স্থায়ী কমিটি : স্টেডিয়ামে নারীদের খেলার পরিবেশ নিশ্চিতের সুপারিশ

আগের সংবাদ

দফায় দফায় বাড়ছে ওষুধের দাম : দাম বাড়ানোর যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন ক্যাবের, দাম বাড়লে সাধারণ মানুষ রোগে ভুগে মারা যাবে

পরের সংবাদ

বিদ্যুতের দাম এবার গ্রাহক পর্যায়েও বাড়ানোর উদ্যোগ : বিইআরসির কাছে কোম্পানিগুলোর আবেদন

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ২, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: ডিসেম্বর ২, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : এবার গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর তোড়জোড় চলছে। এ নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে সাধারণ মানুষ ও ব্যবসায়ীদের মধ্যে। বিতরণ কোম্পানিগুলো প্রায় ২০ শতাংশ দাম বাড়াতে চায়। ইতোমধ্যেই তিনটি বিতরণ কোম্পানি গ্রাহক পর্যায়ে দাম বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়ে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) কাছে আবেদন করেছে। খুব দ্রুততম সময়ের মধ্যেই গ্রাহক পর্যায়ে দাম বাড়ানোর জন্য বিইআরসি গণশুনানি শুরু করতে পারে। গ্রাহক পর্যায়ে দাম বাড়াতে পারে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন খোদ বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদও। তিনি বলেছেন, এ ব্যাপারে বিইআরসি সিদ্ধান্ত নেবে।
সম্প্র্রতি বিইআরসি বিদ্যুতের দাম পাইকারি পর্যায়ে ১৯ দশমিক ৯২ শতাংশ বাড়িয়েছে। ইউনিটপ্রতি ৫ টাকা ১৭ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ৬ টাকা ২০ পয়সা নির্ধারণ করা হয়- যা ১ ডিসেম্বর থেকে কার্যকর হয়েছে। পাইকারিতে দাম বাড়ানোর সঙ্গে সঙ্গেই ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ডিপিডিসি), ঢাকা ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি (ডেসকো), ওয়েস্টজোন পাওয়ার ডিস্টিবিউশন কোম্পানি (ওজোপাডিকো)সহ বিতরণ কোম্পানিগুলো গ্রাহক পর্যায়ে দাম বাড়ানোর জন্য বিইআরসির কাছে আবেদন করেছে। বিইআরসির কাছে দাম বাড়ানোর প্রস্তাব দেয়ার অর্থ হচ্ছে এই বিষয়ে গণশুনানি করতে হবে। গণশুনানির মাধ্যমেই দামের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। কারণ বিতরণ কোম্পানিগুলো লোকসান দিয়ে গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে পারবে না।
পাইকারির পর গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম বাড়ানো বিষয়টি বারবার আলোচনায় আসার কারণে জনমনে উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে। লালবাগ এলাকার একটি বাল্বের হোল্ডার তৈরির কারখানার মালিক সজল হোসেন জানান, এমনিতেই হোল্ডার তৈরির কাঁচামালের দাম আগের চেয়ে কয়েকগুণ বেড়েছে। কর্মচারীর বেতনও বাড়িয়ে দিতে হচ্ছে। এখন বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হলে অনেক ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কারখানা বন্ধ হয়ে যেতে পারে। উৎপাদন খরচ বেড়ে গেলে পণ্যের দামও বেড়ে যাবে। ভোক্তাকে বেশি দামে কিনতে হবে। কাঁচামাল কেনা থেকে শুরু করে ভোক্তা পর্যন্ত সবাইকে পকেট থেকে বাড়তি টাকা খরচ করতে হবে।
ফুলবাড়িয়া সুপার মার্কেটের গার্মেন্ট ব্যবসায়ী রায়হান জানান, গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম বাড়লে দোকান খরচ বাড়বে। পোশাকের দোকানে বেশি লাইটের প্রয়োজন হয়। বিদ্যুতের দাম বাড়ালে আমাদের পোশাকের দামও বাড়াতে হবে। ক্রেতাদেরও বাড়তি দামে পোশাক কিনতে হবে। আমাদের আর কিছুই করার থাকবে না। বিতরণ কোম্পানিগুলো এমনিতেই বিভিন্নভাবে গ্রাহকদের কাছ থেকে বেশি দাম নিচ্ছে, তারা ইচ্ছেমতো দাম বাড়াচ্ছে। এই মুহূর্তে বিদ্যুতের দাম না বাড়ালে সবাই উপকৃত হবে।
এদিকে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বৃহস্পতিবার বলেছেন, গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের দামের বিষয়ে যাচাই-বাছাই করে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) সিদ্ধান্ত নেবে। গ্রাহক পর্যায় বিদ্যুতের দাম বাড়লে কতটুকু বাড়ানো যাবে বা আদৌ বাড়ানো যাবে কিনা সেসব বিষয়ে বিইআরসি যাচাই-বাছাই করছে।
জ¦ালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. এম শামসুল আলম এ প্রসঙ্গে বলেন, এই মুহূর্তে যে পরিস্থিতি তাতে বিদ্যুতের দাম গ্রাহক পর্যায়ে বাড়ানোর কোনো যুক্তি নেই। যে পরিমাণ ভর্তুকি দেয়া হচ্ছে তা অন্যভাবে মেটানো সম্ভব। বিদ্যুৎ খাতের অব্যবস্থাপনা, দুর্নীতি ও অনিয়ম বন্ধ করলেই ভর্তুকি দিতে হবে না। অথচ সরকার বিদ্যুৎ খাতের দুর্নীতি ও অনিয়মের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিতে দায়মুক্তি আইন প্রণয়ন করেছে, কোনো সভ্য সমাজে এটা ভাবা যায় না। বেহিসাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন করেছে, কিন্তু সঞ্চালন লাইনের অভাবে কাজে লাগাতে পারছে না। আবার ক্যাপাসিটি চার্জ দিচ্ছে উৎপাদনে না থাকা বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোকে। এসব নানা কারণে ভর্তুকির কথা

বলে বারবার বিদু্যুতের দাম বাড়িয়ে জনগণকে কষ্ট দিচ্ছে।
এদিকে বিইআরসি চেয়ারম্যান আবদুল জলিল জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার থেকে পাইকারি পর্যায়ে নতুন দাম কার্যকর হয়েছে। তবে গ্রাহক পর্যায়ে এখনই দাম বাড়ছে না। দাম সমন্বয়ের জন্য কিছু প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হয়। বিইআরসি সব বিতরণ কোম্পানির আবেদনের পর সব তথ্য ও সংযুক্ত প্রমাণ যাচাই-বাছাই করা হবে। সবার সব তথ্য সঠিক থাকলে আবেদন আমলে নেয়া হবে। আমলে নেয়ার পর একটি কারিগরি মূল্যায়ন কমিটি গঠন করা হবে। এই কমিটি একটি সার্বিক মূল্যায়ন প্রতিবেদন তৈরির পর দাম বাড়ানো যেতে পারে এমন আনুমানিক হার প্রস্তাব করবে। বিইআরসি তখন সব পক্ষকে নিয়ে গণশুনানির আয়োজন করবে। গণশুনানিতে পক্ষে ও বিপক্ষে সবাই বক্তব্য রাখতে পারবে। সবার যুক্তি শোনার পর কমিশন আবারো যাচাই-বাছাই করে দাম বাড়ানো-কমানো অথবা যা আছে তাই থাকবে কিনা- আইন ও বিধি অনুসারে সিদ্ধান্ত নেবে।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি) দেশের সরকারি ও বেসরকারি সব বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে চুক্তি অনুসারে বিদ্যুৎ কিনে নেয় এবং উৎপাদন খরচের চেয়ে কিছুটা কম দামে বিতরণ কোম্পানিগুলোর কাছে বিক্রি করে। পরবর্তী সময়ে বিতরণ কোম্পানিগুলো এই বিদ্যুৎ ভোক্তা পর্যায়ে বিক্রি করে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়