সিলেট ব্যুরো : পাঁচ বছর পরিত্যক্ত অবস্থায় থাকার পর সিলেটের বিয়ানীবাজার গ্যাসক্ষেত্রের ১ নম্বর কূপ থেকে জাতীয় সঞ্চালন লাইনে ফের গ্যাস সরবরাহ শুরু হচ্ছে। আজ সোমবার সকাল থেকে এ সরবরাহ চালু হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। এতে দেশের চলমান গ্যাস সংকট কিছুটা প্রশমন হবে।
সিলেট গ্যাস ফিল্ড লিমিটেডের (এসজিএফএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মিজানুর রহমান জানান, গ্যাসের চাপ পরীক্ষার (টেস্টিং) কাজ শেষে চূড়ান্ত পর্যায়ে জাতীয় গ্রিডে গ্যাস সরবরাহের জন্য কারিগরি সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। গতকাল রবিবার রাত ১২টার পর থেকেই জাতীয় সঞ্চালন লাইনে গ্যাস সরবরাহের জন্য প্রস্তুত আছে। তবে বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের চূড়ান্ত অনুমোদন পাওয়া সাপেক্ষে আজ সোমবার সকাল থেকে জাতীয় গ্রিডে গ্যাস সরবরাহ শুরু হবে।
পরিত্যক্ত এ কূপ থেকে দৈনিক ৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস জাতীয় সঞ্চালন লাইনে সরবরাহ করা যাবে বলেও জানান এসজিএফএল ব্যবস্থাপনা পরিচালক। বর্তমানে কূপের ৩ হাজার ২৫৪ মিটার গভীরে ৭০ বিলিয়ন ঘনফুটের বেশি গ্যাস মজুত আছে বলে জানান তিনি। তিনি বলেন, গ্যাসের চাপ পরীক্ষার পর দেখা গেছে কূপটি দৈনিক ১০ থেকে ১২ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করা সম্ভব। তবে কারিগরি বিভিন্ন দিক বিবেচনা করে দৈনিক আট মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করা হবে। গ্যাস ছাড়াও এই কূপ থেকে দৈনিক ১২৫ থেকে ১৩০ ব্যারেল কনডেন্সেন্ট পাওয়া যাবে।
দেশে চলমান গ্যাস সংকটের সময়ে একটি আনন্দের সংবাদ উল্লেখ করে এসজিএফএল ব্যবস্থাপনা পরিচালক মিজানুর রহমান বলেন, বিয়ানীবাজার-গোলাপগঞ্জসহ সিলেটের বিভিন্ন এলাকায় ত্রিমাত্রিক সিসমিক জরিপ চলছে। সেই জরিপ থেকে নতুন গ্যাস ক্ষেত্র পাওয়ার সম্ভাবনা আছে। এতে দেশের চলমান গ্যাস সংকট অনেকাংশেই লাঘব হবে।
উল্লেখ্য, বিয়ানীবাজার গ্যাস ফিল্ডের ১ নম্বর কূপ থেকে ১৯৯১ সালে গ্যাস তোলা শুরু হয়। টানা ২৫ বছর গ্যাস উত্তোলনের পর ২০১৪ সালে তা বন্ধ হয়ে যায়। এরপর ২০১৬ সালে আবারো এই কূপ থেকে গ্যাস উত্তোলন করা হলেও ওই বছরের শেষ দিকে আবারো তা বন্ধ হয়ে যায়। ২০১৭ সালের শুরুতে কূপটিকে পরিত্যক্ত ঘোষণা করে পেট্রোবাংলা। এরপর রাষ্ট্রীয় গ্যাস উত্তোলন কোম্পানি বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম এক্সপ্লোরেশন অ্যান্ড প্রোডাকশন (বাপেক্স) পরিত্যক্ত এই কূপে নতুন করে গ্যাসের জন্য অনুসন্ধান চালিয়ে গ্যাসের মজুত পাওয়ায় গত ১০ সেপ্টেম্বর ওই কূপে পুনর্খননকাজ (ওয়ার্ক ওভার) শুরু করে। কূপে গ্যাস প্রাপ্তি নিশ্চিতের পর গত ১০ নভেম্বর থেকে গ্যাসের চাপ পরীক্ষা শেষে কূপ থেকে দ্রুত জাতীয় সঞ্চালন লাইনে গ্যাস দেয়ার জন্য প্রস্তুত করা হয়। যা আজ থেকে জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হবে।
বর্তমানে এসজিএফএলের আওতায় পাঁচটি গ্যাসক্ষেত্র আছে। এগুলো হলো- হরিপুর গ্যাস ফিল্ড, রশিদপুর গ্যাস ফিল্ড, ছাতক গ্যাস ফিল্ড, কৈলাশটিলা গ্যাস ফিল্ড ও বিয়ানীবাজার গ্যাস ফিল্ড। এর মধ্যে ছাতক গ্যাস ফিল্ড পরিত্যক্ত অবস্থায় আছে। বাকিগুলোর ১২টি কূপ থেকে বর্তমানে প্রতিদিন ৯১ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উত্তোলন করা হচ্ছে।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।