নিউমার্কেটে সংঘর্ষ : তিন মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল পেছাল

আগের সংবাদ

নামমাত্র প্রস্তুতিতে পাঠদান : বই পায়নি অনেক শিক্ষার্থী > বই, সহায়িকা ছাড়াই শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ > নোট-গাইড ছাপার তোড়জোড়

পরের সংবাদ

যুব হকিতে ‘অপরাজেয় বাংলা’

প্রকাশিত: জানুয়ারি ১৭, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ১৭, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

সম্প্রতি এশিয়ান হকি ফেডারেশন কাপ অনূর্ধ্ব-২১ অনুষ্ঠিত হয়েছিল। গ্রুপ পর্বের প্রথম ম্যাচ থেকে টুর্নামেন্টের ফাইনাল পর্যন্ত কোনো ম্যাচেই পরাজিত হয়নি বাংলাদেশ যুব হকি দল। ওমানকে ঘরের মাঠে হারিয়ে এএইচএফ চ্যাম্পিয়ন হয়েছে বাংলাদেশের যুবারা। গত ১৩ ডিসেম্বর তারা দেশের মাটিতে পা রেখেছে।
ওমানের মাসকটে অবস্থিত সুলতান কাবুস স্পোর্টস কমপ্লেক্সে ওমানকে শুটআউটে ৭-৬ গোলে হারিয়েছে বাংলাদেশ। খেলা শুরু হওয়ার মাত্র ২ মিনিটেই ওমান একটি গোল দিয়ে এগিয়ে যায়। ম্যাচের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত জয়ের পাল্লা ওমানের দিকে ছিল। তবে ৫৩ মিনিটে রকিবুল হাসানের গোলে ম্যাচটি সমতায় আনে বাংলাদেশ। এ গোলের মাধ্যমেই ৬০ মিনিটের ম্যাচটি টাইব্রেকারে গড়ায়। পেনাল্টি শুটআউটে প্রথম পাঁচ হিটে তিনটি করে গোল দুই দলই করেছিল। তবে ঘরের মাঠে শেষ রক্ষা হয়নি ওমানের। ৮ বছর পর আবারো শিরোপা আসে বাংলার যুবকদের দখলে। সর্বশেষ ২০১৪ সালে বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-২১ এশিয়ান হকি ফেডারেশন কাপে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল।
খুব একটা আত্মবিশ্বাস নিয়ে টুর্নামেন্ট খেলতে যায়নি বাংলাদেশিরা। মাত্র সপ্তাহ দুয়েক অনুশীলন করেই তারা এ টুর্নামেন্টে অংশগ্রহণ করেছিল। বাংলাদেশের কোচ মামুনুর রশিদেরও আত্মবিশ্বাস ছিল না, তবে তিনি আশাবাদী ছিলেন তার দল ফাইনালে উঠবে। শূন্য পর্যায়ের আত্মবিশ্বাস নিয়ে দেশের মাটি ছাড়া যুবারা গত শুক্রবার দেশে ফিরেছে পূর্ণ আত্মবিশ্বাসী হয়ে।
দেশে ফিরেই হকি ফেডারেশনের সভাপতি বিমানবাহিনী প্রধান এয়ার মার্শাল শেখ আব্দুর হান্নানের ফুলেল শুভেচ্ছায় সিক্ত হন সবাই। বিমানবন্দরেই কোচ মামুনুর রশিদ জানিয়েছেন তাদের স্বপ্নের কথা। এ আত্মবিশ্বাস নিয়ে যুব বিশ্বকাপ জিততে চান তারা। মামুনুর রশিদ বলেছেন, ‘আসলে আমি এখানে থেমে থাকতে চাই না। আমরা বাছাইতে চ্যাম্পিয়ন হয়েছি। ওমানের মতো শক্তিশালী দলকে হারিয়েছি। মে মাসে মূল পর্ব। ওখানে জাপান, কোরিয়া ও চীনকে হারানো সম্ভব বলে মনে করি। ওরা বয়সভিত্তিক পর্যায়ে আমাদের মতো অনেকটা সমমানের। তাই ওদের হারিয়েই জুনিয়র বিশ্বকাপে জায়গা করে নিতে চাই।’
টুর্নামেন্টে নিজেদের প্রথম ম্যাচে এক হালি গোল দিয়ে জয়ের সূচনা করে রকিবুল হাসানরা। হংকং কোনোভাবেই সেই ম্যাচে পাত্তা পায়নি বাংলাদেশের কাছে। চারটি গোল হজম করে তারা একটিও গোল শোধ করতে পারেনি। হংকং বধের পর বাংলাদেশ নামে শ্রীলঙ্কা বধের মিশনে। এক ডজন গোল দিয়েও থামেনি মামুনুর রশিদের শিষ্যরা। গুনে গুনে ১৪টি গোল হজম করতে হয়েছিল লঙ্কানদের। তার বদলে তারাও কোনো গোল শোধ করতে সক্ষম হয়নি। সেই ম্যাচে আমিরুল ইসলাম একাই ৫টি গোল করেছিল। সেদিন ম্যাচ সেরার পুরস্কার পাওয়া বিকেএসপির ছাত্র আমিরুল সম্পর্কে মুঠোফোনে মামুন বলেছিলেন, ‘আমিরুলের মধ্যে ভবিষ্যতের আশরাফুল ইসলামকে দেখতে পাচ্ছি। পেনাল্টি কর্নারে সে যেভাবে ড্র্যাগ ফ্লিক নিয়ে গোল করেছে, সেটা সত্যি অসাধারণ।’।
কোচের মতে তার ছেলেরা তার পরিকল্পনামতো গুছানো হকি খেলতে পারে। আর যেখানে পরিকল্পনামতো খেলা হয় সেখানে এমন বিজয় পাওয়াই স্বাভাবিক। হংকংয়ের পর শ্রীলঙ্কাকে হারিয়েই সেমি নিশ্চিত করেছিল বাংলাদেশ। তবে তারা থেমে থাকেনি সেখানেও।
গ্রুপ পর্বে পরের ম্যাচ খেলে উজবেকিস্তানের বিপক্ষে। তাদেরও হাফ ডজন গোল দিয়ে জয় ছিনিয়ে আনে বাংলার যুবকরা। বিনিময়ে হজম করে মাত্র একটি গোল। সে জয়ের মধ্য দিয়েও ছিল বাংলাদেশের অর্জন। সে জয়ে সেরা চারে উঠে জুনিয়র এশিয়া কাপ খেলা নিশ্চিত করেছিল বাংলাদেশ। আগেই নিশ্চিত ছিল তাদের সেমি ফাইনাল। গ্রুপ পর্বে সেরা হয়ে সেমি খেলা কিছুটা হলেও সম্মানের, যা রকিবুলরা অর্জন করতে পেরেছিল। গ্রুপ পর্বের তিন ম্যাচ শেষে বাংলাদেশের স্কোরবোর্ডে গোলের সংখ্যা ছিল ২ ডজন। বিনিময়ে তাদের শুধু একটি গোল হজম করতে হয়েছিল।
সেমি ফাইনালে বাংলাদেশ মুখোমুখি হয়েছিল থাইল্যান্ডের মতো শক্তিশালী দলের। কোনো চাপ না নিয়ে উল্টো তাদেরই চাপের মধ্যে রাখে বাংলাদেশিরা। পুরো ম্যাচে আবারো গোল দিতে দেয়নি মামুনুলের ছাত্ররা। তবে নিজেরা তিনটি গোলের স্বাদ নিয়েছে। রাহিদ হাসান, জাহিদ হোসেন ও রকিবুল হাসান একটি করে গোল দিয়েছে থাইল্যান্ডকে।
অন্যদিকে উজবেকিস্তানকে হারিয়ে বাংলাদেশের সামনে আসে শক্তিশালী ওমান দল। তাদেরও হারাল বাংলাদেশ। মাত্র ১৫ দিন অনুশীলন করে দীর্ঘ ৮ বছর পর বাংলাদেশে শিরোপা এনে দৃষ্টান্ত গড়েছে তারা। তাই তাদের নিয়ে স্বপ্নও দীর্ঘ পথ পাড়ি দেয়ার। প্রতি ম্যাচে অপরাজিত হয়ে টুর্নামেন্ট জিততে পারার সম্মানও বাংলাদেশ যুব হকি দল অর্জন করতে পেরেছে। তাই জুনিয়র এশিয়া কাপের শিরোপাও বাংলাদেশে আসার তীব্র সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। বাংলার যুবকদের এ অসামান্য সফলতা যেন বাংলাদেশকে পুনরায় ‘অপরাজেয় বাংলা’-তে পরিণত করল।
– শাহাদাত হোসেন কিফাত

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়