ডিএসসিসি মেয়র : হানিফ ফ্লাইওভারের নিচে সৌন্দর্যবর্ধন করা হবে

আগের সংবাদ

নির্বাচনী বছরে কর্মসংস্থানে জোর : বেকার ৩ কোটি ৩৯ লাখ ৮৭ হাজার, সরকারি পদ খালি সাড়ে ৩ লাখের বেশি

পরের সংবাদ

আইএমএফ ঋণের প্রথম কিস্তি পেল বাংলাদেশ : রিজার্ভ বেড়ে ৩২ দশমিক ৯৬ বিলিয়ন

প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ৩, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: ফেব্রুয়ারি ৩, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : রেজিলিয়েন্স এন্ড সাসটেইনেবিলিটি ফ্যাসিলিটির (আরএসএফ) আওতায় আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) বহুল আলোচিত ঋণের প্রথম কিস্তির অর্থ পেয়েছে বাংলাদেশ। অনুমোদনের তিন দিনের মধ্যে ছাড় হয়েছে ৪৭ কোটি ৬২ লাখ ডলার। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, এ ঋণ দেশের অর্থনীতির অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক চাপে কিছুটা স্বস্তি দেবে। একই সঙ্গে দীর্ঘ মেয়াদে পূর্ণ সমাধানের পথও কিছুটা এগিয়ে দেবে। তাদের মতে, ঋণের পূর্ণ সদ্ব্যবহারে আইএমএফের দেয়া সংস্কার বাস্তবায়ন করতে হবে। এজন্য সাহসী রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নিতে হবে। এছাড়া দীর্ঘ মেয়াদে সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতায় সক্ষমতাও বাড়াতে হবে।
গতকাল বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ব্যাংকে সংস্থাটির মোট ৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার (৪৭০ কোটি ডলার) ঋণের মধ্যে প্রথম কিস্তির অর্থ জমা হয়েছে বলে ভোরের কাগজকে নিশ্চিত করেছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্র মেজবাউল হক। তিনি বলেন, আজ (বৃহস্পতিবার) যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল ব্যাংকে বাংলাদেশ ব্যাংকের অ্যাকাউন্টে আইএমএফর ঋণের প্রথম কিস্তির ৪৭ কোটি ৬২ লাখ ডলার জমা হয়েছে। দ্বিতীয় কিস্তি কবে পাওয়া যাবে সেই তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে আইএমফ সাধারণত কোনো দেশকে ঋণ দিলে বিভিন্ন কাঠামোগত সংস্কারের বিষয়ে সম্মত হয়েই ঋণ দেয়া এবং সাধারণত দ্বিতীয় কিস্তি ছাড়ের আগে সেই সংস্কার কর্মসূচির অগ্রগতি পর্যালোচনা করে। তাই সিডিউল অনুযায়ী দ্বিতীয় কিস্তি ও পর্যায়ক্রমে বাকি অর্থ আসবে বলে জানান তিনি। ২ দশমিক ২ শতাংশ সুদে নেয়া এ ঋণ আসবে সাত কিস্তিতে। শেষ কিস্তি আসবে ২০২৬ সালে। মেজবাউল হক জানান, এশিয়ান উন্নয়ণ ব্যাংক (এডিবি) থেকেও আজ আরো ২৩ মিলিয়ন ডলার এসেছে। ফলে রিজার্ভে ৪৮২ মিলিয়ন ডলার যুক্ত হয়েছে। এতে রিজার্ভ বেড়ে এখন ৩২ দশমিক ৬৯ বিলিয়ন ডলার হয়েছে। আগেরদিন বুধবার যা ছিল ৩২ দশমিক ১ বিলিয়ন।
এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসিতে গত সোমবার বাংলাদেশকে ৪৫০ কোটি ডলার ঋণ দেয়ার জন্য আইএমএফের পর্ষদ সভায় তোলা হয়। পরে সংস্থাটি ৪৭০ কোটি ডলার ঋণ অনুমোদন করে। এরপর গত ৩১ জানুয়ারি এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে সংস্থাটি জানায়, এক্সটেন্ডেন্ড ক্রেডিট ফ্যাসিলিটি (ইসিএফ) বা স¤প্রসারিত ঋণ সুবিধার

আওতায় তারা ৩ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলার দেবে। আরএসএফর আওতায় আরো ১ দশমিক ৪ বিলিয়ন ডলার অনুমোদন করা হয়েছে।
পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেন, আমাদের এখন রিজার্ভের সংকট আছে, এ ঋণ রিজার্ভ বাড়াবে। সেখান থেকে আমরা আমদানি ব্যয় মেটাতে পারব। অর্থনীতিকে চালিয়ে রাখতে হলে আমদানি একটা পর্যায়ে অবশ্যই ধরে রাখতে হবে। শুধু আর্থিক সহায়তায় আমাদের সমস্যার সমাধান হবে না। প্রতি মাসে দেড় বিলিয়ন ডলার করে আমরা রিজার্ভ হারাচ্ছি। কাজেই আইএমএফের অর্থ দিয়ে আমাদের চাহিদা মেটানো যাবে না। আমাদের অন্যান্য পলিসি নিতে হবে, যা পরিস্থিতি পরিবর্তনে সহায়তা করবে।
এ বিষয়ে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিডিপি) সম্মানীয় ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আইএমএফের ঋণ আমাদের সংকটকালে বৈদেশিক মুদ্রার চাহিদা মেটাতে কিছুটা হলেও সহায়ক হবে। এর মাধ্যমে অন্য উন্নয়ন সহযোগীদের কাছেও বাংলাদেশ সম্পর্কে ইতিবাচক বার্তা যাবে।
কোভিড মহামারির ধাক্কা সামলে বাংলাদেশের অর্থনীতি ভালোভাবে ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করলেও ইউক্রেন যুদ্ধের জেরে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বড় ধরনের চাপে পড়েছে; ডলারের বিপরীতে মান হারিয়ে চলছে টাকা, মূল্যস্ফীতিও পৌঁছেছে উদ্বেগজনক পর্যায়ে। রিজার্ভ ধরে রাখতে আমদানিতে লাগাম টানায় অর্থনীতি সঙ্কুচিত হয়েছে; জ¦ালানি সংকটের মুখে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে উৎপাদন। পাশাপাশি জলবায়ু পরিবর্তনের মতো দীর্ঘমেয়াদি ঝুঁকিও বাংলাদেশের সামনে রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে গত জুলাই মাসে আইএমএফের কাছে ঋণ চায় বাংলাদেশ। এরপর সংস্থাটির এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের প্রধান রাহুল আনন্দের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল অক্টোবরের শেষে ঢাকায় আসেন। দুই সপ্তাহ সরকারে বিভিন্ন দপ্তর, নিয়ন্ত্রক সংস্থা এবং অংশীজনদের সঙ্গে ধারাবাহিক বৈঠকের পর ঋণের বিষয়ে প্রাথমিক সমঝোতার কথা জানানো হয় সরকারের তরফ থেকে। এরপর থেকে সংস্থাটির পরামর্শ মেনে বেশ কিছু পদক্ষেপ নেয় সরকার।
এদিকে, চলতি ২০২২-২৩ অর্থ বছরের জুলাই-জানুয়ারি সাত মাসে এ যাবৎকালের সবচেয়ে বেশি ডলার বিক্রি করেছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মেজবাউল হক। তিনি বলেন, সাত মাসে ৯২০ কোটি ডলার বিক্রি করা হয়েছে। দেশের ইতিহাসে পুরো অর্থবছরেও রিজার্ভ থেকে এত পরিমাণ ডলার বিক্রি হয়নি। এর আগে ২০২১-২২ অর্থ বছরের পুরো সময়ে রিজার্ভ থেকে ৭৬২ কোটি ডলার বিক্রি করা হয়েছিল।
দেশে প্রায় এক বছর ধরে ডলারের তীব্র সংকট চলছে। ডলারের এ সংকট কাটাতে উচ্চাভিলাষী পণ্য আমদানি নিরুৎসাহিত করার পাশাপাশি বিভিন্ন পদক্ষেপও নেয়া হয়েছে। এরপরও সংকট কাটছে না। এ জন্য জরুরি আমদানি দায় মেটাতেই বৈদেশিক মুদ্রার সঞ্চায়ন থেকে ডলার সহায়তা দিচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়