প্রিন্সের অভিযোগ : বেছে বেছে বিএনপি নেতাকর্মীদের হত্যা করা হচ্ছে

আগের সংবাদ

অর্থনীতির সাত চ্যালেঞ্জ : বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ > ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়ন > খাদ্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণ > মূল্যস্ফীতি > বৈদেশিক ঋণ পরিশোধ > কর্মসংস্থান > দেশীয় শিল্পে সংকট

পরের সংবাদ

বিজয়ের স্বপ্ন

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ২৬, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: ডিসেম্বর ২৬, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

ঘুমের ঘোরে কে যেন আমার ঘাড় চেপে ধরেছে। কিন্তু কে তিনি? আমি চশমা পড়ে ঘুমাইনি, তাই স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি না। আবছা আবছা কেমন একটা লাল-সবুজ পোশাকে দেখা যাচ্ছে তাকে। আমার ভীষণ ভয় করছে। ঘরের বাতিটাও নেভানো। ঘুটঘুটে অন্ধকারে তিনি কী চাইতে এসেছেন? ঘড়িতে কয়টা বাজে! এখন কি শেষ রাত!
এসব ভাবতে ভাবতে আমি সাহস করে জিজ্ঞেস করলাম, আপনি কে? তিনি উচ্চ স্বরে জবাব দিলেন, আজাদ সাহেব, আমি কে সেটা এখনো বুঝলেন না! বুঝবেনই বা কী করে, বায়ান্ন বছর পেরোতে চলল, কয়দিনই আর আমার খবর রেখেছেন আপনারা!
তার কথা শুনে আমি রীতিমতো ঘামছি, আমার গা ছমছম করছে। আজরাইলের ভয়ে মনে মনে দোয়া-দরুদ পড়তে লাগলাম, সাথে বুকে ফুঁ দিতে লাগলাম। ততক্ষণে তিনি আমার ঘাড় ছেড়ে দিলেন এবং পাশের চেয়ারে বসলেন। টেবিল থেকে একটা বই হাতে নিলেন, ঠিক কোন বইটা নিয়েছেন আমি স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি না। তবে আমার টেবিলে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক বেশ কিছু বই রয়েছে। তিনি বই হাতে আমার বালিশের কাছে এসে বসলেন, আমার ভয় ক্রমেই বেড়ে চলছে।
আমার কপালে হাত দিয়ে তিনি বললেন, আজাদ সাহেব আপনাদের কপাল বড়ই ভালো, ভালো না হলে হয়তো এই দেশে আমি এবং আমার বন্ধুরা জন্ম নিতাম না। আমি জিজ্ঞেস করলাম, কারা আপনার বন্ধু? তিনি চুপ করে থাকলেন। কিছুক্ষণ পর পকেট থেকে একটা সিগারেট বের করে আমার বিছানায় রাখা দিয়াশলাই দিয়ে জ্বালালেন, আয়েশ করে সিগারেটে টান দিতে লাগলেন। কিন্তু তাকে দেখে বিষণ্ন মনে হচ্ছে, মনে হচ্ছে সিগারেটের ধোঁয়ার সাথে সাথে দীর্ঘশ্বাস ফেলছেন।
এবার তিনি কিছুটা ঝুঁকে আমার খুবই কাছে চলে এসেছেন। কানের কাছে মুখ এনে ফিসফিস করে বলতে লাগলেন, আজাদ সাহেব শোনেন, আমার কিছু স্বপ্ন আছে। আমি বললাম, জি বলুন, আপনার স্বপ্নের কথা।
তিনি একে একে বলতে শুরু করলেন, শ্যামপুরের দক্ষিণপাড়া গ্রামের স্কুলের পাশের গণকবরটা বছরে একদিন পরিষ্কার করা হয়, আমি চাই সেটা সারা বছর পরিষ্কার রাখা হোক, আজও চিৎকার শুনতে পাই রাস্তায় কাউকে ধর্ষণ করা হচ্ছে। তিনি একটু হতাশ হয়ে মাথায় হাত দিয়ে আবার বলতে শুরু করলেন, জানেন আজাদ সাহেব, আমাদের সময়ে যখনই মা-বোনদের এমন চিৎকার শুনতাম, আমি এবং আমার বন্ধুরা দৌড়ে যেতাম। ওই শুয়োরের বাচ্চাদের হাত থেকে মা-বোনদের রক্ষা করতাম। কিন্তু আফসোস আজকে বায়ান্ন বছর পর আপনারা সেভাবে দৌড়ে যান না…।
তিনি কথা বলতে পারছেন না, ঘন ঘন কাশি দিচ্ছেন। আমি বললাম, এই বয়সে আপনি সিগারেট খান কেন! আপনার দেখছি কাশির ভালোই সমস্যা। তিনি বললেন, ভীষণ রকমের দুঃখ-কষ্ট আর হতাশায় পুরুষ মানুষ নিজের অন্তর পোড়াতে চায়, শুনেছি সিগারেট মানুষের হৃৎপিণ্ড পুড়িয়ে দেয়। হৃৎপিণ্ডই তো অন্তর… কথাগুলো বলেই তিনি খিলখিল করে হাসতে শুরু করলেন।
এতক্ষণে আমার ভয় পুরোপুরি কেটেছে। আমিও কৌতূহল নিয়ে তার সঙ্গে গল্প করতে শুরু করলাম। তিনি আবার বলতে শুরু করলেন, আজাদ সাহেব, আপনাদের দেশে বিভিন্ন দেশের পতাকা উড়তে দেখলাম। কিন্তু আমি এবং আমার বন্ধুরা একটা পতাকার জন্য যুদ্ধ করেছিলাম। এখনো মানুষ রাস্তায় ঘুমায়, যেমনটা হয়েছিল ঐ শুয়োরের বাচ্চাদের অত্যাচারে ঘরবাড়ি হারানো মানুষের সাথে। এখনো কত শিশু না খেয়ে দিন পার করে, যেমনটা হয়েছিল সেই সময় রান্নাঘর পুড়িয়ে দেয়ার পর। কথাগুলো শুনে আমি উঠে বসলাম। জিজ্ঞেস করলাম, আপনি কে? তিনি চুপ করে আছেন, কিছু বলছেন না।
হঠাৎ তিনি বললেন, আমার স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ গড়ে তুলতে হবে আপনাকে, তাহলেই আমার স্বপ্নপূরণ হবে। আমি আবারো জিজ্ঞেস করলাম, আপনি কে? তিনি বললেন, আমি কমান্ডার শামসুদ্দিন।
আব্বা! আব্বা! আব্বা! বিজয় আমার হাত চেপে ধরে বলল, কী হয়েছে বাবা? ঘুম থেকে ওঠার জন্য আপনাকে ডাকার সাথে সাথেই এভাবে হকচকিয়ে আব্বা আব্বা বলে আমার হাত চেপে ধরলেন কেন? তাড়াতাড়ি ওঠেন, আমাকে স্কুলে নিয়ে যেতে হবে, স্কুলে আজকে বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানে আমি বক্তৃতা প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করব। আমি বললাম, না… না… কিছু হয়নি।
বিজয়, আমার ছোট ছেলে। আব্বা বলতেন, তোর ছেলে হলে নাম রাখিস বিজয়। কিন্তু আফসোস আব্বা সেই বিজয়কে দেখে যেতে পারেননি। গাড়িতে যেতে যেতে বিজয়কে গত রাতের গল্প শোনাচ্ছিলাম। বিজয় গত রাতের ঘটনাটাই তার বক্তৃতায় বলল এবং পুরস্কার জিতে নিল। এবার আমি তার ঘাড় চেপে বললাম, বাবা বিজয়, শুধু পুরস্কার জিতলেই হবে না, বিজয়ের স্বপ্নও তোমাকেই পূরণ করতে হবে। কারণ তুমিই আগামীর বাংলাদেশ, তুমিই এ যুগের কমান্ডার শামসুদ্দিন। গাড়ি করে আমরা বাড়ি ফিরছি, শহরের আনাচে কানাচে গান বাজছে- জয় বাংলা, বাংলার জয়…
রানা সরকার
শিক্ষার্থী
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়