এইচএসসির বিতর্কিত প্রশ্ন, প্রণেতারা শাস্তি পেলেন : আর কোনো পাবলিক পরীক্ষার দায়িত্ব নয়

আগের সংবাদ

স্বাচিপের পঞ্চম সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী : চাই রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা

পরের সংবাদ

সুইজারল্যান্ডের কষ্টার্জিত জয়

প্রকাশিত: নভেম্বর ২৫, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ২৫, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ ডেস্ক : কাতার বিশ্বকাপে নিজেদের প্রথম ম্যাচে গতকাল সুইজারল্যান্ডের বিপক্ষে ১-০ গোলে পরাজিত হয় ক্যামেরুন। সুইজারল্যান্ডের হয়ে জয়সূচক একমাত্র গোলটি করেন ফরোয়ার্ড এমবোলো। যার জন্ম ক্যামেরেুনের রাজধানী ইওয়ান্দেতে। ফলে স্বজাতির গোলে কপাল পুড়েছে সমগ্র ক্যামেরুনবাসীর।
এ ম্যাচে দুদলই ছিল অচেনা প্রতিপক্ষ। তারা বিশ্বকাপ কিংবা কোনো টুর্নামেন্ট তো দূরের কথা প্রীতি ম্যাচেও কখনো মুখোমুখি হয়নি। ফিফা র‌্যাঙ্কিংয়ে সুইজারল্যান্ড রয়েছে ১৫তম অবস্থানে। অন্যদিকে ক্যামেরুন আছে ৪৩তম অবস্থানে।
কাতারের আল জানোব স্টেডিয়ামে বল দখলে পিছিয়ে ছিল ক্যামেরুন। তবে গোলের জন্য শট বেশি নেয় তারা, লক্ষ্যেও রাখে বেশি। কিন্তু আসল কাজ যেটা- জালে বল পাঠানো, ফিনিশিংয়ের ব্যর্থতায় পারেনি তারা। এতে অনাকাক্সিক্ষত এক রেকর্ডের খুব কাছে পৌঁছে গেছে আফ্রিকার দেশটি। বিশ্বকাপে হেরেছে টানা আট ম্যাচে। সবচেয়ে বেশি নয় ম্যাচে হারার রেকর্ড মেক্সিকোর (১৯৩০ থেকে ১৯৫৮)।
এ ম্যাচে সুইজারল্যান্ডের শুরুটা হয় দুর্দান্ত। কিন্তু দশ মিনিট পরেই ম্যাচ নিজেদের আয়ত্তে আনতে থাকে ক্যামেরুন। সুইসরা বেশ কয়েকটি আক্রমণ সাজালেও আফ্রিকান দেশটির রক্ষণে গিয়ে ব্যর্থ হয়। অপরদিকে সুযোগ পেলেই প্রতি-আক্রমণ করে বসে ক্যামেরুন। দশম মিনিটে দারুণ সুযোগ পায় দলটি। কিন্তু এমবোলোর বক্সের বাঁ দিক থেকে নেয়া শট গোলপোস্টের উপর দিয়ে উড়ে যায়। মাঝে চুপো মোটিংকে পাস দিলেই এগিয়ে যেতে পারত তারা।
৩০তম মিনিটে আবারো সুযোগ পায় ক্যামেরুন। এমবোলো ও চুপো মোটিং বল দেয়া নেয়া করে বক্সে হোংলাকে খুঁজে নেন। এই মিডফিল্ডারের বুলেট গতির শট ঠেকিয়ে দেন সুইস গোলরক্ষক। এরপর আরেকটি ভালো সুযোগ পায় ক্যামেরুন। মার্টিন হঙ্গলার ক্রস ঠিকমতো ফেরাতে পারেননি সুইজারল্যান্ড গোলরক্ষক। তার হাত থেকে ফস্কে যাওয়া বলে বিপদ হতে পারত। কিন্তু তৎপর ছিলেন না কার্ল টোকো একাম্বি। বিপদমুক্ত করেন ডিফেন্ডার সিলভান উইডমার। পাঁচ মিনিট পর আবার ত্রাতা তিনি। ক্রসে দুর্দান্ত স্লাইডে একাম্বিকে বলের নাগাল পেতে দেননি মাইন্সের এই ডিফেন্ডার। ব্যর্থ হয় ক্যামেরুনের দারুণ একটি আক্রমণ। প্রথমার্ধের যোগ করা সময়ে সুইজারল্যান্ডকে এগিয়ে নেয়ার সুযোগ হাতছাড়া করেন মানুয়েল আকনজি। কর্নার থেকে একটুর জন্য হেড দূরের পোস্ট দিয়ে লক্ষ্যে রাখতে পারেননি ম্যানচেস্টার সিটির এই ডিফেন্ডার।
ম্যাচের অচলাবস্থা ভাঙে দ্বিতীয়ার্ধে। প্রথমার্ধে দ্বিতীয় সেরা হয়ে থাকা দল সুইজারল্যান্ড করে বসে গোল। তখন ম্যাচের বয়স ৪৮ মিনিট। গোলশূন্য প্রথমার্ধের পর দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে জের্দান শাকিরির ক্রস থেকে বড় সুযোগ পেয়ে যান এমবোলো। দারুণ এক ফিনিশে বলটা জড়ান ক্যামেরুনিয়ানদের জালে।
গোলের পর দেখা যায় দারুণ এক দৃশ্য। জন্মভূমির বিপক্ষে গোল করেছেন বলেই কিনা, গোলটা উদযাপনই করেননি এমবোলো। দুই হাত তুলে জানান প্রতিক্রিয়া, যেন গোলটা করে বড় অপরাধই করে ফেলেছেন। এমন দৃশ্য সাধারণত দেখা যায় ক্লাব ফুটবলে, সাবেক ক্লাবের বিপক্ষে গোল করলে অনেক গোলদাতা উদযাপনটা করেন এভাবে। গতকাল সে প্রতিক্রিয়া আন্তর্জাতিক ফুটবলেও টেনে এনেছেন এমবোলো।
২০১৫ সাল থেকে সুইজারল্যান্ড জাতীয় দলে খেলছেন তিনি। ৬০ ম্যাচে ১২টি গোলও আছে তার। গতকাল এই প্রথম জন্মভূমির বিপক্ষে গোল করেছেন ২৫ বছর বযসী এই ফরোয়ার্ড। ১৯৯৭ সালে ক্যামেরেুনের রাজধানী ইওয়ান্দেতে জন্ম নেন এমবোলো। স্বামীর সঙ্গে ছাড়াছাড়ি হয়ে যাওয়ার পর সেখান থেকে ৫ বছর বয়সী ছেলে এমবোলোকে নিয়ে ফ্রান্সে পাড়ি জমায় তার মা। কিন্তু ফ্রান্সে গিয়েও থিতু হতে পারেননি তিনি। পরের বছর এমবোলোদের ঠাঁই হয় সুইজারল্যান্ড। বাসেলে বসতি গাড়েন এমবোলোর মা। ২০১৪ সালে এমবোলো সুইজারল্যান্ডের নাগরিকত্ব পান।
৬৬তম মিনিটে এমবিউমোর ফ্রি-কিকে সুযোগ আসে ফ্রাঙ্ক জাম্বু আঙ্গিসার সামনে। কিন্তু হেড করেন গোলরক্ষক বরাবর। প্রতি-আক্রমণে ব্যবধান দ্বিগুণ প্রায় করেই ফেলেছিল সুইজারল্যান্ড। পেনাল্টি স্পটের কাছ থেকে রুবেন ভার্গাসের শট বাঁ দিকে ঝাঁপিয়ে ব্যর্থ করে দেন গোলরক্ষক আন্দ্রে ওনানা।
হার এড়ানোর আশায় শেষ দিকে বেশ কিছু পরিবর্তন করেন ক্যামেরুন কোচ। কিন্তু কাজ হয়নি, তেমন কোনো সুযোগ তৈরি করতে পারেননি কেউই।
শেষ দিকে গ্রানিত জাকার শট ফিরিয়ে ব্যবধান আরো বড় হতে দেননি ওনানা। তার চমৎকার সেভে শেষ সময় পর্যন্ত ম্যাচে ছিল ক্যামেরুন। কিন্তু আক্রমণভাগের ব্যর্থতায় ব্যবধান ঘুচিয়ে দেয়া গোলের দেখা পায়নি তারা। সুইজারল্যান্ডের বিপক্ষে গোল খাওয়ার পরও হাল ছাড়েনি ক্যামেরুন। সমতার জন্য মরিয়া হয়ে সুযোগ তৈরি করেছিল বেশ। কিন্তু শেষমেশ সমতা আর ফেরানো হয়নি তাদের। ফলে ১-০ গোলের জয় নিয়ে বিশ্বকাপ শুরু করে সুইজারল্যান্ড।
ক্যামেরুনের বিপক্ষে জয় দিয়ে ব্রাজিলকে সতর্ক করে রেখেছে সুইসরা। ২৮ নভেম্বর ব্রাজিলের বিপক্ষে মাঠে নামবে শাকা-শাকিরারা। এদিকে এই হারের পর ঘুরে দাঁড়াতে চাইবে ক্যামেরুন। ২৮ তারিখে ব্রাজিলের বিপক্ষে খেলার আগে সার্বিয়ার বিপক্ষে মাঠে নামবে তারা।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়