এইচএসসির বিতর্কিত প্রশ্ন, প্রণেতারা শাস্তি পেলেন : আর কোনো পাবলিক পরীক্ষার দায়িত্ব নয়

আগের সংবাদ

স্বাচিপের পঞ্চম সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী : চাই রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা

পরের সংবাদ

নতুন শিক্ষাক্রম এবং বাস্তবতা

প্রকাশিত: নভেম্বর ২৫, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ২৫, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

স্বাধীনতার পর শিক্ষা খাতে বহুমাত্রিক পরিবর্তন সাধিত হয়েছে কিন্তু কাক্সিক্ষত সাফল্য অর্জিত হয়নি। কোনো পদ্ধতি যখন চালু করা হয় তখন মাঠ পর্যায়ে প্রচুর জরিপ এবং গবেষণার প্রয়োজন হয়। জরিপ ও গবেষণায় ঘাটতি থাকলে সুফল পাওয়া যায় না। শিক্ষা খাতে বহুবার সংস্কার হয়েছে কিন্তু সেটা যথাযথ জরিপ আর গবেষণালব্ধ না হওয়ার কারণে সেটাতে পূর্ণাঙ্গ সফলতা আসেনি। আর তাই নতুন করে শিক্ষাক্রম তৈরির প্রয়োজন হলো এবং ২০২৩ সাল থেকে শুরু হতে যাচ্ছে। নতুন শিক্ষাক্রমকে অবশ্যই সাধুবাদ জানাতে হবে। কিন্তু এর দুর্বল দিকগুলোকে অবশ্যই বিবেচনায় নিতে হবে এবং বাস্তবে এর প্রয়োগ কতটুকু সম্ভব সেটাও ভাবতে হবে। নতুন শিক্ষাক্রমে পাঠ্য বই, পরীক্ষা পদ্ধতি ও শ্রেণি কার্যক্রম নিয়ে মানসম্মত কিছু উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। জিপিএভিত্তিক ফলাফলে পরিবর্তন আসছে। জিপিএ-৫ প্রাপ্তির অসুস্থ প্রতিযোগিতা গ্রাম ও শহর অঞ্চলের শিক্ষাবৈষম্য বাড়াতে থাকে। নতুন শিক্ষাক্রমে জিপিএভিত্তিক ফলাফল তুলে দেয়ার সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানাতে হয়।
নতুন শিক্ষাক্রমের আরেকটি ভালো দিক হলো সৃৃৃজনশীলের আদলে কাঠামোবদ্ধ প্রশ্ন পদ্ধতির অবসান এবং গতানুগতিক বহুনির্বাচনী প্রশ্নের আমূল সংস্কার। কাঠামোবদ্ধ সৃৃজনশীল প্রশ্নে প্রায় দেড় যুগ চলে গেল কিন্তু কাক্সিক্ষত সুফল এলো না। সৃজনশীল প্রশ্ন তৈরির জন্য যে ধরনের প্রশিক্ষিত শিক্ষক দরকার সেটা করা সম্ভব হয়নি। এমনকি প্রকৃত সৃৃজনশীলের আদলে পাঠ্য বইও তৈরি করা সম্ভব হয়নি। মোটকথা একটা লেজেগোবরে অবস্থা তৈরি হয়েছিল শিক্ষাক্রমে। নতুন শিক্ষাক্রমে শিক্ষার্থীদের মূল্যায়নে শিখনকালীন ও সামষ্টিক দুটি ধাপে মূল্যায়নের কথা বলা হয়েছে। শিখনকালীন মূল্যায়ন হবে প্রাতিষ্ঠানিক এবং সামষ্টিকতা হবে জাতীয়ভাবে। শিখনকালীন মূল্যায়নের বিষয়টি নিয়ে আরো গবেষণার প্রয়োজন আছে। শিখনকালীন মূল্যায়ন হবে বছরব্যাপী ধারাবাহিকভাবে। ধারণাটি চমৎকার। কিন্তু দেশের বাস্তবতা ভিন্ন কথা বলে। উন্নত ও শিক্ষায় অগ্রগামী দেশগুলোতে শিখনভিত্তিক বা প্রাতিষ্ঠানিক ধারাবাহিক মূল্যায়নকে অগ্রাধিকার দেয়া হয় এবং তারা এ ক্ষেত্রে সফল। তাদের সফলতার পেছনে মূল কারণ হলো শিক্ষকদের মর্যাদা এবং উচ্চ বেতন থাকা। এমনকি শিক্ষকরা সেখানে কোচিং বাণিজ্যে জড়িত হন না। কিন্তু আমাদের প্রেক্ষাপট ঠিক এর উল্টো। আমাদের শিক্ষকদের সামাজিক মর্যাদা ও বেতন দুটিরই দৈনদশা। বেতন কাঠামো দুর্বল হওয়ায় শিক্ষকদের মধ্যে কোচিং মনোবৃত্তি প্রকট হয়ে ওঠে। তাই নতুন শিক্ষাক্রমের এই শিখনভিত্তিক মূল্যায়ন শিক্ষকদের কোচিং বাণিজ্যের ফাঁদে পড়তে পারে।
অনুকূল পরিবেশ না দিয়ে শুধু বৃক্ষ বীজ বপন করলেই তো আর ফল পাওয়া যায় না। নতুন শিক্ষাক্রম অনুযায়ী শিক্ষার্থীদের ওপর পরীক্ষার যে প্রচণ্ড চাপ ছিল সেটা থেকে তারা অনেকটাই মুক্তি পাবে। তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত কোনো প্রথাগত পরীক্ষা হবে না। এটা দারুণ একটি পদক্ষেপ। চতুর্থ থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত বাংলা, ইংরেজি, গণিত, বিজ্ঞান, সামাজিক বিজ্ঞান বিষয়ে শিখনভিত্তিক ও সামষ্টিক মূল্যায়ন হবে। অন্য পাঁচটি বিষয়ের মূল্যায়ন প্রতিষ্ঠানে ধারাবাহিক বা বছরব্যাপী হবে। এটিও দারুণ উদ্যোগ। কেননা ১০টি বিষয়ের শিখনভিত্তিক ও সামষ্টিক মূল্যায়ন করতে গেলে হিতে বিপরীত হতো। একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণিতে সামষ্টিক মূল্যায়নের নম্বর রাখা হয়েছে ৭০ আর শিখনভিত্তিক ৩০। তবে সামষ্টিক মূল্যায়নের প্রশ্ন পদ্ধতির ধরন সম্পর্কে এখনও বিস্তারিত জানা যায়নি। সামষ্টিক মূল্যায়নের ক্ষেত্রে অবশ্যই নতুনত্ব আনা প্রয়োজন। পাঠ্য বইতে অধ্যায়ভিত্তিক প্রশ্ন ব্যাংকজুড়ে দেয়ার বিকল্প দেখছি না। শিক্ষার্থীদের পাঠ্যবইমুখী করতে হলে অবশ্যই প্রশ্ন ব্যাংক তৈরি করে দিতে হবে।
আমাদের দেশে সবচেয়ে কম মেধাবীরা শিক্ষকতা পেশায় আসে। কেননা উন্নত ক্যারিয়ার গঠনের সুযোগ তারা এই পেশায় খুঁজে পান না। বেতন কম, পদোন্নতির সীমিত সুযোগ, বদলি, সামাজিক মর্যাদাসহ নানা কারণে মেধাবীরা এই পেশায় আসতে চান না। আর মেধাবীরা যদি এই পেশায় না আসেন তবে নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নের স্বপ্ন অধরাই থেকে যাবে। তাই স্বতন্ত্র বেতন কাঠামো নিশ্চিত করে মেধাবীদের এই পেশায় নিয়ে আসতে হবে। শিক্ষাকে রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার না করে দেশের স্বার্থে ব্যবহার করতে হবে।

মাজহার মান্নান : লেখক ও শিক্ষক, ঢাকা।
[email protected]

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়