কেরানীগঞ্জের দগ্ধ সেই গৃহবধূর মৃত্যু

আগের সংবাদ

অনির্বাচিত সরকার এলে সংবিধান অশুদ্ধ হবে : অমর একুশে বইমেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী

পরের সংবাদ

প্রাণের গ্রন্থমেলার দ্বার খুলছে আজ : প্রধানমন্ত্রী সশরীরে আসছেন বইমেলায়

প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ১, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: ফেব্রুয়ারি ১, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

শরীফা বুলবুল : করোনাকালের সমস্ত দ্বিধা আর শঙ্কার কালো মেঘ কেটে গিয়ে অসংখ্য বইপ্রেমী, পাঠক, লেখক আর প্রকাশকদের স্বপ্নের অমর একুশে বইমেলার দ্বার খুলছে আজ। দেশে-বিদেশে ছড়িয়ে থাকা অসংখ্য কবি, লেখক, সাহিত্যিকের লেখা বইয়ের সম্ভার থাকছে মেলায়। একই সঙ্গে ভাষার মাসের প্রথম দিন মুখর হয়ে উঠবে বাংলা একাডেমি আর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যান চত্বর। আর দুই বছর পর সশরীরে প্রাণের মেলা উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনে এবারের মেলার মূল প্রতিপাদ্য ‘পড়ো বই গড়ো দেশ, বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ’। আজ বুধবার বিকাল ৩টায় উদ্বোধনের পর ৩৯তম বইমেলার দ্বার উন্মুক্ত করা হবে সবার জন্য। চলবে আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত।
উদ্বোধনী আনুষ্ঠানিকতায় বাংলা একাডেমি প্রকাশিত ৭টি নতুন বইয়ের মোড়ক উন্মোচনের পাশাপাশি বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার ২০২২ প্রদান করবেন প্রধানমন্ত্রী। মেলার উদ্বোধন অনুষ্ঠান সরাসরি স¤প্রচার করবে বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বাংলাদেশ বেতার।
প্রকাশকরা বলছেন, গত দুই বছর করোনা মহামারির দুর্যোগকালে বইমেলার আয়োজনে সিডিউল ভেঙে পড়েছিল। স্বতঃস্ফূর্ততা তেমন ছিল না। নানা প্রতিবন্ধকতার কারণে মেলা আয়োজনের সুফলও পাওয়া হয়ে ওঠেনি। বেচাবিক্রি যেমন কম ছিল, তেমন অনেক প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানকে আর্থিকভাবে ক্ষতির মুখে পড়তে হয়েছিল। সেই ক্ষয়ক্ষতি এখনো সেভাবে কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হয়নি। তবে এবারের বইমেলা ঘিরে সব শঙ্কা অনেকটা কেটে গেছে।
প্রকাশক ও লেখকরা আশা করছেন, এবারের বইমেলায় পাঠক আর বইপ্রেমীদের ভিড় বাড়বে। সেই সঙ্গে প্রকাশিত বইয়ের কেনাবেচাও বাড়বে আগের চেয়ে বেশি। আর তাতে ক্ষতিগ্রস্ত প্রকাশকরা ঘুরে দাঁড়াতে পারবেন বলেই আশা করা হচ্ছে। তবে অনেকেই বলছেন, প্রকাশনা উপকরণের দাম বেশি হওয়ার কারণে এবারের বইমেলায় বইয়ের দাম অনেকটা বেশি থাকবে। যা অনেক ক্রেতার নাগালের বাইরে চলে যেতে পারে। সব মিলিয়ে সফলতার সজীব ফসল উঠবে এমন প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছেন তারা।
বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ এবং ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের প্রায় সাড়ে ১১ লাখ বর্গফুট জায়গাজুড়ে থাকছে এবারের মেলার পরিসর। এর মধ্যে একাডেমি প্রাঙ্গণে ১১২টি প্রতিষ্ঠানকে ১৬৫টি এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে ৪৮৯টি প্রতিষ্ঠানকে ৭৩৬টি ইউনিট অর্থাৎ মোট ৬০১টি প্রতিষ্ঠানকে ৯০১টি ইউনিট বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। মেলায় প্যাভিলিয়ন থাকছে ৩৮টি।
এবার বইমেলার আঙ্গিকগত বিন্যাসে আনা হয়েছে পরিবর্তন। বিশেষ করে মেট্রোরেল স্টেশনের অবস্থানগত কারণে গতবারের মূল প্রবেশপথ এবার একটু সরিয়ে

বাংলা একাডেমির মূল প্রবেশপথের উল্টো দিকে অর্থাৎ মন্দির গেটটি মূল প্রবেশপথ হিসেবে ব্যবহৃত হবে। গতবারের প্রবেশপথটি বাহিরপথ হিসেবে চিহ্নিত থাকবে। এছাড়া টিএসসি, দোয়েল চত্বর এবং ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন অংশে থাকবে আরো ৩টি প্রবেশ ও বাহির পথ।
গতবার ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন অংশে ১৮২টি স্টল এবং ১১টি প্যাভিলিয়ন ছিল। তবে গতবারের ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের স্থানটিকেও এবারের মেলার একটি অংশ হিসেবে বেছে নেয়া হয়েছে। সেখানে নামাজের স্থান, ওয়াশরুমসহ অন্যান্য পরিষেবা অব্যাহত থাকবে।
উল্লেখ্য, খাবারের স্টলগুলোকে এবার এমনভাবে সুবিন্যস্ত করা হয়েছে যেন এলোমেলোভাবে খাবারের স্টল বইমেলায় আগত পাঠকের মনোযোগ বিঘিœত না করে। শিশু চত্বরটির পরিধি কম হওয়ায় এবার এই চত্বরটি মন্দির গেটে প্রবেশের ঠিক ডান দিকে বড় পরিসরে রাখা হয়েছে।
এবার লিটল ম্যাগাজিন চত্বর স্থানান্তরিত হয়েছে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের গ্রন্থ-উন্মোচন অংশের কাছাকাছি। সেখানে ১৫৩টিসহ ৫টি উন্মুক্ত স্থানে লিটলম্যাগকে স্টল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। বাংলা একাডেমি এবং মেলায় অংশগ্রহণকারী সব প্রতিষ্ঠান ২৫ শতাংশ কমিশনে বই বিক্রি করবে।
প্রতিদিন বিকাল ৪টায় বইমেলার মূল মঞ্চে সেমিনার এবং সন্ধ্যায় থাকবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। বাংলা একাডেমির ৩টি প্যাভিলিয়ন এবং শিশুকিশোর উপযোগী প্রকাশনার বিপণনের জন্য একটি স্টল থাকবে। প্রতিদিন বিকাল ৩টা থেকে মেলা চলবে রাত ৯টা পর্যন্ত। শুক্র ও শনিবার মেলার প্রবেশদ্বার খোলা হবে সকাল ১১টায় আর ২১ ফেব্রুয়ারি শহীদ দিবস এবং আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে মেলা শুরু হবে সকাল ৮টায় এবং চলবে রাত ৯টা পর্যন্ত। প্রতি শুক্র ও শনিবার বেলা ১১টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত থাকছে ‘শিশুপ্রহর’। অমর একুশে উদযাপনের অংশ হিসেবে শিশুকিশোর চিত্রাঙ্কন, আবৃত্তি এবং সংগীত প্রতিযোগিতার আয়োজন থাকছে।
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে নতুন বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা থাকবে। অমর একুশে বইমেলা ২০২৩-এর প্রচার কার্যক্রমের জন্য একাডেমির বর্ধমান ভবনের পশ্চিম বেদিতে একটি ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে দুটি তথ্যকেন্দ্র থাকবে। বর্তমান সরকারের ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ ধারণার অংশ হিসেবে ডিজিটাল ডিসপ্লেতে জমাকৃত নতুন বইয়ের প্রচ্ছদ, তথ্য এবং বইমেলার মানচিত্র পর্যায়ক্রমে প্রদর্শিত হবে।
বইমেলার প্রবেশ ও বাহিরপথে পর্যাপ্ত সংখ্যক আর্চওয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে। মেলার সার্বিক নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করবে বাংলাদেশ পুলিশ, র‌্যাব, আনসার, বিজিবি ও গোয়েন্দা সংস্থাসমূহ। নিñিদ্র নিরাপত্তার জন্য মেলায় এলাকাজুড়ে তিন শতাধিক ক্লোজসার্কিট ক্যামেরার ব্যবস্থা করা হয়েছে। বইমেলা পলিথিন ও ধূমপানমুক্ত থাকবে। মেলা প্রাঙ্গণ ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় (সমগ্র মেলা প্রাঙ্গণ ও দোয়েল চত্বর থেকে টিএসসি হয়ে শাহবাগ, মৎস্য ভবন, ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন হয়ে শাহবাগ পর্যন্ত এবং দোয়েল চত্বর থেকে শহীদ মিনার হয়ে টিএসসি, দোয়েল চত্বর থেকে চাঁনখারপুল, টিএসসি থেকে নীলক্ষেত পর্যন্ত) নিরাপত্তার স্বার্থে পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা থাকবে। মেলার পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা এবং নিয়মিত ধুলা নিবারণের জন্য পানি ছিটানো এবং প্রতিদিন মশক নিধনের সার্বিক ব্যবস্থা থাকবে।
অমর একুশে বইমেলায় অংশগ্রহণকারী প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের ২০২২ সালে প্রকাশিত গ্রন্থের মধ্য থেকে গুণগতমান বিচারে সেরা বইয়ের জন্য প্রকাশককে ‘চিত্তরঞ্জন সাহা স্মৃতি পুরস্কার’ এবং ২০২২ সালের বইমেলায় প্রকাশিত বইয়ের মধ্য থেকে শৈল্পিক বিচারে সেরা বই প্রকাশের জন্য ৩টি প্রতিষ্ঠানকে ‘মুনীর চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার’ দেয়া হবে। এছাড়া ২০২২ সালে প্রকাশিত শিশুতোষ গ্রন্থের মধ্য থেকে গুণগত মান বিচারে সর্বাধিক গ্রন্থের জন্য একটি প্রতিষ্ঠানকে ‘রোকনুজ্জামান খান দাদাভাই স্মৃতি পুরস্কার’ এবং এ-বছরের মেলায় অংশগ্রহণকারী প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের মধ্য থেকে স্টলের নান্দনিক সাজসজ্জায় শ্রেষ্ঠ বিবেচিত প্রতিষ্ঠানকে ‘কাইয়ুম চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার’ প্রদান করা হবে।
এবারের গ্রন্থমেলায় বাংলা একাডেমি প্রকাশ করছে নতুন ও পুনর্মুদ্রিত ১৩৬টি বই।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়