প্রণয় ভার্মাকে সংবর্ধনা : ‘বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক কূটচালে নষ্ট হওয়ার নয়’

আগের সংবাদ

গ্যাস সংকট কাটছে না সহসা : দৈনিক চাহিদা ৩৮০ কোটি ঘনফুট > সরবরাহ ২৬৬ কোটি ঘনফুট > দুর্ভোগে রাজধানীর বাসিন্দারা

পরের সংবাদ

ডিসিদের ভোটের প্রস্তুতির নির্দেশ

প্রকাশিত: জানুয়ারি ২৭, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ২৭, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : সরকার প্রশাসনকে ‘দলীয়করণ’ করেনি। এ রকম কোনো ‘পরিকল্পনা’ও নেই সরকারের। সুষ্ঠু নির্বাচন করতে জেলা প্রশাসকদের (ডিসি) ভূমিকাই মুখ্য। এ কারণে সরকারের পক্ষ থেকে আগামী নির্বাচনের জন্য ডিসিদের প্রস্তুত থাকার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। একই সঙ্গে মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলো নিয়মিত পরিদর্শনের জন্যও বলা হয়েছে তাদের।
রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে গতকাল ডিসি সম্মেলনের শেষ দিনে ডিসি ও বিভাগীয় কমিশনারদের সঙ্গে নিজ নিজ মন্ত্রণালয় ও বিভাগের কার্য-অধিবেশন শেষে সাংবাদিকদের একথা জানান মন্ত্রিসভার সদস্যরা। সবকটি কার্য-অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব মাহবুব হোসেন।
দেশবাসী সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন চায়- স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী : ডিসিদের সঙ্গে মতবিনিময় শেষে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল সাংবাদিকদের জানান, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জাতীয় নির্বাচনের সময় প্রয়োজন অনুযায়ী দক্ষতা ও অভিজ্ঞতার আলোকে কাজ করবে। মন্ত্রী বলেন, দেশবাসী চাচ্ছে সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য ও নিরপেক্ষ নির্বাচন। বাংলাদেশের দিকে সারা বিশ্বও সেভাবে তাকিয়ে আছে। আমরা বলেছি সেই নির্বাচনে আপনাদের (ডিসি) ভূমিকা মুখ্য হবে। নির্বাচনের সময় মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো কিছু ‘রুটিন ওয়ার্ক’ করবে জানিয়ে তিনি বলেন, মূল দায়িত্বে থাকবে নির্বাচন কমিশন। বিজিবি, পুলিশ, র‌্যাব ও আনসারসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদের নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করবে। পার্বত্য অঞ্চলে সাম্প্রতিক জঙ্গি কর্মকাণ্ডসংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের এই পরিস্থিতি অনেক দিনের। এখানে অনেক দল-উপদল কাজ করে। প্রধানমন্ত্রী শান্তিচুক্তি করেছিলেন। এরপরও কয়েকটি গোষ্ঠী অস্ত্র জমা কিংবা আত্মসমর্পণ না করে মাঝেমধ্যে অতর্কিতে চলে আসছে। পার্বত্য অঞ্চলের সঙ্গে সারাদেশে জঙ্গি উত্থানের কোনো সম্পর্ক নেই জানিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমরা জঙ্গি দমন করেছি। তবে শেকড় থেকে উঠিয়ে দিতে পারিনি। জঙ্গিরা সমতল থেকে পাহাড়ে চলে গিয়ে সেখানকার লোকদের সঙ্গে যোগাযোগ করছে। তবে আমরা তাদের সেখানকার ঘাঁটিটাও বিনষ্ট করে দিয়েছি।
অনিবন্ধিত অনলাইন, আইপি টিভি ও ইউটিউবের বিষয়ে সতর্ক থাকার নির্দেশ : ডিসিদের সঙ্গে মতবিনিময় শেষে তথ্য ও স¤প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ সাংবাদিকদের বলেছেন, জেলা পর্যায়ে অনিবন্ধিত অনলাইন, আইপি টিভি ও ইউটিউব চ্যানেলের বিষয়ে সতর্ক থাকতে ডিসিদের দিকনির্দেশনা দেয়া হয়েছে। সরকার প্রশাসনকে দলীয়করণ করেনি জানিয়ে তিনি বলেন, বিএনপি এবং জাতীয় পার্টি যতবার ক্ষমতায় এসেছে, প্রশাসনকে তারা দলীয়করণ করেছে। আমরা কোনোভাবেই দলীয়করণ করিনি। এমনকি করার কোনো পরিকল্পনাও আমাদের নেই। মন্ত্রী বলেন, জেলা পর্যায়ে অনেক অনলাইন পোর্টাল, আইপি টিভি ও ইউটিউব চ্যানেল আছে, যেগুলোর কোনো নিবন্ধন নেই এবং যারা সেগুলোতে কাজ করে তারা নিজেদের আবার সাংবাদিক পরিচয় দেয়।

সেগুলোর মাধ্যমে অনেক সময় গুজব ছড়ানো হয়, ভুল তথ্য পরিবেশন ও বিভ্রান্তি ছড়ানো হয়। এটি একটি বড় চ্যালেঞ্জ। দেশে এ পর্যন্ত ১৬২টি অনলাইন নিউজ পোর্টাল, ১৬৯টি দৈনিক পত্রিকার অনলাইন পোর্টাল, ১৫টি টেলিভিশনের অনলাইন পোর্টাল ও ১৪টি আইপি টিভিকে রেজিস্ট্রেশন দেয়া হয়েছে, সেই তথ্য ডিসিদের অবহিত করা হয়েছে বলে জানান তথ্যমন্ত্রী।
এক প্রশ্নের জবাবে হাছান মাহমুদ বলেন, গুজব ছড়ায় কয়েক ঘণ্টায়, আর সেটির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে কয়েক দিন সময় লাগে। কারণ এর একটা প্রক্রিয়া আছে, সেটি বিটিআরসিকে জানাতে হয় এবং এ সময়ে গুজব থেকে রক্ষা পেতে সোশ্যাল মিডিয়াতেই যেন বলা হয় সেটি গুজব এবং আসলে সত্যটা এই। তারপর তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের প্রক্রিয়া।
আর একজন রোহিঙ্গাকেও নেয়া হবে না : ডিসিদের সঙ্গে মতবিনিময় শেষে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন সাংবাদিকদের জানান, দেশে রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশ নিয়ে কোনো ‘শর্টকাট’ উত্তর নেই। এক প্রশ্নের জবাবে আব্দুল মোমেন বলেন, এটা খুব জটিল সময়। আমাদের পলিসি হচ্ছে আর একটা রোহিঙ্গাকেও আমরা নেব না। কিন্তু আমরা তো ওদের মারতে পারি না। আমাদের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় অবস্থান নিয়েছে, আমরা এদের নেব না। কিছু কিছু যখন আসে, আমার দেখার চেষ্টা করব সেটাকে কীভাবে দেখভাল করা যায়। মন্ত্রী বলেন, আমরা মিয়ানমার সরকারকে বলেছি, তোমরা তোমাদের লোকগুলো একটাও পাঠাবে না। কিন্তু তাদেরও ক্ষমতার বাইরে, কারণ ওখানে সংঘাত হচ্ছে। বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেয়া হচ্ছে, সেজন্য ভয়ে পালিয়ে আসছে। অবৈধভাবে বিদেশ যাওয়া ঠেকাতে ডিসিদের সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে জানিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, অবৈধভাবে অনেক লোক বিদেশে গিয়ে নির্যাতনের শিকার হয়। আমরা চাই না, কেউ নির্যাতনের শিকার হোক। অবৈধভাবে বিদেশ যাত্রার ক্ষেত্রে স্থানীয় এজেন্সি কাজ করে। জেলা প্রশাসকরা যদি বিভিন্ন মিটিংয়ে অবৈধভাবে না যাওয়ার জন্য পরামর্শ দেন তাহলে লোকজন বিদেশ গিয়ে নির্যাতনের শিকার হবে না।
পহেলা বৈশাখ থেকে শতভাগ ভূমিকর অনলাইনে : ভূমিকর এখন পরীক্ষামূলকভাবে অনলাইনে আছে বলে ডিসিদের জানিয়েছেন ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী। ডিসিদের সঙ্গে মতবিনিময় শেষে মন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, বর্তমানে এটা ম্যানুয়ালিও আছে। আমি বলেছি আগামী পহেলা বৈশাখ থেকে ম্যানুয়াল পদ্ধতি পুরোপুরি বন্ধ করে দেব। শতভাগ অনলাইন করা হবে ভূমিকর। এটা খুবই স্পষ্ট। ম্যানুয়ালের আর কোনো সুযোগ থাকবে না। ডিসিরা খাসজমি কেন্দ্রীয়ভাবে সংরক্ষণের ব্যাপারে প্রস্তাব করেছেন। এজন্য তারা বাজেটও চেয়েছেন। এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে ভূমিমন্ত্রী বলেন, বাজেটটা তাদের দেয়া হয়, কিন্ত তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। তবে সচিব সেটা দেখে বুঝে সাপোর্ট দেন। আমাদের কী পরিমাণ খাসজমি তা ল্যান্ড ডেটায় আপডেট হচ্ছে। ল্যান্ড ডেটা ব্যাংকে জমা হচ্ছে। প্রত্যেক জেলার ডিসিকে বলা হয়েছে, তাদের জেলার খাসজমি যেন বেশি করে রিকভার করতে পারেন। কারণ আমাদের খাসজমিগুলো অনেকভাবে বেহাত হয়ে পড়ে আছে। দেশজুড়ে ডিজিটাল ল্যান্ড সার্ভের বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, ডিজিটাল সার্ভে যেখানে শুরু করেছি সেখানে হয়নি। যেমন, বরগুনা ও পটুয়াখালী। পটুয়াখালীতে একটা ডিজিটাল সার্ভের জন্য পাইলট প্রজেক্ট করেছি। এর সঙ্গে আমরা আরো দুটি জেলা যুক্ত করেছি। সেগুলো হলো, পাবনা ও সিরাজগঞ্জ। এসব জেলায় শেষ করার পর আমরা সারাদেশে ডিজিটাল সার্ভের কাজ শুরু করব। সার্টিফিকেট অব ল্যান্ড ওনারশিপ (সিএলও) এর কাজও আমরা করছি। এটা কিন্তু একটা লিগ্যাল ওনারশিপের বিষয়।
প্রাইভেট ক্লিনিক ও হাসপাতাল নিয়মিত তদারকির নির্দেশ : রোগীদের সঠিক সেবা নিশ্চিত করতে বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিক নিয়মিত পরিদর্শন করতে ডিসিদের নির্দেশ দিয়েছেন স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রী জাহিদ মালেক। ডিসিদের সঙ্গে মতবিনিময় শেষে স্বাস্থ্যমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, ডিসিদের আমরা বলেছি প্রাইভেট যে ক্লিনিক এবং হাসপাতাল রয়েছে, সেখানে যেন তারা নিয়মিত পরিদর্শন করেন। রোগীরা যেন সঠিক সেবা সঠিক মূল্যে পায়, বিভিন্ন পরীক্ষা নিরীক্ষার মূল্য যেন বেশি না নেয়া হয় এবং অযাচিতভাবে যেন গর্ভবতী মায়েদের সিজার অপারেশন না করে সেই বিষয়গুলোতে নজর রাখতে বলেছি। দেশে বর্তমানে স্বাস্থ্যসেবায় অবকাঠামো ও যন্ত্রপাতি অনেক হয়েছে দাবি করে মন্ত্রী বলেন, লোকবলও মোটামুটি দেয়া হয়েছে। এখন সেবার মান উন্নয়ন করা প্রয়োজন।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়