এইচএসসির বিতর্কিত প্রশ্ন, প্রণেতারা শাস্তি পেলেন : আর কোনো পাবলিক পরীক্ষার দায়িত্ব নয়

আগের সংবাদ

স্বাচিপের পঞ্চম সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী : চাই রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা

পরের সংবাদ

দেশের অর্থনীতি যথেষ্ট গতিশীল ও নিরাপদ : যশোরে বিমান বাহিনীর রাষ্ট্রপতি কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশিত: নভেম্বর ২৫, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ২৫, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, কোভিড-১৯ মহামারি, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ও নিষেধাজ্ঞার ফলে সারা বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দার মধ্যে, অথচ আমাদের অর্থনীতি এখনো যথেষ্ট গতিশীল ও নিরাপদ আছে। আমরা বৈশ্বিক মন্দা কাটিয়ে উঠতে অত্যন্ত সজাগ ও সক্রিয় আছি। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে যশোরে অবস্থিত বাংলাদেশ বিমান বাহিনী একাডেমিতে ‘রাষ্ট্রপতি কুচকাওয়াজ (শীতকালীন)-২০২২’ এ যোগদান অনুষ্ঠানে দেয়া ভাষণে তিনি এসব কথা বলেন।
বিমান বাহিনীর নবীন কর্মকর্তাদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, অনেক দেশ যখন দুর্ঘটনা, দুর্বিপাকে পড়ে, আমরা তাদের সহযোগিতা করি। দেশে ঝড়, বন্যা বা কোনোরকম দুর্ঘটনা ঘটলে বিমান বাহিনীসহ আমাদের সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা জনগণের পাশে দাঁড়ায়, সেবা করে। জনগণের আস্থা ও বিশ্বাস অর্জন করে। যে কোনো একটা যুদ্ধে জয়ী হতে এটা দরকার।
‘বাংলাদেশ সবার সঙ্গে বন্ধুত্বের নীতি বিশ্বাস করে’- জাতির পিতার সেই পররাষ্ট্রনীতি তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারপরও দক্ষতার দিক থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে আমাদের সব ধরনের উৎকর্ষতা বজায় রেখে চলতে হবে। সেই আত্মবিশ্বাস নিয়ে চলতে হবে। আমরা সব সময় প্রশিক্ষণের ওপর সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিই। দেশ ও জনগণের প্রতি দায়িত্ববোধ থাকতে হবে। জাতির পিতা বলেছেন দেশ ও দেশের জনগণের প্রতি দায়িত্ববোধ হচ্ছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। নতুনদের জন্য এই কথা অনেক বেশি প্রযোজ্য।
এর আগে সকালে ঢাকা থেকে হেলিকপ্টারযোগে যশোর পৌঁছান প্রধানমন্ত্রী। সকাল সাড়ে ১০টায় বিমান বাহিনী একাডেমির প্যারেড গ্রাউন্ডে অবতরণ করেন তিনি। এ সময় বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল শেখ আব্দুল হান্নান তাকে স্বাগত জানান। প্রধানমন্ত্রীকে সশস্ত্র সালাম জানায় বিমান বাহিনীর চৌকস সদস্যরা। প্রধানমন্ত্রী খোলা জিপে করে প্যারেড পরিদর্শন ও সালাম গ্রহণ করেন। পরে তিনি সেরা ক্যাডেটদের হাতে ‘সোর্ড অব অনার’, ‘চিফ অব এয়ার স্টাফ ট্রফি’ এবং ‘কমান্ড্যান্টস ট্রফি’ তুলে দেন। নির্বাচিত ক্যাডেটদের ফ্লাইং ব্যাজ পরিয়ে দেন। বিভিন্ন সাফল্যের স্বীকৃতিস্বরূপ সম্মাননায় ভূষিত করেন। ৮১ নম্বর বাফা কোর্সে সার্বিক প্রশিক্ষণে সর্বোচ্চ চৌকস সাফল্যের জন্য স্কোয়াড্রন সিনিয়র অফিসার খন্দকার ইমামুর রহমান ‘সোর্ড অব অনার’ লাভ করেন। অনুষ্ঠানে মনোজ্ঞ ফ্লাইপাস্ট এবং এরোবেটিকস প্রদর্শন করেন বিমান সেনারা।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, শুধু অপারেশন ও প্রশিক্ষণই নয়, বিমান বাহিনীর সব সদস্যের জীবনযাত্রার মনোন্নয়নে নানামুখী কল্যাণমূলক উদ্যোগ নিয়েছি। আমি চাই ক্যাডেটদের জীবন সুন্দর ও সফল হোক। বাংলাদেশ যেন ক্যাডেটদের নিয়ে গর্ব করতে পারে। তাছাড়া শান্তিরক্ষা মিশনেও আমাদের বিমান সেনারা কাজ করে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের সঙ্গে চলতে হয়। এজন্য প্রশিক্ষণের কথা সব সময় মনে রাখতে হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, বিমান বাহিনীর গৌরবময় ইতিহাস আছে। জাতির পিতার উদাত্ত আহ্বানে সাড়া দিয়ে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ১৯৭১ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর একটি ড্যাকোটা বিমান, একটি অটার বিমান ও একটি অ্যালুয়েট হেলিকপ্টারসহ ৫৭ জন সদস্য নিয়ে ‘কিলো ফ্লাইট’ নামে এ বাহিনী যাত্রা শুরু করে। বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের ভূরাজনৈতিক অবস্থান ও সামরিক কৌশলগত দিক বিবেচনায় রেখে একটি আধুনিক, শক্তিশালী ও পেশাদার বিমান বাহিনী গঠনের স্বপ্ন দেখেছিলেন। তার দূরদর্শী ও বলিষ্ঠ সিদ্ধান্তে স্বাধীনতার পরপরই বিমান বাহিনীতে সংযোজিত হয় সেই সময়কার অত্যাধুনিক সুপারসনিক যুদ্ধবিমান, পরিবহন বিমান, হেলিকপ্টার ও এয়ার ডিফেন্স রাডার।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতার অপরিসীম প্রজ্ঞা ও দূরদৃষ্টিকে সামনে রেখে বিমান বাহিনীকে যুগোপযোগী, প্রযুক্তিগতভাবে সুসজ্জিত ও আধুনিক বাহিনী হিসেবে গড়ে তুলতে নিরলসভাবে আওয়ামী লীগ কাজ করে যাচ্ছে। ১৯৯৬-২০০১ মেয়াদে বিমান বাহিনীতে সংযোজিত হয় চতুর্থ প্রজšে§র অত্যাধুনিক মিগ-টুয়েন্টি নাইন যুদ্ধবিমান, সি-ওয়ান থার্টি পরিবহন বিমান এবং উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন এয়ার ডিফেন্স রাডার। ২০০৯ সাল থেকে এ যাবৎ বিমান বাহিনীর আধুনিকায়ন ও অপারেশনাল সক্ষমতা বাড়ানোর লক্ষ্যে এফ-সেভেন বিজিআই যুদ্ধবিমান, সর্বাধুনিক এভিওনিক্স সমৃদ্ধ সি-ওয়ান থার্টি জুলিয়েট পরিবহন বিমান, এম আই-ওয়ান সেভেন ওয়ান এসএইচ হেলিকপ্টার, মেরিটাইম সার্চ এন্ড রেসকিউ হেলিকপ্টার সংযোজনসহ আমরা নানামুখী পদক্ষেপ নিয়েছি। তিনি বলেন, ১৯৭৪ সালে প্রণীত জাতির পিতার প্রতিরক্ষা নীতির আলোকে আমরা সশস্ত্র বাহিনীর জন্য দীর্ঘমেয়াদি ‘ফোর্সেস গোল-২০৩০’ প্রণয়ন করেছি। যা পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়ন হচ্ছে। বিভিন্ন ধরনের বিমান, হেলিকপ্টার, রাডার ও অন্যান্য সামরিক সরঞ্জামের সুষ্ঠু, নিরাপদ ও সাশ্রয়ী রক্ষণাবেক্ষণ এবং ওভারহলিংয়ের লক্ষ্যে আমরা নির্মাণ করেছি ‘বঙ্গবন্ধু এরোনটিক্যাল সেন্টার’। দেশের এভিয়েশন সেক্টরকে এগিয়ে নিতে ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এভিয়েশন এন্ড অ্যারোস্পেস বিশ্ববিদ্যালয়’ স্থাপন করেছি। বাংলাদেশ বিমান বাহিনী একাডেমির সুনাম আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে ব্যাপ্তি লাভ করেছে। বন্ধুপ্রতিম বিভিন্ন দেশের অফিসার ক্যাডেটগণ এই একাডেমিতে প্রশিক্ষণ নিয়েছে। এই প্যারেডে অংশ নিয়েছে নেপাল, ফিলিস্তিন ও জাম্বিয়ার অফিসার ক্যাডেটগণ। প্রধানমন্ত্রী এ সময় জাতির পিতার ভাষণের উদ্ধৃতি তুলে ধরে বলেন, ‘ইনশাআল্লাহ, এমন দিন আসবে, এই একাডেমির নাম শুধু দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় নয়, সমগ্র দুনিয়াতে সম্মান অর্জন করবে’। সত্যিই আমরা জাতির পিতার স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে পেরেছি।
বিমান বাহিনীর সদস্যদের সার্বিক দক্ষতা বাড়াতে প্রশিক্ষণ সুবিধার উন্নয়ন ও আধুনিকায়নের ওপর গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, উন্নততর ও যুগোপযোগী প্রশিক্ষণ সুনিশ্চিত করার জন্য সংযোজন করা হয়েছে অত্যাধুনিক ফ্লাই-বাই-ওয়্যার এবং ডিজিটাল ককপিটসম্বলিত ইয়াক ওয়ান থার্টি কমব্যাট ট্রেইনার, কে-এইট ডব্লিউ জেট ট্রেইনার, এল ফোর ওয়ান জিরো ট্রান্সপোর্ট ট্রেইনার, এ ডব্লিউ ওয়ান ওয়ান নাইন কেএক্স হেলিকপ্টার ট্রেইনার এবং বিভিন্ন ধরনের সিমুলেটর। অতি স¤প্রতি সংযোজন করা হয়েছে গ্রোব প্রশিক্ষণ বিমান। এছাড়া, বিমান বাহিনীর বৈমানিকগণের নৈশকালীন উড্ডয়ন প্রশিক্ষণ সহজতর করার লক্ষ্যে নাইট ভিশন ট্রেইনার সংযোজন করা হয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, অতি স¤প্রতি এয়ার কমান্ড অপারেশন সেন্টারের সাংগঠনিক কাঠামোর অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এর ফলে, আমাদের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা যেমন নিñিদ্র হয়েছে, তেমনি দেশের আকাশসীমায় বিমান পরিচালনার সুবিস্তৃত পরিসর পর্যবেক্ষণ সহজতর হয়েছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়