ক্রোয়েশিয়া : ক্রিমিয়া কখনোই আর ইউক্রেনের অংশ হবে না

আগের সংবাদ

পাতালরেল যুগে বাংলাদেশ : ১০০ সেকেন্ড পর পর ট্রেন, ভূগর্ভে হবে ১২টি তিনতলা স্টেশন

পরের সংবাদ

সব প্রক্রিয়া শেষের দিকে : এলজিইডি > অর্থ বরাদ্দ পেলেই ব্রিজ নির্মাণ শুরু রক্তদহ বিলের খেয়াঘাটে

প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ২, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: ফেব্রুয়ারি ২, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

মো. আবু বকর সিদ্দিক, নওগাঁ থেকে : অর্থ বরাদ্দ পেলেই ব্রিজ নির্মাণের কাজ শুরু করা হবে রক্তদহ বিলের খেয়াঘাটে। বিষয়টি নিশ্চিত করেন নওগাঁ এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী তোফায়েল আহমেদ। তিনি বলেন, আমার জানা মতে ব্রিজ নির্মাণের সব প্রক্রিয়া প্রায় শেষের দিকে। আমি আশাবাদী অতিদ্রুতই এই অঞ্চলের মানুষের শত বছরের স্বপ্নের ব্রিজ নির্মাণের সুখবর দ্রুতই পাওয়া যাবে।
নওগাঁর রাণীনগর ও বগুড়ার আদমদীঘি এই দুই উপজেলার সীমানায় অবস্থিত শত বছরের ঐতিহাসিক রক্তদহ বিল। বিলের আশেপাশে ৪০টি গ্রামের মানুষের বসবাস। এই মানুষদের চলাচলের একমাত্র ভরসা মেঠোপথের শেষে খেয়াঘাটের নৌকা। বিলে পানি যতদিন থাকে ততদিন নৌকায় পারাপার আর যখন পানি থাকে না তখন প্রয়োজনীয় কর্ম সমাধান করতে ৪০-৫০ কিমি রাস্তা ঘুরে নওগাঁ, বগুড়া, রাণীনগর ও আদমদীঘিতে যেতে হয়। এতে করে বছরের পর বছর চরম দুর্ভোগের মধ্য দিয়ে জীবনযাপন করে আসতে হচ্ছে এই অঞ্চলের লাখো মানুষকে। কৃষকরা ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হয়ে আসছে যুগের পর যুগ। হাজারো চেষ্টাও এই অঞ্চলের মানুষের ভাগ্যে খেয়াঘাটে জোটেনি একটি ব্রিজ যার ফলে আধুনিক যোগাযোগ ব্যবস্থার সুফল থেকেও বঞ্চিত এই কৃষিপ্রধান অঞ্চলটি।
বোদলা গ্রামের বাসিন্দা মো. সাইদুর রহমান মুহরী জানান, কথিত আছে ব্রিটিশ বাহিনীর সঙ্গে এই অঞ্চলে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ হয় ফকির মজনু শাহের বাহিনীর। এই যুদ্ধে নিহত উভয় বাহিনীর সৈন্যদের রক্ত এই বিলের পানির সঙ্গে একদিকে আরেক দিকে বয়ে যায়। তখন থেকে এই বিলটি রক্তদহ বিল হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। মাধ্যমিক পর্যায়ের একাধিক পাঠ্যবইয়েও এই বিলের ইতিহাস লিপিবদ্ধ আছে।
কয়েক হাজার বিঘা জমি নিয়ে এই বিল। বিলের পূর্বপাশে নওগাঁর রাণীনগর উপজেলার কৃষিপ্রধান অঞ্চল বোদলা, পালশা, কৃষ্ণপুর, তেবাড়িয়াসহ ৪০টি গ্রাম অবস্থিত। এই মানুষের সহজেই নওগাঁ, বগুড়া, রাণীনগর, আদমদীঘি, সান্তাহারে চলাচলের সহজপথ হচ্ছে বিলের মধ্যদিয়ে যাওয়া রাস্তা। বিলের মধ্যে একটি ব্রিজ না হওয়ার কারণে মেঠোপথ দিয়েই খেয়াঘাটে পারাপার হতে হয়।
পারাপারের জন্য খেয়াঘাটে এসে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয় নৌকার জন্য। এই অঞ্চলের মানুষের হাতে দুই থেকে তিন ঘণ্টা সময় বেশি নিয়ে অন্যত্র যেতে হয়। একটি ব্রিজের অভাবে এখনো এই অঞ্চলের মানুষের প্রাচীন যুগে বসবাস করতে হচ্ছে। দিনের বেলা ঘাটে এসে নৌকা পাওয়া গেলেও রাতের বেলায় ৪০-৫০ কিমি রাস্তা ঘুরে এই অঞ্চলের মানুষের নিজের বাড়িতে ফিরতে হয়। সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগ পোহাতে হয় শিক্ষার্থী ও জরুরি রোগীদের। অনেক প্রসূতির হাসপাতালে নেয়ার পথে এই খেয়াঘাটে এসেই প্রসব হয়ে যায়।
অনেক জটিলতা শেষে ২০১৯ সালে এই ঘাটে একটি ব্রিজ নির্মাণের প্রস্তাব একনেকে অনুমোদন পেলেও পরবর্তীতে সেই কার্যক্রম রহস্যজনক কারণে আর আলোর মুখ দেখেনি। সহজেই নিজেদের উৎপাদিত ফসল বাজারজাত করতে না পারার কারণে ন্যায্যমূল্য পাওয়া থেকে বঞ্চিত হয়ে আসছে এই অঞ্চলের হাজার হাজার কৃষক। বর্তমানে দ্রুত এই ঘাটে একটি ব্রিজ নির্মাণ সময়ের দাবি হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সান্তাহার সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী ও বোদলা গ্রামের বাসিন্দা আবু বকর জানান, উচ্চ শিক্ষার প্রতিষ্ঠান নওগাঁ ও সান্তাহারে। তাই কলেজে যেতে হলে হাতে দুই ঘণ্টা সময় বেশি নিয়ে বাড়ি থেকে বের হতে হয়। তারপরও ঘাটে এসে পার হয়ে কলেজে যেতে যেতে ক্লাস মিস হয়ে যায়। এমনকি পরীক্ষাতেও সঠিক সময়ে উপস্থিত হওয়া যায় না। প্রধানমন্ত্রী যে স্মার্ট বাংলাদেশের স্বপ্ন আমাদের দেখাচ্ছেন এই অঞ্চলের মানুষগুলোকে প্রাচীন আমলে রেখে কীভাবে স্মার্ট বাংলাদেশের স্বপ্ন বাস্তবায়ন হবে? এছাড়া একাধিকবার ঘাটে নৌকা ডুবে প্রাণহানির ঘটনাও ঘটেছে।
তেবাড়িয়া গ্রামের বাসিন্দা বাদশা বলেন, এই বিলের একপ্রান্তে শত বছরের ঐতিহাসিক কোসমুড়ির দরগা রয়েছে। যেখানে বিভিন্ন মানত পূরণ করতে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে মানুষ এসে থাকে। এছাড়াও বর্ষাকালে এই বিলের সৌন্দর্য উপভোগ করতে অনেক দর্শনার্থী এসে থাকেন। তাই এই ঘাটে একটি ব্রিজ হলে বিলটি পর্যটকদের কাছে একটি আকর্ষণীয় স্পট হিসেবে গড়ে উঠতে পারে। এতে এখানে অনেক বেকার মানুষের কর্মসংস্থানেরও সৃষ্টি হবে।
নওগাঁ এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী তোফায়েল আহমেদ বলেন, আমার জানা মতে ব্রিজ নির্মাণের সব প্রক্রিয়া প্রায় শেষের দিকে। সব বিভাগীয় প্রক্রিয়া শেষে অর্থ বরাদ্দ পেলেই ব্রিজ নির্মাণের কাজ শুরু করা হবে। আমি আশাবাদী অতিদ্রুতই এই অঞ্চলের মানুষের শত বছরের স্বপ্নের ব্রিজ নির্মাণের সুখবর দ্রুতই পাওয়া যাবে।
নওগাঁ-৬ (আত্রাই-রাণীনগর) আসনের সংসদ সদস্য আলহাজ মো. আনোয়ার হোসেন হেলাল বলেন, চীনের হুয়াংহু নদীর মতো এই রক্তবিলও এ অঞ্চলের মানুষের জন্য একটি দুঃখ। এই ঘাটে একটি ব্রিজ এই অঞ্চলটিকে আমূল বদলে দিতে পারে। আমিও সংশ্লিষ্ট বিভাগকে একাধিকবার ব্রিজ নির্মাণের জন্য যাবতীয় পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য তাগাদা দিয়েছি। আমি আশাবাদী জননেত্রী শেখ হাসিনার উন্নয়নের ছোঁয়া হিসেবে এই ঘাটে দ্রুত একটি আধুনিকমানের ব্রিজ নির্মাণের সুখবর পাওয়া যাবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়