রুশ নাগরিকত্ব পেলেন সেই স্নোডেন

আগের সংবাদ

দেশের অর্থনীতি নিয়ে গুজবে কান দেবেন না : প্রধানমন্ত্রী

পরের সংবাদ

ধূসর ছায়া বুকজুড়ে

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ৫, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: ডিসেম্বর ৫, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

দু-পা এগিয়ে গেলাম লবির দিকে। লবিতে তখন নৈঃশব্দের গাঢ় গোঙানি চলমান। এত নিশ্চুপ কেন লবিটা? কতদিন আসা হয় না এখানে! কেন জানি আমি থেমে থাকতে পারি না! থেমে থাকলে দম বন্ধ হয়ে আসে। আজ এতদিন পর দম ফেলতে এসে অস্তিত্বে খুঁজে পেলাম স্বস্তির স্পন্দন। রুহিতাকে বললাম, ড্যাশবোর্ডের ওপর থেকে সিগারেটের প্যাকেটটা নিয়ে আসতে! সে সিগারেটের প্যাকেট হাতে আমার পাশে এসে দাঁড়াল। বলল- এই নিন!
প্যাকেট থেকে একটা সিগারেট বের করে জ¦ালালাম। সিগারেটের ধোঁয়ায় রুহিতার তেমন কোনো প্রবলেম হয় না এখন আর। সে বেশ এনজয় করে। সিগারেট ফুঁকছি এক নাগাড়ে। ধোঁয়া গিলছি, ধোঁয়া ছাড়ছি। ঝাঁজ লাগছে কলিজায়।
আমি রুহিতার দিকে তাকিয়ে বললাম- তোমার দাঁতের মাড়ির পেইন কমেছে?
– কমেছে!
– ওষুধ খেয়েছ?
– জি, খেয়েছি!
– এক্সরে ফিল্মে তোমার দাঁতগুলো দেখে আঁতকে উঠেছিলাম।
– কেন?
– কী বীভৎস আর কী বিকট দেখাচ্ছিল!
ঠোঁট বের না করেই মৃদু হাসল রুহিতা।
– যাহ, কী যে বলেন না আপনি?
– একটা গান শোনাবে রুহিতা? কতকাল তোমার গান শুনি না!
– আমি তো এখন আর গান করি না! প্র্যাকটিসও নেই আগের মতো। জানেন না বোধ হয়?
– পারফেক্ট ইয়োর ভয়েস ফর সিং অ্যা সং। প্র্যাকটিসটা চালিয়ে গেলেও তো পারতে!
– সে আর হলো কই? আপনার সংসারের মাপজোক করতে করতেই তো গলা থেকে গান বিদায় নিয়েছে অভিমানে। আচ্ছা, আপনি আর কতদিন বাসায় থাকবেন?
– কেন, আজ হঠাৎ থাকাথাকির কথা বলছ যে?
– আপনি জার্নালিস্ট না! কখন, কোথায়, কোন দিকে যেতে হয়, তার কোনো টাইম টেবল আছে?
– তা অবশ্য ঠিকই বলেছ। তবে আপাতত পত্রিকা অফিস থেকে তেমন কোনো ডিরেকশন নেই।
– সন্ধ্যায় কি আমাকে একটু সময় দিতে পারবেন?
– কেন, কী হয়েছে তোমার?
– অনুপের হার্টের প্রবলেমটা বেড়েছে। হসপিটালে অ্যাডমিট করাতে হবে ওকে।
– কে বলল?
অ্যামি ফোন করেছিল। বলল- আপু, ছোট ভাইয়া হেবি ক্রিটিক্যাল কন্ডিশনে আছে। তোমরা এসো একবার!
কী যেন এক অদ্ভুত রকমের বেদনা, বুকভরা যান্ত্রিক কষ্টগুলো ছন্দপতন ঘটাতে থাকল আমাদের মাঝে। কোথায় যেন হারিয়ে যেতে থাকলাম দুজন! রুহিতা আমার সামনে দাঁড়িয়ে থাকলেও ওকে কেন জানি অপরিচিতা মনে হতে লাগল হুট করেই। বুঝলাম না ব্যাপারটা! সামনের দিকে তাকালাম। দেখলাম পানির ট্যাংকের ওপর অনেকগুলো টেরিস গজিয়েছে। ওদিকে তাকিয়ে আত্মপ্রত্যয়ী হতে চেয়েও পারলাম না কেউই। রুহিতা একটা চাপা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল। সেই দীর্ঘশ্বাসজুড়ে কেবলই বিষণ্নতার রংখসা ছায়া।
ওকে বললাম- তুমি এত টেন্সড কেন?
– কই, না তো! কফি করব আপনার জন্য?
– করবে? না, থাক। এখন না!
– বুঝতে পারছেন না কেন, কফি আর গল্প, গল্প আর সিগারেটে সময় আরো দিক বদলাবে দ্রুত।
– তাই বুঝি? দরকার নেই। তুমি এখন একটু রেস্ট নাও।
রুহিতা আমার গা ঘেঁষে দাঁড়াল। এ রকম একটা টেকসই সঙ্গই বোধ হয় বহু বছর বেঁচে থাকতে উৎসাহ জোগায়। সত্যি, এত বছর পর রুহিতার অমন স্পর্শ আমাকে ক্ষণে ক্ষণে নতুন করে প্রেমিক হতে বাধ্য করছিল। ওর হাত দুটো ধরে ইজি চেয়ারে বসিয়ে দিলাম।
বললাম- অনুপের জন্য খারাপ লাগছে খুব?
– না না, অতটা নয়!
রুহিতার কণ্ঠে জড়তা স্পষ্ট। কষ্টগুলোকে লুকাতেই বেশি ভালোবাসে সে। হাতের ওপর থুতনি রেখে রুহিতা বলল- আপনি কখনো নিয়ম ভেঙে ভাঙা প্ল্যাটফর্মে দাঁড়িয়ে ঘন অন্ধকারে জ্যোৎস্নাকে নিয়ে রিপোর্ট করেছেন? রেললাইনে কি কখনো নিঃসঙ্গ কাউকে আত্মহত্যা করতে দেখেছেন?
আমি বললাম- কী বলছ এসব রুহিতা?
– কেন, কবিতা! আপনি তো জানেন, মন খুব খারাপ থাকলে কবিতা আমার ভীষণ ভালো লাগে।
– হ্যাঁ, তা তো জানি।
– আপনি যখন আর্টিকেল কালেক্ট করতে দু-এক সপ্তাহের জন্য বাইরে যান, তখন তো আমি আমাকে খুঁজে ফিরি কবিতা কিংবা গানের পঙ্ক্তিজুড়ে। আমার নিজস্ব সত্তাটাকে বাঁচাতে নির্মেদ কোনো রাত্রিকে ভালোবেসে একা একা প্রতীক্ষায় থাকি আপনার ফিরে আসার। শূন্যতা যখন বুকটাকে খামচে কামড়ে রক্তাক্ত করে ফেলে, আমি তখনো আপনাকেই ধারণ করি মন ও মগজে।
আমি ভীষণ অবাক হয়ে রুহিতাকে দেখছি। এত গভীর ও পবিত্র আসক্তি আমার প্রতি ওর?
সে বলল- কী হলো, নিশ্চিহ্ন হয়ে গেলেন না কি?
– তা হব কেন?
– তাহলে কিছু বলছেন না যে?
– কী বলব?
রুহিতা হাসতে লাগল। কী পরিতৃপ্তির হাসি! বলল- বুঝলেন মনজু, পৃথিবীটা বড্ড মায়ার! এখানে চিরকাল থাকতে ইচ্ছে করে, একে অপরকে আঁকড়ে ভালোবাসাবাসি করতে সাধ জাগে, অঙ্গাঅঙ্গিভাবে জড়িয়ে চোখে চোখ রেখে হারাতে ইচ্ছে করে দুজন দুজনাতে।
আমি আবারো অবাক হলাম খুব। বললাম- কী হয়েছে তোমার রুহিতা?
– কী আবার হবে? মাঝে মাঝে মনে হয়… থেমে গেল সে!
– থামলে কেন? কী মনে হয়, বল!
– শুনবেন?
– হ্যাঁ, শুনব!
– মনে হয় পৃথিবীতে না আসাটাই ভালো ছিল।
ওর এই কথার অর্থ আমি বুঝিনি। আজ এত অভিমান কেন রুহিতার বুকে? সে কি তাহলে ভেতর থেকে কিছু খুঁজছে? রুহিতার মাঝে মধ্যেই হাই ব্লাড প্রেসার ওঠে। আজ নির্ঘাত ওর প্রেসার লিপিডের পরিমাণ বেড়ে যাবে। গত সপ্তাহে ডেন্টিস্টের কাছে নিয়ে গিয়েছিলাম ওকে। দাঁতের মাড়ির প্রচণ্ড ব্যথায় কাবু হয়ে গিয়েছিল। ওপিজি করার পর এখন বেটার ফিল করছে সে। ইজি চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়াল রুহিতা।
ওকে বললাম- গরম পানির থেরাপি দিয়েছ মাড়িতে?
– না।
– আজ একটু বেশিই ডেসপারেট হয়ে গেছ তুমি। ওরাল ওষুধে মাড়ির ব্যথা সম্পূর্ণ ভালো না হলে স্ট্রংলি সেনসিটিভ ইনজেকশনের কম্বাইন্ড ডোজ পুশ করতে হতো। বাট ইউ আর সো লাকি দ্যাট, ইউ আর ফিলিং বেটার বাই দ্য ওরাল মেডিসিন এন্ড হট-ওয়াটার থেরাপি।
রুহিতার সারা মুখ কেন জানি ঘামছিল!
– তুমি এত ঘামছ কেন?
– ঘামছি? ঝাঁই লেগে আছে মাথার মধ্যে। ঘাড়ের রগগুলোয় টান অনুভব করছি।
– প্রেসার উঠছে?
– বোধ হয়!
বেডরুমে নিয়ে গেলাম রুহিতাকে। ২০ মিলিগ্রামের একটা ওল্মেসিপ খাইয়ে বেডে শুইয়ে দিলাম ওকে।
এম মনজুরুল ইসলাম
শিবগঞ্জ, বগুড়া

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়