এইচএসসির বিতর্কিত প্রশ্ন, প্রণেতারা শাস্তি পেলেন : আর কোনো পাবলিক পরীক্ষার দায়িত্ব নয়

আগের সংবাদ

স্বাচিপের পঞ্চম সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী : চাই রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা

পরের সংবাদ

ডেটলাইন ১০ ডিসেম্বর : দশ দফা দাবি আদায়ে ১ দফার ছক বিএনপির

প্রকাশিত: নভেম্বর ২৫, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ২৫, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

রুমানা জামান : সরকারবিরোধী আন্দোলনের কঠোর হুঙ্কার, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার হাঁকডাকে ছোট দলের সঙ্গে সম্মিলন ঘটিয়ে যুগপৎ গণআন্দোলনের প্রক্রিয়া গুছিয়ে এনেছে বিএনপি। এ আন্দোলনের ১০ দফা দাবির খসড়াও চূড়ান্ত করেছে রাজপথের প্রধান এই বিরোধী দলটি। একই সঙ্গে বৈশ্বিক রাজনীতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে জাতীয়তাবাদী চিন্তাকে প্রাধান্য দিয়ে রাষ্ট্রের সার্বিক সংস্কারের প্রতিশ্রæতি হিসেবে ২৭ দফা রূপরেখার প্রণয়ন করেছেন বিএনপির নীতি-নির্ধারকরা। আগামী ১০ ডিসেম্বর ঢাকার সমাবেশে ১০ দফা দাবি তুলে ধরে ‘সরকারের পদত্যাগের’ দাবিতে এক দফা আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণাা করবে দলটি। সেদিন সমমনা দলগুলো একই মঞ্চে হাতে হাত রেখে একই সুর মেলাবেন, নাকি ভিন্ন ভিন্ন মঞ্চে থাকবেন- এই সিদ্ধান্ত এখনো ঝুলে রয়েছে।
নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে, সরকার হটাতে সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে দুই পর্বের সংলাপ শেষে যে প্রস্তাবগুলো এসেছে তার ভিত্তিতে যুগপৎ আন্দোলনের ১০ দফা প্রস্তাব তৈরি করা হয়েছে। এছাড়া দেশ গঠনে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ঘোষিত ‘ভিশন-২০৩০’ আলোকে রাষ্ট্র সংস্কারের রূপরেখার খসড়া প্রণয়ন করেছেন দলটির নীতিনিধারকরা। এ কাজে বিএনপি সমর্থিত আইনজ্ঞ, রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধি এবং পেশাজীবী নেতারা পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করেছেন।
সূত্র জানায়, ১০ ডিসেম্বর কর্মসূচি ঘোষণার আগে অভিন্ন দাবিতে যুগপৎ আন্দোলনে রাজি সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর সর্বশেষ মতামত লিখিতভাবে নিতে চায় দলটি। এ লক্ষ্যে ১০ দফা দাবি আর ২৭ দফার রূপরেখার খসড়া প্রস্তাবের দুটি লিখিত কপি বিএনপির ‘অফিসিয়াল প্যাডে’ জোটের নেতাদের কাছে পাঠানো হয়েছে। আগামী ৫ ডিসেম্বরের আগেই তাদের আপত্তি-অনাপত্তি, সংযোজন বিয়োজন করে দলের প্রধান নেতার সই সমেত জমা দিতে বলা হয়েছে। পরে সব দলের সঙ্গে বৈঠকের মাধ্যমে চূড়ান্ত করা হবে। এসব বিষয় সমন্বয়ের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খানকে।
যুগপতের ১০ দফায় যা থাকছে : সূত্র

জানায়, গণআন্দোলনের ১০ দফার খসড়ায় সংসদ বিলুপ্ত করে বর্তমান সরকারের পদত্যাগ; ১৯৯৬ সালে সংবিধানে সংযোজিত ধারা ৫৮-খ, গ ও ঘ-এর আলোকে দলনিরপেক্ষ নির্বাচনকালীন বা অন্তর্বর্তীকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন; বর্তমান কমিশন বিলুপ্ত করে স্বাধীন ও নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠন, খালেদা জিয়াসহ সব বিরোধীদলীয় নেতাকর্মী, সাংবাদিক ও আলেমদের সাজা বাতিল ও মামলা প্রত্যাহারের পাশাপাশি নতুন মামলায় গ্রেপ্তার বন্ধ ও সভা-সমাবেশে বাধা সৃষ্টি না করা, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন-২০১৮ ও বিশেষ ক্ষমতা আইন-১৯৭৪-সহ মৌলিক মানবাধিকার হরণকারী সব কালাকানুন বাতিল; বিদুৎ, জ্বালানি, গ্যাস, পানিসহ জনসেবার সব খাতে দর বাড়ানোর গণবিরোধী সিদ্ধান্ত বাতিল; নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে আনা; গত ১৫ বছরে বিদেশে অর্থ পাচার, ব্যাংকিং ও আর্থিক খাত, বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাত ও শেয়ারবাজারসহ রাষ্ট্রীয় সব ক্ষেত্রে সংঘটিত দুর্নীতি চিহ্নিত করার লক্ষ্যে কমিশন গঠন; গুমের শিকার সব নাগরিককে উদ্ধার, বিচারবহির্ভূত হত্যা ও রাষ্ট্রীয় নির্যাতনের প্রতিটি ঘটনার দ্রুত বিচারসহ ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের বাড়িঘর, উপাসনালয় ভাঙচুর ও সম্পত্তি দখলের বিচার এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, প্রশাসন ও বিচার বিভাগে সরকারি হস্তক্ষেপ বন্ধ করে স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ দেয়ার কথা বলা হয়েছে।
বিএনপি ও সমমনা দলের নেতারা জানান, ১০ দফায় যে সব দাবি সংযুক্ত করা হয়েছে- তার বেশির ভাগই সমমনা দলগুলোর পক্ষ থেকে এসেছে। কিছু একক দাবি বিএনপির পক্ষ থেকে এসেছে। এই দাবিগুলো প্রতিষ্ঠিত করতেই মূলত দলগুলোর সঙ্গে দেন-দরবার করেছে বিএনপি। নেতারা জানান, বিভাগীয় সমাবেশগুলোতে কার্যত সারাদেশে পরবর্তী আন্দোলনের ভিত্তি তৈরির জন্য এক ধরনের মহড়া দেয়া হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে সাধারণ মানুষের সমর্থন কোন পর্যায়ে এবং মাঠের নেতাকর্মীদের অবস্থানও জানা গেছে। নেতারা জানান, তাদের লক্ষ্য ঢাকার সমাবেশের পর দ্বিতীয় ধাপের আন্দোলনে যাওয়া।
বিএনপির নেতাদের চূড়ান্ত দাবি, এবার রাজপথ থেকে ফিরে পেছনে তাকানোর সুযোগ নেই। নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে অবাধ নির্বাচনের দাবি আদায়ে রাজপথের আন্দোলন গড়ে তুলতে সরকারবিরোধী দলগুলোও বদ্ধপরিকর। আগাম ‘রিহার্সসেল’ হিসেবে ইতোমধ্যে তারা কর্মসূচি শুরু করে দিয়েছে। তবে যুগপতের চূড়ান্ত ঘোষণা একমঞ্চে হবে নাকি আলাদা মঞ্চে হবে এ নিয়ে মতবিরোধ রয়েছে। সূত্র জানায়, প্রথমদিকে যুগপৎ আন্দোলনে রাজি দলগুলোকে ১০ ডিসেম্বর গণসমাবেশ মঞ্চে উঠানোর একটা প্রস্তাব ছিল। কিন্তু বিএনপির নীতিনির্ধারকরা চাচ্ছেন, আন্দোলনের শেষদিকে এক মঞ্চে উঠতে। তার আগে নিজ নিজ অবস্থান থেকে অভিন্ন দাবি ও কর্মসূচিতে দলগুলো যুগপৎ আন্দোলন করবে। এমন মত থাকলেও আগামী ৫ ডিসেম্বরের পর সব দল বসে চূড়ান্ত বৈঠক করে যুগপতের ধরন, দফা, রাষ্ট্র সংস্কারের রূপরেখা পদ্ধতিসহ সব সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলেও সূত্র নিশ্চিত করেছে।
জানতে চাইলে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ভোরের কাগজকে বলেন, সরকার বিএনপির আন্দোলন দানা বাঁধতে দিতে চায় না। সে কারণে ১০ ডিসেম্বর বিএনপির সমাবেশকে ‘ডেডলাইন’ বানাতে তৎপর রয়েছে। কিন্তু চেষ্টা করে লাভ নেই। তিনি বলেন, যুগপৎ আন্দোলনের ‘ফরমেট’ দাঁড় করাতে আমরা বহুদিন ধরে আলোচনা করছি। এবার সেটা দাঁড়িয়ে গেছে। সমমনা দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে আন্দোলন কর্মসূচি ঠিক করা হয়েছে। তবে এখনো চূড়ান্ত কিছু হয়নি। সরকারের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে আমরা সবাই ঐক্যমতে পৌঁছেছি। সরকার পতনের এক দফা লক্ষ্যকে সামনে রেখে এ কর্মসূচি আরও কঠোর হতে পারে বলেও ইঙ্গিত দেন তিনি।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেন, আমাদের আন্দোলনের রূপটা পরিবর্তন হবে। তবে সেটা শান্তিপূর্ণভাবে। মহাসচিব ঘোষণা করবেন কী রূপে হবে আন্দোলন। এখন আমরা জাতীয়ভাবে কী কর্মসূচি দেব, সেটা নিয়ে চিন্তাভাবনা করছি। তবে ওই দিন যুগপৎ আন্দোলনের আনুষ্ঠানিক যাত্রা হবে।
গণতন্ত্র মঞ্চের শীর্ষ নেতা ও নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, যুগপৎ আন্দোলনের কর্মসূচির দাবি-দাওয়া ও রাষ্ট্র সংস্কারের রূপরেখা এখনো চূড়ান্ত বলা যাবে না। বিষয়টি নিয়ে বৈঠকে আলাপ-আলোচনা করছি। পরস্পরের সঙ্গে মতবিনিময় করছি। তবে অনেক বিষয়ের সঙ্গে আমরা একমত।
কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল ইবরাহিম বলেন, যুগপৎ আন্দোলনের ১০ দফায় যে প্রস্তাবগুলো রাখা হয়েছে, তা বিএনপির সঙ্গে বৈঠকে সমমনা প্রতিটি দল থেকে এসেছে। কিছু দফা নিয়ে দর কষাকষি হয়েছে। তবে শেষমেষ ঐক্যবদ্ধ মতের ভিত্তিতে কিছু একটা হতে যাচ্ছে। ১০ ডিসেম্বরের আগে চূড়ান্ত বৈঠকে বিএনপি আমাদের ডাকবে সেখানে আরো কিছু বিষয়ে আলোচনা আসবে। তবে যুগপৎ আন্দোলনের ঘোষণা একইদিনে এলেও ভিন্ন মঞ্চ থেকে আসার সম্ভাবনা বেশি।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়