দৈনিক বাংলার মোড় থেকে অজ্ঞাত ব্যক্তির লাশ উদ্ধার

আগের সংবাদ

কক্সবাজারের জনসভায় প্রধানমন্ত্রী : আগামীতেও নৌকায় ভোট চাই

পরের সংবাদ

হানাদার বাহিনীর সামনে শুধু আত্মসমর্পণের পথটিই খোলা

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ৭, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: ডিসেম্বর ৭, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

ঝর্ণা মনি : ডেডলাইন ৭ ডিসেম্বর, একাত্তর। মুজিবনগর সরকারের ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম বেতার ভাষণে বলেন, ‘ঢাকা হানাদার মুক্ত হতে আর সময়ের প্রয়োজন হবে না। খুব শিগগির ঢাকা মুক্তিবাহিনীর দখলে আসবে। বাংলাদেশ এখন দিবালোকের মতোই সত্য। আমাদের প্রাণের নেতা বঙ্গবন্ধুও খুব শিগগির বাংলার বুকে ফিরে আসবেন।’ আর ভারতীয় সময় রাত ১০টায় রেডিও আকাশবাণী থেকে হিন্দি, উর্দু ও পশতু ভাষায় ভারতীয় সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল মানেকশ পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকে আত্মসমর্পণের আহ্বান জানিয়ে বলেন, পাকিস্তানি সেনাদের বাঁচার কোনো পথ নেই। মুক্তিবাহিনী ও ভারতীয় বাহিনী বাংলাদেশকে মুক্ত করার জন্য চারদিক থেকে ঘিরে রেখেছে। পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী এ দেশের মানুষের ওপর যে পৈশাচিক নির্যাতন চালিয়েছে তার প্রতিশোধ নেয়ার জন্য তারা প্রস্তুত হচ্ছে। এখন পাকিস্তানি বাহিনীর সামনে একটি মাত্র পথ খোলা রয়েছে। সেটি হলো আত্মসমর্পণ করা। পরদিন ৮ ডিসেম্বর ফলাও করে এসব প্রতিবেদন প্রকাশ করে ভারতীয় দৈনিক আনন্দবাজার।
ওইদিন যুদ্ধ পরিস্থিতির বিবরণ দিয়ে রাওয়ালপিন্ডি হেড কোয়ার্টারে পাঠানো জেনারেল নিয়াজির গোপন বার্তায় বলা হয়েছিল, উত্তাল রণাঙ্গণে তখন কোণঠাসা হয়ে পড়েছে পাকিস্তানি বাহিনী। ভুটান ও ভারতের স্বীকৃতি এবং মুক্তিবাহিনীর সঙ্গে ভারতীয় বাহিনীর সংযোজনে মিত্র বাহিনীর আক্রমণে হানাদার বাহিনী দিশাহারা। পাকিস্তানিদের পরাজয় কেবলই সময়ের ব্যাপার। রিপোর্টে নিয়াজি আরো উল্লেখ করেন, সৈন্যরা দিনাজপুর, রংপুর, সিলেট, মৌলভীবাজার, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, লাকসাম, চাঁদপুর ও যশোরে প্রবল চাপের মুখে রয়েছে। রাজাকারদের অস্ত্রসহ সটকে পড়ার সংখ্যা বাড়ছে। আমাদের নিজেদের ট্যাংক, ভারী কামান ও বিমান সমর্থন না থাকায় পরিস্থিতির দ্রুত অবনতি ঘটেছে। নিয়াজির গোপন বার্তা পেয়ে পাকিস্তান সরকারের মনোবল একেবারেই ভেঙে যায়। তারা কোনো না কোনোভাবে ?ঘুরে দাঁড়ানোর সুযোগ খুঁজতে থাকে। হেড কোয়ার্টার থেকে সম্মুখ সমরের সৈন্যদের পিছিয়ে এনে প্রতিরোধ ঘাঁটিতে সমবেত করার পরিকল্পনা অনুমোদন করা হয়। অন্যদিকে মুক্তিযোদ্ধাদের সংখ্যা বেড়ে গেছে। মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতিরোধ ক্ষমতাও বেড়েছে। তাদের মনোবলও তখন অনেক চাঙ্গা।
মুক্তিযুদ্ধ কভার করতে আসা ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের সাংবাদিক পিটার আর কান তার ‘ঢাকা ডায়েরি’তে লিখেন, ৭ ডিসেম্বর, মঙ্গলবার, বিকালে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালের ছাদ সাংবাদিক ও ফটোগ্রাফারে পরিপূর্ণ। একজন শান্তভাবে গণহত্যার কথা বললেন। গত নয় মাস বা তার কাছাকাছি সময়ে পাকিস্তান সেনাবাহিনী পাঁচ লাখ বাঙালিকে হত্যা করেছে। পূর্ব পাকিস্তান হয়ে উঠেছে স্পঞ্জের

মতো, সব ভোগান্তি শুষে নিচ্ছে।
যুদ্ধ বন্ধে আর্জেন্টিনার প্রস্তাব, সোভিয়েতের ভেটো : দৈনিক আনন্দবাজার (৮ ডিসেম্বর ’৭১) এবং দৈনিক যুগান্তর (৮ ডিসেম্বর ’৭১) এ প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, ৭ ডিসেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ ও নিরাপত্তা পরিষদে যুদ্ধ বন্ধে আর্জেন্টিনার দেয়া এক প্রস্তাব উত্থাপিত হয়। আর্জেন্টিনা প্রস্তাবে বলে, সংঘাত নিরসনে দুই দেশকেই আক্রমণাত্মক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে সরে আসতে হবে এবং অতিসত্বর সীমান্তে মোতায়েনকৃত সৈন্য সরাতে হবে। একই প্রস্তাব জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদেও তোলা হয়। আর্জেন্টিনার ওই প্রস্তাবে সরাসরি ভেটো দেয় সোভিয়েত ইউনিয়ন। ফলে যুদ্ধ বন্ধে আর্জেন্টিনার প্রস্তাব বাতিল হয়ে যায়। যদি সোভিয়েত ভেটো না দিত, তাহলে চীন ও আমেরিকা মিলে আর্জেন্টিনার প্রস্তাব পাস করাতো এবং জাতিসংঘ থেকে যুদ্ধ বন্ধের ঘোষণা আসত। তখন শেষমুহুর্তে এসে বাংলাদেশের পক্ষে যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়া কঠিন হয়ে পড়তো। ওইদিন মার্কিন সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্র এক বিবৃতিতে জানান, ভারতকে দেয়া অর্থনৈতিক সাহায্য বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
প্রতিরোধ যুদ্ধ : বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ : দলিলপত্র পঞ্চম, একাদশ দ্বাদশ ও ত্রয়োদশ খণ্ড থেকে জানা গেছে, ৭ ডিসেম্বর কুমিল্লায় মুক্তিযোদ্ধাদের ৩টি দল বিবির বাজার, ভাটপাড়া এবং বাঘেরচর দিয়ে এসে কুমিল্লা বিমানবন্দরের হানাদার ঘাঁটিতে ত্রিমুখী আক্রমণ চালায়। সিলেটে মেজর শাফায়াত জামিলের নেতৃত্বে ৩য় বেঙ্গলের দুটি কোম্পানি ও ডাউকি সাব- সেক্টর ট্রুপসসহ রাধানগর নিয়ন্ত্রণে এনে গোয়াইনঘাট হয়ে সিলেট বিমানবন্দরের দিকে অগ্রসর হন। ভোরে সিলেট বিমানবন্দরে ছত্রীসেনা অবতরণ করায় ভারতীয় মিত্রবাহিনী হানাদারমুক্ত হয় সিলেট বিমানবন্দর ও আশপাশের এলাকা। ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় শাহবাজপুর, ময়মনসিংহের ভালুকা, কুড়িগ্রাম, নোয়াখালী, গোপালগঞ্জ, শেরপুর, চুয়াডাঙ্গা, মোংলা ও সুন্দরবনের বিশাল এলাকা হানাদার মুক্ত হয়।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়