এইচএসসির বিতর্কিত প্রশ্ন, প্রণেতারা শাস্তি পেলেন : আর কোনো পাবলিক পরীক্ষার দায়িত্ব নয়

আগের সংবাদ

স্বাচিপের পঞ্চম সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী : চাই রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা

পরের সংবাদ

দুই জঙ্গি ছিনতাই : পলাতক জিয়ার ঘনিষ্ঠ আরাফাত ছিল টার্গেট

প্রকাশিত: নভেম্বর ২৫, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ২৫, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত দুই জঙ্গিকে পুরান ঢাকার সিএমএম আদালত চত্বর থেকে ছিনিয়ে নেয়ার ঘটনায় শীর্ষ জঙ্গিদের নির্দেশে প্রধান সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করেন মেহেদী হাসান অমি ওরফে রাফি। এজন্য একমাস ধরে পরিকল্পনা করা হয়। কবে কীভাবে জঙ্গিদের ছিনিয়ে নেয়া হবে সেটির পরিকল্পনা আদালতে হাজিরা দিতে গিয়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জঙ্গিদের জানিয়ে আসতেন রাফি। এরই ধারাবাহিকতায় ৪ জঙ্গিকে ছিনিয়ে নেয়ার ছক নিয়ে গত ২০ নভেম্বর কার্যক্রম চালায় জঙ্গি সংগঠনের বেশ কয়েকজন সদস্য। সেদিনও হাজিরা দিতে রাফি আদালতে গিয়েছিলেন এবং ছিনিয়ে নেয়া জঙ্গিদের খরচ বাবদ মোটা অঙ্কের টাকা পৌঁছে দিয়েছেন।
পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম এন্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট (সিটিটিসি) বলছে, ৪ জঙ্গিকে ছিনিয়ে নেয়ার টার্গেটে জঙ্গিরা কার্যক্রম শুরু করলেও ২ জনকে নিতে সক্ষম হয়। তাদের প্রধান টার্গেট ছিল নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের প্রধান মোস্ট ওয়ান্টেড জঙ্গি মেজর সৈয়দ জিয়াউল হক ওরফে মেজর জিয়ার ঘনিষ্ঠ আরাফাত রহমান ওরফে সিয়াম ওরফে শামস। পরিকল্পনা অনুযায়ী আরাফাত পালিয়ে যাওয়ার সময় পুলিশ সদস্যরা তাকে ধরে ফেলে।
আনসার আল ইসলামের আসকারি শাখার সদস্য মেহেদী হাসান অমি ওরফে রাফিকে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী এলাকা থেকে গ্রেপ্তারের পর এসব তথ্য জানিয়েছেন কাউন্টার টেররিজম এন্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের প্রধান ও অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মো. আসাদুজ্জামান। গত বুধবার রাফিকে গ্রেপ্তার করা হয়। গতকাল বৃহস্পতিবার তাকে আদালতে হাজির করে পুলিশ। মামলার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য ১০ দিনের রিমান্ডে নিতে আবেদন করেন তদন্তকারী কর্মকর্তা সিটিটিসির পরিদর্শক মুহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ। শুনানি শেষে ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট শফি উদ্দিন রাফির ৭ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। শুনানিতে রাফির পক্ষে কোনো আইনজীবী ছিলেন না।
গতকাল দুপুরে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সিটিটিসি প্রধান মো. আসাদুজ্জামান বলেন, জঙ্গি ছিনতাইয়ের ঘটনায় দায়ের করা মামলার এজাহারনামীয় আসামি মেহেদী হাসান অমি। তিনি সংগঠনে রাফি হিসেবে পরিচিত। ২০১৩ সাল থেকে তিনি আনসার আল ইসলামের সঙ্গে সম্পৃক্ত। এর আগে ২০০৯ সাল থেকে হিজবুত তাহরীর সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। সরকারবিরোধী অপতৎপরতার কারণে ২০১০ সালে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। ২০১১ সালে জামিনে বের হয়ে ২০১৩ সালে আনসার আল ইসলামে যোগ দেন। তখন সংগঠনের নাম ছিল আনসারুল্লাহ বাংলা টিম (এবিটি)।
তিনি আরো বলেন, অল্পদিনের মধ্যে অমির দক্ষ নেতৃত্বের কারণে তাকে আনসার আল ইসলামের সিলেট অঞ্চলের দাওয়া বিভাগের প্রধান করা হয়। এরপর অমি সিলেট অঞ্চলের অনেককে সংগঠনে নিয়োগ দেন। দক্ষ নেতৃত্ব, সংগঠনের নিবেদিত প্রাণ ও অতি সাহসী কর্মী হিসেবে তিনি সংগঠনের মূল ব্যক্তি মোস্ট ওয়ান্টেড জঙ্গি মেজর জিয়ার দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। এরপর অমিকে সংগঠনের আসকারি বিভাগে নিয়োগ দেয়া হয়। অমির মাধ্যমে ছিনিয়ে নেয়া জঙ্গি মাইনুল হাসান শামীমকেও আসকারি বিভাগে নিয়োগ দেয়া হয় উল্লেখ করে সিটিটিসি প্রধান বলেন, ২০১৬ সালে যখন ব্লগার হত্যাসহ বেশ কিছু ঘটনা সংঘটিত হয় তখন সিটিটিসি অভিযান চালিয়ে মোহাম্মদপুর-বাড্ডা এলাকায় তাদের আস্তানা পায়। সে সময় অমিকে সিলেট থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। ২০১৭ সালে জামিনে আবার ছাড়া পায়। জামিন পাওয়ার পর থেকে তিনি নিয়মিত হাজিরা দিতেন, এর ফলে বন্দি থাকা জঙ্গিদের সঙ্গে তার যোগাযোগ ছিল। সংগঠনের শীর্ষ জঙ্গিদের সঙ্গেও তার নিয়মিত যোগাযোগ ছিল। যখন আসামি ছিনিয়ে নেয়ার পরিকল্পনা হয়, তখন অমির মাধ্যমে বন্দি জঙ্গিদের অবগত করা হয়। যারা ছিনিয়ে নেবে, তাদের সঙ্গেও সমন্বয় করেন অমি।
সিটিটিসির প্রধান আরো বলেন, মামলায় হাজিরা দেয়ার সময় রাফি বেশ কিছু নগদ অর্থ সঙ্গে নিয়ে আসত। যা বন্দিদের বিভিন্ন খরচ নির্বাহের জন্য সরবরাহ করত। ঘটনার দিন ছিনিয়ে নেয়া জঙ্গিদেরও খরচের জন্য মোটা অঙ্কের অর্থ দেন তিনি। তাকে রিমান্ডে এনে টাকার উৎসের বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। এক প্রশ্নের জবাবে সিটিটিসি প্রধান বলেন, সেদিন আদালতে হাজিরা দেয়ার জন্য ১২ জঙ্গিকে আনা হয়। সেখান থেকে ৪ জনকে ছিনতাইয়ের পরিকল্পনা ছিল। বিষয়টি ৪ জঙ্গিই জানতেন। তাদের প্রধান প্রায়োরিটি ছিল আরাফাত এবং দ্বিতীয় ছিল শামীম। শামীমকে ছিনিয়ে নিতে পারলেও আরাফাতকে আটকে রাখতে সক্ষম হয় পুলিশ।
সংবাদ সম্মেলনে আরো জানানো হয়, আনসার আল ইসলাম কাট আউট পদ্ধতিতে তাদের অপারেশনগুলো সম্পন্ন করে। তারা অত্যন্ত গোপনীয়তা বজায় রাখে। ছিনতাইয়ের বিষয়টি চার জঙ্গিই জানত। এর বাইরে আর কেউ জানত কিনা এ বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। হয়তো এ বিষয়টি তারা কারাগারের ভেতর থেকেও জানতে পারে অথবা হাজিরা দেয়ার সময়ও জানতে পারে।
পাশাপাশি ওই চার জঙ্গিকে একসঙ্গে আনা কিংবা একসঙ্গে হ্যান্ডকাফ পরানোর বিষয়গুলো খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এখানে কারো অবহেলা বা গাফিলতি রয়েছে কিনা এগুলো যাচাইয়ে কমিটি গঠন করা হয়েছে। আমরা শুধু অপারেশনাল বিষয়গুলো দেখছি।
জামিনে থাকা জঙ্গিদের মনিটরিংয়ের বিষয়ে জানতে চাইলে সিটিটিসির প্রধান বলেন, আমরা তাদের মনিটরিং করি। তারা ঘরে বসেও গোপন অ্যাপসের মাধ্যমে কাজটি করতে পারে। আমরা কিছুদিন আগে দুজন ডাক্তারকে ধরেছি, যারা প্রতিদিন স্বাভাবিক কাজকর্মের মধ্যেই বিভিন্ন এনক্রিপটেড অ্যাপসের মাধ্যমে জঙ্গি কার্যক্রম চালিয়ে আসছিল। জামিনে থাকা জঙ্গিরা হুমকি কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, রিস্ক অবশ্যই রয়েছে। রিস্কটা মাথায় রেখেই আমরা তাদের মনিটরিং অব্যাহত রাখি। মেজর জিয়ার অবস্থান প্রসঙ্গে তিনি বলেন, তার অবস্থান জানলে গ্রেপ্তার করব। অবস্থান জানামাত্র অভিযান পরিচালনা করা হবে।
উল্লেখ্য, গত রবিবার দুপুর সোয়া ১২টার দিকে ঢাকার আদালত প্রাঙ্গণ থেকে পুলিশের চোখে স্প্রে মেরে প্রকাশক ফয়সাল আরেফিন দীপন হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত দুই জঙ্গি আনসার আল ইসলামের সদস্য আবু সিদ্দিক সোহেল ও মইনুল হাসান শামীমকে ছিনিয়ে নেয়া হয়। এ ঘটনায় রাতে ২০ জঙ্গিকে আসামি করে মামলা করে পুলিশ। ওই রাতেই ১০ জঙ্গির ১০ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। এছাড়া পলাতক দুই আসামিকে ধরিয়ে দিতে পারলে প্রত্যেকের জন্য ১০ লাখ টাকা করে মোট ২০ লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করেছে পুলিশ। গঠন করা হয়েছে দুটি তদন্ত কমিটিও।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়