ্ছে শিগগিরই অবসরের ঘোষণা করে দিতে পারেন মেসি। অপরদিকে বিশ্বকাপ জয়ের পর এই বছর এখনো মাঠে নামেনি আর্জেন্টিনা। প্রায় তিন মাস বিরতির পর আগামী মার্চে জাতীয় দলের জার্সি গায়ে দেখা যেতে পারে মেসিদের। আর্জেন্টাইন সংবাদমাধ্যম টিওয়াইসি স্পোর্টস জানায়, ২৩ থেকে ২৮ মার্চের মধ্যে দুটি প্রীতি ম্যাচ খেলবে আর্জেন্টিনা। যদিও এখনো চূড়ান্ত হয়নি কাদের বিপক্ষে খেলবে মেসিরা। এই প্রীতি ম্যাচ দুটি প্রথমে আর্জেন্টিনার দুটি ভিন্ন প্রদেশে হওয়ার কথা ছিল। পরে সিদ্ধান্ত নেয়া হয় দুটি ম্যাচই বুয়েন্স আইরেসে অনুষ্ঠিত হবে।
এছাড়া বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর মেসির ইনস্টাগ্রামে ১০ লাখের বেশি মেসেজ এসেছিল। বিপুল পরিমাণ মেসেজ আসায় তার অ্যাকাউন্টটি সাময়িকভাবে বন্ধ করে দেয় ইনস্টাগ্রাম কর্তৃপক্ষ। ইনস্টাগ্রাম নিজেই ব্যবহার করেন মেসি। এ ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘আমিই একমাত্র যে আমার ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করি। কোনো সংস্থা বা ব্যক্তি আমার হয়ে এই অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে না।’

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়