স্বাস্থ্যমন্ত্রী : বিদেশফেরত কর্মীদের এইচআইভি পরীক্ষা করতে হবে

আগের সংবাদ

প্রধানমন্ত্রীকে বরণে প্রস্তুত চট্টগ্রাম : নিñিদ্র নিরাপত্তা, সাজসজ্জা ও প্রচারণা সম্পন্ন

পরের সংবাদ

‘স্বাচ্ছন্দ্যবোধের জায়গাটা ওয়েবে তৈরি হয়েছে’

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ৩, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: ডিসেম্বর ৩, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

প্রায় এক যুগের বেশি সময় ধরে অভিনয়ের সঙ্গে নাজিয়া হক অর্ষার নিত্য আসা-যাওয়া। সমসাময়িক কাজ ও ব্যক্তিজীবনের নানা অভিজ্ঞতা নিয়ে তার সঙ্গে কথা বলেছেন নোমিয়ান লিও

ওয়েব সিনেমায় আপনি বেশ নিয়মিত। এ বিষয়ে একটু বলবেন কি?
হ্যাঁ, এটা সত্যি কথা। গত দুই বছর ধরে টেলিভিশন প্রোডাকশনে কাজ করা কমিয়ে দিয়েছি। এখন একটু ওয়েবেই কাজ বেশি করা হচ্ছে।
কারণটা কী?
কারণটা তো আপনি কম-বেশি জানেন। একদমই খোলাসা করে বলার মতো তেমন কিছু নেই। ভালো গল্প, যে চরিত্রে অভিনয় করব সেটা নিয়ে ভাবতে পারছি। প্রতিটি প্রোডাকশনের আগে তিন-চার মাস প্রিপারেশনের একটা টাইম থাকে। টিমের সঙ্গে গল্প, স্ক্রিপ্ট নিয়ে গ্রুমিং করা, লুক টেস্ট। অনেক ডিটেল প্রি-প্রোডাকশনের একটা ব্যাপার আছে ওয়েবে। যেটা হচ্ছে আমাকে রেডি হতে অনেক হেল্প করে।
হেল্পটা কেমন করে?
প্রথম কথা হচ্ছে বাজেট ভালো থাকে। এটা কিন্তু একটা ফ্যাক্ট। তাই পুরোপুরি প্রস্তুতি নেয়ার জন্য খুব ভালো হয় একটা গোছানো কাজের জন্য। আর এ জন্যই সবাই ওয়েবে কাজ করতে খুব আগ্রহ পাচ্ছে, সেটা অভিনয়শিল্পী বলেন আর মেকআপ আর্টিস্টসহ সবারই কাজের অনেক অপশন আছে। পুরো টিমেরই গল্পের সঙ্গে যোগাযোগটা ঘটে। কোনো তাড়াহুড়া নেই, সময় করে ধরে ধরে কাজটা করতে হয়। একটা লট নিয়ে আইসোলেটেট হয়ে শুটিং শেষ করে আবার ফিরে আসা। তাই এটা আসলে পুরোটাই একটা প্রসেসের মধ্য দিয়ে যাওয়া, যেটা এতদিন বন্ধ ছিল, এই প্রসেসটা আবার ঘুরে আসছে ইন্ডাস্ট্রিতে। তাই ওয়েবে কাজ করে একটা তৃপ্তি পাওয়া যায়।
ওয়েবে শুটিং অভিজ্ঞতা কেমন আপনার?
একজন অভিনয়শিল্পী হিসেবে অবশ্যই বলতে হচ্ছে ভালো। কারণ হিসেবে বললে বলতে হয়, নাটকগুলোতে যেটা দেখে এসেছি, নির্মাতা কল করেন। শুটিং শুরু হওয়ার এক সপ্তাহ থেকে দেড় সপ্তাহ আগে স্ক্রিপ্টটা পাঠালেন। ফোনে ফোনে কথা হলো, সেটে গিয়ে তার সঙ্গে পরিচয় হচ্ছে, দুদিনের কাজ, তারপর শুটিং শেষ করে চলে আসলাম। এই একটা প্রোডাকশন করে তার সঙ্গে কিংবা গল্পের সঙ্গে তেমন একটা সখ্য তৈরি হয় না। মোটামুটি একটা টেস্ট বুঝে কাজ শেষ করে ফেলার মতো। কিন্তু ওয়েবে এটা হওয়ার সুযোগ নেই। একটা প্রোডাকশন শুরু হওয়ার আগে টিমের সঙ্গে তিন থেকে চারবার মিটিং করতে হচ্ছে। গল্পটা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করতে হচ্ছে। নির্মাতা আমার চরিত্রটা পর্দায় কীভাবে দেখতে চাচ্ছে, তা নিয়ে আলোচনা হয়। অনেক সময় চরিত্রটা ভালো করার জন্য রেফারেন্স নিয়ে কথা হচ্ছে। শুটিংয়ের আগেই টিমের সঙ্গে বেশ সখ্য তৈরি হয়ে যায়। যার জন্য খুব আরামেই নির্মাতাসহ গল্প, চরিত্রের সঙ্গে মিশে যাওয়া যায়। এর জন্য শুটিং করতে খুব স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি।
তাহলে বোঝাতে চাচ্ছেন, ওয়েব আর টেলি প্রোডাকশনের মধ্যে পার্থক্য এটাই?
পার্থক্যের জায়গায় না গিয়ে আসলে আমি আমার কথাটাই বলি। যেহেতু আমি দুই মাধ্যমেই কাজ করেছি। আর এখন স্বাচ্ছন্দ্যবোধের জায়গাটা ওয়েবে তৈরি হয়েছে। সে ক্ষেত্রে বলা যায়, যে চরিত্রে অভিনয় করব সেটা নিয়ে যদি বহুবার শুটিংয়ে যাওয়ার আগেই আলোচনা হয় নির্মাতার সঙ্গে তাহলে সেটা আরামের হয়। এটা আমার জন্য ভালো একটা দিক। টিম নতুন হোক কিংবা পুরনো, একটা নতুন কাজ নিয়ে সবাই মিলে বোঝাপড়ার বিষয়টাই তো হচ্ছে টিমওয়ার্ক। এই টিম ওয়ার্কের ব্যাপারটা নিয়ে একটু পড়াশোনা করার সময় পাওয়া যায়। যার জন্য বলতেই হচ্ছে টেলিভিশন থেকে ওয়েব অন্তত আমার জন্য অনেক ভালো। এখানে সব শিক্ষিত ছেলে-মেয়ে কাজ করছেন। তারা বর্তমান সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে একটা গল্পকে প্রাধান্য দিচ্ছে। ওটিটি প্ল্যাটফর্মের সঙ্গে ম্যাচ করার চেষ্টা করছে। এই প্রতিযোগিতাটা কিন্তু সুন্দর। ভালো কাজ করার তাগিদে সব জায়গা থেকে নিখুঁত কাজটাকে খুঁজে বের করে এনে একসঙ্গে রেখে আনার যে প্রচেষ্টা এটা খুব চমৎকার ওয়েবে। এটা আমার জন্য খুব ইন্টারেস্টিং, নতুন এবং দিনশেষে মনে হয় এটাই ভালো আমার জন্য।
ব্যক্তিজীবনে অভিনেত্রী অর্ষা কেমন?
বরাবরই ভালো। কারণ আমি আসলে কাজের প্রেশারে কখনো থাকি না। যখন রেগুলার টেলিভিশনে কাজ করেছি তখনও আমি অনেক গ্যাপ দিয়ে কাজ করেছি। এখন ওটিটিতে কাজ করছি, একই ভঙ্গিমায় হয়ে গেছে। সেটা হচ্ছে একমাস ধরে একটা কাজ করা, তারপর একটা ভালো বিরতি নেয়া। এরপর আবার পরবর্তী একটা নতুন কাজের জন্য প্রস্তুত হওয়া। তাই এটা খুব আরামদায়ক। আমার কাছে মনে হয় প্রত্যেকটা শিল্পীর জন্য একই। এতে ব্যক্তিগত অনেক সময় পাওয়া যায় এবং সুন্দর কাটে। এ ক্ষেত্রে বলা চলে আমার এখন খুব একটা সময় যাচ্ছে, কারণ মাত্রই একটা প্রোডাকশন শেষ করে এখন রিলাক্সে আছি। এ কারণে এই সময়টাতে একটু নিজের মতো করে থাকা, পরিবারকে সময় দেয়া। নতুন কোনো প্রোডাকশন থাকলে সেটা কেমন হতে পারে, এটা নিয়ে চিন্তাভাবনা করা। সো ইট ইজ এ ভ্যারি গুড টাইমিং।
এমন জীবনের খোঁজেই ছিলেন এতদিন?
খোঁজেই ছিলাম কি না, তা ঠিক বলা যাচ্ছে না। তবে আমি এমনই। খুব বেশি কিছু খোঁজাখুঁজির মধ্যে নেই। কোনো ব্যস্ততা নেই আমার মধ্যে। দিনশেষে নিজেকে সময় দিই কিংবা দিতে পারি। আসলে আমাদের সমাজ এমনটা নিয়মের মধ্যে রেখেছে যে সবাই খুব চাপে থাকে। আমি নিয়ম-নীতির কোনো চাপের মধ্যে নেই।

আমি সময়ের গতি দ্বারাও দখলকৃত মানুষ নই। আমি বরাবরই নিজের মর্জির মালিক। সেই জায়গা থেকে আমার হাতে অনেক ভালো সময় আছে। যার জন্য নিজেকে ভালো সময় দিই। নিজেকে নতুন নতুনভাবে দেখার চেষ্টা করি। নতুন নতুন প্রস্তুতির মধ্যে দিয়ে নিজেকে নিয়ে যাই। ভালো না লাগলে আমি জোর করে কিছু করি না। যার জন্য আমার কাছে অফুরন্ত সময় থাকে। আবার যখন দেখি সামনে নতুন কোনো ব্যস্ততা কিংবা পদক্ষেপ আসছে ঠিক তখনই দ্রুত মাইন্ড সেট করে ফেলতে পারি। সেই গতিতেই সামনে এগিয়ে যাই।

ধরুন, আপনি আপনাকে দেখতে পাচ্ছেন। এখন নিজেকে দেখে কীভাবে নিজেই ব্যাখ্যা করবেন?
(কিছুক্ষণ ভেবে) নিজেকে নিজে দেখাই তো খুব কঠিন একটি বিষয়। আর যদি ব্যাখ্যা করতে বলেন তাহলে তো আরো বেশি জটিল হয়ে গেল বিষয়টা। মানুষ তো মানুষকে ব্যাখ্যা করতে পারে না। কারণ সারা জীবনই তো নিজেকে খুঁজতে হয়, বুঝতে হয়। নিজেকে নিয়ে স্টাডি করা। তাই এটা আসলে বলে শেষ করার মতো কোনো বিষয় নয়। জীবনের শেষ পর্যন্ত আসলে নিজেকে বুঝে ওঠা যায় না। কারণ, ছোটবেলা থেকে এখন পর্যন্ত বেড়ে উঠতে উঠতে তো আমার টেস্ট চেঞ্জ হয়েছে অনেক। মানুষের স্বভাব চেঞ্জ হয়, অভ্যস্ততা চেঞ্জ হয়। ভালো লাগা মন্দ লাগা চেঞ্জ হয়। তাই আপনি এখন ধরুন, নিজেকে আসলে কোনো মানদণ্ডেই দাঁড় করাতে পারবেন না আপনি। তবে আমি এতটুকুই বলতে পারি নিজের সম্পর্কে যে, আমি পাংচুয়াল, লয়েল এবং খুব অনেস্ট থাকার চেষ্টা করি সবসময়। সেটা আমার ব্যক্তিজীবন থেকে শুরু করে প্রফেশনাল জীবন পর্যন্ত থাকে। এই তিনটা সাধারণ জিনিসই মূলত আমি মেনে চলার চেষ্টা করি।
শুটিং শেষে তো বাসায় ফিরতেই হয়। বাসায় নিজের অভিনীত কাজ কিংবা অন্যেরটা দেখার সময় পান?
হ্যাঁ, এই কাজটা তো করে থাকি। নিজের কাজ দেখার পাশাপাশি, অন্যের কাজও দেখি বেশি। তবে গত চার পাঁচ বছর ধরে টেলিভিশনের সামনে বসা হয় না, মানে দেখাই হয় না। তবে আগে থেকেই ওয়েব প্ল্যাটফর্মের সিনেমা, ওয়েব সিরিজ নিয়মিত দেখতাম। এখন তো আমাদের দেশীয় ভালো কাজ ওটিটিতেই হচ্ছে। তাই বিদেশি কাজের পাশাপাশি দেশীয় প্রচুর কাজ দেখা হচ্ছে। নিজের শুটিং শেষে যখন ফ্রি থাকি, যে কাজগুলো নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা হয়, সেগুলো ডাউনলোড দিয়ে রাখি। যখনই সময় পাচ্ছি, দেখছি। নয়তো বই পড়ছি, ঘুরতে যাচ্ছি। এই অভ্যেসটা অনেক পুরনো।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়