ঢাকা মহানগর আ.লীগ : দক্ষিণে সমাবেশ উত্তরে বিক্ষোভ আজ

আগের সংবাদ

১০ দাবিতে যুগপৎ আন্দোলন : ঢাকার গণসমাবেশ থেকে বিএনপির ঘোষণা > ২৪ ডিসেম্বর দেশব্যাপী গণমিছিলের কর্মসূচি

পরের সংবাদ

বিশ্বকাপে মেসি-রোনালদোর শ্রেষ্ঠত্বের বিতর্ক

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ১০, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: ডিসেম্বর ১০, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ ডেস্ক : কাতারে চলছে দ্যা গ্রেটেস্ট শো অন আর্থ খ্যাত বিশ্বকাপ ফুটবলের ২২তম আসর। বিশ্বকাপের মৌসুমে চায়ের দোকান থেকে শুরু করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম-সর্বত্রই আলোচনার কেন্দ্রে একটি বিতর্ক। কে সেরা? মেসি নাকি রোনালদো। যুগ পেরিয়ে গেলেও সে প্রশ্নের উত্তর মেলেনি। তবে তথ্য, পরিসংখ্যান আর নৈপুণ্যের উদাহরণ দিয়ে সবাই পছন্দের খেলোয়াড়ের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণে সচেষ্ট। এ নিয়ে চর্চা বিশ্বকাপের আঙিনাতেই থেমে থাকবে কেন।
মেসির বয়স এখন ৩৫। তার দুই বছরের বড় রোনালদো। এক যুগ ধরে ফুটবল বিশ্বে আধিপত্য ধরে রেখেছেন তারা। মেসি বার্সেলোনায় ও রোনালদো রিয়াল মাদ্রিদে থাকার সময় থেকে দুজন প্রবল প্রতিদ্ব›দ্বী। সময়ের পরিক্রমায় দুজনই ঠিকানা বদলেছেন। তবে দুজনের দ্বৈরথ চলছে। বর্ষসেরা ফুটবলারের পুরস্কার ব্যালন ডি’অর মেসি জিতেছেন রেকর্ড সাতবার, রোনালদো পাঁচবার। দুজনের অর্জনের তালিকায় আছে আরো অনেক ব্যক্তিগত ও দলীয় সাফল্য। দুজনই এই নিয়ে পঞ্চমবার বিশ্বকাপে খেলছেন। ভিন্ন পাঁচ আসরে গোল করা একমাত্র খেলোয়াড় রোনালদো। ভিন্ন পাঁচ আসরে অ্যাসিস্ট এর কীর্তি শুধু মেসির। তবে কেউই এখনো শিরোপা জিততে পারেননি। এটিই তাদের সম্ভাব্য শেষ সুযোগ।
মরুদ্যানের বিশ্বকাপে নিজেদের ব্যক্তিগত পথচলার শুরুতে দুজনে ছিলেন সমানে সমান। সৌদি আরবের বিপক্ষে আর্জেন্টিনা ২-১ ব্যবধানে হারলেও পেনাল্টি থেকে জালের দেখা পান মেসি। চারটি ভিন্ন বিশ্বকাপে গোল করার কীর্তিও গড়েন তিনি। রোনালদোর শুরুটা ছিল আরো মধুর। পাঁচ গোলের রোমাঞ্চ ছড়ানো ম্যাচে ঘানাকে ৩-২ ব্যবধানে হারিয়ে শুভসূচনা পায় পর্তুগাল। ওই ম্যাচে ৬৫তম মিনিটে স্পট কিক থেকে দলকে এগিয়ে নেন রোনালদো। এ গোলেই অবিশ্বাস্য এক চূড়ায় পা রাখেন রোনালদো। ইতিহাসের প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে বিশ্বকাপের পাঁচটি আসরে গোলের রেকর্ড গড়েন তিনি। আন্তর্জাতিক গোলদাতার তালিকায় আগে থেকে শীর্ষে থাকা এই ফরোয়ার্ড গোলসংখ্যা তুলে নেন ১১৮ তে। ৯৪ গোল নিয়ে প্রতিদ্ব›দ্বী মেসি এ পাতায় তার চেয়ে ঢের পেছনে।
গ্রুপ পর্বে সেই এক গোলের আলো ছড়িয়ে বিতর্কের বৃত্তে ঘোরপাক খেয়ে চলেছেন রোনালদো। চার ম্যাচ মিলিয়ে খেলেছেন ৬৫, ৮২, ৬৫ ও ১৭ যোগে ২২৯ মিনিট। কোনো ম্যাচে পুরো নব্বই মিনিট খেলা হয়নি তার। তিন ম্যাচে ছিলেন শুরুর একাদশে, শেষ ম্যাচে বদলি। তবে বিতর্কের শুরু গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচ থেকে। দক্ষিণ কোরিয়ার বিপক্ষে ৬৫তম মিনিটে রোনালদোকে তুলে নেন পর্তুগাল কোচ ফের্নান্দো সান্তোস। শেষ ষোলোয় পর্তুগাল-সুইজারল্যান্ড ম্যাচ রোনালদো ছিলেন না শুরুর একাদশে। অবশেষে সুযোগ মেলে ৭৩তম মিনিটে। ততক্ষণে ম্যাচ পর্তুগালের মুঠোয়। এরপর থেকে বিতর্ক যেন বানের স্রোতের মতো বইছে তাকে ঘিরে।
মেক্সিকোর বিপক্ষে বাঁচা-মরার লড়াইয়ে আর্জেন্টিনাকে মেসি পথ দেখান চেনা ভঙ্গিতে। ৬৪তম মিনিটে আনহেল ডি মারিয়ার কাছ থেকে বল পেয়ে প্রায় ২৫ গজ দূর থেকে শট নেন রেকর্ড সাতবারের ব্যালন ডি’অর জয়ী। গিয়ের্মো ওচোয়া ঝাঁপিয়েও নাগাল পাননি, বল পোস্ট ঘেঁষে খুঁজে নেয় ঠিকানা। এ গোলেই কিংবদন্তি দিয়েগো মারাডোনার ৮ বিশ্বকাপ গোলের কীর্তি স্পর্শ করেন মেসি। পোল্যান্ড ম্যাচে গোল পাননি, কিন্তু শেষ ষোলোয় অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে আবারো মেসি হাজির মোহময় ফুটবলের পসরা মেলে। ক্লাব ও আন্তর্জাতিক ফুটবলে হাজারতম ম্যাচ খেলার ক্ষণ তিনি রাঙিয়ে রাখেন ২-১ ব্যবধানের জয়, নিজেও গোল করেন। বিশ্বকাপ গোলের পাতায় রোনালদোকে দেন পেছনে ফেলে। বৈশ্বিক ফুটবলে সর্বোচ্চ আসরে পর্তুগিজ ফরোয়ার্ডের বর্তমান গোল ৮টি, মেসির গোল হলো ৯টি, এর মধ্যে চলতি বিশ্বকাপে ৩টি।
মেসি এবং রোনালদো দুজনই একটি জায়গায় অভিন্ন। এই দুজন খেলোয়াড়ের জীবনের ঘটনা দেখলে আমরা দেখতে পাব যে ছোটবেলা থেকেই তারা ফুটবলকেই নিজের ধ্যানজ্ঞান মেনেছেন এবং কঠোর পরিশ্রম করেছেন। এমনকি দুরারোগ্য ব্যাধির কাছেও হার মানেননি। তারা দুজনেই পরিশ্রমকে সফলতার মাধ্যম হিসেবে মেনেছেন।
আর্জেন্টিনার রোজারিওতে ইস্পাতের কারখানায় কাজ করা হোর্হে হোরাসিও ও খণ্ডকালীন পরিচ্ছন্নতাকর্মী সেলিয়া মারিয়া কুচ্চিত্তিনির তৃতীয় সন্তান মেসি। সবকিছু চলছিল চমৎকার কিন্তু প্রকৃতির নির্মম পরিহাস ১১ বছর বয়সে মেসির গ্রোথ হরমোন ডেফিসিয়েন্সি রোগ ধরা পড়ে। সে সময় এফসি বার্সেলোনার স্পোর্টিং ডিরেক্টর কার্লস রেসজ্যাগ মেসির ট্যালেন্ট সম্পর্কে অবগত হন। এর ফলে মেসি এবং তার বাবা এফসি বার্সেলোনা টিমের সঙ্গে একটা ট্রায়াল অ্যারেঞ্জ করতে সফল হন।
ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর জন্ম ১৯৮৫ সালে, পর্তুগালের ফানচালে এক গরিব পরিবারে। তার বাবা ছিলেন একজন খণ্ডকালীন মালি। পরিবারকে সাহায্য করার জন্য তার মা অন্যের জন্য রান্না এবং বাসন পরিষ্কার করতেন। ১৫ বছর বয়সে তার একটি রোগ ধরা পড়ে। যার নাম রেসিং হার্ট প্রবলেম। রেসিং হার্ট এমন একটি হৃৎপিণ্ডের রোগ যেখানে রোগীর হার্ট রেট বিশ্রামের সময়ও একজন স্বাভাবিক মানুষের হার্ট রেটের থেকে অনেক বেশি থাকে। তবু রোনালদো হাল ছাড়েননি। কারণ ফুটবল ছাড়া নিজেকে এক মুহূর্তও কল্পনা করতে পারতেন না। তাই তিনি ঝুঁকি নিয়ে একটি অপারেশন করানোর সিদ্ধান্ত নেন। তার অপারেশন সফল হয় এবং এর ফলে তিনি আবার খেলা চালানোর শারীরিক সক্ষমতা ফিরে পান।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়