স্থায়ী কমিটি : স্টেডিয়ামে নারীদের খেলার পরিবেশ নিশ্চিতের সুপারিশ

আগের সংবাদ

দফায় দফায় বাড়ছে ওষুধের দাম : দাম বাড়ানোর যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন ক্যাবের, দাম বাড়লে সাধারণ মানুষ রোগে ভুগে মারা যাবে

পরের সংবাদ

চট্টগ্রামে আবাসিক ও শিল্পখাতে চরম গ্যাস সংকট : এলপিজি সিলিন্ডারের দাম বেশি নিচ্ছে দোকানিরা

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ২, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: ডিসেম্বর ২, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

প্রীতম দাশ, চট্টগ্রাম অফিস : চট্টগ্রামে দিন দিন গ্যাস সংকট চরম আকার ধারণ করছে। চট্টগ্রামে চাহিদার সঙ্গে গ্যাসের যোগানের ব্যবধান বাড়ায় কমে গেছে গ্যাসের চাপ। ফলে নগরীর বিস্তৃত এলাকার রান্নাঘরের চুলা বন্ধ হয়ে যায়। বন্ধ হয়ে যায় হোটেল রেস্তোরাঁগুলোর রান্নাবান্নাও। শিল্প কারখানা এবং সিএনজি রিফুয়েলিং স্টেশনেও শুরু হয় হাহাকার। গ্যাস সংকটে উৎপাদন কমে যাওয়ায় লোকসানে পড়তে হচ্ছে শিল্পকারখানা মালিকদেরও। মূলত শীত মৌসুমে গ্যাস সরবরাহ সংকট হলেও এবার শীত আসার আগেই এই সমস্যা দেখা দিয়েছে। আগামীতে এই সংকট আরো বাড়ার আশঙ্কা সংশ্লিষ্টদের।
কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড- কেজিডিসিএল সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বর্তমানে দুটি সার ও একটি বিদ্যুৎ কারখানায় একসঙ্গে বিপুল পরিমাণ গ্যাসের যোগান দিতে হচ্ছে। এছাড়া চাহিদার অনেক কম বরাদ্দ থাকায় আবাসিক গ্রাহকরা অনেক ক্ষেত্রেই গ্যাস থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। একই সঙ্গে এলএনজি (তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস) সরবরাহও কমে গেছে। মূলত এই দুই কারণে গ্যাসের সংকট চলছে।
কেজিডিসিএল সূত্র জানায়, চট্টগ্রামে প্রায় ৪৫০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের চাহিদা রয়েছে। এরমধ্যে মিলছে মাত্র ২৬০ থেকে ২৬৫ মিলিয়ন ঘনফুট। চাহিদার প্রায় অর্ধেক গ্যাস সংকট রয়েছে চট্টগ্রাম। যে পরিমাণ পাওয়া যাচ্ছে এরমধ্যে চট্টগ্রামের সার কারখানা কর্ণফুলী ফার্টিলাইজার কোম্পানি লিমিটেড (কাফকো) এবং চিটাগাং ইউরিয়া ফার্টিলাইজার লিমিটেডে (সিইউএফএল) ৮২ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করা হচ্ছে। বিদ্যুৎ কেন্দ্রে দেয়া হচ্ছে ৩৫ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস। বাকিটা সরবরাহ করা হচ্ছে চট্টগ্রামের শিল্পকারখানা, সিএনজি ফুয়েলিং স্টেশন, বাণিজ্যিক এবং আবাসিকসহ সব খাতে। এছাড়া চট্টগ্রামে প্রায় ৭০টি সিএনজি ফিলিং স্টেশন রয়েছে। গ্যাস সংকটের কারণে সিএনজি ফিলিং স্টেশন দৈনিক পাঁচ-ছয় ঘণ্টা গ্যাস সরবরাহ বন্ধ রাখা হচ্ছে। এ কারণে সিএনজি ফিলিং স্টেশনগুলোতে দীর্ঘ লাইন সৃষ্টি হচ্ছে।
কেজিডিসিএল’র মহাব্যবস্থাপক (বিপণন- দক্ষিণ) প্রকৌশলী আমিনুর রহমান বলেন, একটি বাল্ক (বড় আকারের গ্যাসচালিত ইউনিট) চললে কোনো সংকট থাকে না। সেখানে এখন একসঙ্গে চলছে তিনটি বাল্ক। তাই সংকট সৃষ্টি হয়েছে। তিনি বলেন, গ্যাস সংকটের কারণে সিএনজি রিফুয়েলিং স্টেশনগুলোতে সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত দৈনিক ৫ ঘণ্টা গ্যাস সরবরাহ বন্ধ রাখা হচ্ছে। শিল্প কারখানায়ও চাহিদা মতো গ্যাস সরবরাহ করা যাচ্ছে না। তিনি বলেন, চট্টগ্রামে যে গ্যাস সরবরাহ করা হয়, তার পুরোটাই আমদানি করা এলএনজি। বর্তমানে এলএনজির কিছুটা সংকট রয়েছে। এলএনজি আমদানির বিষয়ে কথাবার্তা চলছে।
চলতি নভেম্বর থেকে চট্টগ্রামজুড়ে গ্যাস সংকট তীব্র হয়ে উঠেছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চট্টগ্রাম নগরীর বেশির ভাগ এলাকাতেই দিনের বেলায় রান্নার চুলা জ্বলে না। সকালে গ্যাসের চাপ কোথাও কোথাও কম থাকলেও অনেক জায়গায় আবার চুলাই জ্বলছে না। গভীর রাত থেকে ভোর পর্যন্ত গ্যাসের চাপ মোটামুটি

থাকলেও ওই সময় গৃহস্থালি কাজে গ্যাস ব্যবহারের সুযোগও থাকে না। এমন পরিস্থিতিতে অনেকে পাইপলাইনের গ্যাসের পাশাপাশি এলপিজি সিলিন্ডারে ঝুঁকছেন বাধ্য হয়ে। তবে এতে খরচ বেড়ে গেছে বহুগুণ। এদিকে পাইপলাইনের গ্যাস সরবরাহ সংকটকে পুঁজি করে সরকার নির্ধারিত মূল্যের বেশি দামে এলপি গ্যাস বিক্রি করছে এক শ্রেণির ব্যবসায়ীরা। নগরীর আন্দরকিল্লা এলাকার বাসিন্দা সিরাজুল ইসলাম ভোরের কাগজকে বলেন, দিনের বেলায় গ্যাস থাকেই না। সন্ধ্যার পর মিট মিট করে চুলা জ্বলে, তা দিয়ে রান্না করা সম্ভব হয় না। গভীর রাত থেকে ভোর পর্যন্ত প্রেসার কিছুটা থাকলেও ওই সময় তো আর রান্না করা যায় না। বাধ্য হয়ে সিলিন্ডার গ্যাসের চুলা বসানো হয়েছে। কিন্তু সেখানেও সমস্যা। ১২ কেজি ওজনের সিলিন্ডারের সরকার নির্ধারিত মূল্য ১২৫১ টাকা হলেও, বিক্রি করা হচ্ছে ১৩৫০ থেকে ১৪০০ টাকায়। আশেপাশের সব গ্যাস সিলিন্ডারের দোকানেও একই অবস্থা। বাধ্য হয়ে বাড়তি দামে কিনতে হচ্ছে। এর বিরুদ্ধে প্রশাসনের ব্যবস্থা নেয়া জরুরি।
অন্যদিকে শিল্পকারখানাগুলোও ধুঁকছে গ্যাসের অভাবে। অব্যাহত গ্যাস সংকটে বেশির ভাগ কারখানাতেই ধস নেমেছে উৎপাদনে। কোনো কোনো প্রতিষ্ঠান ডিজেল দিয়ে বয়লার চালিয়ে উৎপাদন সচল রাখার চেষ্টা করছে। যদিও এর ফলে ওই প্রতিষ্ঠানগুলোর উৎপাদন খরচও একইসঙ্গে বেড়ে যাচ্ছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, এ অবস্থা অব্যাহত থাকলে শিল্প প্রতিষ্ঠানে বিপর্যয় নামার পাশাপাশি জাতীয় অর্থনীতিতেও নেতিবাচক প্রভাব পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। বিশেষ করে স্টিল রি-রোলিং মিল ও গার্মেন্ট কারখানাগুলোতে গ্যাস সংকটের কারণে নিরবচ্ছিন্ন উৎপাদন বজায় রাখা সম্ভব হচ্ছে না।
বিজিএমইএ’র সাবেক প্রথম সহসভাপতি নাসির উদ্দিন চৌধুরী বলেন, গার্মেন্টস শিল্প বিদ্যুৎনির্ভর হলেও কিছু কিছু সেকশন গ্যাসে চলে। যাদের ডাইয়িং ও ওয়াশিং প্ল্যান্ট রয়েছে, তাদের গ্যাস ব্যবহার করতে হয়। বেশ কিছুদিন ধরে চাহিদা মতো গ্যাস মিলছে না। এতে ডাইয়িং ও ওয়াশিং প্ল্যান্টগুলো সমস্যায় পড়েছে। পোশাক আয়রন করতেও সমস্যা হচ্ছে। কেউ কেউ গ্যাসের বিকল্প হিসাবে বৈদ্যুতিক জেনারেটর ব্যবহার করছেন। এতে বাড়তি ব্যয় গুণতে হচ্ছে। অনেক কারখানায় রাত-দিন কাজ করে অর্ডার সময় মতো রেডি করতে হচ্ছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়