বিশ্বকাপ ফুটবল : ভিনদেশি পতাকা না উড়ানোর অঙ্গীকার

আগের সংবাদ

চট্টগ্রাম পলোগ্রাউন্ডের জনসমুদ্রে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা : ওয়াদা চাই, নৌকায় ভোট দেবেন > খুনির দল যেন ক্ষমতায় না আসে

পরের সংবাদ

রোবোফিশ কৃত্রিম হৃদপিণ্ডের : পথে আরেক ধাপ অগ্রগতি

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ৪, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: ডিসেম্বর ৪, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

প্রযুক্তির এই যুগে এখন চিকিৎসাবিজ্ঞানে আলাদা জায়গা করে নিচ্ছে রোবটিক্স। এক সময় কারখানায় উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য উদ্ভাবিত এই প্রযুক্তি ধীরে ধীরে জটিল রোগ নির্ণয় থেকে শুরু করে নিরাময়েও ব্যবহৃত হচ্ছে। রোবটিক্সের শুরু সম্পর্কে একটু বলা দরকার, এ জন্য ফিরে যেতে হবে ১৯৫০ সালের আমেরিকায়। সে সময়ে জর্জ ডিবল নামের একজন মার্কিন উদ্ভাবক ইউনিম্যাট নামের একটি রোবট উদ্ভাবন করেন। ইউনিম্যাট মূলত একটি বিশাল হাতের মতো যন্ত্র, যার মূল কাজ ছিল ভারী জিনিসপাতি এক স্থান থেকে আরেক স্থানে সরানো। চকিৎসাবিজ্ঞানের স্বার্থে নিউরো-মেট, মিনার্ভা, ঈশপ এবং জিউসের মতো রোবটিক সিস্টেম আবিষ্কৃত হয়। যা আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞানে রোবটিক্সকে এক অবিচ্ছেদ অঙ্গ হিসেবে রূপ দেয়।
চিকিৎসাবিজ্ঞানে রোবটিক্স প্রয়োগের শুরু থেকেই লক্ষ্য ছিল জটিল এবং সূ² অপারেশনগুলোকে রোবটের মাধ্যমে সম্পন্ন করা। এই অপারেশনগুলোতে সুনিপুণ এবং স্থির হাতের প্রয়োজন হয়। হাতের একটু কাঁপাকাঁপি বা একটি ভুল রোগীর জীবন বিপর্যয় ঘটাতে পারে। বিশেষ করে, হৃৎপিণ্ডের চিকিৎসার ক্ষেত্রে একটি ছোট ভুলও অনেক বড় বিপদ ডেকে আনতে পারে। ১৯৯০ এর দিকে বিজ্ঞানীরা হৃৎপিণ্ডের চিকিৎসার ক্ষেত্রে আবিষ্কার করেন একাধিক রোবট। তবে, ২০০০ সালের আগ পর্যন্ত এগুলো পরীক্ষাধীন পর্যায়েই ছিল। ২০০০ সালের পর চিকিৎসাক্ষেত্রে ব্যাপকভাবে রোবট ব্যবহার শুরু হয়। সিস্টেমগুলোর মধ্যে জিউস, ঈশপ, এবং দ্য ভিঞ্চি সার্জিক্যাল সিস্টেমই ছিল বহুল প্রচলিত। বিশেষত দ্য ভিঞ্চি সার্জিকাল সিস্টেম সবচেয়ে বহুল ব্যবহৃত এবং সমাদৃত রোবটে পরিণত হয়। এই সিস্টেমে একজন সার্জন কনসোলের সাহায্যে রোবটটিকে কন্ট্রোল করেন। সিস্টেমটি সার্জনের হাতের নড়া-চড়াকে যান্ত্রিক-রূপ দিয়ে সূ² থেকে সূ²তর কাটা-ছেঁড়া সম্পন্ন করতে পারে। এতে অপারেশনের ঝুঁকি এবং সময় অনেকাংশে হ্রাস পায়। কিন্তু, বিজ্ঞানের লক্ষ্যই থাকে সর্বদা নিজেকে ছাড়িয়ে যাওয়া। সে লক্ষ্যকে ধারণ করেই হাভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল বিজ্ঞানী উদ্ভাবন করলেন রোবোফিশ, তাদের মতে বিজ্ঞান এবং প্রকৃতির এক অসাধারণ যোগসূত্র এটি।
হার্ভাড বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীদের তৈরি এই বায়োহাইব্রিড রোবটটি মানুষের হৃদপিণ্ডে প্রবেশ করে স্পন্দন, অর্থাৎ হার্টবিত তৈরি করতে সক্ষম। মাত্র আধা ইঞ্চি লম্বা এই রোবটটি তৈরি করা হয়েছে জেব্রাফিশ নামের এক মাছের আদলে। রোবটটি মানুষের হৃৎপিণ্ডে প্রবেশ করে নিজের লেজের সাহায্যে কৃত্রিম স্পন্দন তৈরি করে। এই রোবট প্রস্তুত করা হয়েছে কার্ডোমাইসাইটিস নামের একদল বিশেষ কোষ ব্যবহার করে। কোষটি হৃৎপিণ্ডে স্পন্দন তৈরির কাজে নিয়োজিত থাকে, রোবোফিশ তৈরির জন্য কোষই সবচেয়ে উপযুক্ত। রোবোফিশটি তৈরিতে আরও ব্যবহার করা হয়েছে কাগজ এবং প্লাস্টিক। মাছরূপী রোবটটির পাখনা প্লাস্টিকের এবং মূল কাঠামো কাগজের তৈরি। মাছটির লেজের দুপাশে একজোড়া করে কার্ডোমাইসাইটিস কোষ লাগানো থাকে। প্রথমে রোবটটির একপাশের কোষ সংকুচিত হয় এবং সংকোচনের ফলে আরেকদিকের কোষ প্রসারিত হয়। এই প্রসারণের ফলে একটি বিশেষ প্রোটিন নিঃসৃত হয় যার কারণে সংকোচন-প্রসারণ ঘটে। এই সংকোচন প্রসারণ প্রক্রিয়া চলমান থাকে এবং এর ফলে রোবোফিশটি কোনো প্রকার মানুষের সাহায্য ছাড়াই হৃৎপিণ্ডের মাঝে স্বয়ংক্রিয়ভাবে চলতে সক্ষম হয়। এই প্রক্রিয়াকে ক্লোজড লুপ সিস্টেম বলা হয় এবং রোবোফিশটি এই প্রক্রিয়ার সাহায্যে ১০০ দিন পর্যন্ত কোন প্রকার মানবসাহায্য ছাড়া চলতে সক্ষম হয়।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়