নাইক্ষ্যংছড়ি : ডিজিএফআই কর্মকর্তা নিহতের ঘটনায় মামলা

আগের সংবাদ

তিন কারণে ভালো ফলাফল : সংক্ষিপ্ত সিলেবাস, প্রশ্নপত্রে সুবিধা ও সাবজেক্ট ম্যাপিংয়ের প্রভাবে পাসের হার বেড়েছে এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায়

পরের সংবাদ

বিএনপির সঙ্গে জোট চায় না জাতীয় পার্টির কোনো অংশই : দেশে ফিরে ঐক্যের ডাক রওশন এরশাদের

প্রকাশিত: নভেম্বর ২৮, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ২৮, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : জাতীয় পার্টিতে নেতৃত্ব ও কর্তৃত্ব নিয়ে বিবাদ কাটেনি। দেবর-ভাবির দ্ব›েদ্ব বিভক্ত কেন্দ্র থেকে শুরু করে মহানগর, জেলা-উপজেলাসহ তৃণমূল নেতাকর্মীরা। আদালতের নির্দেশে জাপা চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদেরের (জিএম কাদের) মুখ বন্ধ থাকলেও দলের সংসদীয় কমিটিতে তিনি কর্তৃত্ব বজায় রেখেছেন। সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা ও বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ পদ নিয়ে পাল্টাপাল্টির সুরাহা হয়নি এখনো। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাপার অংশ নেয়ার প্রশ্ন এবং কার সঙ্গে জোট বাঁধবে- এ নিয়ে রশি টানাটানি চলছে। এরই মধ্যে ব্যাংকক থেকে চিকিৎসা নিয়ে ৫ মাস পর গতকাল রবিবার দেশে ফিরেছেন দলটির প্রধান পৃষ্ঠপোষক ও সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ। বিমানবন্দরে তিনি গণমাধ্যমকে বলেছেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির সঙ্গে জোটে যাওয়ার প্রশ্নই আসে না। জাতীয় পার্টির ঐক্য চাই। জাতীয় পার্টিকে বিলুপ্ত করার প্রশ্নই আসে না। বরং যারা আনোয়ার হোসেন মঞ্জু, নাজিউর রহমান মঞ্জু, কাজী জাফর আহমদের সঙ্গে চলে গেছেন তাদের আমাদের পার্টিতে যোগ দেয়ার আহ্বান জানিয়েছি।
রওশন এরশাদ বলেন, বিএনপির অধীনে জাতীয় পার্টি খুবই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। শত শত নেতাকর্মী জেল খেটেছে। আমাদের জনসভা করতে দেয়া হয়নি। আমাদের সমাবেশে হামলা করা হয়েছে। জনগণ উন্নতি ও শান্তির জন্য পরিবর্তন চায় এবং জাতীয় পার্টি তা দিতে পারে। বিএনপির সঙ্গে জোটের প্রশ্নই আসে না। রংপুরে মেয়র নির্বাচনে আমরা যোগ্য প্রার্থী দেব। জি এম কাদেরের সঙ্গে কোনো দ্ব›দ্ব নেই জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা একসঙ্গে চলব। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টি আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোটে থাকবে কিনা- জানতে চাইলে রওশন বলেন, সেটা সময় বলে দেবে। তাকে স্বাগত জানাতে জি এম কাদেরের বিমানবন্দরে না আসা প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে রওশন এরশাদ বলেন, আসেনি তো, কী হয়েছে? ওনার কোনো সমস্যা আছে মনে হয়। এতে আমি কোনো সমস্যা দেখছি না। লিখিত বক্তব্যে এরশাদপতœী বলেন, আমি সব সময়

জাপার ঐক্য চাই। আমার স্বামী প্রয়াত রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ, আমি এবং আমার পরিবারের সদস্যদের অনেক কষ্ট সহ্য করতে হয়েছে। আমি দেখেছি, গত ৩২ বছরে দলের নেতাকর্মীরা কতটা কঠোর পরিশ্রম করেছেন। পার্টিকে বিভক্ত করার প্রশ্নই ওঠে না। তিনি বলেন, আমি ঢাকায় ফিরে এসেছি। সব এমপি, প্রেসিডিয়াম সদস্য এবং অন্যদের সঙ্গে বিভ্রান্তি ও ভুল বোঝাবুঝি দূর করতে বসব। আমি নিশ্চিত, সেই ভুল বোঝাবুঝি দূর করে ঐক্যবদ্ধভাবে শিগগিরই রাজনৈতিক কর্মসূচিতে ফিরতে পারব। পার্টিকে দুর্বল করতে কিছু ষড়যন্ত্র হতে পারে। যেমনটি ১৯৯৬, ২০০১ এবং ২০১৪ সালে দেখেছি। বিএনপির সময় জাপা খুবই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, পল্লীবন্ধু হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ, আমি ও আমার নাবালক সন্তানসহ দলের হাজার হাজার নেতাকর্মী জেল খেটেছিলেন। তখন আমাদের জনসভাও করতে দেয়া হয়নি। বর্তমানে রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় প্রধানমন্ত্রী দেশের স্থিতিশীলতা ও উন্নয়ন বজায় রাখতে সর্বাত্মক চেষ্টা করে যাচ্ছেন বলে মন্তব্য করেন বিরোধীদলীয় নেতা। তার ভাষ্য, দুর্নীতি, অর্থনীতিতে অব্যবস্থাপনা এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম বাড়ার মতো কিছু ত্রæটি রয়েছে। আমি নিশ্চিত, প্রধানমন্ত্রী এসব বিষয়ে অবগত আছেন। রওশন বলেন, আমি এখন ঠিক আছি, কিন্তু পায়ে কিছু সমস্যা আছে। ফিজিওথেরাপি নিচ্ছি। ব্যাংককে আমার চিকিৎসার সময় সহযোগিতা এবং স্বাস্থ্যের খোঁজখবর নেয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানান তিনি। বিমানবন্দরে জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান রুহুল আমিন হাওলাদার, সাবেক মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গা ও সাবেক প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী মামুনুর রশীদ উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে রওশন এরশাদের বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় জি এম কাদেরের ঘনিষ্ঠ জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু গতকাল রবিবার বিকালে ভোরের কাগজকে বলেন, বিএনপির সঙ্গে জোট করার প্রশ্নই আসে না। এমনকি মহাজোটে আমরা থাকব কিনা সেটাও অনিশ্চিত। কেননা মহাজোট বলে এখন কিছু আর নেই। জাপা চেয়াারম্যান জি এম কাদের আগেই ঘোষণা দিয়েছেন, আগামী দ্বাদশ নির্বাচনে জাতীয় পার্টি একাই লড়াই করবে, ৩০০ আসনে একক প্রার্থী দেবে। তবে নির্বাচনের এখনো আরো এক বছরের বেশি সময় বাকি আছে। আমরা নির্বাচনের আগে পার্টির প্রেসিডিয়াম বৈঠকে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেব। রওশন এরশাদের গতকালের দেয়া বক্তব্য সঠিক বলেও মনে করেন তিনি।
জাপার প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, নির্বাচন এখনো অনেক দেরি আছে। রওশন এরশাদ বিরোধীদলীয় নেতা এবং পার্টির সাবেক চেয়ারম্যান। তিনি বলেন, আমার জানামতে জাপার সঙ্গে বিএনপির কোনো নির্বাচনী জোট হচ্ছে না। তবে পুরো বিষয়টি ভেতরে ভেতরে কোনো আলোচনা হয়েছে কিনা- তা পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের বলতে পারেন। তবে জাপা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে এবং নির্বাচনমুখী একটি দল। যে কোনো পরিস্থিতিতে জাপা নির্বাচনে যাবে। তবে, আওয়ামী লীগের সঙ্গে মহাজোটে তারা থাকবে কিনা তা নির্বাচনের কিছু সময় আগে প্রেসিডিয়াম সদস্যদের সঙ্গে বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
উল্লেখ্য, এর আগে মহাজোট সরকারের সাবেক মন্ত্রী জিএম কাদের সরকারের সমালোচনা করে মন্তব্য করেন, জাতীয় পার্টি আর আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোটে থাকবে না। তার ওই মন্তব্যের পর জাপার ভেতরে টানাপড়েন শুরু হয়। দেখা দেয় বিভক্তি।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়