দৈনিক বাংলার মোড় থেকে অজ্ঞাত ব্যক্তির লাশ উদ্ধার

আগের সংবাদ

কক্সবাজারের জনসভায় প্রধানমন্ত্রী : আগামীতেও নৌকায় ভোট চাই

পরের সংবাদ

বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী দিবস ও শিলচর-সিলেট উৎসব

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ৭, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: ডিসেম্বর ৭, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

ফারুক আহমদ, শিলচর (ভারত) থেকে ফিরে : বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী দিবস ছিল গতকাল মঙ্গলবার (৬ ডিসেম্বর)। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ শত্রæমুক্ত হওয়ার ১০ দিন আগে ৬ ডিসেম্বর ভারত বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়। ভারতের প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদি গত বছরের মার্চে মুজিববর্ষের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগদানের জন্য বাংলাদেশ সফরের সময়ই ৬ ডিসেম্বর মৈত্রী দিবস হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত হয়।
এদিকে, বাংলাদেশকে স্বাধীন ও সার্বভৌম জাতি হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ার ৫১তম বার্ষিকী উপলক্ষে ভারতীয় হাইকমিশনের পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা জানানো হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার ঢাকায় ভারতীয় হাইকমিশনের অফিশিয়াল টুইটার অ্যাকাউন্ট থেকে এ বার্তা জানানো হয়। ৬ ডিসেম্বর এখন আর শুধু বাংলাদেশকে ভারতের স্বীকৃতি প্রদানের দিনই নয়, এর ব্যাপ্তি ছড়িয়ে গেছে দুদেশের জনগণের মধ্যে ভালবাসা ও বন্ধুত্বের আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতিতে। এরই আলোকে স্বাধীনতা ও কূটনৈতিক সম্পর্কের সুবর্ণ জয়ন্তীতে গত বছর এই দিনে প্রথম বাংলাদেশ ও ভারত আনুষ্ঠানিকভাবে মৈত্রী দিবস পালন করেছে। এবারো বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে উভয়দেশে দিনটি পালিত হয়েছে। বাংলাদেশ ও ভারত দুটি ভিন্ন দেশ হলেও উভয় দেশের জনগণের সম্পর্ক অচ্ছেদ্য, ঐতিহাসিক এবং সাংস্কৃতিক বন্ধনে আবদ্ধ।
স¤প্রতি অনুষ্ঠিত শিলচর-সিলেট উৎসবের মাধ্যমে এ বন্ধন আরো সুদৃঢ় হয়েছে। কারণ উভয় দেশ চায়, আঞ্চলিক শান্তি, সৌহার্দ্য এবং স্থিতিশীলতা। তবে শুধু রাজনৈতিক স্তরে এই শান্তি প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়। এজন্য প্রতিটি মানুষকে এগিয়ে আসতে হবে। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, এই সম্মেলনের মাধ্যমে দুই দেশের সম্পর্ক আরো সুদৃঢ় হবে। নাড়ির সম্পর্ক হবে জোরদার। সব বাধাবিঘœ কাটিয়ে দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক আরো সুদৃঢ় হবে। কেননা, আমাদের ভাষা, সংস্কৃতি, কৃষ্টি, খাদ্যাভ্যাস এক। আমাদের পূর্বজদের শেকড়ও এই মাটির সঙ্গে সম্পৃক্ত।
আসামের কাছাড় জেলার শিলচর পুলিশ গ্রাউন্ডে ২ ও ৩ ডিসেম্বর আয়োজিত শিলচর-সিলেট উৎসবে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন। তিনি বলেন, এ উৎসব আমাদের অভিন্ন সংস্কৃতি, ভাষা, শিল্প-সাহিত্য, পারস্পরিক উন্নয়ন ও অগ্রগতি নিয়ে আলোচনা ও আমাদের অভিন্ন অর্জনগুলো উদযাপনের গুরুত্বপূর্ণ প্ল্যাটফর্ম হিসেবে কাজ করবে। নিয়মিত এ উৎসব আয়োজনের মাধ্যমে বাংলাদেশ-ভারতের বিদ্যমান বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক আরো সুদৃঢ় হবে।
ভারতের সঙ্গে বিশেষ করে উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশের বহুমাত্রিক সম্পর্কের কথা তুলে ধরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ভৌগলিকভাবে পাশাপাশি অবস্থান, ঐতিহাসিকভাবে ঘনিষ্ঠ সাংস্কৃতিক বন্ধন, ভাষা, শিল্প-সাহিত্য, রন্ধন ঐতিহ্য ও দ্বিপাক্ষিক অর্থনৈতিক সম্পর্কের মতো বহুবিধ কারণে দুদেশের সুসম্পর্ক পর্যায়ক্রমে আরো সুদৃঢ় হচ্ছে। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বের কারণে এবং সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে তার সরকারের জিরো টলারেন্স নীতি কার্যকরভাবে প্রয়োগের ফলে

ভারতের উত্তর-পূর্ব অঞ্চলে সার্বিক স্থিতিশীলতা ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে ব্যাপক অবদান রেখেছে যা ভারতীয় নেতৃত্বের দ্বারাও স্বীকৃত ও প্রশংসিত হয়েছে। আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে পারলে দুদেশের জনগণ উপকৃত হবে।
অনুষ্ঠানে অপর প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ভারত সরকারের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সংস্কৃতি, পর্যটন ও উন্নয়নবিষয়ক মন্ত্রী জি কিষাণ রেড্ডি, সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আসাম সরকারের পরিবহন, আবগারি ও মৎস্যমন্ত্রী পরিমল শুক্লাবাইদিয়া, সভাপতিত্ব করেন মিজোরামের গভর্নর কম্ভামপতি হরি বাবু।
প্রথমবারের মতো আয়োজিত শিলচর-সিলেট উৎসবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেনের নেতৃত্বে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদল অংশগ্রহণ করে। আসামের সঙ্গে ঢাকার সম্পর্কের যে নতুন দুয়ার খুলছে এটি তার প্রথম পদক্ষেপ বলেও জানান সংশ্লিষ্টরা।
উল্লেখ্য, একাত্তরে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী যখন পোড়ামাটি নীতি অবলম্বনের মাধ্যমে আজকের বাংলাদেশ নামক ভূখণ্ডে বাঙালি নিধনে মেতে ওঠে তখন ভারত সরকার, ভারতের জনগণ এবং ভারতীয় সেনাবাহিনী আমাদের বিপন্ন মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে এ বন্ধনকে স্থায়ী রূপ দেয়। সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে বাংলাদেশের স্বাধীনতার রক্তিম সূর্য ছিনিয়ে আনতে আমাদের বীর মুক্তিযোদ্ধাদের পাশাপাশি ভারতীয় সেনাবাহিনীর অসংখ্য সদস্য সেদিন প্রাণ বিসর্জন দিয়েছে। আর এই মহান আত্মত্যাগের মধ্য দিয়েই রক্তের আখরে রচিত হয়েছে বাংলাদেশ ও ভারত- দুদেশের মৈত্রীর বন্ধন, মানুষে মানুষে প্রীতি সৌহার্দ্য ও স¤প্রীতির বন্ধন।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়