ট্রাকের ধাক্কা : নটর ডেম শিক্ষার্থী নিহতের মামলার চার্জশিট গ্রহণ

আগের সংবাদ

নেতাকর্মীদের প্রতি শেখ হাসিনার নির্দেশ : যে হাত মারতে আসবে সে হাত ভেঙে দিতে হবে > আঘাত এলে পাল্টা আঘাত

পরের সংবাদ

শ্যামলী পরিবহনের এমডিকে ভর্ৎসনা হাইকোর্টের : পরিবহন মালিকরা সড়কে যা ইচ্ছা তা-ই করছেন

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ৮, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: ডিসেম্বর ৮, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : শ্যামলী এন আর পরিবহনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) শুভংকর ঘোষ রাকেশকে ভর্ৎসনা করে হাইকোর্ট বলেছেন, আপনারা (পরিবহন মালিক) আইন বাস্তবায়ন করতে দিচ্ছেন না। সড়কে যা ইচ্ছা তা-ই করছেন। আর কত? টাকা লুট করছেন। আপনারা মানুষের পর্যায়ে নেই। অ্যাম্বুলেন্সে করে স্ত্রীর মরদেহ নিয়ে বাড়ি ফেরার পথে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত সবজি বিক্রেতা আয়নালের পরিবারের সদস্য ও আহতদের ক্ষতিপূরণ বিষয়ে শুনানিতে বিচারপতি কে এম কামরুল কাদের ও বিচারপতি মোহাম্মদ আলীর হাইকোর্ট বেঞ্চ গতকাল বুধবার এ মন্তব্য করেন।
আদালতের তলবে হাজির হওয়া শুভংকর ঘোষ রাকেশকে এদিন ডায়াসের সামনে ডাকেন সিনিয়র বিচারপতি কে এম কামরুল কাদের। তার উদ্দেশে হাইকোর্ট বলেন, আপনাদের পরিবহন এক্সিডেন্ট করল অথচ আহতদের দেখতে গেলেন না, খোঁজখবরও নিলেন না। আসলে আপনারা মানুষের পর্যায়ে পড়েন না। আপনাদের মানবিকতা নেই। তারপর আদালতের নোটিস রিসিভ না করার কারণ জানতে চাইলে রাকেশ বলেন, ওই সময় দেশে ছিলাম না। আমরা জানতাম না। কথা শুনে আদালত অবাক হন। বলেন, এটা অবিশ্বাস্য। আপনাদের গাড়ির ড্রাইভারের দোষ। তার কারণে এক্সিডেন্ট হয়েছে। তখন গাড়ির মালিক বলেন, গাড়ির ড্রাইভার তো পলাতক। আদালত জানতে চাইলেন, আহতদের খোঁজখবর নিয়েছেন? তাদের চিকিৎসার জন্য কোনো খরচ দিয়েছেন? কোনো খরচ দেননি। তখন আদালত বলেন, আপনারা মানুষের পর্যায়ে পড়েন না। মানবিক হোন। মানুষ হওয়ার চেষ্টা করুন। একইসঙ্গে এনা পরিবহনের প্রসঙ্গ তুলে এনে হাইকোর্ট বলেন, এনা পরিবহন যখন রাস্তায় চলে কাউকে পরোয়া করে না। যত্রতত্র গাড়ি চালায়। নিজেদের অভিজ্ঞতা থেকে বলছি। পরিবহন মালিকরা এত ক্ষমতাশালী? কোনো ব্যক্তি মারা গেল, কে আহত হলো তা দেখার সময় নেই। পুলিশও আপনাদের নাগাল পায় না। আপনার ড্রাইভারের কারণে এত মানুষ মারা গেলেন, আহত হলেন। অথচ একটু দেখারও সময় পেলেন না। আপনাদের এত ক্ষমতা- যা ইচ্ছা তা-ই করেন। মালিকরা মিলে দেশটাকে কি লুটেপুটে খেতে চান? শুনানির একপর্যায়ে বিচারক রিটকারীদের আইনজীবী শিশির মনির কাছে জানতে চান, তারা কি কোনো টাকা দিয়েছেন? আইনজীবী বলেন, না, মাই লর্ড, কোনো টাকা দেননি। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের ৩ সন্তান পঙ্গু হয়েছেন। পরে আদালত নিহতদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ ও আহতদের চিকিৎসার ব্যয়ের খরচ নির্ধারণ করে আহতদের দেয়ার জন্য উভয়পক্ষের আইনজীবীকে সমঝোতা করার নির্দেশ দেন। আগামী ১৪ ডিসেম্বর আবার হাজির হওয়ার নির্দেশ দেন। সেইসঙ্গে ১ সপ্তাহ পর এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করতে নির্দেশ দেন।
আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির। শ্যামলী এন আর পরিবহনের পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট তাজুল ইসলাম ও তারিকুল ইসলাম। বিআরটিএর পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট রাফিউল ইসলাম।
ঢাকার রূপনগরের সবজি বিক্রেতা আয়নাল হোসেন তার স্ত্রী ফিরোজা বেগমের মরদেহ অ্যাম্বুলেন্স করে গত ১৫ এপ্রিল গ্রামের বাড়ি ফিরছিলেন। বগুড়ার শেরপুরে ঢাকা-বগুড়া মহাসড়কের ঘোগা সেতুর পাশে ঢাকাগামী শ্যামলী পরিবহনের সঙ্গে অ্যাম্বুলেন্সের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। ঘটনাস্থলে আয়নাল হোসেনের মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় আহত হন আয়নাল হোসেনের ৩ ছেলে ফরিদ হোসেন (২০), ফরহাদ হোসেন (১৮) ও ফিরোজ হোসেন (২৯)। পরে অ্যাম্বুলেন্স চালক পিরোজপুর জেলার কাউখালী থানার বাসিন্দা দ্বীন ইসলামের (৪৫) মৃত্যু হয়।
এ ঘটনায় ক্ষতিপূরণ চেয়ে শ্যামলী পরিবহনের মালিককে আইনি নোটিস দেয়া হয় ও আলোচনা হয়। কিন্তু তারা এ বিষয়ে নির্বিকার ছিলেন। পরে বিষয়টি নিয়ে হাইকোর্টে রিট দায়ের করা হয়।
আদালত শুনানি নিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত রিটকারী ৭ জনকে ১ কোটি ৭১ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ কেন দেয়া হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন। সড়ক ও পরিবহন সচিব, আইন সচিব, বিআরটিএর চেয়ারম্যান ও শ্যামলী পরিবহনের ব্যবস্থাপনা পরিচালককে ২ সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয় এবং শ্যামলী পরিবহনের ব্যবস্থাপনা পরিচালকে তলব করা হয়। সেই আদেশে গতকাল তিনি হাজির হন।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়