দুদক মামলা : আদালতে হাজিরা দিলেন আব্বাস দম্পতি

আগের সংবাদ

শিল্প খাতে বাড়ল গ্যাসের দাম > সবচেয়ে বেশি বাড়ছে ক্ষুদ্রশিল্পে, মূল্যস্ফীতির ওপর চাপ বাড়বে : বিশেষজ্ঞদের অভিমত

পরের সংবাদ

বাঘের ছানা

প্রকাশিত: জানুয়ারি ১৮, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ১৮, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

গ্রামের নাম সোনাপুর। গ্রামের কাছেই পাহাড়। পাহাড়টাকে সবাই সোনাপুর পাহাড় নামে চেনে। সেই পাহাড়ে এক বাঘ বাস করে। বাঘের দুই ছানা। একটার নাম বকুল আরেকটার নাম সাথি। বকুল বড়, সাথি ছোট। সব সময় বকুলের সঙ্গে থাকতে চায় সাথি। বকুল সাথিকে এড়িয়ে একা একা ঘুরে বেড়াতে চায়। প্রতিদিন মাকে বিচার দেয় সাথি। বড় ভাই বকুল তাতে আরো মজা পায়। মা হাসে আর হাসে। সাথি তাতে আরো কষ্ট পায়। সে মুখ ভার করে বসে থাকে। সেদিন সকাল থেকে কিছু খায়নি সাথি।
একটু বেলা হলে শিকারে বের হয়ে একটা ছাগল মেরে ডেরায় নিয়ে আসে মা বাঘ। বকুল খুব মজা করে মার সঙ্গে সঙ্গে পেট পুরে খেয়ে নেয়। সাথিকে মা খুঁজেও পায় না। তবু কয়েকবার ডেকেছে। তাতেও কোনো সাড়া দেয়নি। এ রকম প্রায় দিন ঘটে যাচ্ছে। বকুলটা কেমন যেন।
সাথির মন খারাপ। সে দিনের বেলা ডেরা থেকে বের হয়ে পাহাড়ের এখানে-সেখানে একা ঘুরে বেড়ায়। বকুল অন্য বন্ধুদের সঙ্গে মিলে অনেক দূরে দূরে চলে যায়। মা সারাদিন একা একা ঘুমিয়ে কাটিয়ে দেয়। খিদে পেলে পাগল হয়ে শিকারের খোঁজে বেরিয়ে পড়ে।
একদিন পাহাড় ছেড়ে সাথি চলে যায় লোকালয়ে। সবাই তাকে দেখে ভয়ে পালিয়ে যায়। কেউ তার কথাও শুনতে চায় না। সে যতই বলে আমি কাউকে কামড় দেবো না। তার মুখের কথায় কেউ বিশ্বাস করে না- বাঘের বাচ্চা বাঘই হয়। যতই মুখে বলুক সুযোগ পেলে ঠিকই ঘাড় মটকে খাবে।
এক দিন দুই দিন তিন দিন পার হয়ে গেল। বাঘের মেয়ে সাথির কথা কেউ শোনে না। সবাই ভয়ে ভয়ে থাকে। কখন বাঘ আসবে। ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা ঘর থেকেই বের হয় না। মা-বাবারা সবাই খুব সতর্ক।
সাথি দুদিন কিছুই খায়নি। মার কাছেও থাকছে না। বকুলের তো কোনো খবরই নেই। সে বন্ধুদের সঙ্গে মিলে শিকার করে খায়। আবার মার সঙ্গেও ভাগ বসায়। মা বকুলকে বলে সাথিকে খুঁজে দেখার জন্য। বকুলের কী মনে হলো, মার কথায় সেদিন সাথিকে খুঁজতে বের হয়। সারা পাহাড় ঘুরেও কোথাও পাওয়া গেল না সাথিকে। মাকে এসে যখন কথাটা জানায়, মা খুব চিন্তিত হয়ে পড়ে। মেয়েটা কোথায় যায়? কোথায় থাকে?
সেদিন ভোরে খুব খিদে পায় সাথির। শক্তিও যেন হারিয়ে ফেলছে হাঁটার। কী করবে? কিছু তো পেটে না দিলে আর বাঁচা যাবে না। কী করি… কী করি…।
একটা মোরগ সবে মাত্র খোয়াড় থেকে ছাড়ল দিল গৃহস্থ। উঠোনের ধারে লাউয়ের মাচার নিচে বসে ছিল সাথি। মোরগটা যেই মাচার কাছে আসল অমনি খপ করে ধরে কয়েক মিনিটেই সাবাড়।
গৃহস্থের বউ হাও মাও করে কেঁদে ওঠে। হায় হায়! আমার এমন শখের মোরগটা…। এ সময় ঘর থেকে বের হয়ে আসে ছোট এক ছেলে। মাকে কাঁদতে দেখে ছেলেটা একটা লাঠি নিয়ে তেড়ে যায় বাঘের ছানা সাথির দিকে। সাথি তো ভয়ে জড়সড়। কী করবে বুঝে উঠতে না পেরে দেয় এক দৌড়।
এদিকে মা বাঘও সাথিকে খুঁজতে খুঁজতে ঐ গ্রামে পৌঁছে যায়। এখানে-সেখানে মেয়েকে খুঁজতে খুঁজতে হয়রান। সাথিকে কোথাও দেখা যাচ্ছে না। ক্লান্ত হয়ে অবশেষে এক ঝোপের মধ্যে লুকিয়ে থাকে। এদিকে সাথি যে তাড়া খেয়ে দৌড়ে পালাল… দৌড়াতে দৌড়াতে গিয়ে পড়ল মার সামনে।
কোমল গলায় মা জানতে চায়- আহা রে! বাছা আমার, তুই ছিলি কোথায়? কদিন তোকে যে খুঁজে পাচ্ছি না।
সাথি চুপচাপ। কোনো কথা বলে না। মার সঙ্গে অভিমান করে আছে সে। মা সাথিকে অনেক আদর করে। তাকে বোঝায়, লোকালয়ে থাকা যাবে না। মানুষগুলো আমাদের থাকতে দেবে না। আর আমরা এখানে থাকলে খাব কী? আমাদের বাস পাহাড়ে। চলো আমরা পাহাড়ে ফিরে যাই।
কিন্তু সাথি কিছুতেই যাবে না। তার কাছে লোকালয়ে থাকতে ভালো লাগছে। মানুষজনদের দেখে তার ভালো লাগে। লোকজন তাকে দেখে ভয় পেলেও সে তো কাউকে কামড়াচ্ছে না। কিছুদিন কাছাকাছি থাকলে মানুষের সঙ্গে মিলেমিশে থাকা যাবে। পাহাড়ে তাকে কেউ ভালোবাসে না। তাই সাথি মনে মনে সিদ্ধান্ত নেয় সে লোকালয়ে থেকে যাবে।
মেয়ের অনড় অবস্থান দেখে বাঘিনী মা অসহায়। দুদিন কিছু না খেয়ে মেয়ের সাথে থেকে গেল লুকিয়ে। তারপর মেয়েকে রেখে পাহাড়ে ফিরে গেল মা। সাথি কিছুটা ভয় কিছুটা সাহস নিয়ে থাকছে গ্রামে। সে মনে মনে বুদ্ধি করে- গৃহস্থের কোনো পশুকে খাওয়া যাবে না। তবেই তাকে সবাই ভালোবাসবে। সাথি খিদে পেলে গ্রাম থেকে দূরে গিয়ে কুকুর-শিয়ালসহ অন্য প্রাণীদের শিকার করে খাচ্ছে।
একদিন সাথি চুপি চুপি ঐ ছেলেটার বাড়ির সামনে চলে যায়। আড়াল থেকে দেখে, ছেলেটাকে দেখা যায় কিনা। অনেক বেলা হয়ে গেলেও ছেলেটার দেখা মেলে না। সাথি ঝোপের মধ্যে বসেই থাকে। অনেকক্ষণ পর ছেলেটা তার দুই বন্ধুর সঙ্গে ঘরে ফিরে। তারা উঠোনে খেলছিল। সাথি এবার নেড়েচেড়ে ওঠে। হঠাৎ এক বন্ধু তাকে দেখে ফেলে। তারপর ও মারে… চিৎকার করে দুই বন্ধু পালিয়ে যায়। কিন্তু ছোট ছেলে অন্তু দাঁড়িয়ে থাকে। সেও খুব সাহস দেখিয়ে বলে- ‘এই বাঘের বাচ্চা আজকে তোকে মেরে হালুয়া বানাব’।
বাঘটি একটুও ভয় না পেয়ে বলল- হে বালক, আমি তোমার বন্ধু তো। ভয় পেয়েও না। আমি তোমার কোনো ক্ষতি করব না।
– কী বললে, কোনো ক্ষতি করবে না? প্রমাণ দাও।
বাঘ ভাবল, এই তো সুযোগ বন্ধু হওয়ার। সে আস্তে আস্তে অন্তুর কাছে গিয়ে বসল। অন্তু তো অবাক। এই বাঘ বলে কী? ওদিকে অন্তুর বন্ধুরা চিৎকার-চেঁচামেচি করে পাড়া মাথায় তুলল। অন্তু কিন্তু কোনো ভয় পেল না। এ সময় সাথি অন্তুর চারপাশে ঘুরে ঘুরে তার ঘ্রাণ নিতে থাকে। এক সময় অন্তু বাঘকে জড়িয়ে ধরে। অন্তু আর বাঘের ছানার এই ভালোবাসায় গ্রামের মানুষ বিস্মিত। প্রতিদিন লোকজন আসে সাথিকে দেখতে। তারা নানা মজাদার খাবারও সঙ্গে নিয়ে আসে। সাথি মানুষের খাবার খেতে খেতে মানুষের সব কিছু রপ্ত করে ফেলে। এখনো অন্তুর বন্ধু হয়ে আছে সাথি।

– শিবুকান্তি দাশ

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়