ঢাকা মহানগর আ.লীগ : দক্ষিণে সমাবেশ উত্তরে বিক্ষোভ আজ

আগের সংবাদ

১০ দাবিতে যুগপৎ আন্দোলন : ঢাকার গণসমাবেশ থেকে বিএনপির ঘোষণা > ২৪ ডিসেম্বর দেশব্যাপী গণমিছিলের কর্মসূচি

পরের সংবাদ

নয়াপল্টনে সংঘর্ষের মামলায় জামিন নামঞ্জুর : কারাগারে ফখরুল ও আব্বাস

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ১০, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: ডিসেম্বর ১০, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : মধ্যরাতে আটকের নাটকীয়তার পর পল্টন থানার বিস্ফোরক আইনের মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসকে জামিন না দিয়ে কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত। গতকাল শুক্রবার দুজনকে আদালতে হাজির করে মামলার তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত তাদের কারাগারে আটক রাখার আবেদন করেন তদন্তকারী কর্মকর্তা ইন্সপেক্টর তরিকুল ইসলাম। শুনানি শেষে ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ জসিম তাদের জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। এছাড়া কারাবিধি অনুযায়ী ডিভিশন দেয়ার নির্দেশ দেন

আদালত। পাশাপাশি কারাবিধি অনুযায়ীই চিকিৎসা পাবেন তারা।
এর আগে গত বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ৩টার দিকে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসকে তাদের নিজ বাসা থেকে তুলে নিয়ে যায় ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)। তুলে নেয়ার ৮ ঘণ্টা পরে গত শুক্রবার বেলা ১১টার দিকে ডিএমপির ডিবির প্রধান অতিরিক্ত কমিশনার হারুন অর রশিদ দুজনকে আটকের বিষয়টি সাংবাদিকদের নিশ্চিত করেন। পরে দুপুর সোয়া ২টার দিকে তিনি জানান, গত বুধবার নয়াপল্টন কার্যালয়ের সামনে সড়কে বসা নিয়ে পুলিশের ওপর বর্বরোচিত হামলা ঘটনার পরিকল্পনাকারী, নির্দেশদাতা ও উস্কানিদাতা হিসেবে চিহ্নিত হওয়ায় পল্টন থানার বিস্ফোরক আইনের মামলায় তাদের গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। তাদের আদালতে পাঠানো হবে।
এদিকে বিএনপির সমাবেশকে সামনে রেখে গতকাল সকাল থেকেই পুরান ঢাকার সিএমএম আদালত ঘিরে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়। তবে মির্জা ফখরুল ও আব্বাসকে কারাগারে পাঠনোর ঘটনায় বাড়তি ব্যবস্থা নেয় পুলিশ। গতকাল জুমার নামাজের আগে থেকেই সেখানে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডিএমপির লালবাগ জোনের অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) মুহিত সেরনিয়াবাত বলেন, আদালতে যেন কোনো বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি না হয় সেজন্য আদালত প্রাঙ্গণে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। আমাদের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করা হচ্ছে।
এরই মধ্যে আদালত প্রাঙ্গণে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও মির্জা আব্বাসকে বহনকারী গাড়ি বিকাল ৩টা ১০ মিনিটের দিকে প্রবেশ করে। বিএনপির এ দুই নেতাকে রিমান্ডে নেয়ার কোনো আবেদন না থাকায় তাদের এজলাসে হাজির না করে হাজতখানায় রেখেই শুনানি হয়। তাদের কারাগারে আটক রাখার আবেদন করে মতিঝিল ডিবি পুলিশের এসআই তরীকুল ইসলাম বলেন, গত ৭ ডিসেম্বর দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পল্টন মডেল থানাধীন বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে দলটির বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা বেআইনি জনতাবদ্ধে হাঙ্গামা করে বাশের লাঠি নিয়া সজ্জিত হয়ে পুলিশকে আক্রমণ ও বলপ্রয়োগ করে গুরুতর জখম করে ও ক্ষতি সাধনের নিমিত্তে জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টিসহ ব্যক্তি বা জনগণের সম্পত্তির ক্ষতি করার উদ্দেশ্যে ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায়।
এই ঘটনায় উপকমিশনার মতিঝিল বিভাগ ও অতিরিক্ত কমিশনার মতিঝিল জোনসহ অনেক পুলিশ সদস্য আহত হয় এবং সরকারি সম্পত্তির ক্ষতি সাধন হয়। মামলাটি তদন্তকালে মির্জা ফখরুল ও আব্বাস আসামীদ্বয় উক্ত ঘটনার পরিকল্পনাকারী, উস্কানিদাতা ও নির্দেশদাতা বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে। তাই তাদের পল্টন থানার মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ সময় বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা জামিন চেয়ে আবেদন করেন। আদালত জামিনের আবেদন নামঞ্জুর করে আসামিদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসকে কারাবিধি অনুযায়ী ডিভিশন দেয়ারও নির্দেশ দেন আদালত। প্রয়োজনে কারাবিধি অনুযায়ী তাদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করার নির্দেশ দেয়া হয়। এরপর ফখরুল ও আব্বাসকে মাইক্রোবাসে করে কেরানীগঞ্জ কেন্দ্রীয় কারাগারে নেয়া হয়।
এদিকে মির্জা ফখরুল ইসলামের স্ত্রী রাহাত আরা বেগম ও তার মেয়ে মির্জা সাফারুহ সুমিকে আদালতে হাজির হতে দেখা গেছে। অন্যদিকে মির্জা ফখরুল ও মির্জা আব্বাসকে আদালতে হাজির করার খবর শুনে শত শত বিএনপিপন্থি আইনজীবীকে আদালত চত্বরে মিছিল দিতে দেখা যায়। তাদের মুক্তির দাবিতে মিছিল ও স্লোগান দেন আইনজীবীরা।
প্রসঙ্গত, গত বুধবার বিকালে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে পুলিশের সঙ্গে বিএনপি নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ হয়। এতে একজন গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। আহত হন অনেকে। পরে বিএনপি কার্যালয়ে অভিযান চালানো হলে সেখানে অনেক ককটেল পাওয়ার কথা জানায় পুলিশ। এ ঘটনায় পল্টন থানার এসআই মিজানুর রহমান বাদী হয়ে মামলা করেন। মামলায় ৪৭৩ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত দেড় থেকে দুই হাজার বিএনপির নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়। এরই মধ্যে গত বৃহস্পতিবার রাত ৩টার দিকে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসকে তাদের বাসা থেকে ডিবি তুলে নিয়ে যায়। পরে শুক্রবার দুপুরে ডিএমপির ডিবিপ্রধান হারুন অর রশিদ জানান, তাদের পল্টন থানায় করা একটি মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়েছে পুলিশ।
মির্জা ফখরুল আটক হওয়ার পর গতকাল সকাল ৬টার দিকে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন তার স্ত্রী রাহাত আরা বেগম। তিনি জানান, পুলিশ সদস্যরা রাত ৩টার দিকে বাসায় ঢুকে তার স্বামীকে নিয়ে যায়। ডিবির চারজনের মতো সদস্য তাদের বাসায় প্রবেশ করে, বাকিরা নিচে ছিল। বিএনপির মহাসচিবকে কেন নিয়ে যাওয়া হয়েছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ওরা (ডিবি) বলেছেন, দুই-তিনটা মামলা নাকি হয়েছে। ওপরের নির্দেশে তাকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়