নাইক্ষ্যংছড়ি : ডিজিএফআই কর্মকর্তা নিহতের ঘটনায় মামলা

আগের সংবাদ

তিন কারণে ভালো ফলাফল : সংক্ষিপ্ত সিলেবাস, প্রশ্নপত্রে সুবিধা ও সাবজেক্ট ম্যাপিংয়ের প্রভাবে পাসের হার বেড়েছে এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায়

পরের সংবাদ

হস্তান্তরের আগেই আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরে ফাটল

প্রকাশিত: নভেম্বর ২৮, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ২৮, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

শাহ আলম সরকার সাজু, গোবিন্দগঞ্জ (গাইবান্ধা) থেকে : গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে ভূমিহীনদের জন্য নির্মিত আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর হস্তান্তরের আগেই ফাটল দেখা দিয়েছে। উক্ত ঘর নির্মাণে উপজেলা প্রশাসনের বিরুদ্ধে নানা অনিয়মসহ নি¤œমানের সামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে।
জানা গেছে, উপজেলার কামদিয়া ইউনিয়নের বইলগ্রাম বস্তাহার গ্রামে সরকারি খাস পুকুরপাড়ে দীর্ঘদিন ধরে ভূমিহীন পরিবার বসবাস করে আসছে। মুজিববর্ষ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীর উপহারের আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে উক্ত ভূমিহীনদের বসবাসের লক্ষে উপজেলা প্রশাসনের বাস্তবায়নে তৃতীয় পর্যায়ে ছয় মাস আগে ৩৮০টি ঘর নির্মাণ করা হয়।
সরেজমিনে দেখা গেছে, উল্লেখিত স্থানে নির্মিত আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরের বিভিন্ন অংশে দেখা দিয়েছে ফাটল। নি¤œমানের সামগ্রী দিয়ে ঘর নির্মাণ নিয়ে সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করেন সুবিধাভোগীরা।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কার্যালয় সূত্র জানায়, তৃতীয় পর্যায়ে গোবিন্দগঞ্জ উপজেলায় ভূমিহীনদের পুনর্বাসনের জন্য আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে ৩৮০টি ঘর নির্মাণের বরাদ্দ দেয়া হয়। প্রতিটি ঘরের বিপরীতে ২ লাখ ৫৯ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। প্রথম পর্যায়ে বরাদ্দ ছিল প্রায় ১ লাখ ৭৫ হাজার টাকা।
সেই তুলনায় তৃতীয় পর্যায়ে ঘর নির্মাণে প্রায় দ্বিগুণ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। কিন্তু বরাদ্দকৃত ঘর নির্মাণে ইট, খোয়া, বালু, সিমেন্ট, কাঠসহ যেসব সামগ্রী ব্যবহার করা হয়েছে তা অত্যন্ত নি¤œমানের। যার ফলে ঘরের বিভিন্ন অংশে দেখা দিয়েছে ফাটল। এতে সুবিধাভোগীদের মাঝে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। সম্প্রতি কিছু ঘর হস্তান্তরের আগেই মেরামতও করা হয়েছে। কিন্তু এতেও আশানুরূপ ফল মেলেনি।
এছাড়া সুবিধাভোগীদের কাছ থেকে ঘর নির্মাণে ভিত্তিপ্রস্তর খনন, ঘরে মাটি ভরাট এবং নির্মাণ শ্রমিকদের খাবার সরবরাহ করতে বাধ্য করা হয়। এতে করে প্রতিটি সুবিধাভোগীদের কায়িক পরিশ্রমসহ প্রায় ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা ব্যয় হয়।
সুবিধাভোগী নাজনীন বেগম ও আব্দুর রহিম জানান, তাদের মাটির ঘর ছিল। সেগুলো ভেঙে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর নির্মাণ করে দেয়া হয়েছে। কিন্তু সেই ঘর হস্তান্তরের আগেই ফাটল দেখা দিয়েছে। তারা বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে মাটির ঘরে পরিবার নিয়ে বসবাস করে আসছি। মাটির ঘরই ভালো ছিল।’ অন্যদের ঘরেরও একই চিত্র। ফলে সুবিধাভোগীদের মাঝে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে।
আরেক সুবিধাভোগী নাজমা বেগম বলেন, ‘নি¤œমানের সামগ্রী দিয়ে ঘর নির্মাণ করা হয়েছে। ফলে ঘর ফেটে গেছে। এই ঘরে বসবাস করা ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এমন নড়বড়ে ঘর দেবে জানলে নিতাম না।’ অন্যদিকে, উপজেলার কামারদহ ইউনিয়নের কন্দবপুর নামকস্থানে প্রায় ৩২টি ঘর নির্মাণ করা হয়। সেখানেও নি¤œমানের সামগ্রী দিয়ে ঘর নির্মাণের অভিযোগ রয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নির্মাণ শ্রমিক বলেন, ‘ভালো, মন্দ বলতে গেলে আর কাজে নেবে না। আমাদের যেসব সামগ্রী দেয়া হয়, তা দিয়েই কাজ করি। এখানে আমাদের করার কী আছে?’
এদিকে প্রায় এক বছর আগে দ্বিতীয় পর্যায়ে একই এলাকায় ২১টি ঘর নির্মাণ করা হয়। বছর না পেরোতেই ঘরগুলো বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়ে। ফলে তাদের মাঝেও দেখা দিয়েছে অসন্তোষ।
এ বিষয়ে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা জহিরুল ইসলাম বলেন, ‘এই প্রকল্পের সভাপতি ইউএনও সাহেব। আপনারা তার সঙ্গে কথা বলেন।’
ঘর নির্মাণে অনিয়মের বিষয়ে গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার আরিফ হোসেন বলেন, ‘আমি অস্বীকার করছি না। তবে যেহেতু ঘরগুলো হস্তান্তর করা হয়নি। সেহেতু ঘরগুলো প্রয়োজনে মেরামত করে দেয়া হবে।’
উল্লেখ্য, গোবিন্দগঞ্জ উপজেলায় এ পর্যন্ত মুজিববর্ষ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীর উপহার আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে ৮৫০টি ঘর নির্মাণ করা হয়। সেই সঙ্গে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে শতভাগ ভূমিহীন উপজেলা ঘোষণা করা হয়।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়