শিমুর মেয়েকে বাবা : ‘মা ভুল করেছি মাফ করে দিও’

আগের সংবাদ

স্মার্ট সিটিজেন, স্মার্ট ইকোনমি, স্মার্ট গভর্নমেন্ট ও স্মার্ট সোসাইটি : যে ফর্মুলায় স্মার্ট বাংলাদেশ

পরের সংবাদ

চিনির দামে রেকর্ড : সবজি-রসুন ও শুকনো মরিচেও অস্বস্তি

প্রকাশিত: জানুয়ারি ২৮, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ২৮, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : চিনির দাম ফের বেড়ে বাংলাদেশের বাজারে রেকর্ড গড়েছে। সাধারণ মানুষের নিত্যপ্রয়োজনীয় এই পণ্যটির প্রতি কেজির দাম বর্তমানে ১২০ টাকায় দাঁড়িয়েছে। বিভিন্ন বাজার ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।
এদিকে আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত চিনির ঊর্ধ্বমুখী দাম, ডলারের বাড়তি বিনিময় হার এবং স্থানীয় পরিশোধনকারী মিলগুলোর উৎপাদন ব্যয় বিবেচনা করে নতুন করে আবারো পণ্যটির দাম বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে চিনি পরিশোধনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ সুগার রিফাইনার্স এসোসিয়েশন। সংস্থাটি প্রতি কেজি চিনির দাম পাঁচ টাকা বাড়িয়ে খোলা চিনি ১০৭ টাকা ও প্যাকেটজাত চিনি ১১২ টাকা করার ঘোষণা দিয়েছে। নতুন এ দাম আগামী পহেলা ফেব্রুয়ারি থেকে কার্যকর হবে। যদিও নতুন নির্ধারিত দামের চেয়ে বাজারে এখন ৫ থেকে ১০ টাকা বেশি দামে চিনি বিক্রি হচ্ছে।
বাজার ঘুরে দেখা গেছে- প্যাকেটজাত চিনি বাজারে নেই বললেই চলে। এমনকি ডিলার পর্যায়েও মিলছে না কাক্সিক্ষত চিনি। আবার যা পাওয়া যাচ্ছে, তাও সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দামে কিনতে হচ্ছে। বাজারে এখন এক কেজি চিনি ১১৫ থেকে ১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ওদিকে টিসিবির তথ্যও বলছে, বাজারে চিনির কেজি এখন ১১৫ থেকে ১২০ টাকা।
ফলে এক বছরে চিনির দাম বেড়েছে প্রায় ৫১ শতাংশ। কারওয়ান বাজারের মহিন স্টোরের স্বত্বাধিকারী বলেন, কোম্পানিগুলো চিনি দিচ্ছে না। চিনি নিতে হলে শর্ত হিসেবে কোম্পানিগুলো লবণ নিতে বলছে। অর্থাৎ চিনি নিতে হলে একই পরিমাণ লবণ নিতে হবে। এজন্য কম করে চিনি নেয়া হচ্ছে। কোম্পানি থেকে আমাদের বলা হচ্ছে বর্তমান মূল্যে চিনি বিক্রি করা লোকসান। মালিবাগ বাজারে চিনি কিনতে আসা মনির হোসেন বলেন, ৭০ টাকার চিনি ১১৫ টাকা হয়ে গেছে। এটা ভাবতেও অবাক লাগে। ওদিকে অন্যান্য জিনিসের দাম তো আগেই বেড়েছে। এভাবে সবকিছুর দাম বাড়তেই থাকলে কীভাবে চলব বুঝতে পারছি না।
জানা যায়- ব্যবসায়ীদের চাপে পাঁচ মাসের ব্যবধানে চার দফায় চিনির দাম ৩৭ টাকা বাড়িয়েছে সরকার।
গত ২১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সরকার নির্ধারিত প্রতি কেজি খোলা চিনি ৭৪ টাকা এবং প্যাকেটজাত চিনির দাম ৭৫ টাকা ছিল। যদিও সে সময় এর চেয়ে ৫ থেকে ১০ টাকা বেশি দামে চিনি বিক্রি হচ্ছিল।
পরে বাংলাদেশ সুগার রিফাইনার্স এসোসিয়েশনের দাবির মুখে সরকার ২২ সেপ্টেম্বর দাম বাড়িয়ে খোলা চিনির কেজি ৮৪ এবং প্যাকেটজাত চিনি ৮৯ টাকা নির্ধারণ করে। দুই সপ্তাহের মাথায় গত ৬ অক্টোবর কেজিতে আরো ৬ টাকা বাড়িয়ে খোলা চিনি ৯০ এবং প্যাকেটজাত চিনির কেজি ৯৫ টাকা করা হয়।
দুই দফায় দাম বাড়ালেও বাজারে চিনির সরবরাহ কমেছে। চিনির ঘাটতি প্রকট হয়ে একপর্যায়ে বাজার থেকে চিনি প্রায় উধাও হয়ে যায়। ব্যবসায়ীদের চাপে গত ১৭ নভেম্বর থেকে চিনির দাম আরো এক দফা বাড়ায় সরকার। এ দফায় কেজিতে ১৩ টাকা বাড়িয়ে প্যাকেটজাত চিনির দাম নির্ধারণ করা হয় ১০৮ টাকা। আর খোলা চিনির কেজি ধরা হয় ১০২ টাকা।
বাড়তি দামে চিনি বিক্রি বন্ধ না করে নতুন করে আবারো চিনির দাম বাড়ানো ঠিক হয়নি জানিয়ে কনজ্যুমারস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সহসভাপতি এস এম নাজের হোসেন বলেন, ব্যবসায়ীদের চাপে সরকার দফায় দফায় চিনির দাম বাড়াচ্ছে। এতে মানুষের কষ্টের মাত্রা বেড়েই চলেছে। বাংলাদেশে গুটিকয়েক প্রতিষ্ঠান চিনি আমদানি করে। এজন্য তারা যে দাম নির্ধারণ করে সরকারকে সেটাই মানতে হচ্ছে। এখানে সরকারকে ‘প্রতিযোগিতা’ কমিশনের ভূমিকা নিতে হবে- যাতে আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান বাড়ানো যায়।
এদিকে চিনির এই ঊর্ধ্বমূল্যের দিনে কাঁচা বাজারেও স্বস্তি মিলছে না। ভরপুর শীতের মৌসুম চললেও ধারাবাহিকভাবে বেড়ে চলেছে সবজির দাম। প্রতিটি সবজির দাম এরই মধ্যে কেজিতে ১০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। এর কারণ হিসেবে ব্যবসায়ীরা সরবরাহ ঘাটতির কথা বললেও বাস্তবে তেমনটি দেখা যায়নি। বরং বাজারে পর্যাপ্ত সরবরাহের চিত্রই দেখা গেছে। এছাড়া সবজির মতো রসুন ও শুকনো মরিচের দামও ধারাবাহিকভাবে ঊর্ধ্বমুখী। সরজমিন রাজধানীর কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা গেছে- সপ্তাহের ব্যবধানে এখন প্রতি কেজি আদা ১৫০-২০০ টাকায় ঠেকেছে। রসুনের দামও বেড়ে হয়েছে ১৫০-১৮০ টাকা।
বাজারে তুলনামূলক কিছুটা কম দামে দেশি জাতের আদা-রসুন থাকলেও সেগুলোর চাহিদা কম। কিছুদিন আগেও যে শুকনো মরিচ প্রতি কেজি বিক্রি হতো ১০০-১৫০ টাকায় তা এখন ৫০০ টাকা পর্যন্ত পৌঁছেছে। আমদানি কমে যাওয়ার পাশাপাশি উৎপাদন সংকটে পণ্যটির রেকর্ড পরিমাণ দাম বেড়েছে। বর্তমানে শুকনো মরিচ কেজিপ্রতি সর্বনি¤œ ৩৫০-৫০০ টাকায় ওঠানামা করছে।
আসন্ন রমজানের আগে সরবরাহ না বাড়লে দাম আরো বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা ব্যবসায়ীদের। খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন- দীর্ঘ সময় পর মরিচের দাম এতটা বেড়েছে। পাইকারিতে আমদানি করা ভারতীয় মরিচ বিক্রি হচ্ছে (গুজরাটি) ৩২০-৩৭০ টাকায়। মিয়ানমার থেকে আমদানি করা মরিচের কেজি ৩৫০-৩৭০ টাকা।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়