ঢাকা কলেজে কমিটির দাবি : ছাত্রলীগ সভাপতির গাড়ি আটকে দিল বিক্ষুব্ধ নেতারা

আগের সংবাদ

প্রতিটি ব্যাংকেই টাকা আছে > ছাত্রলীগের সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী : বিএনপি-জামায়াত যেন ক্ষমতায় না আসতে পারে

পরের সংবাদ

জামাতুল শারক্বীয়ার ৫ সদস্য গ্রেপ্তার : পাহাড়ে জঙ্গি প্রশিক্ষণে সামগ্রী ও অর্থ সরবরাহ হতো যেভাবে

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ৬, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: ডিসেম্বর ৬, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : নতুন জঙ্গি সংগঠন জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ার ৫ সদস্যকে গ্রেপ্তারের পর র‌্যাব জানিয়েছে, সংগঠনের কার্যক্রম পরিচালনার জন্য তারা অভিনব পন্থা অবলম্বন করতেন। সংগঠনটির দাওয়াতি ও হিজরত করা সদস্যদের প্রশিক্ষণ ও তত্ত্বাবধান, পাহাড়ে প্রশিক্ষণ পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী, বোমা তৈরির সরঞ্জাম সরবরাহ থেকে শুরু করে সব ধরনের কাজেই তারা ভূমিকা রাখতেন। নতুন জঙ্গি সংগঠনের কার্যক্রম নিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অভিযান জোরদার করলে তারা আত্মগোপনে চলে যান। তবে সংগঠনের জ্যেষ্ঠ সদস্যদের নির্দেশনা অনুযায়ী নতুন সদস্য সংগ্রহ ও পাহাড়ে প্রশিক্ষণ সামগ্রী সরবরাহ অব্যাহত রাখেন।
নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও ও রাজধানীর গুলিস্তান থেকে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটেলিয়নের (র‌্যাব) হাতে গ্রেপ্তার এই ৫ সদস্য হলেন- সংগঠনটির অন্যতম হোতা শামিন মাহফুজের ভাতিজা সাকিব মাহমুদ, মো. গোলাম সারোয়ার, ফরহাদ হোসেন, মুরাদ হোসেন ও ওয়াসিকুর রহমান ওরফে নাঈম। তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে বিভিন্ন উগ্রবাদী বই ও লিফলেট, একটি রেজিস্টার এবং ব্যাগ। গতকাল সোমবার দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে এ উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে কথা বলেন র‌্যাবের লিগ্যাল এন্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন। তিনি বলেন, গ্রেপ্তার ৫ জন ২/৪ বছর আগে থেকেই নিকটাত্মীয়, বন্ধু ও স্থানীয় পরিচিত ব্যক্তির মাধ্যমে উগ্রবাদে অনুপ্রাণিত হয়ে সংগঠনের জ্যেষ্ঠ সদস্যদের মাধ্যমে তাত্ত্বিক, শারীরিক প্রশিক্ষণসহ বিভিন্ন বিষয়ে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন।
র‌্যাব কর্মকর্তা বলেন, গ্রেপ্তার গোলাম সারোয়ার স্থানীয় একটি মাদ্রাসা থেকে ফাজিল সম্পন্ন করেন। তিনি ল²ীপুরের রামগঞ্জে একটি মিষ্টির দোকানে চাকরি করতেন। এর আগে গ্রেপ্তার হওয়া নেয়ামত উল্লাহর মেয়ের স্বামী তিনি। শ্বশুরের মাধ্যমে ২ বছর আগে জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ার আদর্শে অনুপ্রাণিত হন গোলাম সারোয়ার। তথাকথিত হিজরতের উদ্দেশ্যে বের হওয়া তরুণদের কুমিল্লার বিভিন্ন সেইফ হাউসে রাখা ও পার্বত্য অঞ্চলে প্রশিক্ষণের উদ্দেশ্যে পাঠানো সংশ্লিষ্ট কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত ছিলেন তিনি। সংগঠনের দাওয়াতি কার্যক্রমের সঙ্গেও জড়িত ছিলেন। কুমিল্লা থেকে নিখোঁজ ৩ তরুণের (নেহাল, আসমানী ও নিলয়) ঘটনায় কুমিল্লার দৌলতগঞ্জ রেলস্টেশনের নিকটবর্তী সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গেছে, সারওয়ার তাদের কুমিল্লার দিকে নিয়ে যাচ্ছেন।
কমান্ডার মঈন বলেন, গ্রেপ্তার সাকিব মাহমুদ গাইবান্ধা থেকে মাধ্যমিক সম্পন্ন করেছেন ও একটি টেলিকম প্রতিষ্ঠানে মার্কেটিংয়ের কাজ করতেন। তিনি জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ার সুরা সদস্য, উপদেষ্টা ও প্রশিক্ষণের তত্ত্বাবধায়ক শামীম মাহফুজের আপন ভাতিজা। ৩ বছর আগে শামীম মাহফুজের মাধ্যমে তিনি এ সংগঠনে যোগ দেন। সাকিব মাহমুদ

গাইবান্ধা অঞ্চলে সংগঠনের দাওয়াতি কার্যক্রমে জড়িত ছিলেন। এ ছাড়াও তিনি শামীম মাহফুজের নির্দেশনায় গাইবান্ধা অঞ্চলে জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ার আদর্শে উদ্বুদ্ধ সদস্যদের দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে প্রশিক্ষণে পাঠানোর কার্যক্রমের সঙ্গেও জড়িত ছিলেন। তিনি সংগঠনের একজন সশস্ত্র প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সদস্য। গাইবান্ধায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একজন সদস্য ইসলাম ধর্ম নিয়ে কটূক্তি করায় সংগঠনের উচ্চ পর্যায়ের নির্দেশনায় তিনি তাকে হত্যার পরিকল্পনা করেন এবং তা বাস্তবায়নের জন্য আরো ৩-৪ জন সদস্যকে একত্রিত করেন। এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের আগেই সাকিব আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার হলেন। তার বিরুদ্ধে ২০২০ সালে গাইবান্ধা সদর থানায় একটি হত্যাচেষ্টা মামলা রয়েছে।
র‌্যাব কর্মকর্তা বলেন, গ্রেপ্তার ফরহাদ হোসেন ও মুরাদ হোসেন সহোদর। ফরহাদ স্থানীয় কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক সম্পন্ন করেন এবং মুরাদ মাধ্যমিক পর্যন্ত পড়াশোনা করেন। তারা সংগঠনটির সূরা সদস্য এবং অর্থ ও গণমাধ্যম শাখার প্রধান মোশারফ হোসেন ওরফে রাকিবের শ্যালক। ৩ বছর আগে মোশারফ হোসেনের মাধ্যমে তারা ওই সংগঠনের সঙ্গে জড়িত হন। তারা রাজধানীর গুলিস্তান এলাকায় সংগঠনের অর্থ দিয়ে ‘ট্রাস্ট টেলিকম’ নামে একটি মোবাইল এক্সেসরিজের দোকান পরিচালনা করতেন এবং দোকানের লভ্যাংশ সংগঠনের প্রশিক্ষণসহ অন্যান্য সাংগঠনিক কার্যক্রমে ব্যয় করতেন। এ ছাড়াও মুন্সীগঞ্জে তারা একটি গরু-ছাগলের খামার পরিচালনা করতেন। সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা বিভিন্ন সময়ে তাদের খামারে গিয়ে মিটিং করতেন বলে জানা যায়।
তিনি আরো বলেন, গ্রেপ্তার ওয়াসিকুর রহমান ওরফে নাঈম রাজধানীর একটি মাদ্রাসা থেকে হিফজ সম্পন্ন করেন। দুই বছর আগে তিনি জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ার আদর্শে অনুপ্রাণিত হন। তিনি রাজধানীর মগবাজার এলাকায় সংগঠনের অর্থ দিয়ে ‘ষোলআনা’ নামক একটি আতরের দোকান পরিচালনা করতেন এবং দোকানের লভ্যাংশ সংগঠনের প্রশিক্ষণসহ অন্যান্য সাংগঠনিক কার্যক্রমে ব্যয় করতেন। তিনি সংগঠনের দাওয়াতি কার্যক্রম ও পার্বত্য অঞ্চলে প্রশিক্ষণের জন্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী সরবরাহের কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। ফরহাদ ও মুরাদ পার্বত্য অঞ্চলে প্রশিক্ষণের জন্য প্রয়োজনীয় খাদ্য সামগ্রী, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি, বস্ত্র সামগ্রী ও বোমা তৈরির বিভিন্ন উপকরণ সংগ্রহ করে তা নাঈমের ‘ষোল আনা’ দোকানে পৌঁছে দিতেন। পরে তিনি বিভিন্ন মাধ্যমে তা পার্বত্য অঞ্চলে পৌঁছে দেয়ার ব্যবস্থা করতেন।
গত ২০ নভেম্বর পুরান ঢাকার আদালত প্রাঙ্গণ থেকে ছিনিয়ে নেয়া আনসার আল ইসলামের মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত দুই জঙ্গিকে উদ্ধারের বিষয়ে জানতে চাইলে এই র‌্যাব কর্মকর্তা বলেন, পালিয়ে যাওয়া জঙ্গিদের আইনের আওতায় আনতে র‌্যাবসহ অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও কাজ করছে। তাদের বিষয়ে র‌্যাবের কাছে বেশ কিছু তথ্য আছে। কারা কর্তৃপক্ষ ও গোয়েন্দা সংস্থা- সবাই মিলে সমন্বিত উদ্যোগ নিলে এধরনের ঘটনা রোধ করা যাবে। তবে, এ ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দায় এড়াতে পারে না।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়