শিমুর মেয়েকে বাবা : ‘মা ভুল করেছি মাফ করে দিও’

আগের সংবাদ

স্মার্ট সিটিজেন, স্মার্ট ইকোনমি, স্মার্ট গভর্নমেন্ট ও স্মার্ট সোসাইটি : যে ফর্মুলায় স্মার্ট বাংলাদেশ

পরের সংবাদ

ক্ষুদ্র ঋণে দারিদ্র্যজয়ী সাহাবুদ্দিন মিজি

প্রকাশিত: জানুয়ারি ২৮, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ২৮, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

মরিয়ম সেঁজুতি : হতাশা আর অন্ধকার থেকে ঘুরে দাঁড়ানো এক যোদ্ধার নাম মো. সাহাবুদ্দিন মিজি! মুন্সীগঞ্জ জেলার সদর উপজেলার নয়াগাঁও গ্রামের ৬৪ বছর বয়সি সাহাবুদ্দিন মিজি শূন্য থেকে শুরু করে বর্তমানে প্রতিমাসে ৬০-৬৫ হাজার টাকা আয় করছেন। নিজের হারানো ভিটে-বাড়ি ফিরে পাওয়ার স্বপ্ন দেখছেন।
জীবনের শুরুতে ভালোই চলছিল। ছিল পারিবারিক সূত্রে পাওয়া সুতার মিল ও ব্যবসা। মাত্র ১৯ বছর বয়সে বিয়ে করেন ১৪ বছর বয়সি রাসিদা বেগমকে। দুই ছেলে আর এক মেয়ে নিয়ে সংসারটা সুখেরই ছিল। ছিল পরিশ্রমী জীবন আর সংগ্রামী মানসিকতা।
পৈতৃক সূত্রে পেয়েছিলেন একটি চৌচালা আধাপাকা ঘর। বাবার দেয়া ব্যবসাকে নিজের পরিশ্রম আর মেধা দিয়ে আরো বড় করে তুলেছিলেন। কিন্তু হঠাৎ চলার পথে বড় এক বাধা এসে দাঁড়ায়। ২০১৬ সালে স্ত্রী রাসিদা বেগমের পেটে টিউমার ধরা পড়ে। চিকিৎসা খরচ মেটাতে দুই শতক জমিতে থাকা চৌচালা বাড়িটি বিক্রি করে দিতে হয় সাহাবুদ্দিন মিজিকে। এক সময় গোয়ালের গরু, এমনকি ভিটেমাটি বিক্রি করেও শেষ রক্ষা হয় না। বাঁচাতে পারেন না স্ত্রীকে। সব প্রচেষ্টা ব্যর্থ করে দিয়ে আড়াই বছরের চিকিৎসা শেষে স্ত্রী রাসিদা বেগমের মৃত্যু হয়। দেশে-বিদেশে মিলিয়ে চিকিৎসা ব্যয় মেটাতে ব্যবসার পুঁজি তো হারালেনই, হারালেন বাড়ি, এমনকি জমিও। থাকতে লাগলেন নিজের পাড়ায় মাটি ভাড়া করে। দেনার দায়ে সুতার ব্যবসাও বন্ধ হয়ে যায়। বাল্যবন্ধু রফিকের বাড়িতে আশ্রয় নিতে হয় তাকে। বড় ছেলে বিয়ে করে শ্বশুর বাড়ি, বাবার কোনো খোঁজ রাখে না। অভাবের কারণে একমাত্র মেয়েকে মাত্র ১৪ বছর বয়সেই বিয়ে দেন তিনি।
সবকিছু হারিয়ে দিশাহারা সাহাবুদ্দিন নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন দেখেন। ধার-দেনা করে ছোট ছেলে সাইফুলকে ৩ লাখ টাকা খরচ করে দুবাই পাঠিয়ে দেন। কিন্তু বৈশ্বিক মহামারি করোনার প্রভাবে চাকরিহারা হয়ে দেশে ফিরে আসেন সাইফুল। এরপর শুরু হয় আরেক জীবন যুদ্ধ। প্রতিনিয়ত পাওনাদারদের আতঙ্কে থাকতে হয় বাবা-ছেলেকে। হতাশা ভর করল তার মধ্যে। ভাবলেন, এ জীবন রেখে লাভ কী। এমন সময় চাচাতো বোন তাকে ঋণ নিয়ে ব্যবসা শুরুর কথা বললেন। কিন্তু তার মতো নিঃস্ব ব্যক্তিকে ঋণ কে দেবে। শুরু করলেন ভাড়ায় মিশুক চালানো। বাবা-ছেলে মিশুক চালিয়ে যা আয় করেন তা দিয়ে দেনা পরিশোধ পরের কথা, থাকা-খাওয়াই হয় না। মিশুক চালিয়ে ৭০০-৮০০ টাকা আয় করা সম্ভব হলেও দিনশেষে মিশুক ভাড়া বাবদ দিতে হয় ৩৫০ টাকা। সাহাবুদ্দিন মিজির চাচাতো বোন ক্ষুদ্র ঋণ নিয়ে নিজেই একটা মিশুক কিনে চালাতে বললেন।
মুন্সীগঞ্জ শহরে সরাসরি পরিবহন (বড় গাড়ি) চলাচল নেই, তাই স্থানীয় যাতায়াতের জন্য মিশুক-সিএনজির রয়েছে প্রচুর চাহিদা।
মিশুক চালানোই হচ্ছে মুন্সীগঞ্জের সবচেয়ে সহজ ও সর্বোচ্চ পেশা। চাচাতো বোনের পরামর্শ নিয়ে সাহাবুদ্দিন মিজি ঢাকা আহছানিয়া মিশনের ঋণ দানকারী প্রতিষ্ঠান-ডিএফইডির মুন্সীগঞ্জ সদর ব্রাঞ্চে যোগাযোগ করেন।
নিয়মমাফিক যাচাই-বাছাই করে ডিএফইডি মুন্সীগঞ্জ সদর ব্রাঞ্চ সমাজপতির জিম্মায় বাই মুয়াজ্জল পদ্ধতিতে ৮০ হাজার টাকায় কিনে দেন একটা নতুন মিশুক গাড়ি। সাহাবুদ্দিন মিজির ছোট ছেলে সাইফুল তখনো ভাড়ায় মিশুক চালান। ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করে সাহাবুদ্দিনের ভাগ্যের চাকা। এক বছরের মধ্যে ধার-দেনা প্রায় পরিশোধ করে ফেলেন তিনি। নিয়মমাফিক পরিশোধ হয়েছে ডিএফইডির মিশুকের ঋণও। প্রথমবারের দেনা পরিশোধ করে দ্বিতীয় দফায় আবারো ডিএফইডি থেকে এক লাখ টাকায় কিনেন নতুন আরেকটি মিশুক এবং নিজের পুরনো মিশুকের জন্য নতুন ব্যটারি। এরপর আর পেছনে তাকাতে হয়নি সাহাবুদ্দিন মিজিকে। গত দুই বছরের উপার্জন দিয়ে কিনেছেন আরো ৬টি মিশুক। স্থানীয় বাজারের মোড়ে দোকান ভাড়া নিয়ে করেছেন মিশুক-সিএনজি মেরামত সেন্টার এবং মিশুকের গ্যারেজ। যেখানে প্রতিদিন ৪৫-৫০টি মিশুকের চার্জ দেয়ার ব্যবস্থা করেছেন। পুরনো মিশুক কেনা-বেচার ব্যবসাও আছে। এখন মাসে ৬০-৬৫ হাজার টাকার বেশি আয় হচ্ছে। স্বপ্ন দেখছেন নিজের জায়গায় একটি বাড়ি তৈরির।
তিনি বলেন, ব্যাংক বা কোনো জায়গায় ঋণ নিতে গেলেই সম্পদ দেখাতে হয়। কিন্তু যার কিছুই নেই সে কীভাবে সম্পদ দেখাবে? আশপাশের ২-১টা এনজিওর কাছে লোনের জন্য ধরনা দিয়েছি, সাড়া পাইনি। সবাই ভেবেছে আমি হয়তো টাকা নিয়ে পালিয়ে যাব। কিন্তু এখানে আমার বাপ-দাদার কবর। স্ত্রীর কবর। এসব রেখে কোথায় যাব? কিন্তু ঢাকা আহছানিয়া মিশনের ডিএফইডির মুন্সীগঞ্জ সদর ব্রাঞ্চের স্যার অনেক ভালো। আমাকে প্রথমেই ৮০ হাজার টাকা দিয়ে একটা নতুন মিশুক গাড়ি কিনে দেন। প্রথমবারের টাকা প্রায় শোধ হয়েছে। এবারে ডিএফইডি থেকে এক লাখ টাকায় কিনেছি নতুন আরেকটি মিশুক এবং নিজের পুরনো মিশুকটার জন্য নতুন ব্যাটারি।
এভাবেই ক্ষুদ্র ঋণ নিয়ে নিজের অভাব ঘুচিয়েছেন সাহাবুদ্দিন মিজি। স্বপ্ন দেখছেন আবারো একখণ্ড নিজের জমির, একটা স্বপ্নের বাড়ির।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়