জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ভিসি : ডা. এস এ মালেকের মৃত্যু অপূরণীয় ক্ষতি

আগের সংবাদ

পল্টন ছেড়ে গোলাপবাগে বিএনপি : বিকাল থেকেই সমাবেশস্থলে নেতাকর্মীদের অবস্থান, রাজধানীজুড়ে কঠোর নিরাপত্তা

পরের সংবাদ

কমলাপুর স্টেডিয়াম না মিরপুর বাংলা কলেজ? : নতুন বিকল্প বিবেচনায় সম্মত বিএনপি নেতারা

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ৯, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: ডিসেম্বর ৯, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : রাজধানী নয়াপল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে ১০ ডিসেম্বর সমাবেশ করা নিয়ে অনড় অবস্থান থেকে সরে এসেছে বিএনপি। এখন এর বিকল্প হিসেবে রাজধানীর কমলাপুর বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ সিপাহী মোস্তফা কামাল স্টেডিয়াম মাঠ ও মিরপুর বাংলা কলেজ মাঠকে বেছে নেয়া হয়েছে। এখন মাঠ দুটি পরিদর্শন শেষে যে কোনো একটিতে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। রাতে বিএনপি নেতারা দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসের বাসায় বৈঠকে বসেন।
গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ফের ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুকের সঙ্গে সমাবেশ নিয়ে কথা বলতে তার কার্যালয়ে যান বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকতউল্লাহ বুলু, সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার এ জে মোহাম্মাদ আলী, এডভোকেট আহমেদ আজম খান, অধ্যাপক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন ও আইনবিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল। পরে রাত সাড়ে ৯টার দিকে বের হয়ে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকতউল্লাহ বুলু বলেন, প্রায় আড়াই ঘণ্টা ডিএমপি কমিশনারসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেছি। গত বুধবারের বিষয় নিয়েও আলোচনা হয়েছে। প্রথমে আমরা দাবি জানিয়েছি বিএনপির কার্যালয় খুলে দেয়ার জন্য। তারা এতে সম্মত হয়েছেন। রাতেই খুলে দেয়ার কথা জানিয়েছে তারা। পরে সমাবেশের বিষয়ে প্রথমে আমরা পল্টন ও আরামবাগের কথা বললে তারা বলেছে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান। পরে আমরা রাজধানী কমলাপুরে বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ সিপাহী মোস্তফা কামাল স্টেডিয়াম মাঠে সমাবেশের কথা বলেছি। তখন তারা মিরপুর বাংলা কলেজের কথা জুড়ে দেয়। এখন আমরা দুটি মাঠই দেখব। এরপর সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে কথা বলে যে কোনো একটি মাঠের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
ডিএমপির গোয়েন্দা শাখার প্রধান অতিরিক্ত কমিশনার মো. হারুন অর রশীদ বলেন, তারা কমলাপুরের কথা বলেছিলেন। আমরা মিরপুরের কথা বলেছি। তারা রাজি হয়েছেন। এখন মাঠ দুটি দেখে তারা আমাদের জানাবেন। তখন দুটির যে কোনো একটি মাঠে সমাবেশ হবে। নিরাপত্তার বিষয়ে তিনি বলেন, আমরা আগেই বলেছি পল্টনের সড়ক ছাড়া অন্য কোনো খোলা স্থানে সমাবেশ করলে যত নিরাপত্তা লাগে আমরা তা দেব। সমাবেশের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে।
গত বুধবার রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে পুলিশের সঙ্গে বিএনপি নেতাকর্মীর সংঘর্ষে পল্টন, মতিঝিল, শাহজাহানপুর ও রমনা থানায় পৃথক ৪টি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় সেদিনই আটক ৭১৪ জন বিএনপি নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। মামলায় অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে ২ হাজার ২৫০ জনকে। সব মামলার বাদীই পুলিশ। ডিএমপি মুখপাত্র উপকমিশনার মো. ফারুক হোসেন গতকাল ভোরের কাগজকে বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করেন। মামলায় আমানুল্লাহ আমান ও কার্যনির্বাহী সদস্য আব্দুল কাদের ভূঁইয়া জুয়েলকে জামিন দিলেও রিজভীসহ বাকিদের কারাগারে পাঠানো হয়।
এদিকে গতকাল বিকালে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, সমাবেশের জন্য গ্রহণযোগ্য বিকল্প আমাদের কাছে এলে বিবেচনা করে দেখা হবে। তবে আমরা নয়াপল্টনেই শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করতে চাই। এ সময় নয়াপল্টন অফিস থেকে পুলিশ প্রত্যাহার করে সমাবেশ করার উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান তিনি। বিএনপির মহাসচিব অভিযোগ করে আরো বলেন, পুলিশ অত্যন্ত ন্যক্কারজনকভাবে কার্যালয় তছনছ করে সব গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্টস নিয়ে গেছে। কয়েকশ নেতাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সারা বিশ্ব দেখেছে আমাদের প্রতি কীভাবে অত্যাচার করা হয়েছে। পুলিশ নিজে বোমা নিয়ে এসে দায় চাপিয়েছে বিএনপির ওপর। পুলিশ বিএনপি অফিসে ঢোকার সময় কোনো সাংবাদিক বা দলীয়

নেতাকে সঙ্গে নেয়নি। তারা সিমেন্টের যে ব্যাগসহ কার্যালয়ে প্রবেশ করেছে তাতেই বোমা ছিল। এসব নজিরবিহীন ঘটনা। গণতন্ত্রের কফিনে শেষ পেরেক মারার শামিল।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে আওয়ামী লীগ বেশ কয়েকটি সভাসমাবেশ করেছে। ঢাকা ও এর বাইরে এসব সমাবেশের অনুমতি তাদের কে দেয়? সেটা আওয়ামী লীগ নিজেরা নির্ধারণ করে। তাহলে বিএনপি কোথায় সমাবেশ করবে সেটা সরকার বা পুলিশ কেন নির্ধারণ করবে? বিএনপির সমাবেশের স্থানও বিএনপিই নির্ধারণ করবে। ১০ ডিসেম্বর বিএনপি কোথায় সমাবেশ করবে সেটা বিএনপিই নির্ধারণ করবে। সরকার ও পুলিশের দায়িত্ব কেবল সেখানে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।
সংবাদ সম্মেলনে এ সময় আরো উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, নজরুল ইসলাম খান, বেগম সেলিমা রহমান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, ভাইস চেয়ারম্যান ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন, সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ ইমরান সালেহ প্রিন্স, বিএনপি নেতা সিরাজুল ইসলাম, নাজিম উদ্দিন খান ও জহির উদ্দিন স্বপনসহ অনেকে।
বেলা ১১টার দিকে সিএমএম কোর্ট থেকে দলীয় কার্যালয়ে যাওয়ার পথে বিজয়নগর নাইটিঙ্গেল মোড়েই আটকে দেয়া হয় মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে। এ সময় কার্যালয়ে কেন প্রবেশ করতে দেবেন না জানতে চাইলে দায়িত্বরত পুলিশ কর্মকর্তারা বিএনপি মহাসচিবকে জানান, দায়িত্ব শেষ না হওয়া পর্যন্ত কার্যালয়ে কাউকে যেতে দেয়া হবে না। পরে দুপুরের দিকে ডিএমপির যুগ্ম কমিশনার বিপ্লব কুমার সরকার সাংবাদিকদের বলেন, যতক্ষণ পর্যন্ত এই এলাকা (পল্টন) আমরা পরিপূর্ণ নিরাপদ মনে না করব, ততক্ষণ পর্যন্ত এখানে যান চলাচল ও জনসাধারণের চলাচল বন্ধ থাকবে। আমরা কোনো ব্যক্তিকে টার্গেট করে আটকাচ্ছি না। তবে এখানে এই মুহূর্তে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনার কোনো অবকাশ নেই। বিএনপির দলীয় কার্যালয়কে আমরা এখন আইনের ভাষায় বলছি, প্লেস অব অকারেন্স (পিও)। যে কারণে আমরা এটি ঘিরে রেখেছি। যতক্ষণ পর্যন্ত পুলিশের কাজ শেষ না হচ্ছে, ততক্ষণ পর্যন্ত এখানে কোনো কিছুই হতে দেয়া হবে না।
তিনি আরো বলেন, পুলিশ গত বুধবার সতর্কতামূলক অবস্থানে ছিল। কাউকে মারধর, হামলা করার উদ্দেশ্য ছিল না আমাদের। কিন্তু একপর্যায়ে যখন বিএনপির নেতাকর্মী রাস্তা আটকে অবস্থান নেয়, জনসাধারণের চলাচলে বিঘœ সৃষ্টি করে, তখন পুলিশের পক্ষ থেকে বারবার রাস্তা ছেড়ে দেয়ার জন্য অনুরোধ করা হয়। একপর্যায়ে ডিসি মতিঝিলসহ ঘটনাস্থলে উপস্থিত পুলিশের ওপর অতর্কিত হামলা হয়। যখন পুলিশের ওপর হামলা হয় তখন জনসাধারণের জানমালের নিরাপত্তার স্বার্থে, বাধ্য হয়েছি অভিযান পরিচালনার জন্য। পুলিশের ওপরে হামলা হয়েছে, ককটেল নিক্ষেপ করা হয়েছে, নাশকতার চেষ্টা হয়েছে, নাশকতার সব ধরনের উপকরণ এখানে আনা হয়েছিল। অভিযান চালিয়ে নাশকতার যাবতীয় উপাদান আমরা এখান থেকে জব্দ করেছি। ককটেল রাখার জায়গা হিসেবেই আমরা এখন বিএনপি কার্যালয়কে ট্রিট করছি। আমাদের ক্রাইম সিন ইউনিট কাজ করছে।
বিএনপির দলীয় কার্যালয়ের সামনে সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা নিয়ে প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, রাজনৈতিক দলীয় কার্যালয় ছাড়াও এখানে অনেক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান অফিস, বাসাবাড়ি রয়েছে। তাদের নিরাপত্তা বিধানের জন্য সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা হচ্ছে। তাদের নিরাপত্তা বিধান করা পুলিশের পবিত্র দায়িত্ব। সাধারণ মানুষের নিরাপত্তার জন্য যা যা প্রয়োজন পুলিশের পক্ষ থেকে তাই করা হবে। মির্জা ফখরুলের দাবি পুলিশ ককটেল নিয়ে বিএনপির কার্যালয়ে প্রবেশ করেছে- এমন প্রশ্নের জবাবে পুলিশের এ কর্মকর্তা বলেন, বিষয়টি অযাচিত, উদ্দেশ্যমূলক, মিথ্যাচার। এগুলো শুধু অভিযোগ তোলার জন্য বলা। রাষ্ট্রবাহিনী পুলিশকে কলুষিত করার চেষ্টা ছাড়া আর কিছু নয়।
এদিকে, কাকরাইলের নাইটিঙ্গেল মোড় থেকে নয়াপল্টন হয়ে ফকিরাপুল মোড় পর্যন্ত মেট্রো স্কাউট মার্কেট, হোটেল ভিক্টোরি, পলওয়েল মার্কেট, গাজী ভবন শপিং সেন্টার, সিটি হার্ট, পাইকারি মার্কেট পল্টন চায়না টাউনসহ অসংখ্য বিপণি বিতান, বিক্রয়কেন্দ্র, পাইকারি বাজার, প্রবাসী শ্রমিক পাঠানোর কোম্পানি, রেস্তোরাঁসহ বেশ কিছু বেসরকারি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। তবে রাস্তা বন্ধ থাকায় এসব প্রতিষ্ঠানের ব্যবসা-বাণিজ্যে প্রভাব পড়ে। একাধিক ব্যবসায়ী এ প্রতিবেদককে জানান, রাজনৈতিক হানাহানির ফেরে পড়েছেন তারা। ঘটনার পর থেকেই তাদের প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। এভাবেই যদি এসব বন্ধ থাকে অর্থনীতির এ টালমাটাল সময়ে আরো বিপদে পড়বেন তারা। যদিও পরে বৃহস্পতিবার বিকাল ৪টার দিকে নাইটিঙ্গেল মোড় থেকে ফকিরাপুলের দিকে যাওয়ার রাস্তা ও ফকিরাপুল থেকে নাইটিঙ্গেল মোড়ের দিকে চলাচলের সড়ক খুলে দেয়া হয়। রাস্তা খুলে দেয়ার পর বিএনপির নেতাকর্মী দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে মিছিল বা স্লোগান না দিলেও কার্যালয়ে ও এর আশপাশের সড়কে অবস্থান নেয়ার চেষ্টা করেন?। রাস্তা খুলে দেয়া হলেও গাড়ি নিয়ে পুলিশি টহল অব্যাহত রয়েছে।
ডিএমপি মতিঝিল জোনের সহকারী কমিশনার (এসি) গোলাম রুহানী ভোরের কাগজকে বলেন, জনগণের দুর্ভোগের কথা ভেবে সড়ক আমরা খুলে দিয়েছি। তবে পার্টি অফিস বন্ধ রয়েছে। আমাদের পুলিশ টহল অব্যাহত রয়েছে। এছাড়া, গত বুধবার সংঘর্ষের সময় আর্জেন্টিনার জার্সি গায়ে শটগান হাতে এক যুবকের ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়। ওই যুবকের ছবি ফেসবুকে শেয়ার করে অনেকেই তাকে ছাত্রলীগের নেতা বলে দাবি করেন। অবশেষে তার পরিচয় শনাক্ত করেছে পুলিশ। ডিএমপির ডিবি শাখার প্রধান অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, ওই যুবকের নাম মাহিদুর রহমান, তিনি আনসার সদস্য। তিনি পল্টন থানার অন্তর্ভুক্ত হয়ে দায়িত্ব পালন করছিলেন।
অন্যদিকে থানা ও আদালত সূত্রে জানা গেছে, পল্টন থানায় গতকাল বিএনপি নেতা রুহুল কবীর রিজভী, আমানউল্লাহ আমান, আ. ছালাম, শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, ফজলুল হক মিলন, খায়রুল কবীর খোকন, শামসুর রহমান ও শিমুল বিশ্বাসসহ ৪৭০ নামীয় ও ১৫০০-২০০০ অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের বিস্ফোরক দ্রব্য আইনের মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়। এছাড়া গতকাল মতিঝিল থানায় বিস্ফোরক আইনে ২৮ জন নামীয়, রমনা থানায় ১৬৪ নামীয় ও শাহজাহানপুর থানায় ৫২ নামীয় এবং ২০০-২৫০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করে মামলা হয়। পরে আদালতে নেয়া হলে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট তোফাজ্জল হোসেন শুনানি শেষে আমানুল্লাহ আমান ও কার্যনির্বাহী সদস্য আব্দুল কাদের ভূঁইয়া জুয়েলকে জামিন দেন। এছাড়া বিএনপির সহ-জলবায়ু সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল, সহসাংগঠনিক সম্পাদক সেলিমুজ্জামান সেলিম, ঢাকা জেলা বিএনপির সভাপতি খন্দকার আবু আশফাক, বিএনপি নেতা শাহজাহান, এ কে এম আমিনুল ইসলাম, ওয়াকিল আহমেদ, সজীব ভূঁইয়া, সারোয়ার হোসেন শেখ, সাইদুল ইকবাল মাহমুদ, মিজানুর রহমান, আল-আমিন, সাইফুল, শুভ ফরাজি ও মাহমুদ হাসান রনিকে রিমান্ডে নেয়ার নির্দেশ দেন। আর কারাগারে পাঠানো হয় বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবীর খোকন, বিএনপির প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস ও গাজীপুর জেলা বিএনপির সভাপতি ফজলুল হক মিলনসহ বাকি আসামিদের।
গত বুধবার সংঘর্ষের সময় আহত পুলিশ সদস্যদের দেখতে গতকাল রাজারবাগ কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালে যান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। এ সময় আরো উপস্থিত ছিলেন আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন ও ডিএমপি কমিশনারসহ পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
আহত পুলিশ সদস্যদের দেখে এসে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, বিএনপি বিভিন্ন বিভাগে সমাবেশ করেছে, নানা কথা বলেছে, সমালোচনা করেছে, আমরা কিছুই বলিনি। কোথাও আমরা বাধা দেইনি। বড় বড় সমাবেশ করেই তারা মন খুলে কথা বলেছে। ঢাকায় এসেই তারা বলছেন বিশাল সমাবেশ করবেন। নানাভাবে খবর আসছিল ২৫ লাখ লোকের সমাবেশ করবেন। তারা প্রথমে চেয়েছেন সোহরাওয়ার্দী উদ্যান। অফিসের সামনে বা সংসদ ভবনের সামনে। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে তখন দেয়া সম্ভব হচ্ছিল না ছাত্রলীগের সমাবেশের কারণে। সংসদ ভবনের সামনে কাউকে অনুমতি দেয়া হয় না। প্রধানমন্ত্রীর অনুরোধে ছাত্রলীগের সমাবেশ ৮-৬ ডিসেম্বর আনা হয়। ডিএমপি কমিশনার অনুমতি দেন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে। কিন্তু তারা পল্টনেই করবেন। আমরা বিকল্প স্থানের কথা বললাম। কালশী, পূর্বাচলে। কিন্তু তারা পল্টনেই করবেন। এর মধ্যেই হঠাৎ গত বুধবার শুনলাম পুলিশের ওপরে ঢিল, ইটপাটকেল, ককটেল বিস্ফোরণ, আক্রমণ করেছে। পুলিশ পরিস্থিতি মোকাবিলা করেছে। প্রাথমিকভাবে ৪৯ জন আহত হয়ে রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। সিরিয়াস কয়েকজন ঢামেক হাসপাতালে আছেন। রাজারবাগ হাসপাতালে একজনের ৪২টা সেলাই দিতে হয়েছে। অনেকের শরীরে মারধর ও আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। বেশির ভাগই হাতবোমার স্পিøন্টারে আহত হয়েছেন। এভাবেই তারা পুলিশ বাহিনীকে আহত করেছে। পুলিশ বাহিনী থেমে যায়নি। টিয়ারশেল, রাবার বুলেট মেরেছে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বিএনপি পার্টি অফিসে অনেক চালের মজুত, পানির মজুত ছিল। চিনি-ডালের মজুদ ছিল, ১৫টি অবিস্ফোরিত হাত বোমা ছিল। ছুরি-কাঁচি ছিল। ডেকে ডেকে খিচুড়ি ছিল। এগুলো আনার পেছনে আনার কারণ কী তা আমরা জানি। বড় জমায়েত হলে এমন হয়। কিন্তু আমরা এখন শুনছি তারা এখানে সমাবেশ করতে এসে বসে পড়ার পরিকল্পনা হিসেবে এসব রসদ এনেছিল। এমন পরিস্থিতিতে অ্যাকশনে গেছে পুলিশ। তারা যেভাবে মার খাচ্ছিল, এছাড়া কোনো উপায় ছিল না।
এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, ছবি আমরা দেখেছি। পুলিশ হামলা করেনি, তল্লাশি করেছে। ভাঙচুর হতে পারে, সমর্থকরা নিশ্চয়ই ধাক্কা দিয়েছে। সেক্ষেত্রে পরিস্থিতি হয়ত সেরকম হতে পারে। বিএনপি অভিযোগ করেছে পুলিশ ব্যাগে করে বিএনপি কার্যালয়ে ককটেল নিয়ে গেছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমাদের যেসব পুলিশ আহত হয়েছে তাদের দেখে আসুন, তারা কি নিজেরা নিজেরা ককটেলে আহত হয়েছে? তারা মার খেয়েছে, ককটেলের হামলার শিকার হয়েছে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, পরিস্থিতি নাজুক হয়েছে সেটা আমরা মনে করি না। পরিস্থিতি সব সময় আমাদের নিয়ন্ত্রণে আছে। তাদের শুভবুদ্ধির উদয় হোক, একঘেয়েমি ছেড়ে হয় তারা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আসুক, বিরাট সমাবেশ করুক, আমরাও দেখি, দেশবাসীও দেখবে; নয়তো তারা কালশী মাঠে যাক। এরপরও আলোচনা হতে পারে। তারা আসুক ডিএমপি কমিশনারের সঙ্গে বসুক।
এদিকে র‌্যাবের লিগ্যাল এন্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন গতকাল জানান, ১০ ডিসেম্বরের বিএনপির দলীয় মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে রাজধানীতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করতে সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানে রয়েছে র‌্যাব। যে কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা, নাশকতা রোধ ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে র‌্যাব ফোর্সেস এর গোয়েন্দা নজরদারি জোরদার করা হয়েছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়