ঢাকা মহানগর আ.লীগ : দক্ষিণে সমাবেশ উত্তরে বিক্ষোভ আজ

আগের সংবাদ

১০ দাবিতে যুগপৎ আন্দোলন : ঢাকার গণসমাবেশ থেকে বিএনপির ঘোষণা > ২৪ ডিসেম্বর দেশব্যাপী গণমিছিলের কর্মসূচি

পরের সংবাদ

মিরপুরের পর সাগরিকায়ও মিরাজ ঝলকের অপেক্ষা

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ১০, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: ডিসেম্বর ১০, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : বর্তমানে দেশের ক্রিকেটের এক আলোচিত নাম মেহেদী হাসান মিরাজ। ভারতের বিপক্ষে গত দুই ম্যাচে নিজেকে উজার করে দিয়েছেন তিনি। দলের বিপদের সময় ব্যাট হাতে খেলেছেন ম্যাচজয়ী সব ইনিংস। আবার বল হাতেও প্রয়োজনের সময় এনে দিয়েছেন উইকেট। এককথায় ২৫ বছর বয়সী এ ক্রিকেটারের অলরাউন্ডার পারফরম্যান্সে ভারতকে হারিয়ে এক ম্যাচ হাতে রেখে সিরিজ জিতেছে লাল-সবুজের জার্সিধারীরা।
ভারতের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচে সহজ লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ১৩৬ রানে ৯ উইকেট হারায় টাইগাররা। তখনই শঙ্কা জাগে পরাজয়ের। কিন্তু বিপন্ন সময়ে দলের ত্রাণকর্তা হিসেবে আবির্ভূত হন মিরাজ। ধীর-স্থির ব্যাটিংয়ে ভারতের বোলারদের বাউন্ডারি হাঁকিয়ে সচল রেখেছেন রানের গতি। তাকে সঙ্গ দেন মোস্তাফিজুর রহমান। তার ব্যাট থেকেও আসে বাউন্ডারি। শেষ পর্যন্ত দুজনের নৈপুণ্যে রোহিত-কোহলিদের হতাশায় ডুবিয়ে ১ রানের নাটকীয় জয় পায় লাল-সবুজের জার্সিধারীরা। মিরাজ অপরাজিত থাকেন ৩৯ বলে ৩৮ রানের দুর্দান্ত ইনিংস খেলে। দ্বিতীয় ম্যাচে মিরাজ যেন আরো পরিণত। ৬৯ রানে ৬ উইকেট হারানোর পরও দলকে এনে দেন আড়াইশ ছাড়ানো সংগ্রহ। ব্যাট হাতে ১০০ রানের অপরাজিত ইনিংস এবং বল হাতে গুরুত্বপূর্ণ ২ উইকেট নিয়ে বাংলাদেশের জয়ের নায়ক তিনি। টানা দুই ম্যাচেই ম্যাচসেরার পুরস্কার উঠে তার হাতে।
মিরাজের জন্ম বরিশাল জেলার বাকেরগঞ্জ উপজেলার আউলিয়াপুর গ্রামে। জন্মের তিন বছর পর ২০০০ সালে চাকরির জন্য পরিবার নিয়ে খুলনায় বসবাস শুরু করেন তার বাবা মোহাম্মদ জালাল হোসেন। এরপর তাদের সবকিছু খুলনা কেন্দ্রিক। থাকেন খালিশপুরের বিআইডিসি সড়কের দক্ষিণ কাশিপুর এলাকায় ভাড়া বাড়িতে। মিরাজের খেলাধুলার হাতেখড়িও সেখানেই। ২০১৬ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট অভিষেক হয় মিরাজের। তার প্রথম টেস্ট ইনিংসে ৫ উইকেটসহ ইংল্যান্ডের অভিষেক খেলোয়াড় বেন ডাকেটের উইকেট লাভ করেন। ২০১৬ সালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে অভিষেক হয় মিরাজের।
গত জানুয়ারিতে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে বাংলাদেশের অবিশ্বাস্য জয়ের ম্যাচে দেখা যায় মিরাজ মিরাকল। দুই ইনিংস মিলিয়ে সবচেয়ে বেশি ৫৪ ওভার বোলিং করেছেন, নিয়েছেন ৪ উইকেট। নিউজিল্যান্ডের ব্যাটসম্যানদের হাতই খুলতে দেননি মিরাজ। পেসারদের নায়ক হওয়ার দিনে পিছিয়ে ছিলেন না তিনিও। প্রথম ইনিংসে ব্যাটিংয়ে সুযোগ পেয়েও করেছেন ৪৭ রান। পরের মাসেই চট্টগ্রামে আফগানিস্তানের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজের প্রথম ম্যাচে জয়ের নায়ক মিরাজ। ২১৫ রান তাড়া করতে নেমে ৪৫ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে বসে বাংলাদেশ দল। আফগান বোলিংয়ের বিপক্ষে ম্যাচের সে অবস্থা থেকে বাংলাদেশের হারই ছিল নিয়তি। কিন্তু আফিফ হোসেনকে নিয়ে ঘুরে দাঁড়ান মিরাজ। আটে নেমে সেদিন আফিফের সঙ্গে ১৭৪ রান যোগ করে দলকে জিতিয়েই মাঠ ছাড়েন তিনি। নামের পাশে অপরাজিত ৮১ রান।
মিরাজের পারফরম্যান্সে এখন সত্যিকারের পরিপূর্ণ অলরাউন্ডারের ছাপ। গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরি স্বাদ পেয়ে গেছেন তিনি চট্টগ্রামে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে। তবে বয়সভিত্তিক ক্রিকেট মাতিয়েছেন যে সংস্করণে, সেই ৫০ ওভারের ক্রিকেটে তার অলরাউন্ডার সত্ত্বার সত্যিকারের আবির্ভাব এই বছর থেকে। এ বছর এখন পর্যন্ত ১৪ ওয়ানডে খেলে ৯ বার ব্যাট করে মিরাজের রান ৩২৭। ব্যাটিং গড় ৮১.৭৫। বাংলাদেশে তার গড়ের ধারেকাছে নেই আর কেউ। স্ট্রাইক রেট ৮৪.৪৯। অন্তত ২০০ রান করা ব্যাটসম্যানদের মধ্যে এখানেও তিনি দেশের সেরা। বল হাতে উইকেট ২৩টি। বাংলাদেশের হয়ে ১৫ উইকেটের বেশি নেই আর কারো। একাধিকবার ৪ উইকেট শিকারি একমাত্র বোলারও তিনি। ফিল্ডিংয়ে তিনি ক্যাচ নিয়েছেন ৭টি। কিপার ছাড়া তার চেয়ে বেশি ক্যাচ নেই দলের অন্য কারো। গ্রাউন্ড ফিল্ডিংয়েও তিনি বরাবরের নির্ভরতা। এই সিরিজেও তিনি দুই ম্যাচে রান বাঁচিয়েছেন বেশ কিছু। বিশেষ করে বৃত্তের ভেতরে তিনি দুর্দান্ত।
টেস্ট ক্রিকেটে এ পর্যন্ত ৩৫ ম্যাচে মাঠে নামেন মিরাজ। ১৮.৭৮ গড় ও ৪৭.২২ স্ট্রাইট রেটে তার সংগ্রহ ১০৮৯ রান। সেঞ্চুরি আছে একটি, এই সংস্করণে তার উইকেট ১৩৫। ওয়ানডেতে ৬৬ ম্যাচে ৭৫৩ রান সংগ্রহ করেন তিনি। গড় ২৩.৫৩, স্ট্রাইট রেট ৭৯.০১। টি-টোয়েন্টিতে এ পর্যন্ত তার ব্যাট থেকে আসে ২১৬। ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টিতে তার উইকেট যথাক্রমে ৭৮ ও ৮।
এবার টাইগারদের লক্ষ্য ভারতকে হোয়াইটওয়াশ। প্রতিষ্ঠিত শক্তিগুলোর মধ্যে পাকিস্তান, নিউজিল্যান্ড, ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হোয়াইটওয়াশ করার অভিজ্ঞতা আছে বাংলাদেশের। কিন্তু ভারতের বিপক্ষে সেই স্বাদ এখনো মেলেনি। চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরি স্টেডিয়ামে আজ সেই ক্ষুধা মেটাতেই নামবেন লিটনরা। বাংলাদেশের সিরিজ জয়ের নায়ক মেহেদী হাসান মিরাজ জানান, সিরিজ জিতলেও কোনো ছাড় দেবেন না তারা। মিরাজের ভাষ্য,‘অবশ্যই আমাদের জন্য সুযোগ আছে (ভারতকে হোয়াইটওয়াশ করার)। আরেকটা ম্যাচ জিতলে তো তিনটা জয় হবে। ক্রিকেট খেলায় সিরিজ জিতে গেলেই রিল্যাক্সড হওয়ার কিছু নেই। আমাদের জন্যে প্রতিটি ম্যাচই গুরুত্বপূর্ণ।’

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়