ট্রাকের ধাক্কা : নটর ডেম শিক্ষার্থী নিহতের মামলার চার্জশিট গ্রহণ

আগের সংবাদ

নেতাকর্মীদের প্রতি শেখ হাসিনার নির্দেশ : যে হাত মারতে আসবে সে হাত ভেঙে দিতে হবে > আঘাত এলে পাল্টা আঘাত

পরের সংবাদ

কক্সবাজারের জনসভায় প্রধানমন্ত্রী : আগামীতেও নৌকায় ভোট চাই

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ৮, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: ডিসেম্বর ৮, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

** লাখো জনতা হাত তুলে ওয়াদা করলেন নৌকায় ভোট দেবেন ** যতক্ষণ ক্ষমতায় আছি আপনাদের ভালোমন্দ দেখার দায়িত্ব আমার **

কাগজ প্রতিবেদক (ঢাকা) ও কক্সবাজার প্রতিনিধি : আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ২০২৪ সালের জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে। সেই নির্বাচনেও আপনাদের কাছে নৌকা মার্কায় ভোট চাই। ২০১৮ সালে আপনারা নৌকায় ভোট দিয়েছেন বলেই আমরা কক্সবাজারের উন্নয়ন করেছি। পরপর তিনবার ক্ষমতায় আসতে পেরেছি। ২০০৯ সাল থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত ধারাবাহিকভাবে গণতান্ত্রিক পদ্ধতি আছে বলেই এদেশে উন্নয়ন হচ্ছে, বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছে। নৌকার আদলে গড়া মঞ্চে দাঁড়িয়ে দেয়া বক্তব্যে শেখ হাসিনা সমবেতদের উদ্দেশে প্রশ্ন করেন- আপনারা কি নৌকায় ভোট দেবেন? জনসভায় উপস্থিত লাখো মানুষ হাত তুলে তার কথায় সায় দেয়। তখন শেখ হাসিনা আবার বলেন, আপনারা হাত তুলে আবার বলেন, দেবেন আপনারা? উপস্থিত জনতা হাত তুলে তার কথায় সায় দিলে তিনি বলেন, আমি আপনাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই।
কক্সবাজারের শহীদ শেখ কামাল আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে গতকাল বুধবার বিকালে জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ফরিদুল ইসলাম চৌধুরীর সভাপতিত্বে জনসভা পরিচালনা করেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও কক্সবাজার পৌর মেয়র মুজিবুর রহমান। জনসভায় কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, এডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক, আব্দুর রহমান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, ধর্মবিষয়ক সম্পাদক সিরাজুল মোস্তফা, দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, উপপ্রচার সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন, যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শাম্স পরশ, স্থানীয় সংসদ সদস্য আশেক উল্লাহ রফিক, সাইমুম সরওয়ার কমল, জাফর আলম ও কানিজ ফাতেমাসহ জেলা ও উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতারা।
শেখ হাসিনা বলেন, আমি জাতির পিতার কন্যা। যতক্ষণ ক্ষমতায় আছি আপনাদের ভালোমন্দ দেখার দায়িত্ব আমার। যাদের জন্য আমার মা-বাবা-ভাইয়েরা জীবন দিয়েছেন, আমি তাদের কল্যাণে কাজ করছি। আমি আমার আপনজন হারিয়েছি, আপনাদের মাঝেই আমি আমার আপনজন খুঁজে পেয়েছি। মানুষের ভাগ্য উন্নয়নই আমার লক্ষ্য।
জনগণের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, রিক্ত আমি, নিঃস্ব আমি, দেবার কিছু নেই। আছে শুধু ভালোবাসা দিয়ে গেলাম তাই। আপনারা দোয়া করবেন। আমি আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের কাছে সব সময় দোয়া করি, আপনারা ভালো থাকেন, সুস্থ থাকুন, উন্নত জীবন পান, সেই কামনা করি।
দেশের মানুষের ভালোবাসা চেয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, আমি বাবা, মা ও ভাই সবাইকে হারিয়েছি। নতুন করে হারানোর কিছু নেই। আমার চাওয়া পাওয়ার কিছু নেই। হারানোর কষ্ট আমার চেয়ে কেউ ভালো বুঝবে না। আমি এদেশের মানুষের মাঝেই খুঁজে নেব প্রয়াত আত্মীয়স্বজনকে। আপনাদের কাছে বাবা, মায়ের স্নেহ, ভাইবোনের ভালোবাসা পাওয়ার আশা রাখি।

আপনারা আমার পরিবার। আপনারাই আমাকে আগলে রেখেছেন। একমাত্র চাওয়া, যতক্ষণ ক্ষমতায় থাকব দেশের মানুষের আহারের সংস্থান করা আমার কাজ। টিসিবির মাধ্যমে সস্তায় চাল, ডাল, তেল ও চিনি পাওয়ার ব্যবস্থা করেছি। দেশের একজন মানুষও অভুক্ত থাকবে না।
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, যে গ্রেনেড যুদ্ধের মাঠে ব্যবহার করা হয় সে গ্রেনেড মারা হয়েছিল আমার ওপর। আমাদের আইভি রহমানসহ অনেকে মারা গেছে। আল্লাহর রহমতে আমি সেদিন বেঁচে গিয়েছিলাম। ধ্বংস ছাড়া বিএনপি-জামায়াত কিছু পারে না। ৭৫ এর পর এরা ২১ বছর ক্ষমতায় ছিল। এরা কী দিয়েছে বাংলাদেশকে? জিয়া সরকার তো কিছুই দিতে পারেনি।
শেখ হাসিনা বলেন, জামায়াত-বিএনপি মানুষ খুন, মানিলন্ডারিং, বোমাবাজি ছাড়া দেশকে কিছুই দেয়নি। খালেদা জিয়া এতিমের টাকা মেরে দিয়েছে। তার কারাদণ্ড হয়েছে। তারেক রহমানেরও কারাদণ্ড হয়েছে। মানুষের সমস্যা আমরা জানি, আমরা সে অনুযায়ী কাজ করছি। আমার বাবা যখন জেল থেকে বের হতেন তখন আমাদের নিয়ে কক্সবাজারে আসতেন। আমরা এখানে ব্যাপক উন্নয়ন করেছি। এতই উন্নয়ন করেছি একসময় দেখবেন এই মহেশখালী সিঙ্গাপুরের চেয়ে সুন্দর হবে। কুতুবদিয়া ও মহেশখালীতে আরো দুটি অর্থনৈতিক অঞ্চল করে দেব।
তিনি বলেন, বাবা-মা সব হারিয়ে বাংলাদেশের মানুষের জন্য কাজ করছি। যে কারণে আমার বাবা সংগ্রাম করেছেন আমি সেই লক্ষ্যে আমি কাজ করে যাচ্ছি। কক্সবাজারের মানুষকে ধন্যবাদ, আপনারা ২০১৮ সালে আমাদের প্রার্থীদের ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করেছেন। এই কক্সবাজারের উন্নয়ন জিয়া, এরশাদ ও খালেদা কেউই করেনি। আমরা যখন থেকে ক্ষমতায় এসেছি তখন থেকে এই কক্সবাজারের উন্নয়ন করেছি। আজকেও ২৯টি প্রকল্প উদ্বোধন করেছি। এগুলো আপনাদের জন্য আমার উপহার।
এদিকে শেখ হাসিনার জনসভা দুপুরে শুরু হওয়ার কথা থাকলেও ভোরের আলো ফোটার সঙ্গে সঙ্গে জনসভাস্থলে আসতে শুরু করে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। কক্সবাজার জেলার বিভিন্ন এলাকার পাশাপাশি প্রত্যেক উপজেলা থেকেও মিছিল নিয়ে আসেন নেতাকর্মীরা। তাদের মিছিল-স্লোগানে মুখর হয়ে ওঠে সমুদ্র নগরীর সড়ক-মহাসড়ক।
বিকাল ৪টায় প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা মঞ্চে উপস্থিত হন। প্রধানমন্ত্রী মঞ্চে পৌঁছালে মাঠে উপস্থিত হাজার হাজার নেতাকর্মী করতালি দিয়ে তাকে স্বাগত জানান। এ সময় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের উৎফুল্ল দেখা যায়। বিভিন্ন রংয়ের ক্যাপ, গেঞ্জি পড়ে বাদ্যযন্ত্র বাজিয়ে নেতাকর্মীরা সমাবেশস্থলে উপস্থিত হন। আওয়ামী লীগ প্রধানকে স্বাগত জানাতে গোটা শহরকে রঙিন সাজে সজ্জিত করা হয়। আওয়ামী লীগ নেতারা জানান, সাধারণত মানুষ পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে কক্সবাজারে আসে। কিন্তু আজ জেলাটির বিভিন্ন এলাকার মানুষ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সামনে থেকে দেখতে ও তার বক্তৃতা শুনতে এই জনসভায় এসেছে।
কক্সবাজারে ২৯ প্রকল্প উদ্বোধন : এদিকে জনসভায় কক্সবাজারে ২৯টি প্রকল্পের উদ্বোধন ও চারটি নতুন প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিকাল ৩টা ৫০ মিনিটে কক্সবাজারের শহীদ শেখ কামাল আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে আয়োজিত আওয়ামী লীগের জনসভায় সুইচ টিপে তিনি এই প্রকল্পগুলোর উদ্বোধন করেন। ২৯টি প্রকল্পে ব্যয় হবে ১ হাজার ৩৯৩ কোটি টাকা। ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা চারটি প্রকল্পে ব্যয় হবে ৫৭২ কোটি টাকা।
উদ্বোধন করা প্রকল্পগুলোর মধ্যে রয়েছে- কক্সবাজার গণপূর্ত উদ্যান, বাহারছড়া বীর মুক্তিযোদ্ধা মাঠ, কুতুবদিয়া ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স ভবন, পেকুয়া উপজেলা ভূমি অফিস ভবন, কক্সবাজার জেলা পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয় ভবন, শেখ হাসিনা জোয়ারিয়ানালা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের চারতলা একাডেমিক ভবন, আবদুল মাবুদ চৌধুরী উচ্চ বিদ্যালয়ের চারতলা একাডেমিক ভবন, মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের চারতলা একাডেমিক ভবন, কক্সবাজার জেলার লিংক রোড-লাবনী মোড় সড়ক চার লেনে উন্নীতকরণ প্রকল্প, রামু-ফতেখাঁরকুল-মরিচ্যা জাতীয় মহাসড়ক যথাযথ মান ও প্রশস্ততায় উন্নীতকরণ প্রকল্প, টেকনাফ-শাহপরীর দ্বীপ জেলা মহাসড়কের হাড়িয়াখালী থেকে শাহপরীর দ্বীপ অংশ পুনর্নির্মাণ প্রশস্তকরণ এবং শক্তিশালীকরণ প্রকল্প, বাঁকখালী নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ নিষ্কাশন সেচ ও ড্রেজিং প্রকল্প (১ম পর্যায়), শাহপরীর দ্বীপে সি ডাইক অংশে বাঁধ পুনর্নির্মাণ ও প্রতিরক্ষা কাজ, ক্ষতিগ্রস্ত পোল্ডারসমূহের পুনর্বাসন প্রকল্প, রামু কলঘর বাজার-রাজারকুল ইউপি সড়কে বাঁকখালী নদীর ওপর ৩৯৯ মিটার দীর্ঘ সংসদ সদস্য ও রাষ্ট্রদূত ওসমান সরওয়ার আলম চৌধুরী সেতু, কক্সবাজার জেলায় নবনির্মিত ছয়টি ইউনিয়ন ভূমি অফিস ভবন, চারটি উপজেলা পরিষদ কমপ্লেক্স ভবন (রামু, টেকনাফ, মহেশখালী ও উখিয়া), কক্সবাজার পৌরসভার এয়ারপোর্ট রোড আরসিসিকরণ ও অন্যান্য প্রকল্প, শহীদ সরণি আরসিসিকরণ ও অন্যান্য প্রকল্প, বীর শ্রেষ্ঠ রুহুল আমিন স্টেডিয়াম সড়ক আরসিসিকরণ ও অন্যান্য প্রকল্প, নাজিরারটেক শুঁটকি মহাল সড়ক আরসিসিকরণ ও অন্যান্য প্রকল্প, টেকপাড়া সড়ক আরসিসিকরণ ও অন্যান্য প্রকল্প, সি বিচ রোড আরসিসিকরণ ও অন্যান্য প্রকল্প, মুক্তিযোদ্ধা সরণি আরসিসিকরণ ও অন্যান্য প্রকল্প, সৈকত-সরণ আবাসিক এলাকা সড়ক আরসিসিকরণ ও অন্যান্য প্রকল্প।
ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের জন্য প্রস্তুত চার প্রকল্প হলো বাংলাদেশ ওশানোগ্রাফিক রিসার্চ ইনস্টিটিউট (২য় পর্যায়) শীর্ষক প্রকল্প, কুতুবদিয়া উপজেলার ধুরুং জিসি মিরাখালী সড়কে ধুরুংঘাটে ১৫৩ দশমিক ২৫ মিটার জেটি ও আকবর বলি ঘাটে ১৫৩ দশমিক ২৫ মিটার জেটি নির্মাণ প্রকল্প, মহেশখালী উপজেলার মহেশখালী গোরকঘাটা ঘাটে জেটি নির্মাণ প্রকল্প এবং বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্ত নিরাপত্তা উন্নত করার জন্য উখিয়া- টেকনাফ উপজেলায় নাফ নদ বরাবর পোল্ডারসমূহের পুনর্বাসন প্রকল্প।
এর আগে, সকাল সাড়ে ১০টায় ঢাকা থেকে হেলিকপ্টারযোগে কক্সবাজারের ইনানীতে পৌঁছান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ইনানি সমুদ্র সৈকত থেকে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশে নৌবাহিনী আয়োজিত বাংলাদেশসহ বিশ্বের ২৮ দেশের নৌবাহিনী ও মেরিটাইম সংস্থার অংশগ্রহণে চার দিনব্যাপী ইন্টারন্যাশনাল ফ্লিট রিভিউ (আইএফআর)-২০২২ এর উদ্বোধন করেন তিনি। সন্ধ্যায় শেখ হাসিনা হেলিকপ্টারে ঢাকায় ফেরেন।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়