দৈনিক বাংলার মোড় থেকে অজ্ঞাত ব্যক্তির লাশ উদ্ধার

আগের সংবাদ

কক্সবাজারের জনসভায় প্রধানমন্ত্রী : আগামীতেও নৌকায় ভোট চাই

পরের সংবাদ

শিক্ষকদের বিভাগীয় প্রার্থী হিসেবে বদলি প্রথা

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ৭, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: ডিসেম্বর ৭, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

সাজু মিয়ার বাড়ি পঞ্চগড়ে, শিক্ষকতা করেন কুমিল্লার প্রত্যন্ত অঞ্চলের একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে। সে প্রতিষ্ঠান প্রধানের স্ত্রী সভাপতি। বাড়ি যেতে-আসতেই তিন দিন লাগে। তিনি বিয়ের জন্য ছুটি চাইলে প্রতিষ্ঠান প্রধান ৩ দিনের ছুটি দিয়েছিলেন। ৭ দিন পর স্কুলে এলে স্বামী-স্ত্রী মিলে শোকজ করে সাজু মিয়ার বেতন আটকে দিয়েছেন। তিন মাস পর মূল বেতন পেলেও স্থানীয় বেতন তিনি পাননি। দুই. রঞ্জু মিয়ার বাড়ি গাইবান্ধা, শিক্ষকতা করেন টেকনাফে। তিনি মা-বাবার একমাত্র সন্তান। বাবা বেঁচে নেই, মা ক্যান্সারের রোগী। নিয়মিত থেরাপি দিতে হচ্ছে। রঞ্জু মিয়ার স্ত্রীর পিত্তথলির পাথর অপারেশন করাতে হয়েছে। ছোট বাচ্চা দুটিরও জ্বর-সর্দি লেগেই আছে। বহুদূরে শিক্ষকতা করার কারণে সবকিছু সামাল দিতে গিয়ে বেহাল দশা তার। কোনো কূলকিনারা করতে পারছেন না। দুচোখে আঁধার দেখছেন তিনি। তিন. সহকারী শিক্ষক আহমেদ আলির বাড়ি কুড়িগ্রাম, শিক্ষকতা করেন চট্টগ্রামের স›দ্বীপে। বেতন পান মাত্র ১২ হাজার ৫০০ টাকা (ইবতেদায়ি শিক্ষকদের বেতন মাত্র ৯ হাজার ৩০০ টাকা)।
একবার বাড়ি যেতে-আসতে বেতনের অর্ধেক চলে যায়। এ অবস্থায় নিজে চলবেন কীভাবে বা বাবা-মায়ের সেবা করবেন কীভাবে? পরিবারের কেউ মারা গেলে শেষ দেখারও সুযোগ পান না তিনি।
নামগুলো রূপক হলেও এ রকম হাজার হাজার উদাহরণ আছে বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে। এখন কথা হলো বর্তমানে এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষক নিয়োগ দেয় এনটিআরসিএ, তাহলে তারা বদলি চালু করেন না কেন? বাংলাদেশের সব পেশায় বদলি থাকলে এমপিওভুক্ত ইন্ডেক্সধারী শিক্ষকদের বেলায় বদলি চালু করতে সমস্যা কোথায়?
আমরা বদলিপ্রত্যাশী শিক্ষকরা দীর্ঘদিন থেকে বদলির দাবিতে অনলাইনে ও মাঠে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছি। বদলিপ্রত্যাশী ৭১ জন শিক্ষক বদলির দাবিতে মহামান্য হাইকোর্টে রিট করেছিলাম ২০১৯ সালে। মহামান্য আদালতও বদলিপ্রত্যাশী শিক্ষকদের পক্ষেই রায় দিয়েছেন এবং তা এখন আপিল বিভাগের কার্যতালিকায় আছে নিষ্পত্তির অপেক্ষায়। যারা নিজ জেলা থেকে ৫০০-৮০০ কিলোমিটার দূরে শিক্ষকতা করছি তাদের কষ্টের কথা কেউ শোনে না, বদলির উদ্যোগ নিচ্ছেন না।
বর্তমানে দ্রব্যমূল্যের যা দাম তাতে কীভাবে সম্ভব এই স্বল্প বেতনে জীবন চালানো? তাছাড়া স্থানীয় শিক্ষকদের ও কমিটির সদস্যদের দ্বারা প্রায় সময়ই বাইরের শিক্ষকরা নির্যাতন, নিপীড়ন ও হয়রানির স্বীকার হচ্ছেন, বখাটেদের উৎপাত তো আছেই। শিক্ষা মন্ত্রণালয়, মাউশি, এনটিআরসিএ, কারিগরি ও মাদ্রাসা অধিদপ্তরে আমরা কয়েক দফা স্মারকলিপি দিয়ে বলেছিলাম- আগে ইন্ডেক্সধারী শিক্ষকদের বদলির ব্যবস্থা করুন। তখন আমাদের ছেড়ে যাওয়া পদ ও নিয়মিত শূন্যপদ সমন্বয় করে গণবিজ্ঞপ্তি দিন। তখন নিবন্ধিত সবাই শিক্ষক হওয়ার সুযোগ পাবেন। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক সংকট দূর হবে। মুক্তি পাবেন বদলিপ্রত্যাশী শিক্ষকরা। আসন্ন চতুর্থ গণবিজ্ঞপ্তিতে ৭০ হাজার শিক্ষক নিয়োগ হতে যাচ্ছে। বদলি চালু না করে চতুর্থ গণবিজ্ঞপ্তি কার্যকর হলে বদলিপ্রত্যাশীদের নিজ এলাকায় যাওয়া প্রায় অসম্ভব হয়ে যাবে। সে কারণে বিভাগীয় প্রার্থী হিসেবে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ইন্ডেক্সধারী শিক্ষকদের বদলি প্রথা চালু করা জরুরি।
বদলিপ্রত্যাশী ইন্ডেক্সধারী শিক্ষকগণকে বঞ্চিত করে শিক্ষার মানোন্নয়ন কতটুকু সফল হবে তা প্রশ্নসাপেক্ষ। সঙ্গত কারণেই আমরা বদলিপ্রত্যাশী শিক্ষকরা নিজ নিজ এলাকা বা কাছাকাছি দূরত্বে থেকে প্রশান্তচিত্তে নতুন শিক্ষাক্রমের বিশাল কর্মযজ্ঞে ঝাঁপিয়ে পড়তে চাই।

গৌতম কুমার
সভাপতি, বদলিপ্রত্যাশী এমপিওভুক্ত ইন্ডেক্সধারী শিক্ষক কমিটি-বদলি ৭১।
[email protected]

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়