মোজাম্মেল-প্রণয় সাক্ষাৎ : কলকাতার থিয়েটার রোডের সেই বাড়িটি চেয়েছে বাংলাদেশ

আগের সংবাদ

কাদের সঙ্গে ডায়লগ করব? মহিলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর প্রশ্ন

পরের সংবাদ

স্বাচিপের পঞ্চম সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী : চাই রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা

প্রকাশিত: নভেম্বর ২৬, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ২৬, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

** যুক্তরাষ্ট্র বঙ্গবন্ধুর খুনিকে লালন করছে ** নতুন সভাপতি ডা. জামাল, মহাসচিব মিলন **

কাগজ প্রতিবেদক : আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ২০০১ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে জোর করে হারানো হয়েছে। বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় এসে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও নারী-শিশুদের ওপর পাশবিক নির্যাতন চালিয়েছে। বাংলাদেশের ইতিহাসে পচাত্তরের পর একমাত্র আওয়ামী লীগই শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর করেছে। আমরা চাই, বাংলাদেশে সবসময় রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকুক।
রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে গতকাল শুক্রবার বিকালে স্বাধীনতা চিকিৎসা পরিষদের (স্বাচিপ) সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। সংগঠনের সভাপতি ইকবাল আর্সলানের সভাপতিত্বে ও মহাসচিব ডা. এম এ আজিজের সঞ্চালনায় সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। সম্মেলনের দ্বিতীয় অধিবেশনে পূর্বের কমিটি বিলুপ্ত করে নতুন কমিটি ঘোষণা করেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। নতুন কমিটিতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ডা. জামালউদ্দিন চৌধুরীকে সভাপতি ও ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে কর্মরত ডা. কামরুল হাসান মিলনকে মহাসচিব নির্বাচিত করা হয়।
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ২০০১ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার সিস্টেম ছিল। আমরা খুব শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর করি। ইতিহাসে পচাত্তরের পর ঐ একবারই শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতার রদবদল হয়। এছাড়া প্রতিটি সময়েই আমরা আন্দোলন করে ক্ষমতা থেকে উৎখাত করেছি। যেমন ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়া ভোটারবিহীন নির্বাচন করল। জনগণ ভোটও দিতে পারেনি। আমরা জনগণকে আহ্বান করলাম। আন্দোলন হলো। ১৫ ফেব্রুয়ারি ইলেকশন হয়েছে। ৩০ মার্চ খালেদা জিয়া বাধ্য হয়েছিল পদত্যাগ করতে। এরপরে যে নির্বাচন হয়, সেই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সরকারে আসে। ২০০১ সালে আমরা শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর করি। আমরা সবসময় রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা চাই।
চিকিৎসাসেবা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিচ্ছি : জাতির পিতা সংবিধানের ১৮ অনুচ্ছেদের (১) এ আমাদের চিকিৎসা, পুষ্টি ও জনস্বাস্থ্যের ব্যবস্থার উন্নতি সাধন ও এটা যে রাষ্ট্রীয় কর্তব্য সেটা উল্লেখ করেছেন। স্বাস্থ্যসেবা জনগনের দোড়গোড়ায় পৌঁছে দেয়ার জন্য তিনি প্রতিটি থানায় থানায় ১০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালের বানানোর কাজ শুরু করেন। মুক্তিযুদ্ধে আহত ও পাশবিক অত্যাচারের শিকার মা-বোনদের অনেকেই অসুস্থ্য ও গর্ভধারণ করে। তাদেরকে উদ্ধার করে স্যুইজারল্যন্ড, জার্মানি, ইংল্যান্ডসহ পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গা থেকে ডাক্তার ও স্পেশাল নার্স নিয়ে এসে তাদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করে সুস্থ করে তোলেন তিনি।

তাদের পুনর্বাসন ও সরকারি চাকরিতে ১০ ভাগ কোটার ব্যবস্থা করেন। সমাজে যেন সম্মান পায়, সেজন্য বীরাঙ্গনা হিসেবে তাদেরকে উপাধি দেন। জাতির পিতার মনে ছিল স্বাস্থ্যসেবা জনগনের দোড়গোড়ায় পৌঁছে দিতে হবে। জাতির পিতা জাতীয় অর্থপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করে দেন। শিশু হাসপাতাল, স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল প্রায় বন্ধ অবস্থায় ছিল, সেগুলি তিনি চালু করেন। পাবলিক হেল্থ নিউট্রিশন প্রতিষ্ঠা করে দেন। জাতীয় সামাজিক ও চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান, বাংলাদেশ মেডিকেল ও ডেন্টাল কাউন্সিল, বাংলাদেশ কলেজ অফ ফিজিশিয়ান এন্ড সার্জন এবং বাংলাদেশ চিকিৎসা গবেষণা প্রতিষ্ঠান-বিএমআরসি সবই মাত্র সাড়ে তিন বছরে জাতির পিতা করে দিয়ে গেছেন। তিনি প্রতিটি ক্ষেত্রে ভিত্তিটা তৈরি করে দিয়ে গেছেন। সেই ধারাবাহিকতায় আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর স্বাস্থ্যসেবার উন্নয়নে ব্যাপক কর্মসূচি হাতে নিয়েছি। দেশের ৩২টি ¯œাতকোত্তর চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানের ২২টিই আমরা করেছি। স্বাস্থ্যখাতকে ডিজিটাল সিস্টেমে এনেছি। প্রতিটি জেলায় মেডিকেল কলেজ করে দিচ্ছি। চিকিৎসাসেবা যেন মানুষের দোড়গোড়ায় পৌঁছায় সেই ব্যবস্থা করে দিচ্ছি। ডিজিটাল হেলথ এমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম স্থাপন করেছি। দুর্যোগপ্রবণ এলাকায় দুর্যোগের আগেই যেন চিকিৎসা সামগ্রী যেন পৌঁছে যায়, সে ব্যবস্থা নিয়েছি।
অটিজম শিশুদের এখন আর কেউ লুকিয়ে রাখে না : প্রধানমন্ত্রী বলেন, একসময় কারো বাচ্চা অটিজম বা প্রতিবন্ধি হলে লুকিয়ে রাখত, লজ্জা পেত। বাচ্চাদের বাইরে নিয়ে আসতে পারত না। এখন সেই অবস্থা নেই। কারণ তাদের ব্যাপারে আমরা চিকিৎসার ব্যবস্থা নিচ্ছি। ছোটবেলা থেকেই যেন পরীক্ষা করে দেখা হয় যে তার কোনোরকম নিউরে ডেভেলপমেন্টে বা অসুবিধা আছে কীনা। সেটা পরীক্ষা করে যথাযথ ব্যবস্থাপত্র যেন নেয়া হয় সেই ব্যবস্থা করা হচ্ছে। এ ব্যাপারে সায়মা ওয়াজেদের পদক্ষেপ ছিল। শুধু বাংলাদেশ না, আন্তর্জাতিকভাবেই এই বিষয়টাকে সে সামনে নিয়ে এসেছে। যার ফলে মানুষের সচেতনতা বেড়েছে। এখন কোনো প্রতিবন্ধী বা অটিস্টিক শিশু নিয়ে বাবা-মা বাইরে যেতে লজ্জা পায় না। এখন তাদের ট্রেনিং ও বিশেষজ্ঞ টেনিং দেয়া হচ্ছে। এই ধরনের শিশুর সঙ্গে কি ধরনের ব্যবহার ও চিকিৎসা করতে হবে- সেই প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। আমাদের চিকিসৎকরা এ ব্যাপারে আরেকটু যতœবান হবেন।
ঋতু বদলের সঙ্গে সঙ্গে মানুষও ভুলে যায় : প্রধানমন্ত্রী বলেন, শুনি যে আমরা না কী কিছুই করি নাই। তাই যখন যে সেক্টরে যাচ্ছি, সেই সেক্টরে কী কাজ করেছি। একটু মানুষকে জানানো দরকার। আসলে বাংলাদেশের মানুষ তো। ছয় ঋতুর দেশ। দুই মাস পরপর ঋতু বদলায়। পাখির ডাক বদলায়। বাতাসের গতি বদলায়। মানুষের মনও বদলায়। আর যা কিছু করি ভুলে যায়। এই ভুলে যাতে না যায়, তারজন্যে মাঝেমাঝে একটু স্মরণ করাতে হয়। তাই যখন যেখানে যাই মানুষের কাছে উন্নয়ন তুলে ধরি।
১৬২৬৩ নম্বরে ফোন করে বিনামূল্যে স্বাস্থ্যসেবা নিন : স্বাস্থ্য বাতায়নের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, টেলি মেডিসিন সেবা দেয়া হয়। কল সেন্টারে স্বাস্থ্য বাতায়ন ২৪ ঘণ্টা চালু থাকে। ১৬২৬৩ নম্বরে ফোন করলে স্বাস্থ্যসেবা সম্পর্কে সব পরামর্শ বিনা পয়সায়, অ্যাম্বুলেন্স বুকিংয়ের ব্যবস্থা করা আছে। আমাদের স্বাস্থ্যনীতিই হচ্ছে গণমুখী। আমাদের স্বাস্থ্য খাতে সাফল্য আন্তর্জাতিক বিশ্ব স্বীকৃতি দিয়েছে।
শয্যা সংখ্যা, চিকিৎসক ও নার্স বাড়িয়েছি : হাসপাতালগুলোতে শয্যা সংখ্যা, চিকিৎসক ও নার্স বাড়ানোর কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০০৯ সালে সরকারি হাসপাতালে শয্যা সংখ্যা ছিল মাত্র ৫৮৯টি, বেসরকারি হাসপাতালে ছিল ২২৭১টি। ২০২২ সালে সরকারি হাসপাতালে শয্যা সংখ্যা বাড়িয়ে এখন হয়েছে ৬৮ হাজার ৩৪৫। বেসরকারি হাসপাতালে ১ লাখ ৫ হাজার ১৬৮টি। চিকিৎসকের সংখ্যা ছিল ১২ হাজার ৩৮২ জন। এখন চিকিৎসকের সংখ্যা ৩০ হাজার ১৫২ জন। নার্স ছিল মাত্র ১৪ হাজার। এরমধ্যে প্রথম মেয়াদে আমরাই ১০ হাজার নিয়োগ দিয়েছিলাম। বর্তমানে নার্স নিয়োগ দিয়েছি ৪৩ হাজার ১৫ জন। আগে শুধু ডিপ্লোমা নার্স ছিল। এটাকে গ্র্যাজুয়েট নার্স ও তাদের চাকরি আপগ্রেড করা- সেটাও আমি করে দিয়েছি।
হাঁচি-কাশি দিলেই অনেকেই বিদেশে দৌড়ায় : শেখ হাসিনা বলেন, যারা একটু অর্থ ও সম্পদশালী। তারা তো দেশে কি আছে, দেখে না। হাঁচি-কাশি হলেই দৌড়ায় বিদেশে। তবে করোনাকালে যখন সিঙ্গাপুর হাসপাতাল বন্ধ, ব্যাংকক বন্ধ, আমেরিকা বন্ধ, ই্যংল্যান্ডসহ সব বন্ধ। তখন বাধ্য হয়েছে দেশেই চিকিৎসা নিতে। বড় লোক রোগীরা সবাই বাধ্য হয়েছে আমাদের হাসপাতালগুলোতে যেতে। তাদের কথা, আমাদের দেশে এত সুন্দর সুন্দর হাসপাতাল আছে। সরকারি হাসপাতালে এত সুন্দর সেবা দেয়! তারা অবাক হয়েছে। এজন্য আমি আমাদের ডাক্তার, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীকে ধন্যবাদ জানাই। যে তারা কষ্ট করে আমাদের স্বাস্থ্য খাতকে একটা অবস্থানে নিয়ে এসেছে।
বুস্টার ডোজ না নিলে জরিমানা : বিনামূল্যে করোনা ভ্যাকসিনের হিসাব তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বৃহস্পতিবারের রিপোর্ট পর্যন্ত আমাদের দেশে ১৪ কোটি ৭৪ লাখ ৯৪ হাজার ৪৯ জন প্রথম ডোজ, ১২ কোটি ৫১ লাখ ৯ হাজার ৬২৯ জন দ্বিতীয় ডোজ এবং ৫ কোটি ৮৮ লাখ ৮২ হাজার ২৭৫ জন বুস্টার ডোজ নিয়েছে। বুস্টার বাকি সবার নেয়া উচিত। আবার করোনার প্রাদুর্ভাব দেখা গিয়েছে। অনেক দেশে দ্রুত করোনা ছড়াচ্ছে। সবাই বুস্টার ডোজ নিলে সুরক্ষিত থাকবে। বিশেষ করে, চিকিৎসাসেবার সঙ্গে যারা সম্পৃক্ত তাদের সবাইকেই নিতে হবে। বিনা পয়সায় ভ্যাকসিন দিচ্ছি। না নিলে পয়সা নিয়ে নেব অথবা জরিমানা করব।
যুক্তরাষ্ট্র বঙ্গবন্ধুর খুনিকে লালন-পালন করছে : যুক্তরাষ্ট্রে পালিয়ে থাকা বঙ্গবন্ধুর এক খুনিকে ফিরিয়ে আনার প্রচেষ্টার কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমেরিকায় এক খুনি রয়ে গেছে। তাকে ফিরিয়ে আনার জন্য আমরা বারবার চেষ্টা করছি। তারা সেই খুনিকে লালন-পালন করছে। তাদের কারবারই এরকম। বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করি এবং জনগণের প্রতি আমার কৃতজ্ঞতা জানাই। অন্তত তারা আমাকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছিলেন বলেই এই হত্যার বিচার করতে পেরেছি। বঙ্গবন্ধুর পালিয়ে থাকা খুনিদের ফিরিয়ে আনার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, খুনিদের লালন-পালন করা একজন কানাডায়, একজন আছে আমেরিকায়, আর দুই জন পাকিস্তানে। আরেক জনের খবর পাওয়া যাচ্ছে না, কখনো ইন্ডিয়ায় কখনো জার্মানিতে বিভিন্ন জায়গায় মোসলেহউদ্দিন। তারপরও আমাদের প্রচেষ্টা আছে পৃথিবীর যেখানেই থাক, যেভাবেই হোক, ধরে এনে এদের সাজা অবশ্যই আমরা নিশ্চিত করব ইনশাআল্লাহ, সেটাই আমি চাই।’

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়