কেরানীগঞ্জের দগ্ধ সেই গৃহবধূর মৃত্যু

আগের সংবাদ

অনির্বাচিত সরকার এলে সংবিধান অশুদ্ধ হবে : অমর একুশে বইমেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী

পরের সংবাদ

খারাপের শীর্ষে সোমালিয়া, ভালোতে ডেনমার্ক : দুর্নীতির ধারণা সূচকে এক ধাপ অবনমন বাংলাদেশের

প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ১, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: ফেব্রুয়ারি ১, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের (টিআই) বৈশ্বিক বিচারে গত এক বছরে বাংলাদেশে দুর্নীতি পরিস্থিতির এক ধাপ অবনমন ঘটেছে। গতকাল মঙ্গলবার সংস্থাটির প্রকাশিত দুর্নীতির বার্ষিক ধারণা সূচকের (সিপিআই) ঊর্ধ্বক্রম অনুযায়ী (ভালো থেকে খারাপ) বিশ্বের ১৮০টি দেশ ও অঞ্চলের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান এবার ১৪৭ নম্বরে। ঊর্ধ্বক্রম অনুযায়ী গতবারও এ তালিকায় ১৪৭ নম্বরে ছিল বাংলাদেশ। আবার অধঃক্রম অনুযায়ী (খারাপ থেকে ভালো) বিবেচনা করলে বাংলাদেশের অবস্থান এবার ১৮০ দেশের মধ্যে ১২তম, যেখানে গত বছর ছিল ১৩তম অবস্থানে। এছাড়া ১০০ ভিত্তিতে এই সূচকে বাংলাদেশের স্কোর তিন বছর পর ১ কমে ২৫ হয়েছে। এই স্কেলে শূন্য স্কোরকে দুর্নীতির ব্যাপকতার ধারণায় সবচেয়ে বেশি দুর্নীতিগ্রস্ত এবং ১০০ স্কোরকে সবচেয়ে কম দুর্নীতিগ্রস্ত বা সর্বোচ্চ সুশাসনের দেশ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এদিকে বিশ্বের ১৮০টি রাষ্ট্রের মধ্যে সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত দেশের তালিকার শীর্ষ স্থানে রয়েছে পূর্ব আফ্রিকার দেশ সোমালিয়া। আর বিশ্বের সবচেয়ে কম দুর্নীতির দেশ হিসেবে বিবেচিত হয়েছে ইউরোপের দেশ ডেনমার্ক।
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান গতকাল রাজধানীর ধানমন্ডির মাইডাস সেন্টারে টিআইবি কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এবারের প্রতিবেদনের বিভিন্ন দিক এবং বাংলাদেশের দুর্নীতির অবনমনের পেছনে কিছু কারণ তুলে ধরেন। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর ‘জিরো টলারেন্স’ নীতিকে শুধুই ‘রাজনৈতিক বক্তব্যে’ সীমাবদ্ধ রাখা, মহামারিকালে সরকারি খাতে সুরক্ষাসামগ্রী থেকে শুরু করে সাধারণের কাছে বিভিন্ন সুবিধা পৌঁছে দেয়ার ক্ষেত্রে অনিয়ম, অর্থ পাচারের রিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা না নেয়া, রাজনীতি ও ব্যবসায়িক পরিমণ্ডলে প্রভাবশালী দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে না পারা এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে কাজ করা প্রতিষ্ঠানগুলো প্রতিনিয়ত সরকারি ও আমলাতান্ত্রিক বলয়ের মধ্যে নিয়ে আসায় দেশে দুর্নীতি কমছে না। ইফতেখারুজ্জামান বলেন, যারা দুর্নীতির তথ্য প্রকাশ করে, তাদের গলা চেপে ধরা হচ্ছে। গণমাধ্যম, নাগরিক সমাজ এখন ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনের মতো বিষয়গুলোর জন্য এসব দুর্নীতির বিরুদ্ধে মুখ খুলতে পারছে না। দুর্নীতির তালিকায় উন্নতি করতে হলে আমাদের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে হবে, জবাবদিহি বাড়াতে হবে, যারা দুর্নীতি নিয়ে কথা বলে ও প্রতিবাদ করে তাদের স্বাধীনতা দিতে হবে। আর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে বিষয়টি দরকার হবে সেটি হচ্ছে- রাজনৈতিক অঙ্গনে একটি ব্যাপক পরিবর্তন আনতে হবে।
দুর্নীতির সূচক বিশ্লেষণ করে ইফতেখারুজ্জামান বলেন, বাংলাদেশের এবারের স্কোর ২০১৪ ও ২০১৫ সালের অনুরূপ এবং অবস্থান ২০১০ ও ২০২০ সালের অনুরূপ। অর্থাৎ দুর্নীতি প্রতিরোধের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ একই বৃত্তে ঘুরপাক খাচ্ছে। সবশেষ ১১ বছরে বাংলাদেশের স্কোর ঘুরে ফিরে ২৫ থেকে ২৮ এর মধ্যেই রয়েছে।
তিনি বলেন, গত এক দশকে দুর্নীতির অবস্থানে বাংলাদেশের কোনো উন্নতি ঘটেনি, বরং খারাপ হয়েছে। ২০১৩ থেকে ২০১৭ ও পরে ২০২২ পর্যন্ত আমাদের অবস্থান স্থবির জায়গায় আছে। এটা হতাশাব্যাঞ্জক বলেই আমরা মনে করি। ১২২টি দেশের সঙ্গে আমাদের অবস্থান, যাদের স্কোর ৫০ এর নিচে। দুর্নীতির অবস্থা যেটা, সেটা গুরুতর। এই ৫০ স্কোরের মধ্যেও আমাদের অবস্থান আরো নিচে (২৫)। আরো গভীরতর উদ্বেগের

মাঝে আমরা আছি। দক্ষিণ এশিয়ার প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, আমাদের স্কোর এ বছর এক পয়েন্ট কমেছে, আফগানিস্তানের আট পয়েন্ট বেড়েছে। এটা অব্যাহত থাকলে আমরা দক্ষিণ এশিয়ায় আফগানিস্তানের চেয়েও নিচে চলে গিয়ে প্রথম স্থানে চলে আসার সম্ভাবনা আছে। যা খুবই উদ্বেগজনক।
এদিকে দুর্নীতিবিরোধী সংস্থাটির বার্ষিক ধারণা সূচকে দুর্নীতিগ্রস্ত দেশের তালিকায় এবারো দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশের চেয়ে বাজে অবস্থা কেবল আফগানিস্তানের। ২৪ স্কোর নিয়ে তালিকার ঊর্ধ্বক্রম অনুযায়ী ১৭৪তম অবস্থান থেকে ২৪ ধাপ উন্নতি হয়ে ১৫০ নম্বরে আফগানিস্তানের অবস্থান। দেখা যাচ্ছে- তালেবান শাসনে থাকা আফগানিস্তানের স্কোর গতবারের চেয়ে উন্নতি হয়েছে। এছাড়া গতবারের মতই দক্ষিণ এশিয়ায় সবচেয়ে ভালো অবস্থানে আছে ভুটান। ৬৮ স্কোর নিয়ে ভুটানের অবস্থান সূচকের ঊর্ধ্বক্রম অনুযায়ী ২৫ নম্বরে। এরপর ভারত ও মালদ্বীপ ৮৫ (স্কোর ৪০), শ্রীলঙ্কা ১০১ (স্কোর ৩৬), নেপাল ১১০ (স্কোর ৩৪), পাকিস্তান ১৪০তম (স্কোর ২৭)। ২৫ স্কোরে বাংলাদেশের সঙ্গে সূচকের একই অবস্থানের রয়েছে গিনি ও ইরান।
টিআইয়ের প্রতিবেদন অনুযায়ী- এবারের সূচকে ১৮০টি দেশের গড় স্কোর গতবারের মতই ৪৩। তালিকায় এবার সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় আছে আফ্রিকার দেশ সোমালিয়া, তাদের স্কোর ১২। এরপর রয়েছে যথাক্রমে সিরিয়া, সাউথ সুদান, ভেনেজুয়েলা, ইয়েমেন, লিবিয়া, উত্তর কেরিয়া, হাইতি, ইকুয়েটোরিয়াল গিনি ও বুরুন্ডি। অন্যদিকে সর্বোচ্চ ৯০ স্কোর নিয়ে গতবারের মতই তালিকায় সবচেয়ে ভালো অবস্থানে রয়েছে ডেনমার্ক। এরপর রয়েছে- ফিনল্যান্ড, নিউজিল্যান্ড, নরওয়ে, সিঙ্গাপুর, সুইডেন, সুইজারল্যান্ড, নেদারল্যান্ডস, জার্মানি ও আয়ারল্যান্ড। সিপিআই-২০২২ এর তথ্যের উৎস ছিল ১৩টি আন্তর্জাতিক জরিপ। তিন বছরের চলমান তথ্য এই সূচকে ব্যবহৃত হয়েছে। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে ৮টি সূত্র থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। সেগুলো হলো- ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম এক্সিকিউটিভ ওপিনিয়ন সার্ভে, ইকোনমিক ইন্টেলিজেন্স ইউনিট কান্ট্রি রিস্ক অ্যাসেসমেন্ট, ওয়ার্ল্ড জাস্টিস প্রজেক্ট রুল অব ল ইনডেক্স, পলিটিক্যাল রিস্ক ইন্টারন্যাশনাল কান্ট্রি রিস্ক গাইড, বার্টেলসম্যান ট্রান্সফরমেশন ইনডেক্স, গেøাবাল ইনসাইট কান্ট্রি রিস্ক রেটিংস, বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি পলিসি অ্যান্ড ইনস্টিটিউশনাল অ্যাসেসমেন্ট, ভেরাইটিজ অব ডেমোক্রেসিজ প্রজেক্ট।
সংবাদ সম্মেলনে টিআইবির উপদেষ্টা (নির্বাহী ব্যবস্থাপনা) সুমাইয়া খায়ের, পরিচালক (আউটরিচ কমিউনিকেশন) শেখ মঞ্জুর-ই আলম উপস্থিত ছিলেন।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়