এম বশির উল্লাহ, মহেশখালী (কক্সবাজার) থেকে : দীর্ঘ ৩২ বছর পর মহেশখালীর চাঞ্চল্যকর খাইরুল আমিন হত্যা মামলার রায়ে ছয় আসামিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ (নম্বর-১) আদালত। একই সঙ্গে দণ্ডপ্রাপ্ত প্রত্যেককে এক লাখ টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে। মামলার অপর ২০ আসামি বেকসুর খালাস পেয়েছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে আদালতের বিচারক আবদুল্লাহ আল মামুন এ রায় ঘোষণা করেন।
সাজাপ্রাপ্তরা হলেন- মহেশখালী পৌরসভার সাবেক মেয়র, মৃত মোজাহের মিয়ার ছেলে সরওয়ার আজম, তার ভাই মহেশখালী উপজেলা পরিষদের ভাইস-চেয়ারম্যান মৌলভী জহির উদ্দীন, গোরকঘাটা ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান, মৃত হাজি আবুল হোসেনের ছেলে শামশুল আলম, এডভোকেট হামিদুল হক ও মৃত মোজাহের মিয়ার ছেলে নাসির উদ্দিন। রায় ঘোষণার সময় সাধন (পলাতক) ছাড়া অপর পাঁচ আসামি আদালতের কাঠগড়ায় উপস্থিত ছিলেন। বিকালে দণ্ডপ্রাপ্ত পাঁচ আসামিকে আদালত থেকে প্রিজন ভ্যানে কক্সবাজার জেলা কারাগারে পাঠানো হয়। খালাসপ্রাপ্ত ২০ জনের মধ্যে বিভিন্ন সময়ে চারজন মারা গেছেন।
আদালতের পর্যবেক্ষণে বলা হয়, এটি রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড। কক্সবাজার শহরের একটি হোটেলে বৈঠক করে খাইরুল আমিনকে হত্যার পরিকল্পনা করেন আসামিরা। এরপর কক্সবাজার থেকে সমুদ্র পাড়ি দিয়ে মহেশখালী চৌরাস্তার মোড়ে গুলি করে খাইরুল আমিনকে হত্যা করা হয়। এই রায়ে পুরোপুরি সন্তুষ্ট নন মামলার রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ও আদালতের অতিরিক্ত সরকারি কৌঁসুলি (এপিপি) সুলতানুল আলম। তিনি বলেন, ছয়জন আসামির যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও এক লাখ টাকা করে জরিমানা এবং অবশিষ্ট ২০ আসামিকে বেকসুর খালাস দেয়া উচিত হয়নি। রায়ে সব আসামির মৃত্যুদণ্ড হওয়া উচিত ছিল। ন্যায়বিচারের স্বার্থে তিনি উচ্চ আদালতে যাবেন।
প্রসঙ্গত, নির্বাচনকে কেন্দ্র করে মহেশখালীর গোরকঘাটা বাজারে ২৮ বছর বয়সি তরুণ খাইরুল আমিন সিকদারকে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা করেন সাজাপ্রাপ্ত আসামিরা। এই ঘটনায় করা হত্যা মামলার সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হয়েছিল ২০০২ সালে। আদালত ও মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, ১৯৯০ সালের ৯ এপ্রিল বিকাল ৫টার দিকে মহেশখালী পৌরসভার গোরকঘাটা বাজারে দুর্বৃত্তের গুলিতে খুন হন তৎকালীন জেলা পরিষদ সদস্য ও তরুণ রাজনীতিক খাইরুল আমিন সিকদার। তিনি গোরকঘাটা এলাকার বাসিন্দা হামজা মিয়া সিকদারের ছেলে ও দেশের পরিবেশবিজ্ঞানী আনসারুল করিমের ছোট ভাই। ওই দিন নিহত খাইরুল আমিনের বড় ভাই মাহমুদুল করিম সিকদার বাদী হয়ে মহেশখালী থানায় সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান নুর বক্স, পৌরসভার সাবেক মেয়র সরওয়ার আজম, ইউপি চেয়ারম্যান শামশুল আলম, নাসির উদ্দিন, হামিদুল হকসহ ২৫ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন।
পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) ওই বছরের ২২ নভেম্বর এজাহারভুক্ত ২৫ জনসহ ২৬ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেয়। ২০০৩ সালের ২৭ জুলাই আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালত। বিচার চলাকালে ৩১ বছরে মারা গেছেন চার আসামি। তারা হলেন- মহেশখালীর সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও মামলার প্রধান আসামি নুর বক্স, স্থানীয় বাসিন্দা পুটিবিলার রহিম সিকদার, আমির হোসেন ও আজিজুল হক। তবে এই রায়ে আসামি পক্ষের আইনজীবীরা জানান, তারা এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করবেন উচ্চ আদালতে।
আইনজীবী সুলতানুল আলম বলেন, ৩১ বছর আগে ২৮ বছরের যুবক খাইরুল আমিন সিকদারকে নির্বাচন কেন্দ্র করে পবিত্র রমজান মাসে মহেশখালীর গোরকঘাটা বাজারে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা করেন আসামিরা। মামলার ৪৪ জন সাক্ষীর মধ্যে ৩৪ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়। ৩১ বছরের পুরনো এই মামলায় সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হয়েছিল ২০০২ সালে। ২০২১ সালের ২৩ নভেম্বর আদালতে যুক্তিতর্ক উপস্থাপনে রাষ্ট্রপক্ষে সহায়তা করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ও আন্তর্জাতিক অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর সৈয়দ হায়দার আলী, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ও সাবেক ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এম মাসুদ আলম চৌধুরী প্রমুখ।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।