উগ্র মৌলবাদের বিরুদ্ধে গণসংগীত সমন্বয় পরিষদের কর্মসূচি

আগের সংবাদ

গৃহায়ণ ও রাজউকের ১১ উন্নয়ন প্রকল্প উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রী : আওয়ামী লীগ সরকারে আছে বলেই দেশের উন্নয়ন হচ্ছে

পরের সংবাদ

একটি পায়েল

প্রকাশিত: জানুয়ারি ৩০, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ৩০, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

চারপাশ বড্ড কোলাহলে ভরা, সঙ্গে ভ্যাপসা গরম। আজকের দিনটা একটুও ভালো যায়নি। সারাদিনে মিহির সঙ্গে একবারও কথা হয়নি। একটা কল, একটা ম্যাসেজও করেনি। পলক কতগুলো ম্যাসেজ করেছে, একটাও সিন করেনি। এজন্য পলকেরও খুব মন খারাপ। ছুটির দিনটা একদম বৃথাই গেল। সপ্তাহ শেষে ছুটির দিনে একটু প্রাণভরে কথা বলা যায়। কিন্তু কী যে হয়ে গেল!
মিহি বড্ড জিদি মেয়ে। সবার কাছে যেমন তেমন হলেও, ওর সব রাগ, অভিমান, জিদ পলককেই দেখায়। সামান্য একটা বিষয়ে ঝগড়া হওয়ায় সারাদিন পলককে নক করেনি। এমনকি রাতেও না। কিন্তু পলক? পলক সারাদিন পারলেও রাতে আর পারেনি। রাত আটটার দিকে মিহিকে কল করে সে। মিহিও যেন অপেক্ষায় ছিল একটি কলের। রিং হতে না হতেই রিসিভ। মিহি ফোন রিসিভ করতেই পলক বলে উঠল- তুমি সারাদিন একবারও আমার খোঁজ না নিয়ে ক্যামনে পারলে?
মিহি যেন স্তব্ধ হয়ে গেল, সেও কিছু বলতে পারছে না। শুধু কান্না করছে। পলকও চুপ হয়ে আছে।
খানিক পরে বলল- কেঁদো না ময়না, তোমার কান্না আমি সইতে পারি না। তোমার নিঃশ্বাসের শব্দ আমায় পাগল করে দেয়।
মিহি আরেকটু জোরে কেঁদে বলল- তুমি কেন সারাদিন আমাকে কল দাওনি? আমি কতবার ফোন চেক করেছি।
– পাগলিরে, আমি তোমাকে কতগুলো ম্যাসেজ করেছি সারাদিন তুমিতো দেখোনি?
– আমি রাগে ফেবু, ম্যাসেঞ্জার সব ডিলিট করে দিয়েছি।
– ইশ! পাগলিটার কত রাগ। একটু কিছু হলেই অস্থির হয়ে যায়। আর কেঁদো না প্লিজ।
– আমি কাঁদব, তোমার কি তাতে?
– পাগলিরে, আমার বুকে মাথা রাখলে তোমার সব রাগ-অভিমান পানি হয়ে যেত।
– হুম।
– পাইছোতো আমার বুকটা।
– বুকটা কার শুনি?
– পাগলির…
– হুম, ঠিক বলেছ।
– সামান্য বিষয় নিয়ে কেউ এত রাগ করে?
– করব না? তুমি কেন ঐ মেয়ের হাতের ছবিতে কমেন্ট করলে?
– তুমি এত পাগল কেন বলতো? ওটাতো কত আগের কমেন্ট পাগলি!
– তবুও…
– তবুও কী…? এই যে সরি বলছি। আমার পাগলিকে ছাড়া আর কাউকে সুন্দর বলব না। আমার পাগলিটাই আমার কাছে পৃথিবীর সেরা সুন্দরী। এবার মন ভরছেতো?
– হুম… হুম… হুম… হুম… হুমমমম
পাগলিটা এমন হাসিখুশি থাকলে কত ভালো লাগে আমার! লাভ ইউ সো মাচ পাগলি।
– লাভ ইউ অনেক বেশি আমার জান।
পলক প্রাইভেট জব করে। মিহিকে সারাদিনে টুকটাক ম্যাসেজ করে, আর ফাঁকে ফাঁকে একটু-আধটু যা কথা হয়। দিনশেষে সন্ধ্যার পরে প্রাণ খুলে কথা বলে দুজন। কিন্তু মিহি হোস্টেল থেকে বাড়ি গেলে আর তেমন কথা হয় না। বাড়িতে সবার সামনে কথা বলতে পারে না। পলক কথা বলার জন্য জোর করে। কিন্তু মিহি পারে না। পলক রাগ করে। পলক চায় তাদের সম্পর্কের কথা সবাই জানুক। কিন্তু মিহি পড়াশোনা করছে। এ অবস্থায় সব জানাতে পারে না। এটা নিয়ে তাদের মধ্যে প্রায়ই তর্ক-বিতর্ক হয়।
পলক ও মিহির সম্পর্কটা অদ্ভুত টাইপের। বলতে গেলে পলক একপ্রকার জোর করেই মিহিকে রাজি করায়। তবে দিনে দিনে মিহির দুর্বলতাও বাড়ছে। সে যেন আজকাল পলক ছাড়া কিছুই বোঝে না। সারাদিন অপেক্ষায় থাকে, পথ চেয়ে বসে থাকে শুধুই পলকের জন্য।
বৃহস্পতিবার এলেই পলকের খুশি বেড়ে যায়। প্রিয়তমাকে একান্তে সময় দেয়ার জন্য ব্যাকুল হয়ে ওঠে। মিহিরও ভালো লাগে পলকের এই পাগলামিগুলো। এগুলোই যেন মিহিকে মুগ্ধ করে। দিনে দিনে ভালোবাসার পরিধি যেন ক্রমাগত বাড়ছে। প্রতি মাসেই পলক তাকে সারপ্রাইজ দেয়। তাদের সম্পর্কের বিশেষ দিনটাকে তারা প্রতিমাসেই স্মরণ করে। মিহি তেমন কিছু চায় না, শুধু প্রতিমাসে একটি গোলাপই আবদার করে। এভাবে প্রতিমাসে একটি করে গোলাপ বাড়তে থাকে। দুজন দূরে থাকায় তাদের দেখা হয়নি। তাই গোলাপও নেয়া হয়নি। মিহি বলে, সব জমিয়ে রাখো, একবারে শোধ করে দিও।
মিহি ও পলকের সম্পর্কটা বেশ গাঢ় হয়ে গেছে। পলকতো সেদিন সরাসরি বলেই ফেলল বিয়ের কথা। কিন্তু মিহি ছাত্রী বলে বাড়িতে বলার সাহস পায় না। তাই সে শুধু পিছুটানে। কিন্তু পলক নাছোড়বান্দা। সে ইতোমধ্যে তার বাড়িতেও সবাইকে বলেছে, এমনকি ছবিও দেখানো শেষ। এইতো দুদিন আগেই, হঠাৎ করে তার বোনের সঙ্গে কথা বলিয়ে দেয় মিহিকে। মিহিতো বোকা বনে যায়, হঠাৎ করে কী বলবে! তবুও বলেছে, কারণ পলকের বোনও বেশ আন্তরিক।
মিহি অবাক! তার কাছে সবকিছু কেমন জানি স্বপ্ন স্বপ্ন লাগছে। পলক, পলকের পরিবার মিহির চাওয়ার থেকে বেশি পরিপূর্ণ। এ যেন মেঘ না চাইতেই বৃষ্টি। বিশেষ করে পলকের তুলনাই হয় না। মিহির মান-অভিমান, রাগ-জিদ সবই সে হজম করতে পারে। কোনো কারণে ঝগড়া, মনোমালিন্য হলে মিহি কখনো আগে নক করে না। বরং পলকই আগে মিহির অভিমান ভাঙায়। এ বিষয়টা মিহি আরো বেশি উপভোগ করে। মিহি যেন পলকেই পলকের হয়ে গেছে। এখন পলক ছাড়া কিছুই বোঝে না সে।
পলকের ডিসিশন ফাইনাল। এবার ঈদেই তারা বিয়ে করবে। মিহি হোস্টেল থেকে বাড়ি গেলেই পলকের মা-বাবা ওদের বাড়ি যাবে। তারপর দেখাশোনা, কথাবার্তা এবং বিয়ে।
মিহি আর পলক যেন এখন স্বপ্নেই বসত করছে। প্রতিটি মুহূর্ত কাটছে আগাম স্বপ্নের মূর্ছনায়। দুজনের দেখা হবে ভাবতেই কেমন জানি লাগছে। শিহরণে জোয়ার আসে হৃদয়-দরিয়ায়। দুটি মনে কত চাওয়া-পাওয়া, কত স্বপ্ন-আশা। পলক প্রায়ই মিহিকে বলে, ‘আমায় ভুলে যেও না পাগলি, কখনো ভুল বুঝো না। পৃথিবীর সবাই ছেড়ে গেলেও তুমি আমার পাশে থেকো। তুমিই আমার শক্তি।’
দেখা করার সময় পলক মিহিকে একট গিফট দিতে চায়। তাই মিহির কাছে শুনছে মিহি কী নেবে।
– আরেহ, তুমি কি বোকা নাকি? কেউ বলেকয়ে গিফট দেয়? গিফটতো গিফটই, গিফট দিয়ে কাউকে সারপ্রাইজড করতে হয়।
– না, আমি অতসব বুঝিনে। তুমি বলো তুমি কী নেবে?
– তুমি না… তুমি এমন কেন?
– হ্যাঁ, আমি এমনই। আমি চাই- তুমি সবসময় আমার কাছে সবকিছু চেয়ে নেবে।
– মিহি মনে মনে হাসছে পলকের কথায়। একদম অন্যরকম একটা মানুষ!
– কই বলো?
– আচ্ছা, তুমি আমাকে একটা পায়েল দিও।
– ও ঠিক আছে, তাহলে কুরিয়ারে পাঠিয়ে দিই।
– না, না… তাহলে তো হবে না।
– কী হবে নারে?
– ধুর, তুমি কিচ্ছু বোঝো না! পায়েলতো পায়ে পরিয়ে দিতে হয়।
– ও আচ্ছা। তাই নাকি পাগলী?
– হুম।
– আচ্ছা, ঈদের ছুটিতে গিয়ে পরিয়ে দেবো। খুশিতো?
– হুম।
– আমার ল²ী পাগলিটা…
প্ল্যানমাফিক সবই হলো। তবে কোথায় যেন একটা কিন্তু দাঁড়িয়ে গেল। দুজনের মাঝখানে কে জানি দেয়াল গড়ে দিল।
কিসের দেয়াল?
‘কাছে আসার গল্প’ পেজে হাজারও শ্রোতার এমন প্রশ্নে কমেন্ট বক্স ফুল হয়ে গেছে। কী উত্তর দেবো মিহি আপু? মিহির চোখ থেকে অঝোরে জল পড়ছে।
উত্তর আমারও জানা নেই। আমিও খুঁজি, আমিও সেই উত্তরের অপেক্ষায়…
মেহেরুন ইসলাম : সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, সাতক্ষীরা

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়